১০ বছর পর শ্রীমঙ্গল পৌরসভার (মেয়াদ উত্তীর্ণ) নির্বাচন হতে যাচ্ছে

প্রকাশিত: ১০:২৯ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ৩০, ২০২১

১০ বছর পর শ্রীমঙ্গল পৌরসভার (মেয়াদ উত্তীর্ণ) নির্বাচন হতে যাচ্ছে

Manual8 Ad Code

ইশরাত নাহের ইরিনা | শ্রীমঙ্গল, ৩০ অক্টোবর ২০২১ : ১০ বছর পর শ্রীমঙ্গল পৌরসভার (মেয়াদ উত্তীর্ণ) নির্বাচন হতে যাচ্ছে।

কি কারনে নির্বাচন হয়নি এতোদিন, সে কথা ক্লাস ওয়ানের বাচ্চাও বলতে পারবে। সেই বিতর্কে না গিয়ে আমি একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে কথা বলতে চাই।

আমি যখন শ্রীমঙ্গলে বাসা থেকে বের হই, সাধারনত আমি পায়ে হাটি বা হাটতে চাই। কিন্তু বাসা থেকে বের হলে প্রথমেই মনে হয়, এই শহর বসবাসের অযোগ্য। অথচ শ্রীমঙ্গল বাংলাদেশের একটি ফার্স্ট ক্লাস পৌরসভা। শহরের ভেতর হাটার পর্যাপ্ত জায়গা নেই। শুধু বিল্ডিংই হচ্ছে কিন্তু মানুষের স্বাস্থ্য ঠিক না থাকলে সব শেষ। চা বাগানে গিয়ে কেউ হাটেন, কেউ হাটেন না। শহর থেকে রাস্তাগুলো এমন করে দিতে হবে যাতে করে মানুষ হেটেই কর্মস্থলে পৌছাতে পারেন এবং শহর থেকে বেরিয়ে চা বাগানে হাটার জন্য চলে যেতে পারেন। মানুষকে বোঝাতে হবে শরীরচর্চার গুরুত্ব কতটুকু।

আর যে জ্যাম, মাশাল্লাহ! রিক্সায় ১৫ মিনিট বসে থাকতে হবে এই ভয়ে আমি হাটা শুরু করি।তারপর মানুষের ধাক্কা খেয়ে বাসায় এসে আবার গোসল করতে হয়।

কিছু রাস্তা এতো ভাংগা। আর বৃষ্টি হলে কি হয়, গত কয়েক বছর আমি দেশের বাইরে থেকে আপনাদেরই আপ্লোড করা ভিডিওগুলো দেখেছি।আপনারা আমার চেয়ে ভালো বলতে পারবেন, কেমন লাগে রাস্তায় যখন সুইমিং পুল হয়!!!

Manual4 Ad Code

আর শ্রীমঙ্গলের ময়লার ভাগাড় নিয়ে আমি কথাই বলতে চাইনা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে ময়লা ফেলে রেখে এ কেমন শহর পরিচালনা, আমার মাথায় ঢোকে না।

আর ময়লা নিয়ে আন্দোলন করার পর একমাস ময়লার ভাগাড়ে ময়লা না ফেলে শ্রীমঙ্গল শহরে সব মানুষের বাসার সামনে, রাস্তার সামনে ময়লা ছিলো। মানুষ বিরক্ত হয়ে, বাধ্য হয়ে আবার সেই ময়লার ভাগাড়েই ময়লা ফেলা শুরু করেছিলো।এগুলো সমাধান? আজব! এই ময়লার ভাগাড় থেকে একটা সোশ্যাল বিজনেস মডেল তৈরী করা যেতো। মানুষের লাভ হতো, শিক্ষার্থীরা গন্ধ এবং দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতো এবং এই প্রজেক্ট এর মাধ্যমে কিছু মানুষের কর্মসংস্থান হতো।

একটা শহরকে বসবাসযোগ্য করে তোলার জন্য প্ল্যানিং থাকতে হয়। সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন থাকতে হয়। প্রয়োজনে একজন নগর পরিকল্পনাবিদ এনে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করা যেতে পারে। ওই ঘুরেফিরে এক অডিটোরিয়াম আর খেলার মাঠ দিয়ে কত সান্ত্বনা পাওয়া যায়?

Manual4 Ad Code

আর আমার বাসার সামনে প্রতিবছর কোরবানি ইদের গরুর হাট বসে। ইদের আগে মেয়েরা এ ভীড়ের মধ্যে চলাফেরা করতে পারেনা আর ইদের পরে গোবর আর কাদার জন্য বাকিরা চলাফেরা করতে পারেনা। শহরের ভেতরে এরকম গরুর বাজার করে পরিবেশ নস্ট এবং সাধারণ মানুষের জীবনে আসে দুর্ভোগ।

Manual8 Ad Code

আমার বাসার সামনে সিএনজি স্ট্যান্ড এর যন্ত্রনায় হাটাই যায় না শান্তিতে। কিছুদিন আগে এক মেয়েকে এক সিএনজি ড্রাইভার বিরক্ত এবং খারাপ ব্যাবহার করায়, আব্বু খুব জোড় গলায় কথা বলে। তারপর সবাই এসে হাতে পায়ে ধরে। এটা কোনো কথা?

Manual8 Ad Code

আমাদের কিছু কিছু জনপ্রতিনিধিরা এসি গাড়িতে বসে শহর দেখেন। একদিন হাটেন তো রাস্তা দিয়ে। তখন বুঝবেন এই শহর কতটা বসবাস অযোগ্য। শহরটাকে নিজের মনে করলে, কাজ করা সম্ভব! আমি তো সেই চিরাচরিত রাস্তাঘাট নিয়েই কথা বললাম। এর বাইরে কত কিছু করা যায়। শ্রীমঙ্গলে একটা বিশ্ববিদ্যালয় কেউ এতোদিন পর্যন্ত করতে পারলেন না। কিন্তু আমাদের স্থানীয় টুরিজম এবং প্রাকৃতিক রিসোর্সকে কাজে লাগিয়ে স্পেশাল কিছু রিসার্চ ভিত্তিক সাব্জেক্ট দিয়ে কিন্তু এখানেই একটি সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন এবং চাকরির বাজার তৈরী করা সম্ভব!

রাস্তায় বের হলে জ্যাম আর জ্যাম! এসডিজি নিয়ে সাধারণ মানুষ জানেই না কিছু, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। শ্রীমঙ্গল সিলেট বিভাগের মধ্যে একটু ভিন্ন। এখানকার ছেলেমেয়েরা নিজের, পরিবারের এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় খুব ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রমে এতো বেশি নিজেকে জড়িয়ে রাখে যার ইতিবাচক প্রভাব তার কর্মজীবনেও ফোটে উঠে। কিন্তু দিনশেষে সব মানুষের বাসার ময়লা নিয়ে ফেলা হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে।

সমস্যাটা কোথায় জানেন?
যোগ্য তরুনরা রাজনীতিতে আসে না। আর যারা ছাত্ররাজনীতিতে আসে এবং শুরু করে, তারা ভয়ে সত্যি কথা বলতে পারে না। হুজুর হুজুর করে এবং কারো পেছনে ঘুরে পরিবর্তন সম্ভব না। স্থানীয় রাজনীতিতে গুনগত পরিবর্তন না আসলে এরকম ভাংগা পৌরসভা নিয়েই থাকতে হবে। জনপ্রতিনিধিদের অপরাজনীতি বন্ধ করতে হলে, রাজনীতি করার পাশাপাশি নিজেকে দক্ষ করে তুলতে হবে। কিন্তু স্থানীয় রাজনীতির চিত্র ভিন্ন। মিছিল মিটিংয়ের রাজনীতি এবং বড় ভাইদের পেছনে ঘুরে ঘুরে নিজেকে দক্ষ করে তোলা হয়ে উঠে না। তখন বাধ্য হয়ে রাজনীতিকে পেশা বানিয়ে ফেলা হয়। রাজনীতি তখন নেশা থেকে পেশায় পরিনত হয়। তাই জনপ্রতিনিধিরা যখন কাজ করেন না ঠিকমতো, তাদের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলার সাহস অনেকেই রাখেন না। এই দায়ভার তরুনদের উপর না চাপিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের উপর চাপানোই শ্রেয়। কারণ তারা দক্ষ তরুনদের রাজনীতিতে নিয়ে আসতে পারেন না এবং যারা খুব অল্প বয়সে রাজনীতিতে আসে, তারাও গাইডলাইন না পেয়ে সেই তথাকথিত মিছিল মিটিংয়ের রাজনীতি করে।

স্থানীয় রাজনীতিতে দক্ষ তরুন তৈরী করুন। প্রজেক্ট ভিত্তিক রাজনীতি চালু করুন। তাহলেই এসব “কাজ না করা জনপ্রতিনিধি”, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা, দূর্নীতিবাজদের চলার পথ কঠিন হয়ে যাবে, জবাবদিহিতাও নিশ্চিত হবে। দেশে আসার পর থেকেই এই সভায় সংবর্ধনা, ওই কমিটির উপদেষ্টা হওয়ার জন্য আমন্ত্রন পাচ্ছি। দূর্নীতিবাজদের হাত থেকে সংবর্ধনা নিবোনা। যাইই নি। কখনো দেখবেনও না শ্রীমঙ্গলে এসবের সাথে আমাকে।

আমাকে অনেকে এতোটাই ভয় পায় যে আমার মতো একজন সাধারণ মানুষের ফেসবুক লাইভ অনুষ্ঠানেই আসেনা, যদি প্রশ্ন করে বিপদে ফেলে দেই৷ এই হলো অবস্থা। রাজনীতি করলে প্রশ্নের সম্মুক্ষীন হওয়ার সাহস থাকতে হবে। না হলে এই রাজনীতি ছেড়ে দেয়া উচিত। কারণ এতে মানুষের উপকার হয় না। মুখেই শুধু বড় বড় কথা। কাজের বেলায় নাই!

শ্রীমঙ্গলের যারা আমার সাথে এই পেইজে সেই ২০১৮ থেকে যুক্ত, তারা জানেন আমি সবসময় অনিয়ম এর বিরুদ্ধে কথা বলেছি। স্থানীয় পত্রিকায় অনেকবার লিখেছি। আমি কখনোই সত্যি কথা বলতে দ্বিধাবোধ করিনি।। কারণ আমি জানি, আমার পেশা কখনোই এসবের সাথে সম্পর্কিত না। কোন জনপ্রতিনিধির উপর আমার ক্যারিয়ার নির্ভর করে না। সাহসটা এখানেই থাকতে হয়। একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে নিজের জায়গা থেকে অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলা উচিত। কেউ বলতে পারবেনা শ্রীমঙ্গলে কোনোদিন বাবার পাওয়ার দেখিয়ে কিছু করেছি। তবে হ্যা এটা সত্যি, আব্বুর কারনে অনেক কাজ আমার জন্য সহজ হয়ে যায় কিন্তু কখনো ক্ষমতার অপব্যবহার তো করিনি। এখন এই পরিচয় তো আমি বদলাতে পারবোনা। ইগ্নোর করার সুযোগ নেই। কিন্তু নিজের জায়গায় সবসময় পরিস্কার থাকতে চাই।

নির্বাচনী প্রচারণায় যত টাকা খরচ করা হয়, সেখানে একটা অংশ রাখা উচিত একজন নগর পরিকল্পনাবিদের জন্য। এটা সম্ভব! চাইলেই সম্ভব। আর নির্বাচিত হয়ে আসার পর, সাধারন মানুষের জায়গায় নিজেকে নিয়ে গিয়ে তারপর পরিকল্পনা করতে হবে। এরপর একটু আরাম পেয়ে সব কমিটমেন্ট ভুলে গেলাম,এটা তো অমানবিক।

ইফতারের প্যাকেট এর উপর নিজের ছবি দিয়ে যদি মানুষের কাছে নিজেকে “সমাজ সেবক” হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিতে হয়,তাহলে বুঝবেন কোনো কাজই ঠিকমতো করেননি এবং এখনো নিজের পরিচয়টাই তৈরী করতে পারেননি। এই লোক দেখানো জনসেবার স্রোতে সাধারণ জনগন ভেসে যাচ্ছে।

স্রোতের বিপরীতে হাটি তো! তাই অপ্রিয় সত্যি কথা না বলে থাকা যায় না।

জানি এই পথচলা খুব সহজ না কিন্তু কঠিনকেই একমাত্র ভালোবাসা যায়। সহজের সাথে সখ্যতা আসলে হয়না।

******এই লেখাটা সব জনপ্রতিনিধিদের উদ্দ্যেশ্যে যারা ঠিকমতো কাজ করেন না ?কাজ করে থাকলে ব্যাক্তিগতভাবে নিবেন না, জানি ?!!!!!!ো

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code