গুরুতর অসুস্থ কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য হাসপাতালে ভর্তি

প্রকাশিত: ১:২৬ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৯, ২০২৩

গুরুতর অসুস্থ কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য হাসপাতালে ভর্তি

Manual5 Ad Code

নিজস্ব প্রতিবেদক | কলকাতা (ভারত), ২৯ জুলাই ২০২৩ : পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও প্রখ্যাত কমিউনিস্ট নেতা কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরেই নানা ধরনের শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি, বাড়িতেই চলছিল চিকিৎসা।

রাজ্যের তিনবারের এ মুখ্যমন্ত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শ্বাসকষ্টের সমস্যা বেড়ে যাওয়া এবং রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ায় শনিবার সকালে তাকে দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা ৭০-এ নেমে যাওয়ায় তাকে আইসিইউতে ভর্তি নেয়া হয়েছে।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শনিবার সকাল থেকেই তার শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমতে শুরু করে। তখনই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পাম এভিনিউ থেকে অ্যাম্বুলেন্সে গ্রিন করিডোর করে প্রাক্তন এ মুখ্যমন্ত্রীকে আলিপুরের উডল্যান্ডস হাসপাতালে আনা হয়।

সূত্রের খবর, রাস্তায় বুদ্ধদেবের শারীরিক অবস্থা আরও অবনতি হলে আলিপুরের বেসরকারি হাসপাতাল থেকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার অ্যাম্বুল্যান্স পাঠানো হয়। তবে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে এখনও কিছুই জানায়নি। বর্তমানে তার চিকিৎসা শুরু হয়েছে এবং একটি মেডিক্যাল বোর্ডও গঠন করা হয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরেই সিওপিডির সমস্যা রয়েছে রাজ্যের সাবেক এ মুখ্যমন্ত্রীর। মাঝে বেশ কয়েকবার স্বাস্থ্যজনিত সমস্যার কারণে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল তাকে। পরে কিছুটা সুস্থ হলে বাড়ি ফিরে যান।

Manual1 Ad Code

এছাড়াও ২০২১ সালে করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে সে বছর ২৫ মে তাঁকে আলিপুরের এই বেসরকারি হাসপাতালেই ভর্তি করানো হয়েছিল।

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য একজন ভারতীয় কমিউনিস্ট নেতা এবং বর্তমানে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় পলিটব্যুরোর সদস্য ও পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী।

কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শৈশব ও শিক্ষা

১৯৪৪ সালের ১লা মার্চ উত্তর কলকাতার যে পরিবারে কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য জন্মগ্রহণ করেন। সেই পরিবারের আর এক বিখ্যাত মানুষ হলেন সুকান্ত ভট্টাচার্য, যিনি হলেন সম্পর্কে বুদ্ধদেবের কাকা।
১৯৬১ সালে কমরেড বুদ্ধদেব কলকাতার শৈলেন্দ্র সরকার বিদ্যালয় থেকে মানবিকী বিদ্যা নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হন এবং ১৯৬৪ সালে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বাংলা নিয়ে কলা শাখায় সাম্মানিক স্নাতক হন। স্কুলজীবনে তিনি এন.সি.সি-তে যোগদান করেন। কলেজজীবনেও তিনি এন.সি.সি-র ক্যাডেট (নৌ শাখা) ছিলেন।

কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের রাজনীতি

কলেজজীবনে রাজনীতিতে যোগদান করেন কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তিনি পশ্চিমবঙ্গের উত্তাল খাদ্য আন্দোলনের সাথে সাথে ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যোগদান করেন। তিনি গণতান্ত্রিক যুব ফেডারেশনের রাজ্য সম্পাদক হন যা পরবর্তীকালে ভারতের গণতান্ত্রিক যুব ফেডারেশন রূপে আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৭৭ সালে তিনি কাশীপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হন কিন্তু ১৯৮২ সালে কংগ্রেসের প্রফুল্ল কান্তি ঘোষের কাছে ৭৮২ ভোট পরাজিত হন। ১৯৮৭ সালে তিনি তার নির্বাচনী কেন্দ্র পরিবর্তন করে যাদবপুরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ওই কেন্দ্র থেকে তিনি টানা ৫ বার জয়ী হন।
২০১১ বিধানসভা নির্বাচনে তিনি এই কেন্দ্র থেকেই সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের মণীশ গুপ্তের কাছে পরাজিত হন। তিনি সি.পি.আই (এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য, সি.পি.আই (এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং সি. পি.আই (এম) পলিটব্যুরোর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

Manual2 Ad Code

১৯৭৭-৮২ : পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য মন্ত্রিসভায় তথ্য ও জনসংযোগ বিভাগের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং এই বিভাগ পরে তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ নামে পরিচিত হয়।

১৯৮৭-৯৬ : ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী, তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ, স্থানীয় শাসন, পৌর ও নগরোন্নয়ন বিভাগ।

১৯৯১-৯৩ : ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী, তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ, পুর ও নগর উন্নয়ন বিভাগ (অগ্নি নির্বাপণ পরিষেবা বাদে)।

১৯৯৪ : ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী, তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ।

১৯৯৬ : ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র (আরক্ষা) বিভাগ, তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ, তথ্য প্রযুক্তি বিভাগ।

১৯৯৯ : উপ-মুখ্যমন্ত্রী।

Manual5 Ad Code

নভেম্বর ৬, ২০০০ : পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

মে ১৮, ২০০১ : ত্রয়োদশ পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়ে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন।

মে ১৮, ২০০৬ : চতুর্দশ পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়ে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন।

Manual2 Ad Code

মে ১৯, ২০১১ : পঞ্চদশ পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা সাধারণ নির্বাচনে পরাজিত হয়ে মুখ্যমন্ত্রী থেকে পদত্যাগ করেন।

২০২২ সালে তিনি পদ্মভূষণ লাভ করলেও তা প্রত্যাখ্যান করেন।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ