শিক্ষিত ও প্রগতিশীল নেতৃত্বের পলিটিক্যাল সেন্সের নির্বুদ্ধিতা এবং আমাদের হতাশা!

প্রকাশিত: ১২:৪৫ পূর্বাহ্ণ, জুন ১, ২০২৫

শিক্ষিত ও প্রগতিশীল নেতৃত্বের পলিটিক্যাল সেন্সের নির্বুদ্ধিতা এবং আমাদের হতাশা!

Manual6 Ad Code

রাজিক হাসান |

জুলাই আন্দোলনের গৌরব প্রতিষ্ঠা করতে ছাত্র সমন্বয়কদের লেখায় এখন নানা অজানা তথ্য উঠে আসছে। আন্দোলনের প্রকৃত মাস্টারমাইন্ড কে তা নিয়েও চলছে নানা জল্পনা। এই প্রসঙ্গে আমি একটি পুরানো তথ্য স্মরণ করে দিতে চাই।

সেটা ২০২৩ সালের ১৫ ডিসেম্বরের কথা। এই দিনে আচমকাই রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া যাখারোভা এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বললেন, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে যদি শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় আসে তাহলে যুক্তরাষ্ট্র তার সকল ক্ষমতা প্রয়োগ করবে শেখ হাসিনা সরকারকে উৎখাতের জন্য।

যুক্তরাষ্ট্রের সকল ক্ষমতা বলতে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বললেন, যুক্তরাষ্ট্র ‘এরাব স্প্রিং’ অর্থাৎ আরব বসন্তের মতো একটি সিনারি তৈরি করবে। যে আরব বসন্ত আনতে ব্যাবহার করা হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের, কলেজ, স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের।

হয়েছেও তাই। আন্দোলনের পর ছাত্ররা এখন ভাবছে যে সরকার পতনের যে আন্দোলন তারা করেছেন সেখানে কেন কিছু নির্দিষ্টগ্রূপের ছাত্রদের নেতৃত্বে থাকার কথা সবদিক থেকে প্রচারিত হচ্ছে।

যাকে ছাত্ররা জুলাই আন্দোলন ভাবছে সেটা তো আসলে একটি সিআইএ’র মহাপরিকল্পনা। এই মহাপরিকল্পনার সহায়ক শক্তি হিসাবে কাজ করেছেন অনেকেই। সেই আলাপ আরেকদিন হবে।

Manual2 Ad Code

একটি ইমারত বা দালান তৈরিতে শ্রমিকদের যত না গৌরব থাকে তারচেয়ে ঢের গৌরব থাকে যে সেই ইমারত পরিকল্পনা করেছেন, গৌরব থাকে তার যে অর্থের যোগান দিয়েছেন।

এটা আজকে দিবালোকের মতোই স্পষ্ট জুলাই মেটিকুলাস আন্দোলনের মূল পরিকল্পিনাকারী সিআইএ, ফান্ডিংয়ে ছিল আমেরিকার ডিপ স্টেট।

২০১৪ সালে ইউক্রেনে একই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। সিআইএ সেখানে রাজনীতি করতে যায়নি, বরং যাকে কাজে লাগানো দরকার তাকে কাজে লাগিয়েছে, কাজ শেষে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে। ইউক্রেনকে একটা অসম যুদ্ধে জড়িয়ে সময় মতো চম্পট দিয়েছে, ইউক্রেনকে ধ্বংস করেছে।

এমনকি ইউক্রেনের ভাগ্য আলোচনায় খোদ ইউক্রেনকে বাদ দেয়া হয়েছে। যুদ্ধের অস্ত্র সরবরাহের খরচ বাবদ ইউক্রেনের খনিজ সম্পদের এখন পঞ্চাশভাগ দাবিদার ইউনাইটেড স্টেটস।

Manual5 Ad Code

বাংলাদেশে ২০২৪-এর আন্দোলনের মেটিকুলাস ডিজাইনও এমন নিখুঁতভাবে সাজানো ছিল। এমন নিখুঁত যে কট্টর ডানপন্থীর সাথে কট্টর বামপন্থীরা মিলেমিশে একাকার হয়ে তুমুল আন্দোলন করেছেন। হয়তো তারা ভেবেছিলেন হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর মৌলবাদ বিরোধী, ধর্মনিরপেক্ষ সরকার আসবে! তাদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা নিয়ে কোন মন্তব্য করতে চাই না। শুধু এইটুকু বলতে চাই বাম কোনো সংগঠন ধর্মীয় মৌলবাদী উপাদান দৃশ্যমান থাকার পরও প্রকাশ্য কোনো সন্ত্রাসকে ‘বিপ্লব’ ভাবতে পারে না। যদি ভাবে তাহলে বুঝতে হবে,  হয় এরা মুর্খ অথবা ছদ্মবেশী প্রতিবিপ্লবী। শ্রেণী শত্রু।

Manual3 Ad Code

পৃথিবীর সকল মানুষ রাজনৈতিক প্রজ্ঞাবান হবে এটা ভাবার কোন কারণ নেই। কিন্তু যে মানুষেরা নিজেদের এনলাইটেন্ড দাবী করে, অন্যদের অন্য অন্ধকার নিয়ে সমালোচনা করে তারা এতোটা নির্বোধ হলে তো বিপদ।

Manual2 Ad Code

সেদিন আমার এক বন্ধু টেলিফোনে বলছিল, আন্দোলনের শেষ সময়ে যদি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা অংশ না নিতো তাহলে আন্দোলন সফল হতো না। আগে হলে সেই শিক্ষিত বন্ধুর সাথে তর্ক করতাম। এখন করি না, এখন শুধু শিক্ষিত মানুষের নির্বুদ্ধিতা আমাকে হতাশ করে।

ইংরেজিতে একটি কথা আছে যেটিকে বলা হয় “হ্যান্ড গ্রেনেডিং ইয়োর ওউন কোম্পানী”। উদ্যোক্তাদের ব্যবসা যখন সফল হয়। হাতে যখন অনেক টাকা আসতে শুরু করে তখনই বেশ কিছু উদ্দোক্তা অদ্ভুত আত্মঘাতি সব সিদ্ধান্ত নেওয়া শুরু করে। এইসব সিদ্ধান্তের ফলে অচিরেই কোম্পানীটি আর্থিক সঙ্কটে পড়ে। গবেষকদের মতে এইসব উদ্যোক্তারা আসলে অনেকেই নিজেদের সম্পর্কে অবচেতনে নেতিবাচক হীনতায় ভোগেন। যখন তারা সফল হন ও অনেক অর্থ উপার্জন করেন, তখন তাদের অবচেতন মন সেটা নিয়ে অস্বস্তিতে ভুগতে থাকে ও ভাবে তারা অনাকাংখিত কিছু করছে। তখনই তারা এমন কিছু করতে থাকে যাতে তাদের উদ্যোগ বিফলে যায়। নিজের অবচেতনের সাথে নিজের এই সংগ্রাম খুব বিপজ্জনক। ২০২৪ সালে এসে আমরা দেখলাম এই আত্মঘাতী হ্যান্ড গ্রেনেডিং ইয়োর ওউন নেশনের চুড়ান্ত রূপ।

বাংলাদেশের একটি অবাক করা বিষয় হলো, শিক্ষায় প্রতিযোগিতায় যারা সফল, তাদের অধিকাংশই মনের গভীরে নীচ, হীন মানসিকতার; পরশ্রীকাতর, ক্ষুদ্র দৃষ্টিসম্পন্ন অথচ নিজেকে ভাবে সে বিশুদ্ধ এবং চরম আদর্শের ধারক। নিজ পান্ডিত্যের বিষয়টুকু ছাড়া বাকি দুনিয়ার সার্বিক বাস্তবতা দেখতে তারা অক্ষম। সেই অক্ষমতা তারা পুরণ করে কল্পিত আদর্শের প্রক্ষেপন দিয়ে।

বাংলাদেশের শিক্ষিত, প্রগতিশীল দাবীদার জনগোষ্ঠী পলিটিক্যাল সেন্সে এতটাই নির্বোধ – যোগ্য নেতৃত্ব সৃষ্টি না করে একটা সরকারের পতন ঘটানোর করুণ প্রমান গত নয় মাসের বাংলাদেশ।

©রাজিক হাসান

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code