ঋণ-পত্র

প্রকাশিত: ৯:২৫ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ২০, ২০২৫

ঋণ-পত্র

গোপাল বাগচী |

অজস্র ঋণ হয়ে আছে আমার, চারপাশে,
এখনও বাড়ছে দিনকে দিন।

আমার সে ঋণ-
একজন কৃষকের কাছে, কামার-কুমোর, তাঁতি-জেলের কাছে,
মুচির কাছে, একজন ছোট্ট দোকানির কাছে।

–এমনি করে হাজার পেশার মানুষের কাছে,
যাদের শ্রম-স্বেদে আমার এই যাপিত জীবন।

আমার সে ঋণ-
পরিবার-পরিজন, আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের কাছে,
যাদের স্নেহে, যত্নে, ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে আছি,
যাদের অর্থে, পরামর্শে বেড়ে উঠেছি,
সঞ্জীবনী সুধাটুকুন তো তারাই সঞ্চারিত করে আমার জীবন-প্রবাহে।

আমার অপরিসীম ঋণ-
সেই শিক্ষাগুরুর কাছে, জ্ঞানীর কাছে, প্রাচীনের কাছে,
যারা আমাকে জানা-আজানা রাজ্যে নিয়ে গেছে, অভিজ্ঞতার আলোয় পথ দেখিয়েছে,
আমার আত্মার স্ফুরণে তাঁরাই ছিলেন দ্রোণাচার্য।

আমার ঋণ-
একজন সংস্কারকের কাছে, একজন কবির কাছে, শিল্পীর কাছে, একনিষ্ঠ গবেষকের কাছে,
যারা জীবনের গতি ও অর্থ খুঁজে পেতে ভীষণ ভাবিয়েছে,
জীবনকে সহজ ও যুক্তির কাছে নিয়ে গেছে।

এমনি করে কত অজানিতের সেবা, উপকারে নানা দুর্বিপাক থেকে মুক্তি পেয়েছি।

নইলে সমস্ত গল্পের অবসান হতো দিন ফুরোবার আগেই।

ভেবে অবাক হই,
–মানুষের কাছে আমার এত ঋণ!
শুধু নিয়ে গেছি দুহাত ভরে।

আমি যোগ্য কি-না, কখনো ভাবেনি তাঁরা।

তবু তাঁরা দিয়ে গেয়ে গেছে অকাতরে,
কখনো ফিরিয়ে নেয়নি মুখ,
টলেনি হাত, কাঁপেনি বুক,
যেন স্বর্গীয় দূত।

এত যে ঋণ-
তবুও কি ভেবেছি কখনো তাদের কথা, দুদন্ড একান্তে বসে?

আর্দ্র হয়েছে মন? নত হয়েছে চিবুক?

কৃতজ্ঞতা জেগেছে মনে?

কখনো কি মনে হয়েছে-
ঋণ আর ধার যে এক নয়, পারিশ্রমিক তো নয়ই।
ঋণ! সে যে অপরিশোধের।

ঋণ আমার- রাস্ট্রের কাছে, দেশের কাছে, প্রকৃতির কাছে
ক্ষুদ্র এ জীবন– আজ ঋণভারে আনত।

শুধু অকপট স্বীকারটুকুন-
হে মহৎ-মহতী যত,
তোমরা সকলেই ধনী, আমি শুধু ঋণী;
আমার এ অপরগতাটুকুন মেনে নিয়ে
আবদ্ধ করেছো পাশে;
—সেও আরেক ঋণ,
অপার বিস্ময়ের।