সিলেট ৩১শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১০:৪৫ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ৯, ২০২৩
নিজস্ব প্রতিবেদক | ঢাকা, ০৯ আগস্ট ২০২৩ : “বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর মাঝে যে বৈচিত্র্য রয়েছে, সেই বৈচিত্র্যই আমাদের ঐক্যের ভিত্তি। এই দেশে অধিকার প্রতিষ্ঠার যে লড়াই হয়েছে, সেখানে বাঙালিদের পাশাপাশি বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মানুষও যুক্ত থেকেছে। স্বাধীন বাংলাদেশে আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি।”
আন্তর্জাতিক আদিবাদী দিবস উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি জননেতা কমরেড রাশেদ খান মেনন এমপি এসব কথা বলেন।
‘আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারসহ’ আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে দিবসটি উদযাপন করেছে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম।
সন্তু লারমার সভাপতিত্বে এ দিবসের উদ্বোধন করেন অধ্যাপক রুবাইয়াৎ ফেরদৌস।
বুধবার (৯ আগস্ট ২০২৩) ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফোরামের অনুষ্ঠান থেকে ১২দফা দাবি তুলে ধরা হয়। আদিবাসী যুবসমাজকে নীতি-আদর্শ সমুন্নত রেখে আরও বেশি সংগ্রামী এবং সংঘবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান আদিবাসী নেতা জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)।
সন্তু লারমা বলেন, সংগঠিত হতে হলে যুক্ত থাকতে হবে নীতি-আদর্শ। সেই নীতি আদর্শ, সর্বোচ্চ ত্যাগ করতে হলেও দ্বিধাহীনভাবে থাকবে সংকল্পবদ্ধ।
তিনি বলেন, “আদিবাসী দিবসে তারুণ্যের শক্তিকে শ্রদ্ধা জানিয়ে এই কথা বলতে চাই, যুগে যুগে সকল সংগ্রামে যারা নেতৃত্ব দিয়েছে তারা হচ্ছে যুবসমাজ। এই যুবসমাজের উদ্দেশ্যে বলব, সবাই মিলে আসুন, আরও অধিকতরভাবে সংগঠিত হই, অধিকতরভাবে সংগ্রামী হয়ে উঠি। সংগঠিত হতে হলে যুক্ত থাকতে হবে নীতি-আদর্শ। সেই নীতি আদর্শ, সর্বোচ্চ ত্যাগ করতে হলেও দ্বিধাহীনভাবে থাকবে সংকল্পবদ্ধ।”
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আদিবাসীরা যে নীপিড়নের শিকার হচ্ছেন, তার প্রতিবাদে আদিবাসী সমাজকে লড়াই করার আহ্বান জানান প্রবীণ এই আদিবাসী নেতা।
এই লড়াইয়ে তরুণরা এখনো আদর্শিকভাবে ঐক্যবদ্ধ নয় জানিয়ে সন্তু লারমা বলেন, “এই লড়াই-সংগ্রামে যে নির্দিষ্ট লক্ষ্য, তা আমরা নির্ধারণ করতে পারিনি। আমি মনে করি, তার পেছনে যে কারণ- তা হল, আদিবাসী যুবসমাজের মধ্যে সুনির্দিষ্ট প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতনার যথেষ্ট অভাব রয়েছে।”
যুবসমাজকে আরও বেশি সংগ্রামী হওয়ার আহবান জানান সন্তু লারমা। তিনি বলেন, “নেতৃত্বের মধ্যে একটা অব্যাহত সংগ্রাম ধরে রেখে দীর্ঘস্থায়ী সংগ্রামে নিজের বিশ্বাস রেখেই লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে হয়। আমাদের আদিবাসী যুবসমাজ সেই লড়াই-সংগ্রামে এখনো সেভাবে যুক্ত হতে পারেনি।
“তাই এই দেশের বাস্তবতাকে প্রাধান্য দিয়ে যুবসমাজকে আরও বেশি সংগ্রামী হতে হবে, সংঘবদ্ধ হতে হবে। নীতি-আদর্শকে সমুন্নত রেখে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে আসতে হবে।”
১৯৯৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর জাতিসংঘ প্রতি বছর ৯ অগাস্ট আদিবাসী দিবস হিসেবে পালনের ঘোষণা দেয়।
জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্র, বিভিন্ন সংস্থা, নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট সবাই যেন আদিবাসীদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হন, আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসেন, সেটাই এ দিবস পালনের লক্ষ্য।
এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ঠিক হয়েছে– “আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আদিবাসী তরুণরাই মূল শক্তি।”
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন। শহীদ মিনারের অনুষ্ঠানে সেই বাণীর বাংলায় অনুবাদ পড়ে শোনানো হয়।
গুতেরেস বলেছেন, “আমরা আদিবাসী তরুণদের পরিবর্তন আনয়ন এবং ভবিষ্যৎ নির্মাণের অবদানকে স্বীকৃতি দিই এবং উদযাপন করি। বিশ্বজুড়ে আদিবাসী জনগণ কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে, তাদের ভূমি ও সম্পদের অধিকার হুমকির মুখে পতিত, তাদের অধিকার অবদমিত এবং তারা ক্রমাগত বিপন্নতা, প্রান্তিকতা ও বিচ্যুতির শিকার।
“তবে আদিবাসী তরুণরা অধিকার ফিরে পাবার সংগ্রাম করছে। বৈশ্বিক জলবায়ু কর্মসূচির আন্দোলনে তারা নেতৃত্ব দিচ্ছে। তরুণরা ন্যায্যতা ও সাম্যের জন্য অ্যাডভোকেসি করছে। তারা নিজস্ব সংস্কৃতি সংরক্ষণ ও উদযাপন, মানবাধিকারকে এগিয়ে নেওয়া এবং আদিবাসী ইতিহাস ও ইস্যু সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা সৃষ্টির কাজ করছে।”
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিব দ্রং বলেন, “অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় বাংলাদেশের ৪০ লক্ষাধিক আদিবাসী জনগণ এখন এক কঠিন সংকট ও অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে। আদিবাসীদের ঐতিহ্যগত ও প্রথাগত ভূমি থেকে ক্রমাগত তারা উচ্ছেদের মুখোমুখি হচ্ছে। ভূমি, বন ও প্রাকৃতিক সম্পদের চিরায়ত অধিকার থেকে আদিবাসীরা বঞ্চিত হচ্ছে।
“আদিবাসীদের আত্ম-পরিচয় ও আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার হল মানবাধিকার। কঠিন সংকটের মধ্যেও দেশের আদিবাসী জনগণ অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে অবিচল আছে। আদিবাসী তরুণ সমাজ নব চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সক্রিয় আন্দোলনে অধিকতর এগিয়ে আসছে। আদিবাসী দিবসে আমরা দেশের গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক শক্তিকে আদিবাসীদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাই।”
অধ্যাপক রুবাইয়াৎ ফেরদৌস বলেন, “সেটি সভ্য রাষ্ট্র নয়, যে রাষ্ট্র তার নাগরিকদের অধিকারের মর্যাদা দেয় না। যে বাঙালি পাকিস্তানের ভাষাগত নিপীড়নের শিকার হয়েছে, জাতিগত নিপীড়নের শিকার হয়েছে, সামরিক নিপীড়নের শিকার হয়েছে, সেই বাংলাদেশই যখন স্বাধীন হল, তারা আবার আদিবাসীদের উপর একই নিপীড়ন করছে, এটা খুবই দুঃখজনক।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ যে বহুত্ববাদের, আমরা ভুলতে বসেছি। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে বহুত্ববাদের রাষ্ট্র হওয়ার স্বপ্ন আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা দেখেছিলেন, সেটি কেড়ে নেওয়া হয়েছে।”
অন্যদের মধ্যে অধ্যাপক মেসবাহ কামাল, ফজলে হোসেন বাদশা, অধ্যাপক সাদেকা হালিম, অধ্যাপক জোবায়দা নাসরিন সমাবেশে বক্তব্য দেন।
অধ্যাপক মেসবাহ কামাল বলেন, “এই সমাবেশে যে তরুণরা দাঁড়িয়েছেন, তারা এক আদর্শ বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে দাঁড়িয়েছেন, যে বাংলাদেশে সবার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। যে লড়াই করে পার্বত্য শান্তি চুক্তি করা হয়েছিল, এখন আরো বেশি লড়াই করে সেই চুক্তির বাস্তবায়ন করতে হবে। একা একা সমাজ বদলানো যায় না, সমাজকে সঠিক পথে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সম্মিলিত হতে হবে।”
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক জননেতা কমরেড ফজলে হোসেন বাদশা এমপি বলেন, “আমাদের যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন, তারা একটা বিভ্রান্তির মধ্যে আছেন। তারা চুক্তি করেন, বাস্তবায়ন করেন না। সমতল এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীরা একই কাতারে দাঁড়িয়েছেন। সমতলের আদিবাসীদের জন্য ভূমি কমিশন করা দরকার।”
সাদেকা হালিম বলেন, “আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস আগে যেভাবে বিভিন্ন জেলায় পালন করা হত, এখন কিন্তু সেভাবে হচ্ছে না। কেন হচ্ছে না? কেউ কেউ হয়তো ভাবেন এখানে সরকারবিরোধী কথা হয়। কিন্তু সরকারকে সাথে নিয়েই তো দিবসটি আরও বড় পরিসরে পালন করা যায়।”
জোবায়দা নাসরিন বলেন, “আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন মানেই তো আত্মপরিচয়ের অধিকার। বিদেশে যখন ‘বিউটিফুল বাংলাদেশকে’ তুলে ধরা হয়, সেখানে এই আদিবাসীদের সুন্দর সুন্দর ছবি তুলে ধরা হয়। কিন্তু দেশে যখন এই আদিবাসীরা তাদের অধিকার নিয়ে কথা বলেন, তখন রাষ্ট্র বলে, দেশে কোনো আদিবাসী নাই।
“আমরা সেনাবাহিনীর বিপক্ষে নই, আমরা সেনা-শাসনের বিরুদ্ধে। দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী যেন মানুষের পক্ষে থাকে, চিম্বুক পাহাড়ে ম্যারিয়ট হোটেল নির্মাণের পক্ষে নয়।”
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড নিয়ে সারা দেশের আদিবাসী সংগঠনের নেতারা অংশ নেন। তাদের মধ্যে ছিল- হাজং স্টুডেন্ট কাউন্সিল (হাসুক), আদিবাসী ইউনিয়ন, আদিবাসী ছাত্র সংগঠন, ওরাওঁ বাংলাদেশ সংস্কৃতি ফোরাম, খাসি, স্টুডেন্ট ইউনিয়ন, গারো স্টুডেন্ট ফেডারেশন, গারো ছাত্র সংগঠন, তঞ্চঙ্গ্যা স্টুডেন্টস ফোরাম, খুমী স্টুডেন্টের মত বিবিন্ন সংগঠন।
অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল- ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সকল অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার কর’, ‘আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন জেলা পরিষদকে চুক্তি মোতাবেক ক্ষমতায়ন করতে হবে’, ‘আদিবাসী অধিকার বিষয়ক আইন প্রণয়ন করতে হবে’, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নয়, উপজাতি নয়, আমরা আদিবাসী’, ‘আইএলও কনভেনশন ১০৭ বাস্তবায়ন করতে হবে’, ‘জাতীয় সংসদে আদিবাসীদের জন্য আসন সংরক্ষণ করতে হবে’, ‘নিরাপত্তা অজুহাতে পাহাড়ে সেনাশাসন বন্ধ কর’, ‘আদিবাসীদের ভূমি অধিকার ফিরিয়ে দাও’, ‘আদিবাসীদের বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ করা যাবে না’, ‘পাহাড় বেদখল বন্ধ করতে হবে’, ‘সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন করতে হবে’।
সবশেষে সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেন বিভিন্ন আদিবাসী গোষ্ঠীর শিল্পীরা। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর হাজারো মানুষের অংশগ্রহণে হয় শোভাযাত্রা।
আদিবাসী ফোরামের ১২ দাবি
১. আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারসহ আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে।
২. আদিবাসীদের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও ভূমির অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
৩. আদিবাসী তরুণ সমাজের নেতৃত্ব বিকাশ, প্রশিক্ষণ, শিক্ষা, উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৪. আদিবাসী প্রশ্নে অন্যান্য দেশের মত সরকার, জাতিসংঘ ও আদিবাসী জনগণ এই ত্রিপক্ষীয় সংলাপের জন্য উৎসাহ ও প্রণোদনা দিতে হবে।
৫. পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। এ লক্ষ্যে সময়সূচি ভিত্তিক রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে।
৬. সমতল অঞ্চলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় ও ভূমি কমিশন গঠন করতে হবে।
৭. আদিবাসীদের ভূমিতে তাদের স্বাধীন সম্মতি ছাড়া ইকোপার্ক, সামাজিক বনায়ন, ট্যুরিজম, ইপিজেড বা অন্য কোনো প্রকল্প গ্রহণ করা চলবে না।
৮. আদিবাসীদের ওপর সকল নিপীড়ন, নির্যাতন ও হয়রানি বন্ধ করাসহ সকল মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।
৯. জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ২০০৭ সালে গৃহীত আদিবাসী বিষয়ক ঘোষণাপত্র ও আইএলও ১৬৯ নম্বর কনভেনশন অনুসমর্থন ও আইএলও কনভেনশন ১০৭ বাস্তবায়ন করতে হবে।
১০. জাতীয় সংসদে আদিবাসীদের জন্য বিশেষ কোটা সংরক্ষণ বা আসন বরাদ্দ রাখতে হবে।
১১. প্রথম শ্রেণির সরকারি চাকরিতে আগের মত আদিবাসী কোটা সংরক্ষণ করতে হবে এবং অন্যান্য চাকরিসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি কোটা যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে।
১২. রাষ্ট্রীয়ভাবে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উদযাপন করতে হবে।
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by M-W-D