সিলেট ১২ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৫:৩০ অপরাহ্ণ, জুন ১০, ২০২৪
[বিশ্বসাহিত্যের প্রধান চিরায়ত লেখকদের একজন ফ্রানৎস কাফকা। এই চেক কথাসাহিত্যিকের মৃত্যুর ১০০ বছর হলো এ মাসেই। লেখায় একসময় যে পরাবাস্তব পৃথিবীর কথা তিনি বলেছিলেন, সেই পৃথিবীই এখন বাস্তব।]
৩ জুন, সোমবার ফ্রানৎস কাফকার মৃত্যুর ১০০ বছর হলো। ১৯২৪ সালের এইদিনে যক্ষ্মায় ভুগে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনার পাশের এক ছোট শহরে মারা যান কাফকা। নিঃসন্দেহে গত শতাব্দীর সবচেয়ে প্রভাবশালী লেখক তিনি।
মাত্র ৪০ বছর বয়সে পৃথিবী ছেড়ে যাওয়া এই লেখককে বলা হয় সাহিত্যে আধুনিকতাবাদের প্রবর্তক। তিনটি অসম্পূর্ণ উপন্যাস, কিছু ছোট গল্প, কিছু চিঠি ও দিনপঞ্জি—এত কম লিখে এবং বেঁচে থাকতে একটা উপন্যাসও সমাপ্ত না করার পরও কাফকা বিশ্বসাহিত্যে অন্যতম প্রধান চিরায়ত লেখকের স্থান পেয়ে গেছেন। আধুনিক সাহিত্যের মানদণ্ড নির্ধারণ করে দেওয়ার কাজে আর পৃথিবীজুড়ে অসংখ্য খ্যাতনামা লেখক সৃষ্টিতে তাঁর সমান আর কেউই নেই। এখন পর্যন্ত প্রায় ১২৫ জন নোবেলজয়ী সাহিত্যিকের এক–তৃতীয়াংশই তাঁদের লেখায় কাফকার প্রভাবের কথা সরাসরি স্বীকার করেছেন। শেক্সপিয়ারের পর আর কোনো লেখককে নিয়ে এতটা লেখালেখি হয়নি, যতটা হয়েছে কাফকাকে নিয়। গত নব্বই দশকের মধ্যভাগের আগেই তাঁকে নিয়ে লেখা হয়ে গেছে ১০ হাজার গবেষণাগ্রন্থ। ডব্লিউ এইচ অডেন বলেছিলেন, ‘যদি কোনো একজন লেখকের নাম নিতে হয়, যিনি আমাদের কালের সঙ্গে সেই সম্পর্ক বহন করেন যেটা দান্তে, শেক্সপিয়ার ও গ্যেটে করতেন তাঁদের কালগুলোর সঙ্গে, তাহলে সবার প্রথমে মাথায় আসবে ফ্রানৎস কাফকার নাম।’
কাফকার মৃত্যুর প্রথম শতবর্ষ ঘিরে কয়েক দিন ধরে রীতিমতো উন্মাদনা দেখছি পৃথিবীর প্রধান সব সংবাদপত্র ও সাময়িকীতে। সবকটি মোটা দাগে একটাই কথা—মৃত্যুর ১০০ বছর পর কাফকা আমাদের জন্য এখন আরও প্রাসঙ্গিক। অর্থাৎ বর্তমান সময়-সমাজ, রাষ্ট্র-রাজনীতি ও মানুষের জীবনধারা যে পথে চলেছে, তাতে প্রতিমুহূর্তে এই বোধ জাগছে যে আধুনিক পৃথিবীর তাবৎ লেখকের মধ্যে একমাত্র কাফকাই বুঝি পেরেছেন আমাদের জীবনসত্যের সবচেয়ে ‘সত্য’ বয়ানটা লেখায় রেখে যেতে।
কী সেই বয়ান?
দিনপঞ্জিতে কাফকা লিখেছিলেন, ‘ভয়ংকর এক পৃথিবী আমি বয়ে চলেছি আমার মাথার মধ্যে। আমার নিজের ভেতর ওগুলো ধরে রাখার চেয়ে হাজার গুণ ভালো হয় মাথা ছিঁড়ে-কেটে টুকরো করে ফেলা। আসলে এ জন্যই আমার এই পৃথিবীতে আসা।’
কোন পৃথিবী?
কাফকা নিজেই বলেছেন, ‘ভয়ংকর’ এক পৃথিবী, এমন এক দুনিয়া, যেখানে ‘একটা খাঁচা আছে একটা পাখির সন্ধানে’। আমাদের মুক্তি ও বন্দিত্ব নিয়ে লেখা তাঁর এই ছোট প্রবচনের মধ্যেই ইঙ্গিত আছে এ জগৎ কোন অর্থে ভয়ংকর। এই পৃথিবীর সামাজিক-রাজনৈতিক কাঠামো বা ‘ব্যবস্থা’গুলো বানানোই হয়েছে কীভাবে আমাদের নিয়ন্ত্রণে বা বশে রাখা যায়, সেই আয়োজনের স্বার্থে। ওই আয়োজনের ধাপে ধাপে সাজানো সব সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও সরকারি ব্যবস্থাপনার মধ্যে কাফকা দেখতে পেয়েছেন একটাই শব্দ—আইন। এ আইন শুধু আদালত, অফিস, মিউনিসিপ্যালিটি বা ধর্মীয় অনুশাসনের আইন নয়, তাঁর হিসেবে এটা সর্বপরিব্যাপ্ত এক আইন, ‘যেমন আমাদের গায়ের ওপর থাকা চামড়া’। এই ‘আইনের’ সামনে ব্যক্তিমানুষ এতটাই অসহায় যে তাঁর সংগ্রামগুলো তাঁর নিজের কাছেই অপার বেদনার এবং পরের কাছে তা হাস্যকর রূপ নিতে বাধ্য।
কিন্তু পৃথিবীর এসব কায়দাকানুন, ব্যাপারস্যাপার কাফকার কাছে কখনোই অস্বাভাবিক বলে মনে হয়নি। যদি হতো, তাহলে আমরা তাঁর প্রায়ই অতি নাটকীয়, প্রায়ই হেঁয়ালি ও কৌতুকে ভরা লেখাগুলোর মধ্যে শুধু প্যারোডিই খুঁজে পেতাম; লেখা পড়ে মনে হতো, তিনি বুঝি মানুষের জীবনসংগ্রামগুলো নিয়ে তামাশা করছেন। তা আমাদের মনে হয় না। উল্টো যেটা হয়, সেটা রীতিমতো গায়ে কাঁটা দেওয়া এক বিভীষিকাময় অনুভূতি। কারণ, কৌতুক আসলে কাফকা করেননি। যে লেখকের ঘোষিত মিশন ছিল, দুনিয়াকে তিনি ‘পৃথিবীর শুদ্ধ, সত্য ও পরিবর্তনের অতীত’ রূপে তুলে ধরবেন, তাঁর পক্ষে যেমন সম্ভব ছিল না কলমকে বিদ্রোহীর কৃপাণ বানানো, তেমন অসম্ভব ছিল পাঠকের মনজুড়ানো প্রেমকাহিনি লেখা।
১৯২২ সালে, মৃত্যুর দুই বছর আগে, কাফকা লিখেছিলেন, ‘লেখালেখির সান্ত্বনা’ এটাই যে এর মাধ্যমে ‘খুনিদের সারি’ থেকে তিনি বেরিয়ে আসতে পারেন। এই ‘খুনিদের সারি’ই মোটা দাগে শাসক বা ক্ষমতাশালীদের সারি। যা কিছু আমাদের ভয় দেখাতে পারে এবং বিরক্ত, বিভ্রান্ত ও উৎপীড়িত করতে পারে, তার সবটা; এবং যেহেতু আমাদের বাড়িওয়ালারা থেকে শুরু করে ট্রাফিক পুলিশ পর্যন্ত সবাই সেটা আমাদের সঙ্গে করতে পারে, তাই কাফকার পুরো পৃথিবীটাই এখন ‘কাফকায়েস্ক’ এক জগৎ। পৃথিবীকে তিনি ‘শুদ্ধ, সত্য ও পরিবর্তনের অতীত’ রূপে আঁকতে গিয়ে পৃথিবীর জন্য প্রযোজ্য কোনো বিশেষণকে বদলে দিয়ে যাননি; বরং পৃথিবী তাঁর নাম দিয়েই নিজেকে সঙ্গায়িত করার সোজা পথ বেছে নিয়েছে।
যেকোনো ইংরেজি অভিধানেই ‘কাফকায়েস্ক’ শব্দটা এখন হাজির। চারটি বড় ইংরেজি অভিধানে এ শব্দের চার রকম সংজ্ঞা পাই। এক. অর্থহীন, বিভ্রান্তকর, প্রায়ই ভীতিকর ও বিপজ্জনক জটিলতা; উদাহরণ: ‘কাফকায়েস্ক আমলাতন্ত্র’। দুই. পরাবাস্তব বিকৃতিতে ভরা এবং প্রায়ই আগাম বিপদ ও নৈরাজ্যের বোধজাগানো অনুভূতি; উদাহরণ: ‘কাফকায়েস্ক বিচারব্যবস্থা’। তিন. দুঃস্বপ্নপীড়িত জটিল, উদ্ভট ও বিচিত্র অথবা অযৌক্তিক কিছু; উদাহরণ: ‘রাষ্ট্রক্ষমতার কাফকায়েস্ক অলিগলি’। চার. অত্যাচার, নিপীড়ন, বৈষম্য ও দুঃস্বপ্নের লক্ষণাক্রান্ত কাল্পনিক জগৎ।
সন্দেহ নেই, এই চার সংজ্ঞায় যা কিছু বলা হচ্ছে, তার সবটাই একক ও সম্মিলিতভাবে আমাদের গত শতাব্দী ও এই চলমান শতকের মূল চেহারা। আমাদের আধুনিক মনের বর্তমান মানচিত্র ঠিক এমনই। পরিস্থিতিগুলো থেকে বাঁচার বা পালানোর পরিষ্কার কোনো পথ আর আপনার হাতে নেই; বরং হাতে উঠে এসেছে স্মার্টফোন, যার পর্দার বিভ্রান্তকর আলোর দিকে তাকিয়ে আপনি কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে গিয়ে কোনো একভাবে শুধু নিজেকে লুকাবেন।
আর এসব বিষয়ের রাষ্ট্রীয় বা জাতিগত পর্যায়ে এখনকার চেহারা?
‘ভয়ংকর এক পৃথিবী আমি বয়ে চলেছি আমার মাথার মধ্যে। আমার নিজের ভেতর ওগুলো ধরে রাখার চেয়ে হাজার গুণ ভালো হয় মাথা ছিঁড়ে-কেটে টুকরো করে ফেলা।’
কাফকার সত্য হয়ে ওঠা পৃথিবীতে মানুষ এখন অসহায়-
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বাড়ছে। বিনা বিচারে কারাগারে মানুষের পচে মরা বাড়ছে। নিত্যদিন বড় বড় অফিসে, হাসপাতালে, থানায় আর বিদ্যালয়ে আমাদের হয়রানির শিকার হওয়া বাড়ছে। পৃথিবী ভরে যাচ্ছে কাফকার নায়ক জোসেফ কে-এর মতো বা গ্রেগর সামসার মতো অস্পৃশ্য, নেড়ি কুকুরসদৃশ মানুষ ও পোকায়। যে মূল বোধে আমরা ভুগছি, তা হীনম্মন্যতার বোধ। টিভির পর্দায় বা ফেসবুকে যখন আমরা নিত্যদিন দেখছি যে ক্ষমতাশীলরা কেমন দুম করে কী সূক্ষ্ম ভাষায় যুদ্ধ চাপিয়েই চলেছে সাধারণ মানুষের ওপর, তখন স্বাভাবিক কোনো অচেনা নম্বরের ফোন ধরতেও তো ভয় পাচ্ছি আজকাল। ফোনের ওপাশে যদি এমন কেউ থাকে যে আমাকে মৃত্যু পরোয়ানা জানাবে?
আপাতদৃষ্টে খোদার দয়ালু হাতের ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত, নিষ্ঠুর এই আধুনিক বিশ্বে কাফকার লেখা আপনি না পড়তে পারেন, কিন্তু ‘কাফকায়েস্ক’ দৃশ্যমালা এড়াবেন কী করে? সাড়ে তিন মাস আগে জেলে মারা গেলেন (আসলে খুন হলেন) রাশিয়ার বিদ্রোহী নেতা অ্যালেক্সি নাভালনি। তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার দিন আমরা দেখলাম যে অনেক ফুলের মাঝখানে মাটিতে রাখা আছে ফ্রানৎস কাফকার দ্য ট্রায়াল উপন্যাসের তিন প্রচ্ছদে তিনটি সংস্করণ। আর তিন রুশ পুলিশ বইগুলো এখানে রাখা যুবকদের ঘাড়ে হাত রেখে যেন বলছে, ‘জলদি করো।’ এই দৃশ্য কাফকায়েস্ক নয়। যেটা কাফকায়েস্ক তা হলো, মাঝখানের সুদর্শন পুলিশটার চোখে আমরা দেখতে পাচ্ছি এক স্পষ্ট ধমক, ‘শোনো বিরোধী দলের ছেলেপেলেরা, তোমরা আমাদের সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে আছ।’
এই এরাই কাফকার বলা ‘খুনিদের সারি’র অংশ। আর ক্ষণজন্মা এই লেখক মনে করতেন যে একমাত্র লেখালেখিই পারে তাঁকে ওই ‘খুনিদের সারি’ থেকে দূরে সরাতে, যেখানে তিনি সৃষ্টি করতে পারবেন ‘আরও উচ্চতর ধরনের এক দেখার চোখ। সেই চোখ যত বেশি উঁচুতে যাবে, খুনিদের সারি থেকে আমার অস্তিত্ব তত বেশি দূরে যেতে পারবে।’
সেই উচ্চতর দেখার চোখ দিয়েই তিনি লিখলেন অবিস্মরণীয় কিছু লেখা। সেসব লেখায় আমাদের দৈনন্দিনের এই পৃথিবীতেই বিচিত্র কিছু ঘটনা এমনভাবে ঘটে যেন ওসবের মধ্যে অস্বাভাবিকতার সামান্য কিছু নেই। কয়েকটা উদাহরণ দিই। গ্রেগর সামসা নামের এক সেলসম্যান এক সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে যে সে একটা তেলাপোকায় পরিণত হয়েছে (গল্প: ‘রূপান্তর’)। জোসেফ কে নামের এক নিরাপরাধ ব্যাংকারকে একদিন সকালে অজানা অপরাধের দায়ে দুজন সরকারি লোক অকস্মাৎ গ্রেপ্তার করে বসে। কিন্তু কেউ তাকে কোথাও ধরে নিয়ে যায় না। তাকে শুধু ‘মুক্ত’ভাবে ঘোরাফেরা করার অনুমতি আর ‘পরবর্তী নির্দেশের জন্য অপেক্ষা’ করার আদেশ দেওয়া হয় (উপন্যাস: বিচার)। কে নামের এক ভূমিজরিপকারী বেচারা ভদ্রলোক একদিন হাজির হয় এক গ্রামে। উদ্দেশ্য, গ্রামের শাসকদের দুর্গ বলে পরিচিত এক রহস্যময় দুর্গের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সে দেখা করবে (উপন্যাস: দুর্গ)। এক অদ্ভুতদর্শন কিলিং মেশিন আক্ষরিক অর্থেই দণ্ডিত আসামিদের গায়ে শত শত সুই দিয়ে নকশা বুনে লিখে দেয় তাদের যার যার অপরাধের কথা (গল্প: ‘দণ্ড উপনিবেশ’)। এক লোক আজীবন আইনের দরজার বাইরে অপেক্ষা করে ভেতরে ঢোকার জন্য। তারপর সে যখন মারা যাচ্ছে, তখন তাকে বলা হয়, এই দরজা শুধু তার জন্যই বানানো হয়েছিল (গল্প: ‘আইনের দরজায়’)। এক ছেলে বিয়ে করে স্বাধীনভাবে সংসার করতে চায়। আর এতে খেপে গিয়ে তার বৃদ্ধ পিতা ছেলেকে পানিতে ডুবে মরার মৃত্যুদণ্ড দিয়ে বসেন (গল্প: ‘রায়’)। এক বৃদ্ধ গ্রাম্য চিকিৎসক বরফে ঢাকা রাতে রোগী দেখতে যান দূরের গাঁয়ে। সেই গাঁয়ের লোকেরা চিকিৎসককে তার রোগ সারানোর ব্যর্থতার শাস্তি হিসেবে শুইয়ে দেয় রোগীর বিছানায় (গল্প: ‘এক গ্রাম্য ডাক্তার’)। সম্রাটের একখানা বার্তা নিয়ে তার বাহক কোনো দিনই পৌঁছুতে পারে না গন্তব্যে। অন্যদিকে শহরের মার্কেট স্কয়ারে চলে নামহীন সেই সম্রাটকে ফাঁসিতে ঝোলানোর কাজ (গল্প: ‘চীনের প্রাচীর’)। এক লোকের পেশাই হলো না খেয়ে থাকা, ক্ষুধাশিল্পী সে; একদিন না খেয়ে খেয়ে মারা যায় এই শিল্পী। তবে মরার আগে বলে যায়, এ দুনিয়ায় খাওয়ার মতো কোনো খাদ্য সে খুঁজে পায়নি বলে অনশনই ছিল তার শিল্প (গল্প: ‘এক অনশন শিল্পী’)।
এ-ই আমাদের ফ্রানৎস কাফকা। কর্তৃত্ববাদী পিতার চাহনির সামনে অসহায় এক আত্মবিশ্বাসহীন যুবক, যে কিনা বন্ধুকে চিঠি লিখে মিনতি করে গিয়েছিল তাঁর সব লেখা যেন পুড়িয়ে ফেলা হয়।
কাফকার লেখা কেন প্রাসঙ্গিক, এর উত্তর তাঁর নিজের বিখ্যাত দিনপঞ্জির একটা টুকরো লেখার মধ্যেই আছে। তিনি বলছেন, এই লেখা পড়তে হবে। কারণ এতে আছে তাঁর ‘কালের নেতিবাচকতা’। বলছেন, ‘আমি প্রচণ্ডভাবে আত্মস্থ করে নিয়েছি আমার কালের নেতিবাচক বিষয়গুলো। এমন এক কালে আমি বাস করছি, যার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আমার কোনো “আইনি” অধিকার নেই। তবে কালটার প্রতিনিধিত্ব করার অধিকার আমার আছে।’
কাফকার সেই কাল আজও চলছে, আরও সত্য হয়ে উঠেছে কাফকার জগৎ। আমরা এখন সবচেয়ে নিঃসঙ্গ এক কাল বা প্রজন্মের মানুষ। আমরা জেনারেশন কে। এটা কলসেন্টারের কাল। ইন্টারনেটে চেহারা না দেখে ‘বন্ধুত্বের’ কাল। জাতিগত ও ধর্মোদ্ভূত ঘৃণা আর যুদ্ধের কাল।
১৯৫৬ সালে যখন সোভিয়েত ট্যাংক গুঁড়িয়ে দিয়েছে হাঙ্গেরির প্রতিরোধ আন্দোলন, বুদাপেস্টে গ্রেপ্তার করা হলো বিখ্যাত মার্ক্সবাদী দার্শনিক গেয়র্গ লুকাচকে, বন্দী করে তাঁকে রাখা হলো এক রোমানিয়ান দুর্গে, জানানো হলো না তাঁর অপরাধ কী, কিন্তু বলা হলো, ‘আপনার আইনি অধিকারের সবটাই আছে।’ লুকাচ লিখলেন, ‘তার মানে কাফকা তো আসলে বাস্তববাদী ছিলেন।’
ফ্রানৎস কাফকার কিছুই তাঁর মৃত্যুর ১০০ বছরে এসে আর মনে হয় না যে পরাবাস্তব। উল্টো প্রতিমুহূর্তে এ বোধ জাগে যে কাফকা অতি বাস্তব।
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by M-W-D