জ্ঞানতাপস সাংবাদিক মিজানুর রহমান খানের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ

প্রকাশিত: ১২:১৫ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ১১, ২০২৫

জ্ঞানতাপস সাংবাদিক মিজানুর রহমান খানের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক | ঢাকা, ১১ জানুয়ারি ২০২৫ : সংবিধান ও আইন বিশেষজ্ঞ, লেখক, গবেষক ও জ্ঞানতাপস সাংবাদিক মিজানুর রহমান খানের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ।

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ১১ জানুয়ারি রাজধানীর মহাখালীর এক বেসরকারি হাসপাতালে মিজানুর রহমান খানের অকাল প্রয়াণ হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৩ বছর। তাকে ঢাকার মিরপুরের বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়।

তিনি দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে সংবিধান বিষয় পড়াতেন। আইন-আদালত ও কূটনীতির জটিল-কঠিন বিষয়গুলো তিনি সহজ করে পাঠকের কাছে উপস্থাপন ও ব্যাখ্যা করেছেন। যেগুলো দৈনিক যুগান্তর, সমকাল, মানবজমিন, প্রথম আলো ইত্যাদি পত্রিকার মাধ্যমে পাঠকদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া তিনি দৈনিক খবর এবং দৈনিক বাংলাবাজার ও দৈনিক মুক্তকণ্ঠের প্রধান প্রতিবেদক, বার্তা সম্পাদক ও কূটনৈতিক প্রতিবেদক পদে দায়িত্ব পালন করেন। সংবিধান ও সংসদীয় বিষয়, আইন-আদালত এবং কূটনীতির জটিল বিষয়গুলোকে বিশ্বাসযোগ্য ও জনপ্রিয়করণে তার একক ভূমিকা ছিলো।

মাত্র ২৭ বছর বয়সে ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর প্রথম বই ‘সংবিধান ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিতর্ক’ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে জনপ্রিয় হয়। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে বইটি পাঠ্য তালিকায় রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে তার এই বইকে ডিজিটাইজড ভার্সন করে তাদের লাইব্রেরিতে সংযোজন করে ও বাংলাদেশের সাংবিধানিক আইনের ওপর রেফারেন্স বইয়ের মর্যাদা দেয়।

মিজানুর রহমান খানের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলোর মধ্যে আরো রয়েছে- ১৯৭১: আমেরিকার গোপন দলিল, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা: এক অশনি সংকেত; বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটের স্বরূপ; মার্কিন দলিলে মুজিব হত্যাকাণ্ড; মার্কিন দলিলে জিয়া ও মঞ্জুর হত্যাকাণ্ড এরশাদের পতন এবং বিএনপির জন্ম; মার্কিন দলিলে বঙ্গবন্ধু ও চার নেতা হত্যাকাণ্ড, জেনারেল জ্যাকবের মুখোমুখি ইত্যাদি।

বিভিন্ন জার্নালে পঞ্চাশটির বেশি প্রকাশিত প্রবন্ধ আছে তার।

মিজানুর রহমান খানের গবেষণায়ই প্রথম একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিলের সন্ধান পাওয়া যায়, যেখানে দেখা যাচ্ছে একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যার বিষয়ে তৎকালীন ঢাকায় অবস্থিত আমেরিকান কনস্যুলেট একটি তদন্ত রিপোর্ট প্রণয়ন করেছিল। যে তদন্তে তারা দেখিয়েছে, বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী জড়িত ছিলো।

আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিম চৌধুরী মুঈনুদ্দীনের বিচারের সময় মিজানুর রহমান খানের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলো। এই মামলায় যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে তিনি লিখিত তথ্য দিয়েছিলেন।

১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে সংগঠিত ক্যু’র সঙ্গে সিআইএর সম্পৃক্ততার বিষয়ে গবেষণা খুব কম হয়েছে। এ বিষয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল বিদেশী সাংবাদিক লরেন্স লিফসুলজের। মিজানুর রহমান খান হলেন প্রথম ও একমাত্র বাংলাদেশি গবেষক যিনি এ বিষয়ে সবচেয়ে গভীর অনুসন্ধান চালিয়েছেন।

প্রখ্যাত আইনজীবী ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলামের আইন পেশায় পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষে তার আইনি চিন্তা, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের নেপথ্য ইতিহাস ও বাহাত্তরের সংবিধান তৈরির নানা অজানা তথ্যের সংগ্রহে একটি সম্মাননা স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ করা হয় কয়েকবছর আগে। মিজানুর রহমান খান ছিলেন সেই গ্রন্থের সম্পাদক।

মিজানুর রহমান খানের ছোট ভাই দৈনিক আমাদের বার্তার প্রধান সম্পাদক ও দৈনিক শিক্ষাডটকম সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান খান স্বাক্ষরিত এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে ‘মিজানুর রহমান খান ফাউন্ডেশন’ ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে।

আজ সকালে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে কবর জিয়ারত ও শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। আগামীকাল ১২ জানুয়ারি শনিবার ঝালকাঠি জেলার নলছিটি পৌরসভার স্টেশন রোডে প্রয়াতের বাড়িতে কুরআনখানি ও দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়া ঝালকাঠীর পৌর সিটি পার্কের ভেতরে দৈনিক আমাদের বার্তার অফিসে শনিবার বিকেল চারটায় স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।

সৈয়দ আমিরুজ্জামানের শ্রদ্ধা

প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক, সংবিধান ও আইন বিশেষজ্ঞ, লেখক, গবেষক ও জ্ঞানতাপস সাংবাদিক মিজানুর রহমান খানের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকীতে বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য, আরপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ আমিরুজ্জামান।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ