রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ন্যাটো-যুক্তরাস্ট্রের সত্যি কথা বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে!!!

প্রকাশিত: ২:১৪ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১, ২০২৩

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ন্যাটো-যুক্তরাস্ট্রের সত্যি কথা বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে!!!

হাফিজ সরকার |

ইউক্রেন যুদ্ধ দেখালো, পৃথিবীর উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের আধিপত্য শেষ হওয়ার পথে।
ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তি আর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জ্যো বাইডেনের অপ্রয়োজনীয় বাহাদুরী দেখানোর নীতি – পলিসির পতন, এইসব ব্যার্থতা কি আসন্ন? অবস্থা যেন ধীরে ধীরে সেই দিকেই যাচ্ছে।
ইউক্রেন যুদ্ধকে ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের নেতারা গত বছর (২০২২) ২৪শে ফেব্রুয়ারী থেকে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই এটা রাশিয়ান আগ্রাসন বলে তাদের মিথ্যা প্রচারের মিডিয়াতে প্রচার করে আসছে বীরদর্পে। কিন্তু প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মিস্টার টনি ব্লেয়ারের বলা সত্যি কথাটা যেন, পশ্চিমাদের ভুয়া কথা আর ভুয়া দম্ভ, একদম অন্ত:সারশুন্য বলে আর একবার প্রমাণ করলো।
টনি ব্লেয়ারের কথা আমরা নিশ্চয় ভুলে যায়নি। এককালে, মানে ২০০১ সাল থেকে ২০০৮ সময়কালে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জুনিয়র জর্জ বুশ তার ‘ওয়ার অন টেরর’র জন্য কুখ্যাত। সেই জুনিয়র জর্জ বুশের ১৯৯৭ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত কিন্তু ঘনিষ্ঠতম শিষ্য, ঘনিষ্ঠতম সহযোগী ছিলেন তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার। বুশ আর টনি ব্লেয়ার দু’জনে মিলে, ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে মিথ্যে অস্ত্র মজুতের কথা বলে, ‘রেজিম চেঞ্জ’ তত্ত্বের কথা বলে ইরাকে অন্যায়ভাবে হামলা চালিয়েছিলেন। পরে সাদ্দাম হোসেনকে প্রহসনের বিচারে ফাঁসিতেও ঝুলিয়েছিলেন। সেই টনি ব্লেয়ারকে নিশ্চয় কেউ ভুলে যাননি।
গত বছর (২০২২) সেই টনি ব্লেয়ার এবার পশ্চিমাদের বর্তমানের মিথ্যা শক্তি আর মিথ্যা দম্ভের বড়াই করার রণে ভংগ দিয়েছেন। ইউক্রেনের পরে পাশ্চিমা নেতৃত্বের জন্য ‘কি শিক্ষা হলো?’ এই শিরোনামে বৃটেনে অনুষ্ঠিত এক সভার বক্তৃতায় টনি ব্লেয়ার বলেছেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধ দেখালো দুনিয়ার উপর ন্যাটো-মার্কিন-ইউরোপের আধিপত্যের দিন শেষ হওয়ার পথে’।
যেহেতু এদিকে দুনিয়ার নয়া সুপার পাওয়ার হিসেবে চীনের উত্থান এবং আসীন হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আর এই চীনের পার্টনার হলো রাশিয়া, তবে এই শতাব্দীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মোড় পরিবর্তন’। কে বললেন এটা? বললেন প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার।
টনি ব্লেয়ার যেন নিজেও আর মোটেও মিথ্যে টেনশন নিতে রাজি নয়। তিনি যেন পশ্চিমাদের সব মিথ্যা গুলি এবার খোলাখুলি বলে দিতে চাইছেন। সত্যিই আর মিথ্যার টেনশন নিতে পারছেননা তিনি। তাই বলেছেন, “দুনিয়ার ইতিহাস এক মোড় পরিবর্তনের সন্ধিক্ষণে এসে পৌঁছে গিয়েছে, যা একমাত্র তুলনা করা সম্ভব দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ বা সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেংগে যাওয়ার সাথে”। শুধু ফারাকটা এই যে, পশ্চিমারা আর উপরে উঠছে না অর্থাৎ পরিস্কারভাবে নিচে নেমে যাচ্ছে বা পতিত হচ্ছে। পরিস্কারভাবে আমরা পশ্চিমারা রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক পতনের প্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছি”।

কি আশ্চর্য?
বাস্তব হলো পৃথিবীর তাবত তাবত বিশেষজ্ঞরাও সেই ২০১৪ সাল থেকে এই কথাগুলোই এতোদিন বলে আসছে। আর বলেছে, এই মোড় পরিবর্তন ১৯৪৫ সালের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিজয়ী হিসেবে আমেরিকার গ্লোবাল নেতৃত্বের উত্থান যেমন ঘটিয়েছিল কেবল তার সাথেই তুলনীয়। আমার ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে বিশেষজ্ঞদের সেইসব মতামত ব্যখ্যা উপজিব্য করেই এই আলোচনার সাহস দেখাচ্ছি। মনগড়া কিছু বলছিনা।
আমেরিকার নেতৃত্ব লাভের পঁচাত্তর বছর পরের এই ঘটনা, এর সাথে পার্থক্য কেবল আমেরিকার জায়গায় চীনের উত্থান ঘটছে।

মুল বিষয় কি?
আমরা দেখছি বুশের সহযোগী টনি ব্লেয়ার আগে ভাগেই সব স্বীকার করে নিচ্ছেন। বিশেষত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জ্যো বাইডেন যখন এখনো জিম্মাদার শাসনের স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছেন। ওদিকে পরিচিত আর বড় নেতাদের মধ্যে জিমি কার্টারের আমলে আমেরিকার এক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ১৯৭৭ থেকে ১৯৮১ সালে সেক্রেটারি অফ স্টেট ব্রেজনেস্কি তিনিও প্রথম এই স্বীকারোক্তি করেছিলেন। অর্থাৎ টনি ব্লেয়ার এইক্ষেত্রে সমসাময়িকদের চেয়ে এগিয়ে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আমরা দেখলাম।

আর প্রেসিডেন্ট জ্যো বাইডেন?
প্রেসিডেন্ট জ্যো বাইডেন কিন্তু তিনি ব্লেয়ারের পুরো উল্টো দিকে জিদ ধরেছেন। ইতিহাস বলে এটা কিন্তু জেদাজেদির বিষয়ই নয়।
বাইডেনের ক্ষমতায় আসার আগে বোকা-অবাস্তব সাফাই যুক্তি ছিল ডোনাল ট্রাম্প বোকা, গোঁয়ার এবং আর একটা জেদি, তাই ট্রাম্প নাকি আমেরিকার হাতে এখনো কি কি অস্ত্র আছে তাই জানতেন না।
বিপরীতে বাইডেন যেন সব জানেন। আর সেগুলো ব্যবহার করে বাইডেন দুনিয়াকে দেখিয়ে দিতে পারবেন যে আমেরিকার দিন শেষ হয়ে যায়নি। কিন্তু বাস্তব হাস্যকর প্রশ্ন হচ্ছে আমেরিকার হাতে কি এমন অস্ত্র আছে তাকে এখনো গ্লোবাল নেতৃত্বে আসীন করে রাখবেই বলে বাইডেনের ধারনা বা বাইডেনের গুনাগুন।
হ্যাঁ, বাইডেন ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে নামিয়ে, এরপর বিশ্বকে দেখালেন তার চোখে আমেরিকার সঞ্চয়ে থাকা বিশেষ অস্ত্রগুলো আসলে কি কি। তিনি খুলে দেখালেন, এক. ডলার অবোধ! আর দুই. মানবাধিকার! আর এইদুটো আমেরিকার হাতে থাকা অস্ত্র যা বাইডেন আমেরিকার প্রতিদ্বন্দ্বীদের উপর প্রয়োগ করে, তাদের কয়েক সপ্তাহের মধ্যে কাবু করে ফেলে সারেন্ডার করতে বাধ্য করে জিতে যাবেন। এটাই বাইডেনের অস্ত্র, এই অস্ত্রেই তিনি পৃথিবীতে পা ফেলতেন না। এখানে ডলার অবরোধ হলো, প্রতিদ্বন্দ্বী দেশকে মার্কিন ডলারে ব্যবসা বানিজ্য করতে না দেওয়া বা ঐসব দেশের নাগরিকদের ব্যক্তিগতভাবেও ডলারের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার মাধমে ঐ রাস্ট্রের অর্থনীতিকেই বাইডেন সহজেই গুড়িয়ে দিবেন। যেহেতু ডলার গ্লোবাল বানিজ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত মুদ্রা। তাই তিনিই সফল হবেন। এই ছিল বাইডেনের মূল অনুমান, মূল ধারনা।
অন্যদিকে, আমেরিকার এবং বাইডেনের মানবাধিকার অস্ত্র বলতে, বাইডেন মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগ তুলবেন। তুলতেই পারেন। এর উপযুক্ত ফোরামও আছে। সেটা হলো জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস। কিন্তু এখানে বাইডেন তা তুলবেন নিজ রাস্ট্রের তরফে আর মানবাধিকার সংস্থাকে নিজ রাস্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির অংশ করে নিয়ে, আর এর শাস্তিও দিবেন তিনি নিজেই। তাই সত্যিই ঐ রাস্ট্র মানবাধিকার চরম লংঘনের দেশ হলেও, আমেরিকার এই অভিযোগ তোলার স্বচ্ছতায় সমস্যা থেকেই যায়। মানে মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগ জেনুইন হলেও এই অভিযোগ তুলে একে নিজস্বার্থে ব্যাবহার করে ফায়দা তুলার জন্য বাইডেন এই অপব্যবহারের দিকটায় এখানে প্রধান। এছাড়া বাইডেন তো পরিস্কায় করেই বলছেন, যে চীনের অর্থনৈতিক উত্থান এবং গ্লোবাল লিডারশীপ ক্রমেই আসন্ন হয়ে উঠলেও তিনি তা মানবেননা। উল্টে তিনি কি করবে? উল্টে তিনি সেটা ঠেকানোর জন্য লড়াই করবেন, লড়াই জারি রাখবেন। অর্থাৎ তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করবেন। কিন্তু লক্ষনীয় এই চীনের অর্থনৈতিক উত্থান এবং গ্লোবাল লিডারশীপে বদল আসন্ন হয়ে উঠা এই বিষয়গুলো কি আমেরিকার সরকারি দলিলে স্বীকার করা হয়েছে? বা হয়নি? কোন আমেরিকান সরকারই কি এটা স্বীকার করেছে? বাস্তবতা হলো অবশ্যই স্বীকার করেছে। শুধু তাই নয় এ নিয়ে সার্ভে, স্ট্যাডি রিপোর্টও প্রকাশ করে আসছে সেই ২০০৮ সাল থেকে নিয়মিতভাবে।
গ্লোবাল ট্রেনড এনালাইসিস নামে যেমন গ্লোবাল ট্রেনড/২০০৮ নামে, ২০২৫ সালের দুনিয়া কেমন দেখতে হবে? এই নিয়ে সারা গ্লোবাল ট্রেনড/২০১২ নামে, ২০৩০ সালের দুনিয়া কেমন দেখতে হবে? সেই নিয়ে গ্লোবাল ট্রেনড/২০১৭ নামে ২০৩৫ সালের দুনিয়া কেমন দেখতে হবে, এভাবে নিয়মিত রিপোর্ট বের হয়ে আসছে।
আর মজার কথা হলো এইসব রিপোর্টের কোথাও এই ড্রীল বা গ্লোবাল অভিযোগ গুলোকে বা গ্লোবাল অভিমুখ গুলোকে গায়ের জোরে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের কি রোধ করতে বা ঠেকাতে যাওয়া উচিৎ? অথবা যাওয়া সম্ভব? না, তা একেবারেই ঐসব রিপোর্টে উৎসাহিত করা হয়নি। বরং অবজেক্টিভ ঘটনা হিসাবে সেগুলো উপস্থিত হয়েছে। যদিও বুশের আমল শুরু করে ট্রাম্প এবং বাইডেন পর্যন্ত এই আসন্ন বদলকে উল্টে দিতে, সব প্রেসিডেন্টই চেস্টা পদক্ষেপ নিয়েছেন আমরা দেখছি। যেমন বুশের আমল থেকে চীনের উত্থান ঠেকাতে এশিয়ার সব বড় বড় দেশগুলোকে সুবিধা দিয়ে ও পিট চাপড়ানো দিয়ে ব্যবহার করা হয়।
সারকথায় চীনা অর্থনৈতিক উত্থান কোন কিছুতেই ঠেকবেনা তা জেনেও সব মার্কিন প্রেসিডেন্টই কমবেশি এশিয়ার দেশগুলিকে চীনের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেওয়াসহ নিজেই চীনের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করে গিয়েছেন এবং যাচ্ছেন।
বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইডেন ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে নামিয়ে বিশ্বকে দেখাতে চেয়েছিল যে রাশিয়ার উপর ইউরোপের ইউরো এবং আমেরিকার ডলার অবরোধ করে কত সহজে না তিনি রাশিয়াকে পরাস্ত করে সহজেই তিনি ক্ষমা চাইতে বাধ্য করবেন। কিন্তু হায়, রাশিয়ান অর্থনীতি সস্তায় সহজেই ডুবে যাওয়ার বদলে, রাশিয়ার মুদ্রা রুবল এখন বিরাট বিশাল শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। অর্থাৎ ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আমেরিকা এদের মিলিতভাবে বাইডেনের ভাষায় তারাও ওয়েস্টার্ন ফোর্স বিজয়ীর বেসে হাজির হবে, এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হওয়া তো দূরে থাক নিজেদের ইজ্জত বাঁচানোই এখন কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নে এই ব্যর্থতার মূল কারণ হচ্ছে, যেটা সকলেই জানে সেটা হচ্ছে ইউরোপীয়দের রাশিয়ার উপর জালানি নির্ভরতা, সীমাহীনভাবে জালানি নির্ভরতা। এটা বাস্তব। আর এটাই তারা শিকার না করে কল্পনার ঘোড়ায় চড়ে, গায়ের জোর দেখাতে গিয়েছিল, এই করুন বাস্তবতার কারনে বাইডেনের সব বাহাদুরি শেষ পর্যন্ত একটা ফাজলামোতে পরিনত হয়েছে।
বহুবার বহুভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিজেদের এই নির্ভরতার দিকটা বাইডেনের সামনে তুলে ধরে দেখিয়েছেন। বলেছেন, এখন এই নির্ভরতা কাটাতে উদ্যোগ নেওয়া শুরু করলেও ২০২৭ সালের শেষেই কিন্তু এর সুফল পাওয়া যেতে পারে। মানে ২০২৭ সাল নাগাদ ইউরোপের রাশিয়ার উপর নির্ভরতা কাটাতে পারে কিন্তু বাইডেনের জিদের কাছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন হার মেনেছে। অসহায় হয়ে থেকেছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট এনিয়ে বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর স্বাধীনসত্তা বা স্বার্বোভৌমত্ব বলে কিছুতো নেই। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টা রাস্ট্র ঠিক কি কারনে, কোন যাদুতে বাইডেনের কথার উপরে কথা বলার সাহস বা ভয়েজ নাই বলে দিয়েছিল, সেটাই এখন সবচেয়ে আশ্চর্য এবং বিষ্ময়কর।
অনুমান করা হয় যে চীন গ্লোবাল নেতা হয়ে গেলে দুনিয়া থেকে পাঁচ ছয়শ বছরের টানা সাদা চামড়ার শাসন বা সাদা ককেসিয় শাসন, এমন ক্যাথলিক বর্ণবাদের আধিপত্য লোপ পেয়ে যাবে, সেটা যাতে না হয় সেই জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নকে বাইডেনের আমেরিকার সাথে বেঁধে নিয়ে, মানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সকলে যেন ক্যাথলিক বর্ণবাদের লোভে পড়েছিল। এটা কি সত্যি? এটা কি এতোই তীব্র? যে বর্ণবাদী ককেসিয়, এটা এতো কি তীব্র যে ২৭টা রাস্ট্রের ইউরোপীয় ইউনিয়নের সবাই লোভে পড়ে গেল? বোকা আর বোবা হয়ে গেল? এটা ভাবতেও কিন্তু অবাক লাগে। অথচ এরাই সেই কথিত ‘ওয়েস্টার্ন ফোর্স’ গত বছরেও তাদের মূল্যবোধ নাকি স্রেষ্ঠ এই বলে খুব গর্ববোধ করেছে।
অথচ আগামী শীতে ইউরোপ জালানি কোথা থেকে পাবে এর কোন সংস্থান কথিত ‘ওয়েস্টার্ন ফোর্স’ এখনো করতে পারেনি। অর্থাৎ আগামী উইন্টারে প্রতিটি ইউরোপবাসীকে ঘর গরম রাখার সংস্থান হয়নি বলে, হয় ঠান্ডায় ঠকঠক করে কাঁপতে হবে নয়তো ঘরবাড়ি ছেড়ে গরমের সন্ধানে অন্য জায়গায় চলে যেতে হবে।
বড় হাম্বড়া মুখের বাইডেন তাই নিজেই মধ্যপ্রাচ্যে সফরে গিয়েছিলেন গতবছরের ১৬ই জুলাই। এটা নিয়ে আমরা বলেছি, সৌদি আরবের জেদ্দাতে ১০টা আরব দেশের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে বাইডেনের সেই বৈঠক। ১০টা আরব দেশ বলতে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ ৬টা গাল্ফস্টেট আর সাথে মিসর, জর্ডান, ইরাক আর বাইডেনের আমেরিকার সাথে দ্বিপাক্ষিকভাবে আমেরিকা এবং ইজরায়েল।
আগেও আমরা বলেছি যে বাইডেনের উদ্দেশ্য ছিল কিন্তু এক হচ্ছে ইউরোপের জন্য বাড়তি তেল-গ্যাস জালানির ব্যবস্থা করা যায় কিনা, তার সাথে গ্লোবাল জালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে লাগাম দেওয়া। যাতে দুনিয়াব্যাপী যে মুদ্রাস্ফীতি জাগিয়ে বাইডেন কর্তৃত্ব রেখেছেন, তার দায় দায়িত্ব কিছু লাঘব করতে পারেন। তার জিদের অবিবেচক সিদ্ধান্তের দায়ভার কিছুটা কমে। কিন্তু ভাই সেটাও ব্যাক ফায়ার করেছে। সৌদি আরবের বর্তমান বাদশা বেঁচে থাকলেও ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান, আপনারা জানেন সংক্ষেপে যাকে বলে এমবিএস। কার্যত সৌদি আরবকে তিনিই এখন নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। সেই সভায় এমবিএস যে জবাবটা দিলেন সেটা হলো গতবছরের ১৬ জুলাই রয়টার্স যা লিখছে আর কি, তিনি বলেছিলেন ফসিল ফুয়েল মানে মাটির নিচে থাকা যে তেল সেই ফুয়েল খাতে আরও বিনিয়োগ প্রয়োজন এবং গ্লোবাল চাহিদা মিটানোর মত শুদ্ধ জালানি টেকনোলজি দরকার এবং অবাস্তব জালানি নিঃসরণ পলিসি নিলে তা আমাদের জালানির অকল্পনীয় পর্যায়ের মুদ্রাস্ফীতির দিকে নেবে, জালানির মুল্য বাড়িয়ে দেবে, বেকারত্ব বাড়াবে, সমাজ এবং নিরাপত্তার প্রশ্নকে আরও গ্লোবাল করবে। সৌদি যুবরাজ দেশের তেল উৎপাদন বাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, এটা ২০২৭ সালের মধ্যে দৈনিক ১৩ মিলিয়ন ব্যারেল পর্যন্ত বাড়াবে যা এখন ১২ মিলিয়ন ব্যারেল সক্ষমতায় আছে। আর এরপর আমাদের কিংডমের আর বাড়ানোর সক্ষমতা অবশিষ্ট থাকবে না। তিনি এইসব কথা বলেছিলেন জেদ্দায়। আমেরিকা এবং আরবদের নিয়ে এক শীর্ষ সম্মেলনে। যেখানে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জ্যো বাইডেন নিজে উপস্থিত ছিলেন। বাইডেন আসলে আশা করে এসেছিলেন সৌদি আরব সহ তার পুর্বের পার্টনাররা বাজারে আরও বেশি বেশি তেল উৎপাদন করে তেল ছাড়ুন, যাতে জালানি তেলের মূল্য নেমে আসে, যাতে এর প্রতিক্রিয়ায় চার দশকের মধ্যে সবচেয়ে উপরে উঠে যাওয়া মুদ্রাস্ফীতি নেমে আসে, জীবন সহজ হয়।
এমবিএস স্পষ্টত দুনিয়াব্যাপী চরম মুদ্রাস্ফীতির জন্য বাইডেনকেই দায়ী করেছেন। আর তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, যে আপনাদের সেই ভুল নীতির দায় আপনারা কেন আরবদের উপর চাপাতে এসেছেন। বুঝিয়ে দিয়েছেন ঐ বক্তব্যের মাধ্যমে।
এককথায় বললে তাহলে দেখা যাচ্ছে কি? এই রিপোর্টের মূল কথা হলো, খুউবি নরমভাবে, কিন্তু কঠোর কুটনৈতিক ভাষায় তিনি বাইডেনের পলিসিকে বোকা এবং জিদ্দি বলে দিয়েছেন। বলেছেন, বাইডেনের চিন্তা ও পলিসি অবাস্তব ফলে অকেজো অর্থাৎ একজন আমেরিকান প্রেসিডেন্টকে এটাও দেখতে বাকি ছিল?!
সেকালের গ্লোবাল নেতা আর সৌদি আরবের সম্পর্কের সুচনা করেছিলেন স্বয়ং প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট পচাত্তর বছর আগে বাদশা আব্দুল আজিজের সাথে সাক্ষাৎ করে। আর সেই সাক্ষাৎ হয়েছিল মিশরে। আজ যেমন মিশর সৌদিতে এসে দেখা করেছে। সেকালে বাদশা আজিজ নিজে মিশর গিয়ে রুজভেল্টের সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন ১৯৪৫ সালে। সে বছরেই রুজভেল্ট গ্লোবাল নেতা হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছিলেন এবং প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন। আর আজ?
আজ প্রেসিডেন্ট বাইডেন সংগি সফর করে আমেরিকার মুকুট ধুলোই লুটিয়ে দিয়ে চলে গেলেন। কারন এমবিএস বাইডেনকে কোন কিছুতেই প্রতিশ্রুতি দেয়নি। রয়টার্স তাই ছেঁচে লিখছে, “বাইডেনের ঐ সফর শেষে কোন আশ্বাস বা সংগি প্রতিশ্রুতির, কোন যৌথ ঘোষণা ছাড়ায় শেষ হয়েছে।” তাতে এমবিএসের যেটুকু বাস্তবতা জ্ঞান আছে এই বিচারে বয়োবৃদ্ধ জ্যো বাইডেন হেরে গিয়েছেন।
জিদ্দি, গোঁয়ার বয়স্ক মানুষকে কেউ দেখতে পছন্দ করেননা বরং আশা করে তাদের মুরুব্বিরা অবশ্যই আমাদের চেয়ে ধৈর্যশীল, স্থির এবং অভিজ্ঞতা বদ্ধতায় আমাদের ছাড়িয়ে যাবেন, সর্বোপরি আমাদের সবার চেয়ে বিবেচক হবেন। কিন্তু হায়! বাইডেন সবাইকেই হতাশ করেছেন। এই কারনে বেশিরভাগ মিডিয়ায় এই নিয়ে রিপোর্টে শিরোনাম করেছে কি? “আরব শীর্ষ সম্মেলনে তেল চুক্তিতে ব্যর্থ হয়েছেন বাইডেন, ফিরেছেন শুন্য হাতে।”
তাহলে কি আগামী নভেম্বরে আমেরিকার মিডটার্ম নির্বাচনে বাইডেনের ডেমোক্রেটিক পার্টি শুধু গো হারায় হারবে? তাই নয়, আরও অনেক ব্যর্থতাও বাইডেনকে সম্ভবত আকড়ে ধরবে। ফলে ইউক্রেনকে রাশিয়ার সাথে আপোষ করার মুখে ফেলে বাইডেন পালিয়ে যাবেন। আর সবদিকে বিপদ দেখে সবার আগে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাইডেনের হাত ছেড়ে এবার শীতকাল শুরু হওয়ার আগেই রাশিয়ার দিকে হাত বাড়াবে। সব্বাইকে তাই বাস্তবতার সামনে মাথা নামাতে হয়, এই মানে দিতে দিতে। কেন এমন কথা বলছি? গতবছরের ১৯ জুলাইয়ের খবর হলো, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইতিমধ্যেই মাথা নিচু করে ফেলেছে। অর্থাৎ “রাশিয়ার সাতটা ব্যাংকের উপর অবরোধের নিশেধাজ্ঞা তারা তুলে নিয়েছে”। এই হলো সংবাদ শিরোনাম। এটাও রয়টার্সের খবর যে “এক বৈঠকে রাশিয়ার সাতটা ব্যাংকের ফ্রিজ করা অর্থ ছাড় দেয়ার ব্যপারে ঐক্যমতে পৌছেছে তারা।”
ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে, ভি.টি.ভি, সোভকম ব্যাংক, নোভিকম ব্যাংক, অটোক্রেটি ব্যাংক, ক্রমোসভায়া ব্যাংক এবং ব্যাংক অফ রাশিয়া। তবে রুশ বৃহত্তম ব্যাংক সেভার ব্যাংকের সম্পদ ছাড়ের ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন এক ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মকর্তা। আবার আরেক হট নিউজ দিচ্ছে রয়টার্স “সৌদি আরব নিজের তেলের বিশাল রফতানিকারক হওয়া সত্তেও উলটে রাশিয়ান তেল আমদানি শুরু করেছে কয়েক সপ্তাহ হয়ে গেল।” কেন? কারন রাশিয়া সৌদি আরবকে ডিস্কাউন্ট মূল্যে তেল দিচ্ছে বলে সৌদি আরব তেল আমদানি দ্বিগুণ করেছে।” এ তেল দিয়ে সে আসন্ন শীতে নিজের তার পাওয়ার স্টেশনের জালানি চাহিদা মেটাবে। এতে তার নিজের বেঁচে যাওয়া তেলও বাড়তি সুবিধা দেবে। এসব খবর বাইডেনের দিক থেকে দেখলে কিন্তু তার জন্য আত্মহত্যামূলক বলতেই হবে। গত তিন বছরে তার নেওয়া সমস্ত সিদ্ধান্ত, সব পলিসিই কি তাহলে মুখ থুবড়ে পড়তে যাচ্ছে? ইউক্রেন যুদ্ধ কি তাহলে থেমে যাচ্ছে? সর্বশেষ খবর হলো বাইডেন ইউক্রেনের উপর কড়া শর্ত আরোপ করে রেখেছিলেন এই বলে যে, তারা যেন রাশিয়ার সাথে কোন বিষয়ে আপোষের কোন আলোচনায় না বসে। আপোষের কোন বৈঠকে না যায়। তাতে যে ইউক্রেন খাদ্য রফতানির দেশ হওয়া সত্তেও যুদ্ধের মধ্যে বাইশ মিলিয়ন টন খাদ্যশস্য গুদামে আটকে আছে বলে জাতিসংঘ এবং তুরস্কের মধ্যস্থতায়, ফাইনালি এবার সেক্রেটারি জেনারেল গুদেরেজ এবং তুরস্কে প্রেসিডেন্ট এরদোগানের উপস্থিতিতে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। যাতে আটকে থাকা খাদ্য বের হতে পারে। এটাও কি বাইডেনের জন্য ভাল লক্ষন? সম্ভবত তার কপাল জানে।
তার কপাল যে খারাপ এইটা বিশ্ব জানে।
হাফিজ সরকার
তথ্যসূত্রঃ
শ্যাম সুন্দর ঘোষ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ