শ্রীমঙ্গলে আমরা পারবো নারী ও কিশোরী জোটের ত্রৈমাসিক সম্মেলন

প্রকাশিত: ২:২১ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৩, ২০২৩

শ্রীমঙ্গলে আমরা পারবো নারী ও কিশোরী জোটের ত্রৈমাসিক সম্মেলন

নিজস্ব প্রতিবেদক | শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার), ১৩ জুলাই ২০২৩ : শ্রীমঙ্গলে আমরা পারবো নারী ও কিশোরী সংঘের ত্রৈমাসিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অক্সফ্যাম ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সহায়তায় ও ব্রেকিং দ্য সাইলেন্সের উদ্যোগে সিলেট বিভাগের ২৫টি চা বাগানে বাস্তবায়িত লিডারশীপ এমবডি এসোসিয়েশন ডিমানডিং টু এনশিওর রাইটস (লিডার) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় অদ্য বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই ২০২৩) এ সম্মেলন শ্রীমঙ্গলের ব্র্যাক লার্নিং সেন্টার (বিএলসি)’র সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।
প্রকল্প সমন্বয়কারী পারভেজ কৈরীর সঞ্চালনায় আমরা পারবো নারী ও কিশোরী জোটের অস্থায়ী কমিটির আহ্বায়ক সন্ধ্যা রানী ভৌমিক সম্মেলনের শুরুতেই স্বাগত ও শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে মূখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্রেকিং দ্য সাইলেন্সের উপ-পরিচালক ড. মোহাম্মদ তারেুজামান।

সম্মেলনে বলা হয়, চা বাগানের নারী ও কিশোরীদের সামাজিক সুরক্ষা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয়টি প্রশ্নাতীত। দেশের নাগরিক ও শ্রমিক হিসেবে ন্যায্য অধিকার ও মর্যাদার বিষয়টি বিশেষ করে চা বাগানের জনগোষ্ঠীর জন্য একটি অত্যাবশ্যকীয় বিষয়। একই সাথে শিক্ষা ও সচেতনতার অভাবে চা বাগানের জনগোষ্ঠীর অধিকার সচেতনতার জায়গাটিও বেশ নাজুক এবং সামাজিক নানা কুসংস্কার ও প্রথা বিশেষ করে নারী ও কিশোরীদের বিকাশ, মতপ্রকাশ ও নেতৃত্বের ক্ষেত্রে বিশেষ প্রতিবন্ধক। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট থেকে শুরু করে অদ্যবধি চা বাগানের নারীরা সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার প্রয়াস থেকে ব্যর্থ। যদিও বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন চা বাগানের জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছে। তারপরও চা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ও বৈচিত্রময় প্রেক্ষাপটের বিবেচনায় তা অপ্রতুল। আর নারীদের জন্য স্বতন্ত্র একটি জোট গঠন প্রায় একদশকের দাবী। চা বাগানে সরকার ও চা বাগান মালিকপক্ষসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সংগঠন কাজ করলেও নারীদের জন্য স্বতন্ত্র একটি জোট তৈরি করা একটি সময়ের দাবী।
অক্সফ্যাম ও ব্রেকিং দ্যা সাইলেন্স (বিটিএস)-এর চা বাগানের কাজের অভিজ্ঞতা ও ২৫টি বাগানের নারী ও কিশোরী দলের সাথে কাজ করার প্রেক্ষাপটে চা বাগানের নারী শ্রমিক, অন্য নারী ও কিশোরীদের জন্য একটি সংগঠন চা বাগানের প্রেক্ষাপটে বেশ বড় ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে, যা একইসাথে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সহযোগী হিসেবে কাজ করবে। উক্ত বাস্তবতা ও প্রেক্ষাপটের বিবেচনায়, অক্সফ্যাম ও ব্রেকিং দ্যা সাইলেন্সের উদ্যোগে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে শ্রীমঙ্গলে ‘আমরা পারব’ জোটের আত্নপ্রকাশ ঘটে।
চা বাগানের সকল স্তরে নারী ও কিশোরীদের নির্যাতনমুক্ত ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন প্রতিষ্ঠা এই সংঘের মূল লক্ষ্য। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য কয়েকটি সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে সংঘটি তার কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

– নারীর বিরুদ্ধে যেখানেই কোন অপরাধ হচ্ছে বা হবে সে বিষয়ে নিজ অবস্থান থেকে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করা,
– নিজ বাগানে নারী ও কিশোরীদের নিয়ে ছোট দল তৈরী করে তাদেরকে অধিকার সচেতন করা এবং দলের সদস্যদের নেতৃত্বের বিকাশ ঘটানো,
– নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা ও নির্যাতন প্রতিরোধে চা বাগানে যে সকল সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান এবং কমিটি কাজ করছে তাদের সাথে নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা,
– চা বাগানে পিছিয়ে পড়া নারী ও কিশোরীদের উন্নয়নে সমন্বিত ও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা,
– চা বাগানে নারী শ্রমিকদের জন্য নিরপাদ ও ন্যায্য কর্মক্ষেত্র নিশ্চিত করতে কাজ করা,
– চা বাগানের শিশু ও কিশোরীদের শতভাগ শিক্ষা নিশ্চিত করতে কাজ করা,
– চা বাগানে বাল্য বিবাহ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি ও বাল্য বিয়ে প্রতিরোধ কাজ করা,
– চা বাগানে শ্রমিক ও বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে সর্বস্তরের নারীর সম-মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করা।

উল্লেখ্য যে, সিলেট বিভাগের ৩টি জেলার ১১টি উপজেলার ২৫টি চাবাগানে উক্ত জোটের কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করার লক্ষ্যে আমরা পারবো নারী ও কিশোরী সংগঠনের বিষয়ে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি অন্যান্য অংশীজনদের উপস্থিতিতে একটি ত্রিপক্ষীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত সভায় বক্তব্য দেন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কমলগঞ্জের উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রামভজন কৈরী, শ্রীমঙ্গলের যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা অসীম কুমার কর ও মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সাহেদা আক্তার, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি পংকজ এ কন্দ, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের বালিশিরা ভ্যালী সভাপতি বিজয় হাজরা ও বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের অর্থ সম্পাদক পরেশ কালিন্দী।

সম্মেলনে আমরা পারবো নারী ও কিশোরী সংগঠনের গঠনতন্ত্রের পুনরালোচনা, চা বাগানের নারী ও শিশুদের বর্তমান সমস্যাসমহূ চিহ্নিতকরণ ও সমস্যা সমাধানে করনীয়, সংগঠনের কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন বিষয়ে আলোচনা এবং সংগঠনের কাজের পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়।

উক্ত সম্মেলনে ২৫ টি চা বাগানের ৫০ জন নারী ও কিশোরী অংশগ্রহণ করেন।

উক্ত প্রকল্পের সিলেট বিভাগের দায়িত্বে থাকা প্রকল্প সমন্বয়কারী পারভেজ কৈরী বলেন, প্রকল্পটির উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে কয়েকটি কাজ হলো সক্ষমতা উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা যাচাই করা, আমরা পারবো-নারী ও কিশোরী সংঘ গঠন, কমিউনিটির চা বাগানের নারী শ্রমিক এবং কিশোরী দলে নিয়মিত মাসিক সভা আয়োজন, চা বাগানের নারী ও কিশোরী মেয়েদের জন্য জীবন দক্ষতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ আয়োজন, জেন্ডার টক বা নারী পুরুষের বৈষম্য বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান, সমঝোতা, যোগাযোগ এবং নেতৃত্ব উন্নয়ন বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান, জেন্ডার বিষয়ে সচেতনতাবৃদ্ধির জন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন, সরকারি কর্তৃপক্ষ, চাবাগান মালিক ও বাচাশ্রই-এর মধ্যে ডায়ালগ সেশন আয়োজন করা, স্টেকহোল্ডারদের সাথে লার্নিং শেয়ারিং মিটিং আয়োজন করা ইত্যাদি।
উল্লেখ্য যে, প্রকল্পটি সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার এবং সিলেট জেলার ২৫টি চাবাগান নিয়ে কাজ করছে।
তিনি আরো বলেন, অক্সফ্যাম ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সহায়তায় এবং ব্রেকিং দ্য সাইলেন্সের উদ্যোগে গঠিত এই জোটটি ইতোমধ্যেই বেশ সাড়া ফেলেছে।
তিনি উক্ত জোটের কার্যপরিধি আরো ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ুক এবং এর সাথে জড়িত সকল সমমনা ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করেন।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ