শহীদের রক্তে লেখা সমতার অভিযাত্রা

প্রকাশিত: ৮:৪৬ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৭, ২০২৫

শহীদের রক্তে লেখা সমতার অভিযাত্রা

Manual1 Ad Code

সৈয়দ আমিরুজ্জামান |

(শহীদ ডা. মিলনের ৩৫তম শাহাদত দিবসে)

রাজপথে সকাল ফোটে—
কিন্তু সেই আলো ছিল রক্তে রঞ্জিত
টিএসসির কোনায়,
যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল এক তরুণ চিকিৎসকের
বুক ভরা ন্যায়ের স্বপ্ন।

মিলন—
তোমার নামটি উচ্চারণ হলেই
দ্রোহে টগবগে এক প্রজন্ম
জেগে ওঠে বুক চিতিয়ে।
তোমার শরীরে গুলি ঝরে পড়ার সাথে সাথে
কেঁপে উঠেছিল সমগ্র দেশ,
আর গণমানুষের দীর্ঘদিনের স্তব্ধ ক্ষোভ
ধেয়ে এসেছিল ঝড়ের মতো।

কেননা সেই আঘাতে শুধু একজন মানুষ পড়ে যায়নি,
পড়ে গিয়েছিল স্বৈরশাসনের মিথ্যে অভিজ্ঞতা,
মিথ্যে বিজয়ের মুখোশ।

মিলন,
কৈশোরেই তুমি দেখেছিলে
৬৯-এর উন্মত্ত ঢেউ,
৭১-এর আগুন ঝরানো মিছিল—
যেখানে মানুষের স্বপ্ন আর রক্ত
একাকার হয়ে গিয়েছিল।
সেই ইতিহাসের ফাঁকে ফাঁকে
যখন তুমি বড় হয়েছো
তখনই তোমার ভেতরে জন্ম নিয়েছিল
পরিবর্তনের প্রতি এক অনমনীয় আস্থা—
একটি বৈষম্যহীন, গণমননের দেশ
যেখানে মানুষ বাঁচবে সমতার আলোয়।

Manual8 Ad Code

তুমি বলেছিলে—
“স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মতো মৌলিক বিষয়
গণবিরোধী শাসকের হাতে যাবে না”
এ যেন ছিল তোমার শপথ,
মানুষের জীবনের পাশে দাঁড়ানোর প্রত্যয়।

কিন্তু দেশ কি বদলেছে?
তোমার শাহাদতের পর ৩৫টি বছর
আলোকিত সকাল বয়ে আনেনি এখনও,
বরং রয়ে গেছে দুর্নীতি,
রয়ে গেছে বৈষম্যের অন্ধকার কূপ।

গুম, খুন, নারী নির্যাতন আর
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পেঁয়াজের মতো তীব্র ব্যথা
আজও গৃহস্থের হাঁড়িতে ধোঁয়া তুলতে দেয় না।
সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি বাজার,
বিচারের হাত যেন পক্ষাঘাতগ্রস্ত।
রোহিঙ্গা প্রান্তরে ইতিহাসের গভীর ক্ষত
আর রাজনীতির মুখোশ
হাসে তামাশা করে আমাদের ব্যর্থতায়।

Manual5 Ad Code

তবু দেশ এগোয়—
অর্থনীতির পরিমাপে অর্জন বাড়ে,
মাথাপিছু আয় বেড়ে ওঠে
কিন্তু সমতা?
বৈষম্য?
মানুষের মর্যাদা?
এই প্রশ্নগুলো এখনো দাঁড়িয়ে থাকে
জাতির সামনে অনির্বাণ শিখার মতো।

মিলন,
আজ যখন নতুন নির্বাচনের হাওয়া বইছে
মানুষ আবার তুমুল অপেক্ষায়—
কেউ একজন আসুক,
যে সত্যিই মানুষের কথা বলবে,
মানুষের পক্ষে থাকবে,
সমতার চেতনায় নতুন পথ খুলে দেবে।
এ দেশ যেন আর না হয়
বাজিকরের দেশের মতো,
যেখানে ক্ষমতার খেলা
মানুষের জীবনকে ঠেলে দেয় গভীরতর অন্ধকারে।

হে তরুণ সমাজ,
যারা ছিলে সব আন্দোলনের পুরোভাগে—
ভাষার সংগ্রাম থেকে স্বাধীনতা,
স্বৈরাচার বিরোধী লড়াই থেকে
গণতন্ত্রের পুনরুত্থান—
আজও এই দেশ তোমাদেরই অপেক্ষায়।

তোমাদের ক্ষোভ, তোমাদের অভিমান
বুকের ভেতর জমিয়ে না রেখে
ফিরে এসো রাজপথে,
ফিরে এসো ন্যায়–অধিকারের সংগ্রামে।
কারণ আজও উচ্চারিত হয়
মিলনের সেই নীরব আহ্বান—
“সমতার চেতনায় নতুন দেশ গড়ো,
অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন
গণমানুষের রাষ্ট্র গড়ো।”

Manual6 Ad Code

শহীদ মিলন—
তোমার রক্তের ঋণ শোধ করা যায় না,
কিন্তু আমরা পথ হারাতে পারি না।
তোমার স্বপ্নই আমাদের রাজপথের দিশা,
তোমার শোকই আমাদের প্রতিবাদের শপথ।

Manual6 Ad Code

তোমার শাহাদতের ৩৫ বছর পরও
আমরা লিখে যেতে চাই—
একটি নতুন জাতির আত্মকাহিনি,
যেখানে মানুষ বাঁচবে মর্যাদায়,
স্বাধীনতার অর্থ হবে প্রকৃত স্বাধীনতা,
অর্থনীতির মানে হবে মানুষের মুখে হাসি।

হে মিলন,
আজকের এই দুর্বিষহ সময়ে
তোমার স্মৃতি হলো আলো,
তোমার জীবন হলো দিশারি।
তোমার নামেই আমরা শপথ নিই—
এই দেশকে বদলাতে হবেই,
সমতার অমর অভিযাত্রা
থামানো যাবে না কোনোদিন।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ