বাংলাভাষা ও সাহিত্য জন্ম থেকেই বিদ্রোহী

প্রকাশিত: ৩:৩৬ অপরাহ্ণ, জুলাই ৩১, ২০২৩

বাংলাভাষা ও সাহিত্য জন্ম থেকেই বিদ্রোহী

দেবাশীষ চৌধুরী রাজা |

আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার উৎসমূলে রয়েছে বাঙালির সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অসাম্প্রদায়িক চরিত্রের মৌলিকত্ব।

বাঙালির সাংস্কৃতিক আন্দোলন তার অহংকার, তার আত্মপরিচয় ও জাতিসত্তা বিকাশের বাতিঘর।
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সূচিত সাংস্কৃতিক আন্দোলনের গতিধারা প্রবল থেকে প্রবলতর হয়েছে, রূপান্তরিত হয়েছে স্বাধিকার আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশের রাজনীতির অবিচ্ছেদ্য অংশীদারে।

বাংলার মুক্তিকামী মানুষের রাজনৈতিক দর্শনের শক্ত ভিত্তিও তৈরি হয়েছে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পটভূমি থেকে।
সূত্রপাত ঘটেছে এক অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ, বৈষম্যহীন ও বিজ্ঞানমনস্ক সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখার।
অথচ আমাদের হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের দিকে ফিরে তাকালে একটি কথা স্মরণ করতেই হবে যে, বাংলাভাষা ও সাহিত্য জন্ম থেকেই বিদ্রোহী;
কোনো দিনই এই ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
সমাজের উঁচু শ্রেণির কাছ থেকে সহজে মর্যাদা পায়নি।

লড়াই করে তা প্রতিষ্ঠা করতে হয়েছে।
শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির সব মাধ্যমেই একটি বিষয় লক্ষণীয় যে সবকিছুকে ছাপিয়ে সেখানে বড় হয়ে উঠেছে বাস্তব জীবন,
তার প্রতিবাদ, ক্ষোভ আর দ্রোহ।
আর তাই আমাদের সাহিত্য-সংস্কৃতি জীবনধর্মী।

’৭৫-এ জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের মৌলিক আদর্শের উপর যখন নেমে আসে একের পর এক আঘাত, সামরিক শাসনের জাঁতাকলে পিষ্ট হতে থাকা মানুষ, স্বাধীনতাবিরোধী দানবদের তাণ্ডবে মানুষের শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা—এমনই এক সময় ১৯৮৪ সালে শ্রদ্ধাভাজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, শ্রদ্ধাভাজন কবি ফয়েজ আহমেদের প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট।

মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি তথা মৌলবাদের বিরুদ্ধে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট হয়ে ওঠে প্রতিরোধের, প্রতিবাদের বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর।

সূচনালগ্ন থেকেই চিন্তা-চেতনা ও মনোজগতে পরিশুদ্ধ সংস্কৃতি বিকাশের দায়িত্বটি পরম মমতায় পালন করে এসেছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট।
সমাজকে প্রগতি ভাবনা ও আদর্শগত শুদ্ধতার পথে নিয়ে যেতে নিরন্তর কাজ করে চলেছে। চার দশকের পথ পরিক্রমায় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট বাঙালি জাতির প্রতিটি আন্দোলন, প্রতিবাদ-সংগ্রামে এগিয়ে এসেছে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর হয়ে।

একাত্মতা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশের প্রগতিবিরোধী সব প্রতিবাদ-প্রতিরোধে।

নতুন উদ্যমে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট দেশব্যাপী সাংস্কৃতিক বন্ধ্যাত্ব দূরীকরণে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে,
তারই ধারাবাহিকতায় ১১ জুলাই ‘২৩ সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায়
শ্রীমঙ্গলে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের কার্যকরী পরিষদ গঠিত হয়েছে।
আর আজ (৩০।৭।২০২৩) অনুষ্ঠিত হলো প্রথম সভা।
কার্যকরী পরিষদের সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন।
চেষ্টা করবো সকলকে নিয়ে সুষ্ঠুভাবে সংগঠনকে পরিচালনা করার।

কারো ব্যক্তিগত ইচ্ছা-অনিচ্ছা নয়, জোটের আদর্শ-উদ্দেশ্যকে ধারণ করে, গঠনতন্ত্র এবং কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশ অনুযায়ী সংগঠন চলবে।

আমরা সকলে মিলে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে আমাদের মাতৃভূমিকে গড়ে তুলবো।
আর তার জন্য প্রয়োজন এক সর্বব্যাপী সাংস্কৃতিক আন্দোলন।

“নাগিনীরা চারিদিকে ফেলিতেছে বিষাক্ত নিশ্বাস,
শান্তির ললিত বাণী শোনাইবে ব্যর্থ পরিহাস —
বিদায় নেবার আগে তাই
ডাক দিয়ে যাই
দানবের সাথে যারা সংগ্রামের তরে
প্রস্তুত হতেছে ঘরে ঘরে।”

জয় আমাদের সুনিশ্চিত।
#
দেবাশীষ চৌধুরী রাজা
সাধারণ সম্পাদক
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট
শ্রীমঙ্গল

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ