বিশ্ব বই দিবস কাল

প্রকাশিত: ১২:২৯ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ২২, ২০২৪

বিশ্ব বই দিবস কাল

বিশেষ প্রতিনিধি | ঢাকা, ২২ এপ্রিল ২০২৪ : আগামীকাল ২৩ এপ্রিল বিশ্ব বই দিবস বা বিশ্ব গ্রন্থ দিবস (এছাড়া বিশ্ব বই এবং কপিরাইট দিবস, বা বইয়ের আন্তর্জাতিক দিবস নামেও পরিচিত) হল পড়া, প্রকাশনা এবং কপিরাইট প্রচারের জন্য জাতিসংঘের শিক্ষা, বৈজ্ঞানিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন (ইউনেস্কো) দ্বারা আয়োজিত একটি বার্ষিক দিবস।

ইউনেস্কোর উদ্যোগে ১৯৯৫ সাল থেকে এই দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে।

বই দিবসের মূল উদ্দেশ্য হলো, বই পড়া, বই ছাপানো, বইয়ের কপিরাইট সংরক্ষণ করা ইত্যাদি বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়ানো। সর্বোপরি প্রকাশক লেখক পাঠকের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করা।

বিশ্ব বই দিবসের মূল ধারণাটি আসে স্পেনের লেখক ভিসেন্ত ক্লাভেল আন্দ্রেসের কাছ থেকে। ১৬১৬ সালের ২৩ এপ্রিল মারা যান স্পেনের আরেক বিখ্যাত লেখক মিগেল দে থের্ভান্তেস। আন্দ্রেস ছিলেন তার ভাবশিষ্য। নিজের প্রিয় লেখককে স্মরণীয় করে রাখতেই ১৯২৩ সালের ২৩ এপ্রিল থেকে আন্দ্রেস স্পেনে পালন করা শুরু করেন বিশ্ব বই দিবস। এরপর দাবি ওঠে প্রতিবছরই দিবসটি পালন করার। অবশ্য সে দাবি তখন নজরে আসেনি কারোই। অপেক্ষা করতে হয় দিনটি বাস্তবে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য।

অবশেষে ১৯৯৫ সালে ইউনেস্কো দিনটিকে বিশ্ব বই দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং পালন করতে শুরু করে।

এরপর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ২৩ এপ্রিল বিশ্ব বই দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

উল্লেখ্য, ২৩ এপ্রিল শুধুমাত্র বিশ্ব বই দিবসই নয়,
শেক্সপিয়র, সত্যজিৎ রায়, ইনকা গার্সিলাসো ডে লা ভেগাসহ প্রমুখ খ্যাতিমান সাহিত্যিকদের জন্ম ও প্রয়াণ দিবসও। আর এ কারণেও ২৩ এপ্রিলকে বিশ্ব বই দিবস হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে বলে মনে করেন অনেকেই।

বই শব্দটি আসলেই চোখের সামনে ভেসে উঠে পুরান ঢাকার সূত্রাপুর অঞ্চলে কাগজীটোলা, শ্যামবাজার কিংবা ফরাশগঞ্জের রাস্তা। রাস্তার পাশেই অধিকাংশ বাড়িই পুরনো। আর বেশিরভাগ বাড়ির নিচতলায় বই বাঁধাই কারখানা- বই বাঁধাইয়ের কাজ চলে। জানুয়ারির বই উৎসব ফেব্রুয়ারিতে বইমেলা কিংবা সারা বছর ধরে ছাপা বিভিন্ন প্রকাশনীর বিভিন্ন প্রকারের বই বাঁধাইয়ের কাজ হয় পুরানো ঢাকার একটা বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে। আমরা সুন্দর বাঁধাই বই হাতে পাই, জানিনা বাঁধাই করলো কে? জানিনা তার জীবন গল্পটা কি? বই বাঁধাই শ্রমিকের জীবন গল্প অনেকেরই অজানা।

পুরনো বাড়ী। আলো-বাতাসহীন বদ্ধ ঘর। স্যাঁতসেতে ঘরটাতে বই বাঁধাইয়ের কাজ করে। এরা বই বাঁধাই শ্রমিক নামে পরিচিত। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিদ্যুতের আলোতে চলে বই বাঁধাইয়ের কাজ। পাঠ্যবই থেকে শুরু করে কবিতা-গল্প-উপন্যাসসহ সবই বাঁধেন। শিশু থেকে শুরু করে পঞ্চাশোর্ধ বয়সের মানুষরাও এ পেশায় জড়িত। এদের কাজের ধরনও আলাদা। কেউ ছাপানো কাগজ ভাঁজ করেন, কেউবা ভাঁজ করা কাগজ সাজিয়ে মেছেল তোলেন। কেউ সুঁইয়ে সুতা লাগিয়ে ফর্মাগুলো ধারাবাহিকভাবে সাজিয়ে দেন, যাতে ফর্মার কোনো ওলট-পালট না হয়। এইভাবে মলাট লাগানো, তারপর মেশিনে বইয়ের তিনধার কেটে ফিনিশিং দেওয়া ও প্যাকেজিং করার পর সেই বই আমরা বাজারে পাই। পাঠকের বইটি পড়ার সময় যাতে বিষয়ের ধারাবাহিকতার কোনো ব্যাঘাত না ঘটে সে জন্য শ্রমিকদের খুবই সতর্ক থাকতে হয় পুরো সময়টাতে।

পুস্তক বাঁধাইয়ের কাজে শ্রমিকরা আসে মূলত টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর, সিরাজগঞ্জের চৌহালী ও মানিকগঞ্জের দৌলতপুর অঞ্চল থেকে। অভাবের তাড়নায়, জীবন ধারণের তাগিদে তারা ঢাকায় আসে। শুরু করে বই বাঁধাইয়ের কাজ।

কাজের বিভিন্ন ধরণ আছে। কেউ করে রোজ অনুযায়ী আবার কেউ দিন চুক্তি হিসেবে। সকাল ৮ থেকে শুরু হয় কাজ। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এক রোজ এবং বিকেল ৫টা থেকে রাত ১০ পর্যন্ত দুই রোজ আর রাত ১০টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত হাফ রোজ। একজন শ্রমিক সকাল ৮টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত কাজ করে তাহলে তার মোট আড়াই রোজ কাজ হয়। এই বাজারে আড়াই রোজ কাজ করে তাদের সংসার চলে না। একজন দক্ষ বই বাঁধাই শ্রমিক আড়াই রোজ অর্থাৎ ১৬ ঘন্টা কাজ করলে প্রতিদিন সর্বসাকুল্যে ৩৫০-৪০০ টাকা মজুরি পায় একজন শ্রমিক। এর মধ্যে সারাদিনের খাবার বাবদ তাকে খরচ করতে হয় একেবারে কম করে হলেও ১০০ টাকা। তাহলে সারা মাস কাজ করলে খাবার খরচ বাদ দিয়ে তার হাতে থাকে মাত্র ৭৫০০-৯০০০ টাকা। এই টাকা দিয়ে নিজের ওষুধপত্র ও হাত খরচ বাদ দিলে পরিবারের জন্য গ্রামে পাঠাতে পারে খুবই সামান্য টাকা। একজন দক্ষ শ্রমিকের যদি এই অবস্থা হয় তাহলে অদক্ষ ও শিশু শ্রমিকদের কী অবস্থা তা অনুমান করা যায়।
কারাখানাগুলোতে ১০/১২ বছরের শিশুরা খাবার ও মাসে ২০০০/৩০০০ টাকার বিনিময়ে দিন রাত কাজ করে, যে সময়ে তাদের স্কুলে যাওয়ার কথা! একমাত্র ঈদ উৎসব ছাড়া অন্য কোনো ছুটি তাদের নেই। সকল ধরনের উৎসব বোনাস থেকে তারা বঞ্চিত। উৎসবের সময় শুধুমাত্র মাসের মজুরি নিয়ে শুষ্ক মুখে শ্রমিকরা বাড়ি ফেরে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন কিংবা শুক্রবার তাদের কাজ কখনও বন্ধ হয় না।

বাঁধাই শ্রমিকরা কাজের জায়গাতেই খায়। কাজ শেষে জায়গা পরিষ্কার করে তারা লাইন দিয়ে ঘুমাতে যায়। কাজের মৌসুমে কারখানায় যখন বেশী কাগজ থাকে তখন তারা কাগজের উপরেই ঘুমায়। আলো-বাতাসহীন অপরিষ্কার ঘর, স্যাঁতসেতে মেঝে আর কাগজের ধুলো-ময়লা — এর উপরই হাড়ভাঙা খাটুনির পর প্রায় নেতিয়ে পড়া শরীর নিয়ে শুয়ে পড়া।

অত্যাবশ্যকীয়ভাবে লেগে থাকে হাঁপানি, চর্মরোগসহ নানা ধরনের রোগের প্রকোপ। কেউ অসুস্থ হলে বিশ্রামের জন্য কোনো জায়গা নেই। অসুস্থ হয়ে বইয়ের বান্ডিলের উপর বিশ্রাম নিতে গেলেও মালিকের গালিগালাজ শুনতে হয়। কারখানায় বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা নেই। লাইনের ময়লা, গন্ধযুক্ত পানি পান করে। এর ফলে তারা অনেকসময় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়, তারা পেটের পিড়ায় ভুগেন। বই বাঁধাই শ্রমিকরা কাজের সময় কোনো দূর্ঘটনার শিকার হলে বা মৃত্যু হলে তার দায়- দ্বায়িত্ব কারখানার মালিক বহন করে না।

সবশেষে- বই বাঁধাই শ্রমিকের এত কষ্টের পরেই। প্রকাশক লেখক পাঠক সদ্য ভুমিষ্ট হওয়া সন্তানের মতো নতুন বই হাতে পায়। কিন্তু আড়ালেই থেকে যায় বই বাঁধাই শ্রমিকের জীবন গল্প….

বিশ্ব বই দিবস বা বিশ্ব গ্রন্থ দিবসের সফলতা কামনা করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সংগঠক, সাপ্তাহিক নতুন কথা’র বিশেষ প্রতিনিধি, আরপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট কমরেড সৈয়দ আমিরুজ্জামান বলেন, “আলোকিত মানুষ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে স্বপ্নদ্রষ্টা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের হাত ধরেই সত্তর দশকের শেষের দিকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। হাটি হাটি পা পা করে ৪৫ বছর পূর্ণ হয়েছে তার। স্বাধীন, প্রজ্ঞাসম্পন্ন, চিন্তাশীল ও সৃজনশীল মূল্যবোধসম্পন্ন, শক্তিশালী মানুষ তৈরির লক্ষ্যেই বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ৪৫ বছর থেকে কাজ করছে। সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান, রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজবিদ্যাসহ বিশ্বজ্ঞানের শ্রেষ্ঠ বইগুলোর পঠন-পাঠন এই কাজের অন্তর্ভুক্ত।
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র কোনো গৎ-বাঁধা, ছক-কাটা, প্রাণহীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, বরং একটি সপ্রাণ সজীব পরিবেশ- জ্ঞান ও জীবন সংগ্রামের ভেতর দিয়ে পূর্ণতর মনুষ্যত্বে ও উন্নততর আনন্দে জেগে ওঠার এক অবারিত পৃথিবী। এক কথায়, যাঁরা সংস্কৃতিবান, কার্যকর, ঋদ্ধ মানুষ- যাঁরা অনুসন্ধিৎসু, সৌন্দর্যপ্রবণ, সত্যান্বেষী; যাঁরা জ্ঞানার্থ, সক্রিয়, সৃজনশীল ও মানবকল্যাণে সংশপ্তক ‘বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র; তাঁদের পদপাতে, মানসবাণিজ্যে, বন্ধুতায়, উষ্ণতায় সচকিত একটি অঙ্গন।
মানুষের মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা এবং বিভিন্নবিষয়ক জ্ঞান ও রুচিশীল সংস্কৃতিচর্চার মাধ্যমে প্রগতিশীল চিন্তাচেতনার বিকাশ ঘটানো এর উদ্দেশ্য।
২৩ এপ্রিল ২০২৪ বিশ্ব বই দিবস বা বিশ্ব গ্রন্থ দিবস জ্ঞানপিপাসু প্রতিটি মানুষের অবারিত অংশগ্রহণে আলোকিত মানুষ’ গড়ার আন্দোলন তরান্বিত হোক।”

এগারো শতকে দ্য টেল অব গেঞ্জি নামে একটি বই লিখেছিলেন মুরাসাকি শিকিবু। ৫৪ অধ্যায়ে লেখা জাপানি লেখিকার এই বইকে বলা হয় বিশ্বের প্রথম উপন্যাস।

এক হাজার বছর পর আজও সেই উপন্যাস মুগ্ধ হয়ে পড়ছেন পাঠক। মুঠোফোন বা ডিজিটাল স্ক্রিনে সব যখন দেখা যায়, হাতের নাগালে যখন লোভনীয় সব সিরিজ আর সিনেমা, তখনো কেন সেকেলে ভাষা ও ভঙ্গিতে লেখা হাজার বছরের পুরোনো এই উপন্যাস পড়ছেন মানুষ?

বই পড়ে মানুষ আসলে কী পান? জ্ঞান, আনন্দ আর তৃপ্তি তো পায়ই; পাশাপাশি শারীরিক ও মানসিক, উভয় স্বাস্থ্যেরই উপকার হয় বিস্তর। শৈশব থেকে বই পড়ার অভ্যাস তৈরি করে দেয় সারা জীবনের গভীর ভিত্তি। বই পড়ার আরও কিছু উপকারিতার কথা জানাচ্ছে হেলথলাইন ম্যাগাজিন।

শক্তিশালী হয় মস্তিষ্ক:

বই পড়ার অভ্যাসে আক্ষরিক অর্থে মন পরিবর্তন হয়। এমআরআই স্ক্যানার ব্যবহার করে গবেষকেরা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। পড়লে অনুরণিত হয় মস্তিষ্কের নিউরন। পড়ার ক্ষমতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিউরন নেটওয়ার্ক শক্তিশালী ও পরিশীলিত হয়। ২০১৩ সালের এক গবেষণা থেকে এসব তথ্য জানা যায়। গবেষকেরা মস্তিষ্কের প্রভাব জানতে উপন্যাস পড়ার সময় মানব মস্তিষ্কের এমআরআই স্ক্যান করেন। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা ৯ দিন ধরে পম্পেই নামের একটি উপন্যাস পড়েন। গল্পের উত্তেজনাকর নানান বিষয় পড়ার সময় মস্তিষ্কের নানান অংশে সক্রিয় ক্রিয়াকলাপ দেখা যায়। মস্তিষ্কের স্ক্যান থেকে জানা যায়, বই পড়লে মস্তিষ্কের সংযোগ বৃদ্ধি পায়। সোমাটোসেন্সরি কর্টেক্সের অংশে পরিবর্তন দেখা যায়। মস্তিষ্কের এই অংশ চলাফেরা ও ব্যথার মতো শারীরিক সংবেদনে প্রতিক্রিয়া জানায়।

শিশুরা বদলে যায়:

যুক্তরাষ্ট্রের ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের চিকিৎসকদের পরামর্শ, সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে বই পড়ুন। শৈশব ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময় এমনটা করার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। একই সঙ্গে বই পড়ার মাধ্যমে শিশু ও মা–বাবার মধ্যে উষ্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়। বাড়িতে পড়ার অভ্যাস থাকলে স্কুলে শিশুর পড়া ও অন্যান্য কর্মক্ষমতা বাড়ে। তৈরি হয় যোগাযোগ দক্ষতা, বাড়ে আত্মসম্মান। বই শিশুর মস্তিষ্ককে ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করে।

বই পড়লে সহানুভূতি বাড়ে

গবেষণায় দেখা যায়, যাঁরা কথাসাহিত্য পড়েন, গল্পে থাকা বিভিন্ন চরিত্রের অভ্যন্তরীণ জীবনের খোঁজ রাখেন—অন্যদের অনুভূতি ও আবেগ তাঁরা বেশি বোঝেন। গবেষকেরা এই ক্ষমতাকে ‘থিওরি অব মাইন্ড’ (মনতত্ত্ব) বলেন। সামাজিক সম্পর্ক তৈরি করতে, নিজেকে পরিচালনা করতে, সমাজে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় দক্ষতার সূত্র বইয়ের মধ্যে আছে। দীর্ঘমেয়াদি কথাসাহিত্য পড়ার অভ্যাস পাঠকের মনের জোর বাড়ায়।

শব্দভান্ডার তৈরি করে:

১৯৬০ দশকে বই পড়ার ওপর গবেষকেরা ‘ম্যাথিউ ইফেক্ট’ নামের একটি ধারণা নিয়ে আলোচনা করেন। যেসব শিক্ষার্থী নিয়মিত বই পড়েন, তাঁরা নিজের অজান্তে ছোটবেলা থেকে ধীরে ধীরে বড় শব্দভান্ডার তৈরি করেন। শব্দভান্ডারের পরিধি যাঁর যত ভালো, যত উন্নত হয়, তাঁর জীবনও তত উন্নত হওয়ার সুযোগ থাকে। নতুন শব্দ জানার ও চর্চা করার দারুন একটা উপায় হচ্ছে বই পড়া।

বয়স বাড়ার সংকট কমায়:

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অন এজিং বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মনকে ব্যস্ত রাখার উপায় হিসেবে বই ও ম্যাগাজিন পড়ার পরামর্শ দিয়েছে। গবেষণার চূড়ান্ত প্রমাণ এখনো হাতে না এলেও আভাস মিলেছে, বই পড়ার অভ্যাস থাকলে আলঝেইমারের মতো রোগ প্রতিরোধ করা সহজ হয়ে যায়। বয়স্ক যাঁরা প্রতিদিন সুডোকু বা গণিতের সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামান, তাঁদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ঠিক থাকে, উন্নত হয়। তাই আপনি যত আগে পড়া শুরু করবেন, আপনার জন্য তত ভালো। যুক্তরাষ্ট্রের রাশ ইউনিভার্সিটির মেডিকেল সেন্টার ২০১৩ সালে একটি গবেষণা চালায়, যেখানে বলা হয়েছে, যাঁরা সারা জীবন বই পড়ার মতো কার্যকলাপে যুক্ত থাকেন, তাঁদের মস্তিষ্ক ডিমেনশিয়া আক্রান্ত ব্যক্তিদের চেয়ে ভালো থাকে। ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থীদের চাপের স্তর জানতে যোগব্যায়াম, কৌতুক ও বই পড়ার প্রভাব পরিমাপ করা হয়। সেই সমীক্ষায় দেখা যায়, দিনে ৩০ মিনিট বই পড়লে রক্তচাপ ও হৃৎস্পন্দন স্থির থাকে। মনস্তাত্ত্বিক সংকট কমে যায়।

জীবনমান উন্নত করে বই:

রাতে ঘুমানোর আগে চিকিৎসকেরা মুঠোফোনের পরিবর্তে ছাপা বই পড়তে পরামর্শ দেন। নিয়মিত বই পড়লে কমে আসে বিষণ্নতার উপসর্গ। বই পড়লে আয়ু বাড়ে, প্রায় ১২ বছর ধরে চলা এক গবেষণা থেকে এমন তথ্য জানা যায়। ৩ হাজার ৬৩৫ জন প্রাপ্তবয়স্ক অংশগ্রহণকারীর ওপর চালানো একটি জরিপে দেখা যায়, যাঁরা বই পড়েন, তাঁরা বই না–পড়ুয়াদের তুলনায় প্রায় দুই বছর বেশি বেঁচে থাকেন। যাঁরা প্রতি সপ্তাহে ৩০ মিনিট বই পড়েন, তাঁদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ২৩ শতাংশ বেশি।

শিশুস্বর্গ
আমরা বইয়ের চাষ করি
বাংলাবাজার, ঢাকা।