রবীন্দ্রনাথ রচিত ‘কালান্তর’ প্রবন্ধগুচ্ছের অন্তর্গত ‘লোকহিত’ প্রবন্ধের অংশবিশেষ

প্রকাশিত: ৫:১৩ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ৯, ২০২৩

রবীন্দ্রনাথ রচিত ‘কালান্তর’ প্রবন্ধগুচ্ছের অন্তর্গত ‘লোকহিত’ প্রবন্ধের অংশবিশেষ

শিবাশীষ বসু |

“ধনের ধর্মই অসাম্য। জ্ঞান ধর্ম কলাসৌন্দর্য পাঁচজনের সঙ্গে ভাগ করিলে বাড়ে বৈ কমে না, কিন্তু ধন জিনিসটাকে পাঁচজনের কাছ হইতে শোষণ করিয়া লইয়া পাঁচজনের হাত হইতে তাহাকে রক্ষা না করিলে সে টেঁকে না। এইজন্য ধনকামী নিজের গরজে দারিদ্র্য সৃষ্টি করিয়া থাকে। তাই ধনের বৈষম্য লইয়া যখন সমাজে পার্থক্য ঘটে তখন ধনীর দল সেই পার্থক্যকে সমূলে ঘুচাইতে ইচ্ছা করে না, অথচ সেই পার্থক্যটা যখন বিপদজনক হইয়া উঠে তখন বিপদটাকে কোনোমতে ঠেকো দিয়া ঠেকাইয়া রাখিতে চায়। তাই ও দেশে শ্রমজীবীর দল যতই গুমরিয়া গুমরিয়া উঠিতেছে ততই তাহাদিগকে ক্ষুধার অন্ন না দিয়া ঘুম-পাড়াইবার গান গাওয়া হইতেছে ; তাহাদিগকে অল্পস্বল্প এটা-ওটা দিয়া কোনোমতে ভুলাইয়া রাখিবার চেষ্টা। কেহ বলে উহাদের বাসা একটু ভালো করিয়া দাও, কেহ বলে যাহাতে উহারা দু চামচ সুপ খাইয়া কাজে যাইতে পারে তাহার বন্দোবস্ত করো, কেহ-বা তাহাদের বাড়িতে গিয়া মিষ্টমুখে কুশল জিজ্ঞাসা করে, শীতের দিনে কেহ-বা আপন উদ্বৃত্ত গরম কাপড়টা তাহাদিগকে পাঠাইয়া দেয়। এমনি করিয়া ধনের প্রকাণ্ড জালের মধ্যে আটকা পড়িয়া লোকসাধারণ ছটফট করিয়া উঠিয়াছে। ধনের চাপটা যদি এত জোরের সঙ্গে তাহাদের উপর না পড়িত তবে তাহারা জমাট বাঁধিত না – এবং তাহারা যে, কেহ বা কিছু তাহা কাহারও খবরে আসিত না।”
না না, উপরের প্রবন্ধাংশটি কোনও মার্কসবাদী তাত্ত্বিকের লেখা নয়; বরং ‘বুর্জোয়া’, ‘নীলরক্তের অধিকারী’, ‘জমিদার তনয়’ রবীন্দ্রনাথ রচিত ‘কালান্তর’ প্রবন্ধগুচ্ছের অন্তর্গত ‘লোকহিত’ প্রবন্ধের অংশবিশেষ। ১৯১৪ সালের রচনা, তখনও বলশেভিক বিপ্লব ঘটে নি। সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠিত হয় নি এবং রবীন্দ্রনাথ যে ইত্যবসরে মার্কস-এঙ্গেলস পড়ে ফেলেছেন, একথা তাঁর পরম নিন্দুকও বলবে না। এটা একান্তই রবীন্দ্রনাথের আত্মোপলব্ধি এবং কে না জানে – গ্রেট মেন থিঙ্ক অ্যালাইক।

তথ্যসূত্র : রবীন্দ্র রচনাবলী চতুর্বিংশ খণ্ড

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ