বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জিয়াউর রহমান সম্পৃক্ত ছিলেন

প্রকাশিত: ১১:৩৪ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ২০, ২০২৩

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জিয়াউর রহমান সম্পৃক্ত ছিলেন

লরেন্স লিফশুলজ |

মার্কিন সাংবাদিক লিফশুলজের চাঞ্চল্যকর তথ্য: জিয়াউর রহমান ছিলেন মানসিক বিকারগ্রস্ত, বঙ্গবন্ধু হত্যায় তার সমর্থন ছিল, বিনাবিচারে ৩ হাজার সেনার মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন।
মার্কিন সাংবাদিক লরেন্স লিফশুলজ মনে করেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জিয়াউর রহমান সম্পৃক্ত ছিলেন। জিয়াউর রহমানের সমর্থন ছাড়া এ হত্যাকান্ড হয় নি। এই সাংবাদিক তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে জিয়াউর রহমানকে ‘সাইকোপ্যাথ’ বা মানসিক বিকারগ্রস্ত হিসেবে আখ্যা দেন। জানান জিয়াউর রহমান, তখন বাংলাদেশের যে সব সেনা সদস্য ১৫ আগস্টের ঘটনার জন্য জিয়াকে দায়ী করতেন তাদেরকে আটক করেন। ওই সময় প্রায় ৩ হাজার সেনা সদস্যের বিনাবিচারে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
যে অল্প কয়জন বিদেশি সাংবাদিক ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার ঘটনায় রিপোর্ট করেছিলেন, লরেন্স লিফশুলজ ছিলেন তাদের অন্যতম। ১৫ই আগস্টের অভ্যুত্থান ও হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত অজানা অধ্যায়ের নতুন দরোজা উন্মোচন করেছেন তিনি।
২০২০ সালের ২০ আগস্ট বৃহস্পতিবার রাতে সেন্টার ফর রিচার্স অ্যান্ড ইনফর্মেশন (সিআরআই) আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ১৯৭৫: সেটিং দ্য ক্লক ব্যাক’ শীর্ষক ওয়েবিনার-এ অংশ নিয়ে লিফশুলজ এইসব কথা বলেছিলেন৷
তিনি ১৯৭৫ সালে ফার ইস্টার্ন ইকোনমিক রিভিউয়ের দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিনিধি ছিলেন৷ বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড নিয়ে অনুসন্ধান করেছিলেন তিনি৷ জিয়ার শাসনামলে সামরিক আদালতে কর্নেল তাহেরের বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে অনুসন্ধান করার সময় তাকে বাংলাদেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়৷
ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোবহানের সঞ্চালনায় ওয়েবিনার-এ লিফশুলজ ছাড়াও অংশ নেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন, সাংবাদিক সৈয়দ বদরুল আহসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ ও নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং স্কলার সলিল ত্রিপাঠি৷
লিফশুলজ এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘এটা শুধু বাংলাদেশের বিষয় নয়, এটা ন্যায় বিচারের প্রশ্ন৷ বঙ্গবন্ধু হত্যার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র উদসীনতা দেখায়৷ যেটা সন্দেহের সৃষ্টি করে৷ পরে অনেক ডকুমেন্ট পাওয়া যায়৷ যারা সামনে থেকে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তাদের আমরা দেখেছি৷ কিন্তু যারা পিছনে ছিলেন তারা কারা৷ জিয়াউর রহমানের সমর্থন ছাড়া তারা মুভ করেননি৷ আর জিয়া মার্কিন সমর্থন ছাড়া কিছু করেননি৷ তাই আমার মত হলো, বঙ্গবন্ধু হত্যার ব্যাপারে আরো তদন্ত দরকার৷ এই সংযোগগুলোর তদন্ত দরকার৷ বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্র দুই দেশের মানুষের এটা নিয়ে কাজ করা উচিত, তাদের এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে৷’’
আলোচনায় লিফশুলজ বঙ্গবন্ধু হত্যা পরিকল্পনার বিভিন্ন দিকও তুলে ধরেন৷ সেখানে মেজর জিয়াউর রহমান ও তখনকার মার্কিন রাষ্ট্রদূতের যোগাযোগের বিষয়ে তিনি কথা বলেন৷
বঙ্গবন্ধু হত্যার এক সপ্তাহ আগে মার্কিন দূতাবাসের এক সিনিয়র অফিসারের সাথে দেখা করেছিলেন জিয়াউর রহমান৷ ঢাকায় সিআইএর স্টেশন প্রধান ফিলিপ চেরির সঙ্গেও জিয়া একান্ত বৈঠক করেন৷
বঙ্গবন্ধু হত্যার পরিকল্পনা ছয়মাস আগে হয়েছিল দাবি করে তিনি বলেন, ‘‘পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয় এক সপ্তাহ আগে৷ বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সময় জিয়া অন্য সৈন্যদের ধানমন্ডি ৩২ নাম্বারে যেতে দেননি৷ সেনবাহিনীর উপ-প্রধান হিসেবে তিনি হত্যাকাণ্ড ঠেকাতে কোনো ব্যবস্থা নেননি ৷ বরং এই ক্যু-র বিরুদ্ধে যাতে কেউ অবস্থান না নেয় তা তিনি নিশ্চিত করেন৷”
লিফশুলজ আরো বলেন, ‘‘বঙ্গবন্ধু হত্যার পরিকল্পনা চূড়ান্ত হওয়ার এক সপ্তাহ আগে জিয়া ঢাকায় এক ব্যবসায়ীর বাসায় চেরির সঙ্গে বৈঠক করেন৷ জিয়া ছিলেন বঙ্গবন্ধু হত্যা পরিকল্পনার কেন্দ্রে৷’’
আগস্টের বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড এবং তৎপরবর্তী সংঘাতময় নভেম্বর মাসের ঘটনাবলি অত্যন্ত নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছিলেন এই মার্কিন অনুসন্ধানী সাংবাদিক। ১৯৭৪ ও ৭৫ সাল জুড়ে তার কর্মক্ষেত্র ছিল দক্ষিণ এশিয়া। ফার ইস্টার্ন ইকোনমিক রিভিউ-এর সাবেক এই দক্ষিণ এশীয় প্রতিনিধি এবং গার্ডিয়ানের নিয়মিত লেখক বারবার ১৫ই আগস্টের অভ্যুত্থান ও হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত অজানা অধ্যায়ের নতুন দরোজা উন্মোচন করেছেন।
লরেন্স লিফশুলজ বলেন, ১৯৭৫ সালে ভারত সরকারসহ বাংলাদেশের বেশ কিছু কমিউনিস্ট পার্টি অভিযোগ করে যে মার্কিন সরকারের ইন্ধনে ১৫ আগস্টের ক্যু হয়েছে। মুজিব হত্যাকাণ্ডে বিশ্বের যে সব দেশ সংশ্লিষ্ট তাদের যুক্তরাষ্ট্রের জড়িতে থাকার অভিযোগ আনা হয়।
তখন আমি ফার ইস্টার্ন ইকোনমিক রিভিউ ম্যাগাজিনের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক প্রতিনিধি। ওই ক্যু-এর ঘটনা সংশ্লিষ্ট অনেক অভিযোগই আমার কাছে আসছিল। তবে এই ঘটনায় মার্কিন সংশ্লিষ্টতা তখন আমার কাছে বিশ্বাস হচ্ছিল না । আমার মনে হচ্ছিল এটি যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির থেকে অনেক দূরের একটি বিষয়।
১৯৭৪ সালে, ফ্র্যাঙ্ক চার্চের নেতৃত্বে চার্চ কমিটি ক্যু এবং অন্যান্য হস্তক্ষেপের সঙ্গে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার জড়িত থাকার ইতিহাস নিয়ে একটি প্রতিবেদনে প্রকাশ করে। তখন সংস্থাটির কাজ এবং জবাবদিহিতার জন্য গুরুতর সংস্কার দাবিও করা হয়েছিল।
আমি ১৯৭৫ সালে ওই প্রতিবেদনে দেখি। সিআইএ নিয়ে ওই প্রতিবেদন এবং মার্কিন কংগ্রেসে এ নিয়ে তদন্ত অনুযায়ী আমার কাছে তখন এটি অসম্ভব মনে হয়েছিলো। ১৯৭৫ সালের মাঝামাঝি আমি ঢাকায় আসি। তখন আমার এক পরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে আমার কথা হয়। তবে ওই ব্যক্তির নাম আমি কখনো প্রকাশ করিনি। তিনি আমাকে জানান, শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তার উত্তেজনা চলছিল। তবুও শেখ মুজিবের হত্যাকাণ্ডে তাকে বিচলিত দেখা যায়।
সে আমাকে জানায়, পরিকল্পতিভাবে আগস্টে ক্যু করা হয়েছিল বাংলাদেশে। তখন তিনি আমাকে বলেন যে তোমার জানতে হবে ১৯৭১ সালে খন্দকার মোশতাকের সঙ্গে কলকাতায় কী হয়েছিলো।
সেই প্রথম ব্যক্তি যিনি আমাকে জানায়, ১৯৭১ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হেনরি কিসিঞ্জার তার বিশেষ দূত জর্জ গ্রিফিনকে কলকাতায় পাঠিয়েছিলেন। তখন গ্রিফিন মোশতাক, মাহবুবুল আলম চাষি, তাহেরউদ্দিন ঠাকুরের সঙ্গে বৈঠক করেন। তবে এটি তখন বাংলাদেশের তৎকালীন তাজউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন সরকার জানতো না। ১৯৭১ সালের অক্টোবর মোশতাক যুক্তরাষ্ট্রে যায়। মোশতাক গ্রুপের পরিকল্পনা ছিল যে জাতিসংঘের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধ থামিয়ে বাংলাদেশকে আবারো পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্বশাসিত প্রদেশ করা এবং শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্ত করা।
তবে এই পরিকল্পনার বিষয়ে তৎকালীন তাজউদ্দিন সরকার কিছু জানতে পারলে রাষ্ট্রদোহিতার দায়ে খন্দকার মোশতাককে গৃহবন্দী রাখা হতো। এই কথোপকথনের মধ্যে আমাকে বলা হয়, যারা ১৯৭১ সালে ওই পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন তারাই শেখ মুজিবুরকে হত্যা করেছে এবং মোশতাককে সেনা অভিযানের মাধ্যমে ক্ষমতায় বসিয়েছেন। এর পর থেকেই আমার মূলত সন্দেহ বাড়তে থাকে।
জানতে পারি যে ক্যু-এর ঘটনার কিছুদিন আগে মার্কিন দূতাবাসের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন জিয়াউর রহমান। সেখানে সিআই’র পক্ষ থেকে তাকে গোপন বার্তা দেওয়া হয়। তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিস ইউজেন বোস্টার এই ক্যু-এর পরিকল্পনায় খুব উদ্বিগ্ন ছিলেন। তখন তিনি মার্কিন দূতাবাসের কর্মীদের এই পরিকল্পনা না প্রকাশ করার নির্দেশ দেন। ক্যু-এর ঘটনার ছয় মাস আগে ওই পরিকল্পনা হয়।
ক্যু-এর আগে বাংলাদেশের একজন ব্যবসায়ীর বাড়িতে ডিনারের আয়োজনে জিয়া সিআইএ সদস্যের সঙ্গে বৈঠক করেন। জিয়াউর রহমান এই ক্যু-এর অন্যতম নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তি ছিলেন। তার প্রমাণ পাওয়া যায় তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল শফিউল্লার লেখাতেও। শফিউল্লাহ লেখেন, সেনাবাহিনীর ডেপুটি চিফ হিসেবে জিয়া সেনাদের ৩২ নম্বরে যাওয়া ঠেকাতে পারতেন।
এছাড়া ক্যু নিয়ে জিয়া কর্নেল ফারুক এবং কর্নেল রশিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। জিয়া তাদের আশ্বস্ত করেন যে তাদের পরিকল্পনায় সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ করবে না।
১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হন । তখন বাংলাদেশের যে সব সেনা সদস্যরা ১৫ আগস্টের ঘটনার জন্য জিয়াকে দায়ী করতেন তাদেরকে আটক করা হয়। ওই সময় প্রায় ৩ হাজার সেনা সদস্যের বিনাবিচারে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। জেনারেল শাখওয়াত আলী এবং মঈন চৌধুরী তাদের বইতে এমনটি বলেছেন।
আমার মতে জিয়াউর রহমান মানসিক বিকারগ্রস্ত একজন ব্যক্তি ছিলেন। কারণ সে অরাজকতার মাধ্যমে অনেকের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন।
লরেন্স লিফশুলজ বলেন, জিয়ার সমর্থন ছাড়া এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো সম্ভব না। আবার যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ছাড়াও জিয়াউর রহমান এমন কাজ করতে পারেননি।
ভারতীয় ইতিহাসবিদ সলিল ত্রিপাঠি ১৯৮৮ সালে তরুণ প্রতিবেদক হিসেবে এসেছিলেন বাংলাদেশে। তখন তিনি শেখ মুজিবের আত্মস্বীকৃত খুনি কর্নেল ফারুকের সাক্ষাতকার নিয়েছিলেন। তিনি জানান যে বাংলাদেশের যুদ্ধের সময় তার মাত্র ৯ বছর বয়স ছিলো।
সলিল বলেন, ১৯৮৬ সালে আমি যুক্তরাষ্ট্রে স্নাতক শেষ করে এবং ভারতে ফিরি। পরে বাংলাদেশে আসার সিদ্ধান্ত নেই এটা জানার জন্য যে কি হয়েছিল সেখানে। যে দেশটি গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং উদারপন্থার পথচলা শুরু করেছিল, কেন সেখানে শেখ মুজিবকে হত্যা, জেল হত্যা, অভ্যুত্থান এবং পাল্টা অভ্যুত্থানের দিকে পর এক নায়কতন্ত্র শাসন চালু হলো। আমি ভারতেও এই ঘটনা শুনেই বড় হয়েছি ।
সলিল জানান, ঢাকায় এসে তিনি শেখ মুজিবের আত্মস্বীকৃত খুনি কর্নেল ফারুকের সাক্ষাতকারের সুযোগ পান। তখন কর্নেল ফারুক প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। সুতরাং আমি তার বিষয়ে কৌতূহলী ছিলাম এবং যখন আমি তাকে জানাই যে আমি ঢাকায় তখন সে আমাকে বলে যে সাক্ষাৎকার দিতে প্রস্তুত। কর্নেল ফারুক আমাকে জানায়, সে লিবিয়া ছিল। আশ্চর্যজনকভাবে সে তখন অনেক আত্মবিশ্বাসী ছিলেন।
তখন আমি বুঝতে পেরেছি যে গুরুত্বপূর্ণ কেউ তাকে সমর্থন দিচ্ছে। কারণ সে যা করেছে তারপর কারো সমর্থন ছাড়া কেউ এমন আচরণ করতে পারেন না। তার বাড়িতে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের দ্বারা সুরক্ষিত ছিল। আমি এখনো তার গলার সেই স্বর স্পষ্টভাবে স্মরণ করতে পারি।
আমি যখন তাকে প্রশ্ন করি, কেন রাসেলকে হত্যা করা হলো। ১০ বছরের একটি শিশুকে হত্যা করা কি খুব প্রয়োজন ছিল?
তখন ফারুক আমাকে বলে যে তাকে এমনটি করতে হয়েছে কারণ সে বেঁচে থাকলে এই রাজবংশীয় ধারা চলতে থাকতো। আমরা এর শেষ করতে চেয়েছিলাম। বাংলাদেশকে বাঁচানোর জন্য আমরা সবকিছু করতে পারি। কারণ আমরাই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা এবং আমাদের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। এখানে ভারতের শাসন চলতো।
কর্নেল ফারুক আরো বলেন, কিছু ব্যক্তি ছিলেন যারা রাজনীতির নাম করে কলকাতায় বসে ছিলেন। তারাও নিজেদেরকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে। কিন্তু আসলে তারা কিছুই করেননি। আমরাই যুদ্ধ করেছিলাম। এমনভাবেই কর্নেল ফারুক নিজেকে উপস্থাপন করেছিলেন আমার সামনে।
শেখ মুজিব হত্যার পরে ইন্ডিমিনেটি অধ্যাদেশ জারি করে খুনিদের পুরস্কৃত করার সমালোচনা করেন সলিল ত্রিপাঠি। তিনি বলেন, মানবতা বিরোধী অপরাধীদের বিচার হতেই হবে। সহিংসতার স্থান কোনো সমাজেই নেই।
নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং স্কলার ভারতীয় নাগরিক সলিল ত্রিপাঠি বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনী ফারুক রহমানের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন৷ তিনি ১৯৮৬ সালের পর বাংলাদেশেও এসেছিলেন৷ তখন তিনি সাংবাদিকতা করতেন৷ সলিল ত্রিপাঠি বলেন, ‘‘ফারুক বঙ্গবন্ধু হত্যার কথা অবলীলায় স্বীকার করেন৷ তার মধ্যে কোনো অনুশোচনা আমি দেখিনি৷ ১০ বছরের শিশু শেখ রাসেল হত্যারও যুক্তি দেখায় সে৷’’
তখন ফারুক তার বাসায় গার্ড পরিবেষ্টিত থাকতেন, তার কোনো চিন্তা ছিলনা জানিয়ে ত্রিপাঠি বলেন, ‘‘বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে নিশ্চয়ই আরো উপরের সংযোগ ছিল৷ নয়তো ইনডেমনিটি করে তাদের বিচার বন্ধ করা হলো কেন? তাদের (হত্যাকারীদের) নানা সুযোগ-সুবিধা দেয়া হলো কেন?’’ ‘‘ফারুক আমাকে বেশ উৎসাহের সাথে সাক্ষাৎকার দেন,’’ বলেন তিনি৷
ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বঙ্গবন্ধুর একান্ত সচিব ছিলেন৷ তিনি বলেন, ‘‘বঙ্গবন্ধু মানুষের হৃদয়ের মুকুটহীন সম্রাট৷ ১৫ আগস্ট ভোরে আমি আব্দুল মালেক ভূঁইয়ার (সেকশন অফিসার, কনফিডেনশিয়াল) একটি টেলিফোন কল পাই৷ সে জানালো, স্যার, ভয়াবহ ঘটনা ঘটে গেছে৷ বঙ্গবন্ধু আর নেই৷ এরপর রেডিও অন করে শরিফুল হক ডালিমের জঘন্য ঘোষণা শুনলাম৷ সেনাবাহিনী খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে বিদ্রোহ করেছে৷ মোশতাককে রাষ্ট্রপতি করা হয়েছে৷’’

তথ্যসূত্র:
বঙ্গবন্ধু অনলাইন আর্কাইভ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ