কালজয়ী কীর্তিমানের গৌরব আখ্যান

প্রকাশিত: ১:১৮ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৯, ২০২৩

কালজয়ী কীর্তিমানের গৌরব আখ্যান

ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী |

অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধা, সত্যনিষ্ঠ গণমাধ্যমের সর্বোচ্চ অভিভাবক, সর্বজনশ্রদ্ধেয় প্রয়াত মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদের শুভ জন্মবার্ষিকীর এই দিনে তাঁকে গভীরভাবে স্মরণ করছি।
জীবনপ্রবাহে অজস্র স্রোতস্বিনী ধারায় কিংবদন্তি মাসুদ ভাইদের মতো পথিকৃৎ ব্যক্তিত্বের জন্ম না হলে সমাজ সভ্যতার আলোকিত ক্রমবিকাশ কতটুকু সার্থক হতো তার পর্যাপ্ত পর্যালোচনা জরুরী। কালজয়ী এসব কৃতিমানসের অবিস্মরণীয় অবদান বিস্মৃত হলে জাতি-রাষ্ট্র অন্ধকার নিধন ও আলো প্রজ্বালনে বেশ পিছিয়ে পড়ে। বিশ্বকবি রবীঠাকুরের আবেগ-আশ্রিত ‘প্রাণ’ কবিতার পংক্তি উপস্থাপনে পরিশুদ্ধ মহান উন্নয়ন শিল্পী বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিক আতিকউল্লাহ খান মাসুদ সাহেবের জন্মদিনে শোক-শক্তির অবগাহনে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করতে চাই। ‘মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে,/ মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই।/ এই সূর্যকরে এই পুষ্পিত কাননে/ জীবন্ত হৃদয়-মাঝে যদি স্থান পাই।/ ধরায় প্রাণের খেলা চিরতরঙ্গিত,/ বিরহ মিলন কত হাসি-অশ্রুময়,/ মানবের সুখে-দুঃখে গাঁথিয়া সঙ্গীত/ যদি গো রচিতে পারি অমর-আলয়।’ উল্লেখ্য পঙ্ক্তিগুলো শ্রদ্ধেয় মাসুদ ভাইয়ের জীবনচরিত-জীবনদর্শন মূল্যায়নে কতটুকু নির্ভার তা সহজেই অনুমেয়।
এটি প্রতিষ্ঠিত সত্য যে, স্রষ্টার অখন্ড বিধান অনুসারে জন্মেই মানুষের জীবনাবসানের দিনপঞ্জি নির্ধারিত থাকে। ধরিত্রীর বুকে ইহ-পরকালের নিগূঢ় বন্ধনকে পরিপূর্ণ উপলব্ধিতে নিয়ে পারাপারের অমূল্য সময়কালকে অকৃত্রিম নিষ্ঠা-ভালবাসা-শ্রমের মর্যাদায় যাঁরা মহিমান্বিত করতে পেরেছেন; তাঁরাই ইতিহাসের অধ্যায়ে সফল ও সার্থক অবস্থান সুদৃঢ় করেছেন। বিবেক-আবেগের অপূর্ব সম্মিলনে যথার্থ অর্থে কার্যকর ভূমিকা পালন এবং দৃশ্যমান কর্মপ্রবচনীয় চিত্রপট না ফেরার দেশে ফিরে যাওয়া অমরত্বকে সমধিক সদাদীপ্ত অক্ষয় জ্যোতির মতো সমাজের গভীরে প্রোথিত রাখে।
১৯৫১ সালের ২৯ আগস্ট মুন্সীগঞ্জ জেলার বিক্রমপুরের লৌহজংয়ের উত্তর মেদেনীমন্ডল গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে খান বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন কৃতিমানস জনাব আতিকউল্লাহ খান মাসুদ। এলাকার আলোকিত মানুষ হিসেবে অত্যন্ত সুপরিচিত মরহুম দবির উদ্দিন খান ও মরহুমা জসিমুন নেছা খানের ৮ সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন সপ্তম। ঢাকার গোপীবাগের খ্রীস্টান মিশনারি স্কুল থেকে প্রাথমিক ও আর্মানিটোলা হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করে পড়তে যান বড় ভাইয়ের কর্মস্থল তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের করাচীতে। উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে করাচী থেকে ঢাকায় ফিরে জগন্নাথ কলেজে স্নাতক শ্রেণীতে ভর্তি হন। কলেজ জীবনে মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পূর্বেই ব্যবসায় তাঁর হাতেখড়ি। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে আতিকউল্লাহ খান মাসুদ সতীর্থদের নিয়ে ভারতে গেরিলা ট্রেনিং শেষে দেশে ফিরে মুক্তিযুদ্ধের ২নং সেক্টরের অধীন মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানা কমান্ডারের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তাঁর লিখিত ‘যুদ্ধদিনের স্মৃতিকথা’ নিবন্ধে যুদ্ধকালীন সময়ের অনেক দুঃসাহসিক-বীরত্বগাথা কর্মকান্ডের ইতিবৃত্ত উপস্থাপন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীকালে সফলতার সঙ্গে বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রী অর্জনের পর তিনি পুরোপুরি ব্যবসায়ে মনোনিবেশ করেন।
মনুষ্যত্ব-মানবিকতা বিকাশে, পরার্থে মাঙ্গলিক ব্যক্তিমানস সৃজনে প্রায়োগিক জ্ঞানের প্রসারমান সার্থকতায় নিরন্তর কৃতিমানবের স্বরূপ উন্মোচন করেছেন আতিকউল্লাহ খান মাসুদ। শুধু স্বকীয় দৃশ্যপট তৈরিতে জ্ঞানাঙ্কুর পদচারণা নয়; দেশের আর্থ-সামাজিক টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যেও তাঁর গৃহীত সকল মহৎ পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন অবশ্যই সর্বত্রই সমাদৃত। গণতান্ত্রিক-অসাম্প্রদায়িক-জ্ঞান ও যুক্তিনির্ভর মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় তাঁর ক্ষুরধার লেখনী-লেখক সৃষ্টি বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ভাষা আন্দোলন-দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রাম-মহান মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস পাঠোদ্ধারে অবর্ণনীয় শিক্ষা-সচেতনতা প্রচার-প্রসারে তাঁর অবদান ছিল অতুলনীয়। ‘সেই রাজাকার’ প্রকাশের মাধ্যমে তিনি উন্মোচন করেছেন স্বাধীনতার জন্য তাঁর অন্তরের আকুতি-মিনতির বিপরীতে হানাদার বাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতায় সংগঠিত মুক্তিযুদ্ধবিরোধী সংস্থাসমূহের কদর্য মুখোশ-পরিচয়। এই প্রকাশনাটি ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের পাদপীঠে বীরসেনানী শহীদ ও প্রাণে বেঁচে যাওয়া জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের এক অমর মহাকাব্য। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নত বিশ্বের মর্যাদায় সমাসীন হওয়ার অপ্রতিরোধ্য অগ্রগতির অভিযাত্রায় জনকণ্ঠ ও সম্পাদক শ্রদ্ধাভাজন জনাব মাসুদের নির্ভীক-সাহসিক-দৃঢ়চেতা ভূমিকা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাঙালী জাতিরাষ্ট্রের ইতিবাচক ভাবমূর্তি বিকশিত করার সকল পদক্ষেপই ছিল অত্যন্ত প্রশংসনীয়।
গভীর আত্মনিয়োগে দেশ-জনকল্যাণে গড়ে তুলেছেন অসাধারণ কিছু প্রতিষ্ঠান। তাঁর প্রতিষ্ঠিত গ্লোব জনকণ্ঠ শিল্প পরিবারের তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। মেধা-প্রজ্ঞা-সর্বোচ্চ সততা-নীতি-নৈতিকতায় ঋদ্ধ মাসুদ ভাই বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নানামুখী মননশীল অভিরুচির প্রকৃষ্ট উদাহরণে নিজেকে প্রতিস্থাপন করেছেন খ্যাতিমান একজন শিল্প-সেনাপতি হিসেবে। কলেজ জীবনে মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পূর্বেই ব্যবসায় তাঁর হাতেখড়ি এবং বুদ্ধিমত্তার উৎকর্ষতায় পশ্চিম পাকিস্তানে পান রফতানি, ১৯৭৮ সালে জাপানের কারিগরি সহযোগিতায় দেশের প্রথম মশার কয়েল প্রস্তুতকারী, ধোঁয়াবিহীন মশা নিবারক গ্লোব ম্যাট, তেলাপোকা ধ্বংসকারক গ্লোব এ্যারোসল, ১৯৯০ সালে গণচীনের কারিগরি সহযোগিতায় গ্লোব মেটাল কমপ্লেক্সসহ নানা মাঝারি ও ভারি শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠা করে আমদানিনির্ভর না হয়ে দেশজ উৎপাদনে অর্থনীতিকে সচল ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে তাঁর অভিনব চিন্তা-চেতনা গভীর তাৎপর্য বহন করে।
দেশের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ কৃষি-প্রযুক্তি-আবাসন-ওষুধ-নির্মাণ-কেবল মেটাল কমপ্লেক্স-প্রকাশনা শিল্পসহ বিভিন্ন কর্মসংস্থান ও আর্থিক সচলতা সৃষ্টিতে তিনি ছিলেন অনন্যসাধারণ উদ্যোক্তা। ১৯৯৭ সালে ডেইরি ও কৃষি পণ্য উৎপাদনের উদ্দেশ্যে গ্লোব খামার প্রকল্প, ১৯৯৮ সালে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর গৃহায়ন সমস্যার সমাধানকল্পে গ্লোব কনস্ট্রাকশন লিমিটেড ও ২০০০ সালে গ্লোব জনকণ্ঠ শিল্প পরিবার প্রতিষ্ঠা করে প্রগাঢ় সাংগঠনিক যোগ্যতা ও প্রশাসনিক দক্ষতার প্রতিফলনে দেশের বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করে বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য উৎপাদন ও কয়েক হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে শিল্প প্রসারে বর্ণীল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক-ক্রীড়া সংগঠনের সঙ্গে তাঁর ওতপ্রোত সম্পর্ক, ১৯৮৪-৮৬ সালে ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাবের সহ-সভাপতি ও ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান, ১৯৮৫-৮৬ সালে হতদরিদ্র পরিবারের শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ শিশু স্বাস্থ্য ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, ১৯৯১-৯৩ বিক্রমপুরের লৌহজং মহাবিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির দায়িত্ব পালনসহ নানা প্রতিষ্ঠানে সমৃদ্ধ প্রতিভার স্বাক্ষর ও গুণগত পরিবর্তনে অন্যতম পুরোধা হিসেবে নিরলস পরিশ্রম করেছেন।
সূচনালগ্ন থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধ-স্বাধীনতার সপক্ষে নিরবচ্ছিন্ন ও আপোসহীন সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিকতার পথ প্রদর্শনে অগ্রগণ্য থেকে মূলত তথ্য প্রবাহের সংযোগকে শুধু সচল করেননি; এর বিকাশমানতায় সর্বোচ্চ নেতৃত্বের অভিধায়ও তিনি অভিষিক্ত হয়েছেন। উল্লেখ্য কারণেই এক/এগারোর সরকার শুরুতেই ২০০৭ সালের ৭ মার্চ এই সর্বজনশ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্বকে রাত ১০টায় গ্রেফতার করে ৪২টি মিথ্যা মামলা-৪৫ কোটি টাকা জরিমানা-৪৮ বছর কারাদন্ডে দন্ডিত করে। ২০০৯ সালের ২০ জানুয়ারি দেশে পুনরায় গণতন্ত্রের আবহ পুনর্প্রতিষ্ঠা পেলে দীর্ঘ ২২ মাস ১২ দিন কারাগারের অন্ধকার জীবনের অবসান ঘটিয়ে বীরদর্পে মুক্ত হয়ে দেশ ও দেশবাসীর ভাগ্য পরিবর্তনের কর্মযজ্ঞে আত্মনিয়োগ করেন।
স্বাধীনতার সপক্ষে প্রগতিশীল শক্তির কণ্ঠরোধে পরাজিত শত্রুদের আস্ফালন ও বিকৃত লেখনী যখন জাতিকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছিল; নির্ভীক-মেধাবী বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুদ ভাই সঠিক ইতিহাসকে অমলিন করার ব্রত গ্রহণ করে ১৯৯৩ সালে ‘দৈনিক জনকণ্ঠ’ প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে সম্ভবত দেশের সর্বপ্রথম কয়েকটি জেলা থেকে পত্রিকাটি ছাপানো এবং প্রতিদিন রাতের আঁধার ভেঙ্গে আলোর প্রত্যাশায় ভোরের কণ্ঠধ্বনির সঙ্গে সর্বাগ্রে দ্রুত জনকণ্ঠ পত্রিকা আপামর জনগণের হাতে পৌঁছানোর অসাধারণ উদ্যোগ ছিল অতুলনীয়। বাংলাদেশের সংবাদপত্রের জগতে সে সময় বিষয়টি শুধু প্রবল আলোড়ন তোলেনি; প্রাসঙ্গিকতায় আতিকউল্লাহ খান মাসুদ ভাইও উঁচু মার্গের সম্পাদক ও প্রকাশক হিসেবে নিজের অবস্থানকে পর্বতসম মর্যাদায় সমাসীন করতে পেরেছিলেন।
দৈনিক জনকণ্ঠ তখন স্বাধীনতার পক্ষে জোরালো কণ্ঠে বলা-লেখা-বক্তব্য এবং সংবাদ পরিবেশনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। বস্তুনিষ্ঠ-নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার আদর্শ সমুন্নত রেখে বঙ্গবন্ধুর মানবিক-অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার প্রণিধানযোগ্য উপাদানগুলোর পরিবেশনা সেনা-স্বৈরশাসকদের অবৈধ শক্তির ক্ষমতায়নকে নড়বড়ে করে তোলে। সত্য প্রকাশের লেবাসে কথিত হাতেগোনা ছদ্মবেশী-বর্ণচোরা প্রকাশক-সম্পাদক-লেখকদের কদাচার-পাপাচার-যথেচ্ছাচারে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর অবদানকে আড়ালে রাখার অশুভ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে লিপ্ত থাকে। এসব জঘন্য মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক অপপ্রচারের বৈরী পরিবেশকে নস্যাত করে দৈনিক জনকণ্ঠ জনমনজয়ী পত্রিকার স্থান সুনির্দিষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে। বিপুলসংখ্যক নিবন্ধ-প্রবন্ধ লেখক ও কলামিস্টদের উন্নতমানের প্রকাশনাকে প্রাধান্য দিয়ে শ্রদ্ধেয় মাসুদ ভাই অগণিত পাঠকপ্রিয় ব্যক্তিদের আবিষ্কার করতে অতিশয় মনোযোগী ছিলেন। সকল স্তরের জনগণের চাহিদাকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে সাহিত্য-কৃষ্টি-সংস্কৃতি বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয়ে সহজ সমাধান অনুসন্ধানে শিক্ষামূলক ও ব্যবসা-বাণিজ্যের পৃষ্ঠা সংযোজন দৈনিক জনকণ্ঠের কলেবরকে অধিকতর জনপ্রিয়-ব্যাপৃত করতে সহায়ক ছিল। বিভিন্ন সমাজ-সংস্কৃতি-আসাম্প্রদায়িক চেতনাবিরোধী বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকার্য সম্পন্ন করার পক্ষে জোরালো জনমত গঠনে জনকণ্ঠের অগ্রগণ্য অবদান চিরস্মরণীয়।
বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠন আওয়ামী লীগ সরকারের কার্যকলাপের যৌক্তিক সমালোচনা ও ইতিবাচক পরামর্শ পর্যালোচনায় ‘সাধু সাবধান’ শিরোনামে মন্তব্য প্রতিবেদন দৈনিক জনকণ্ঠ ছায়া সরকারের প্রতিচ্ছবিতে স্থাপিত হয়েছিল। ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে কথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আওয়ামী লীগ-প্রগতি সমর্থিত ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান-সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর সংঘটিত নির্যাতন-নিপীড়ন-সহিংসতা ও পাশবিক আচরণের বিরুদ্ধে সকল প্রকার অশুভ শক্তির পূজারীদের ভয় ভীতি-নিষেধাজ্ঞা-রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে সংবাদ পরিবেশনে জনকণ্ঠ ন্যূনতম দ্বিধাবোধ করেনি। সে সময় সরকারী বিজ্ঞাপন বন্ধে জনকণ্ঠকে আর্থিক সঙ্কটে নিপতিত করে এর কণ্ঠরোধের অপকৌশল অবলম্বনের দুঃসময়েও জনকণ্ঠ বিদ্রোহ কবি নজরুলের ‘অসত্যের কাছে কভু নত নাহি হবে শির, ভয়ে কাঁপে কা-পুরুষ লড়ে যায় বীর’ বার্তাকে ধারণ করে সাহসিক পদচিহ্ন অঙ্কিত করেছেন।
অপরিমেয় দ্যোতনায় উল্লিখিত পঙ্ক্তিগুলো যেন শ্রদ্ধেয় মাসুদ ভাইয়েরই অন্তরের স্বর্ণালী অব্যক্ত কথামালা। বেঁচে না থাকার জাগ্রত বোধটুকু অনপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গিতে অবিনশ্বর মনোভাবকে মূলত ধারণ করতে পেরেছিলেন বলেই মাসুদ ভাই এতসব অনুসরণীয়-অনুকরণীয় কর্ম সুচারুরূপে সম্পন্ন করতে পেরেছেন। তিনি জানতেন তাঁর সৃষ্ট জগতকে ঘিরে সত্য-সুন্দর-কল্যাণ-আনন্দের নৈসর্গিক চিরায়ত ধারার প্রবহমানতা কখনও নিরুদ্দেশ-নির্বাক করার নয়। প্রয়াত মাসুদ ভাই চির বরণীয় কুঠির স্থাপন ও আরাধ্য স্বপ্নকে প্রায়োগিক ব্যবস্থাপনায় অর্চনীয় স্মৃতির মন্দির প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। তাঁর জন্মদিন উদ্যাপন প্রকৃত অর্থে আলোকোজ্জ্বল বর্ণাঢ্য ছবির মতোই অত্যুজ্জ্বল আছে এবং থাকবে। কোন রং-তুলি বা অন্য কোন মোড়কে আবদ্ধ না রেখে কালান্তরে এটি শ্বাশত-সাবলীল-স্বাভাবিক পরিক্রমায় উন্মুক্ত বিচরণে জাতিকে প্রমুদিত করবেই। জন্মদিনের এই বিশেষ দিবসে জনকণ্ঠ পরিবারসহ তাঁর স্বকীয় সত্তার গুণগ্রাহী সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন জ্ঞাপন করছি।

লেখক : শিক্ষাবিদ, সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ