‘বকরি ঈদ’: সেকালের সমাজ, সাহিত্য ও সাময়িকীতে প্রতিধ্বনি

প্রকাশিত: ৮:১৪ অপরাহ্ণ, জুন ৭, ২০২৫

‘বকরি ঈদ’: সেকালের সমাজ, সাহিত্য ও সাময়িকীতে প্রতিধ্বনি

হোসাইন মোহাম্মদ জাকি |

পবিত্র ঈদুল আজহা বা ‘বকরি ঈদ’–এর সেকালের কথা পাওয়া যায় সমাজ, সাহিত্য ও সাময়িকীতে।

‘আসিয়াছে ফের দুনিয়ার বুকে
খুসির বকরি ঈদ
সারাটি রজনী কাসেমের আজ
আসেনি নয়নে নিদ।’

কবিতার পঙ্‌ক্তিতে (এম. করিম–এর ‘কার ঈদ’) এমনিভাবে প্রকাশ পেয়েছে বকরি ঈদের জন্য বাঙালি মুসলমানের উন্মুখ প্রতীক্ষা। ‘ঈদুজ্জোহা’, ‘ঈদ-উল-বকর’ বা ‘ঈদ-উল-আযহা’ তথা কোরবানির ঈদ সামাজিক ইতিহাসের পরতে পরতে ‘বকরি ঈদ’ নামে অভিহিত। ‘বকরিদ’ বা ‘বকর ঈদ’ নামেও পরিচিত এই ঈদ। পত্রিকা, সাময়িকী ও সরকারি নথিপত্রে ‘ঈদ-উল-আদহা’ নামেও আখ্যায়িত হয়েছে কোরবানির ঈদ। বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে আরব বণিকেরা যখন এ দেশে আসতে শুরু করলেন তখন ঈদুল আজহার সময় তাঁরা বকরি (ছাগল) কোরবানি দিতেন বলে ‘ঈদুল আজহা’, ‘বকরি ঈদ’ নামেই সর্বাধিক পরিচিতি পায়।

জেমস টেলরের বিবরণ অনুযায়ী, ১৮৩৮ সালে ঢাকা শহরের বণিকদের মধ্যে হিন্দুরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিলেন; মুসলমান ও খ্রিষ্টান ছিলেন মাত্র চার-পাঁচজন করে। সে সময় আজকের মতো প্রতিটি ঘরে কোরবানি দেওয়ার সামর্থ্য মুসলমান সমাজে ছিল না। অধ্যাপক আবদুল গফুর তাঁর আত্মজৈবনিক গ্রন্থ ‘আমার কালের কথা’য় লিখেছেন, ‘কোরবানির ঈদ বা অন্য কোন বিশেষ উপলক্ষ ছাড়া সাধারণত গরু বা বকরি জবাই করা হতো না। হাট–বাজারে গরু বা ছাগলের মাংসও এভাবে বিক্রি হতো না তখন। বাড়িতে মেহমান এলে সাধারণত মুরগী জবাই করেই তাদের আপ্যায়ন করা হতো।’

হিন্দু জমিদার প্রধান এই অঞ্চলে গরু কোরবানি নিয়ে একটি বৈরী মনোভাব বিদ্যমান ছিল। ফলে মুসলমানদের প্রায়ই ছাগল (বকরি) কোরবানির দিকেই ঝুঁকতে হতো। রাষ্ট্রীয়ভাবে মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব তখন ততটা গুরুত্ব পেত না। তার একটি দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় ১৮৯০ সালের ঢাকা প্রকাশ-এ ছাপা সরকারি ছুটির তালিকায়—যেখানে হিন্দু, মুসলমান ও খ্রিষ্টান—এই তিন সম্প্রদায়ের জন্য ঘোষিত মোট ১৮ দিনের ছুটির মধ্যে মুসলমানদের ভাগে এসেছিল মাত্র ৩ দিন: মহররম উপলক্ষে দুই দিন এবং ঈদুল আজহা উপলক্ষে এক দিন।

উনিশ শতকের সাহিত্য ও সংবাদপত্র থেকেও স্পষ্ট হয়ে ওঠে, মুসলমানদের গরু কোরবানি করতে কীভাবে প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হতো। সুফিয়া আহমেদের ‘বাংলার মুসলিম সম্প্রদায়’ (১৮৮৪–১৯১২) গ্রন্থ থেকে জানা যায়, প্রায় প্রতিবছরই ঈদুল আজহার সময় হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা লেগে যেত, যার ফলে উভয় সম্প্রদায়েরই প্রাণহানি ঘটত। ১৮৮২ সালে দয়ানন্দ সরস্বতী গো-রক্ষা আন্দোলনের সূচনা করেন। এই আন্দোলনের মাধ্যমে হিন্দু জনগণকে আহ্বান জানানো হয়, যেন তাঁরা হাটবাজারে মুসলমান কসাইদের কাছে গরু বিক্রি না করেন। পাশাপাশি হিন্দু জমিদারদের অনুরোধ করা হয় যাতে তাঁরা নিজেদের জমিদারিতে গরু জবাই বন্ধ করেন। এই আন্দোলনে হিন্দু সমাজের উচ্চবর্গের একটি অংশের সক্রিয় সমর্থন ছিল।

এমনকি ১৮৮৭ সালে রাজশাহীর তাহিরপুরের জমিদার রাজা শশী শেখরেশ্বর রায় কংগ্রেসের মাদ্রাজ অধিবেশনে গো-হত্যা নিষিদ্ধের প্রস্তাব আনতে চেয়েছিলেন, যদিও শেষ পর্যন্ত তা গৃহীত হয়নি। The Moslem Chronicle পত্রিকায় ১৬ মে, ১৮৯৬-তে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গো-রক্ষা আন্দোলনের একদিকে ছিল হিন্দুধর্মীয় পুনর্জাগরণের প্রবণতা, অন্যদিকে ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্য—মুসলমানদের কংগ্রেসের অধীনে আনার কৌশল। পত্রিকাটি আরও অভিযোগ তোলে যে গরু কোরবানিকে কেন্দ্র করে অনেক হিন্দু জমিদার মুসলমান কৃষকদের ওপর অত্যাচার চালাতেন। তাদের ভাষায়:
‘Day after day, cruelties and oppressions are perpetrated on the helpless Mussalman cultivators by Hindu Zamindars in connection with the killing of cows, which would fill the darkest chapters in the most sensational novels.’
এই গো-রক্ষা আন্দোলন সাহিত্যে নতুন মাত্রা নেয়। গো-হত্যার বিপক্ষে মত প্রকাশ করে মীর মশাররফ হোসেন রচনা করেন ‘গো-জীবন’ গ্রন্থ। মশাররফ হোসেনের ‘গো-জীবন’-এর (১৮৮৯) প্রতিবাদে মৌলভী নইমুদ্দীন রচনা করেন ‘গো-কান্ড’ (১৮৮৯)। বাদ-প্রতিবাদ শেষে তা আদালত পর্যন্ত গড়ায়। মীর মশাররফ হোসেনের ‘গো-জীবন’ গ্রন্থের প্রতিবাদে সে সময় বেশ কিছু গ্রন্থ রচিত হয়। তন্মধ্যে অন্যতম একটি রচনা হলো রেয়াজুদ্দীন মাশহাদীর ‘অগ্নিকুক্কুট’ (১৮৯০)।

‘অগ্নিকুক্কুট’–এর বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ করে ১২৯৬ সালের ৩ ফাল্গুন সুধাকর পত্রিকায় লেখা হয়—‘গরু কোরবানি ও গো-মাংস ভক্ষণ মোসলমানের সামাজিক কার্য, উহা লইয়া হিন্দুগণ মোসলমানদের প্রতি অত্যাচার করেন, তাহার কারণ কি এবং সেই অত্যাচার নিবারণের উপায় কি, তৎ সমুদয় এই পুস্তকে দেখান হইয়াছে। ইহার প্রথম অংশে যুক্তি ও বিজ্ঞানসম্মত প্রমাণ, দ্বিতীয় অংশে শাস্ত্রসম্মত প্রমাণ ও তৃতীয় ভাগে হিন্দুদিগের বেদ-সংহিতার ভূরি ভূরি প্রমাণে পরিপূর্ণ।’ যাহোক, মশাররফ-নইমুদ্দীনের মামলার নিষ্পত্তি হলেও গো-হত্যা নিয়ে দ্বন্দ্ব চলে বিশ শতকের পুরো প্রথমার্ধ।

অমিতাভ চক্রবর্তীর লেখা ‘সাম্প্রদায়িকতা: উৎস ও প্রসার’ গ্রন্থ পর্যালোচনায় দেখা যায়, ১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দে আজমগড়ে ‘বকর ঈদ’ উপলক্ষে ব্যাপক দাঙ্গা হয়। দাঙ্গা পূর্ব-উত্তর প্রদেশ, বিহার, বোম্বাই (মুম্বাই), জুনাগড় হয়ে রেঙ্গুন (ইয়াঙ্গুন) পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল।
পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে কোরবানিকে কেন্দ্র করে যে সহিংসতা ঘটত, তা প্রতিরোধ এবং মুসলমানদের নির্বিঘ্নে কোরবানি দেওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে আহসান মঞ্জিলের নওয়াবরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। ১৮৭৯ সালে প্রকাশিত ঢাকা প্রকাশ পত্রিকার তথ্যমতে, ৩০ ডিসেম্বর ১৮৭৯ থেকে ১ জানুয়ারি ১৮৮০ পর্যন্ত ঢাকায় সাধারণ জনগণের জন্য একটি গো ও মেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।

সেই প্রদর্শনীতে নবাব সাহেবের জমিদারির একটি উৎকৃষ্ট জাতের ষাঁড়ের মূল্য ছিল ২৫ টাকা। ঈদুল আজহার তারিখ নির্ধারণে দিল্লি থেকে বার্তা আসত, যা ঢোল পিটিয়ে শহরে প্রচার করা হতো। তবে ঈদের চাঁদ দেখা নিয়ে মতবিরোধও ছিল, যার উল্লেখ পাওয়া যায় গবেষক অনুপম হায়াত সম্পাদিত ‘নওয়াব পরিবারের ডায়েরিতে ঢাকার সমাজ ও সংস্কৃতি’ গ্রন্থে। তিনি ১৯২২ সালের ৩ আগস্টের একটি দিনলিপি উদ্ধৃত করেছেন, যেখানে দেখা যায়, সে বছর ঢাকায় দুই দিন—শুক্র ও শনিবার—ঈদ উদ্‌যাপিত হয়েছিল। ওই গ্রন্থেই ১৯২৩ ও ১৯২৪ সালের ঈদুল আজহার দিনলিপিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

১৯২৩ সালের ২৫ জুলাইয়ের দিনলিপিতে লেখা রয়েছে—‘খাজা মওদুদ আজ হোসেনী দালান এলাকার গরুর হাটে যান। সেখান থেকে ২৫ টাকা দামে একটি গরু কিনেন কোরবানীর জন্য।’ ১৯২৪ সালের ১৪ জুলাইয়ের দিনলিপিতে উল্লেখ—‘আজ ঈদুল আজহা। খাজা মওদুদ লালবাগ মসজিদে নামাজ পড়েন।’ ঈদের জামাত বিষয়ে ষাটের দশকের তথ্য পাওয়া যায় ১৯৬৭ সালের ২০ মার্চ দৈনিক আজাদ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে। তাতে পুরান ঢাকার ঈদ জামাতের বর্ণনা রয়েছে, বিশেষ করে লালবাগ শাহি মসজিদ, বকশীবাজার, গেণ্ডারিয়া এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত জামাতগুলোর উল্লেখ পাওয়া যায়।

যদিও কয়েক শতাব্দী ধরে বাঙালি মুসলমানরা ঈদ উদ্‌যাপন করে আসছে, তবু ঈদকে কেন্দ্র করে সাহিত্যচর্চার সূত্রপাত ঘটে বিংশ শতাব্দীর শুরুতে। ঈদকে কেন্দ্র করে সাহিত্য প্রকাশের একটি জনপ্রিয় মাধ্যম হিসেবে গড়ে ওঠে ‘ঈদসংখ্যা’। ঈদের সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি, সামাজিক মনস্তত্ত্ব এবং সময়ের ভাবনার ছাপ মেলে এসব বিশেষ সংখ্যায়। ১৯৪১ সালের ৬ জানুয়ারি রাজশাহী থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক পল্লী বান্ধব প্রকাশ করে একটি কোরবানি সংখ্যা, যা ছিল ঈদুল আজহাকে ঘিরে প্রথমদিককার সাহিত্যিক প্রয়াসগুলোর অন্যতম। সংখ্যাটির শিরোনাম ছিল—‘ধ্বনি ওঠে রণি দূর বাণীর—/ আজিকে গরু-ভেড়া কোরবানীর/ হত্যা যে নয় সত্যাগ্রহ শক্তির উদ্বোধন!/ দুর্বল ভীরু চুপ রহো, ওহো খামাখা ক্ষুব্ধ মন!!’ পরবর্তী সময়ে ঈদসংখ্যা হয়ে ওঠে সাহিত্যিক সৃষ্টির গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। ১৯৮৪ সালের সেপ্টেম্বরে সাপ্তাহিক বিচিত্রা প্রকাশ করে ‘ঈদ-উল আজহা’ সংখ্যা, যেখানে ঈদকে কেন্দ্র করে সামাজিক বাস্তবতা ও তীক্ষ্ণ ব্যঙ্গচিত্র উঠে আসে জনপ্রিয় চরিত্র ‘টোকাই’-এর মাধ্যমে। শিল্পী রফিকুননবী (রনবী) নির্মিত এই মুখপাত্র টোকাই ঈদের সময় গরু কেনাবেচা এবং এর সামাজিক প্রতিযোগিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। সবচেয়ে বেশি দামে কেনা গরুর মালিককে ঘিরে টোকাইয়ের বিদ্রূপে ঈদের বাজারব্যবস্থা ও ভোগবাদী দৃষ্টিভঙ্গির এক তীক্ষ্ণ সমালোচনা মেলে।

বিশ শতকের শুরু থেকেই বাংলা সাহিত্য ও আত্মজীবনীমূলক রচনায় কোরবানির ঈদ ঘিরে স্মৃতিচারণার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী (১৮৬৩–১৯২৯) রচিত ‘ঈদুল আজহা’ গ্রন্থে রয়েছে তাঁর ইমামতিতে ধনবাড়ীর ঈদগাহ ময়দানে ঈদের নামাজ আদায়ের একটি বিশদ বিবরণ। আধ্যাত্মিক সাধক খান বাহাদুর আহছানউল্লাহ্ তাঁর ‘ভক্তের পত্র’ গ্রন্থের ৬৬ নম্বর চিঠিতে (আগস্ট ১৯২১) ঈদের দিনকার অনুভূতি বর্ণনা করেছেন গভীর আবেগে—‘আজ পবিত্র ঈদুল আজহা। সকলেই মহোৎসবে উৎফুল্ল। আমি কেবল মজরেম হইয়া স্বীয় অন্ধকারে আচ্ছন্ন…’ এই আত্মমগ্ন ভাবনাগুলো ঈদের বহুমাত্রিক মানবিক অভিঘাতকে স্পষ্ট করে। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান তাঁর আত্মজীবনী ‘কাল নিরবধি’তে ১৯৪০-এর দশকের কোরবানি ঈদের স্মৃতিচারণা করে লিখেছেন, ‘বকরিদে আমরা প্রতিবছর কোরবানি দিতাম না—মাঝে মাঝে তা বাদ পড়তো—ভক্তির অভাবে অতোটা নয়, যতোটা সামর্থ্যের অভাবে।’ এই বিবৃতি ঈদের সামাজিক বাস্তবতা ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটকে গভীরভাবে অনুধাবনযোগ্য করে তোলে।

চল্লিশের দশকের সমাজব্যবস্থায় কোরবানি ঈদের যে সামাজিক ও ধর্মীয় স্বরূপ ছিল, তা স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে আহাম্মদ ফজলুর রহমান রচিত ১৯৪৯ সালের গল্প ‘এক টুকরা জমি’তে। গ্রন্থটির এক জায়গায় তিনি লিখেছেন, ‘গ্রামের কোনো বাড়িতে বিয়ের বিষয়ে গ্রামের পক্ষ থেকে কথা বলার দায়িত্ব থাকত মুন্সি বংশের প্রধান ব্যক্তির উপর। তাঁর অনুমোদন ছাড়া কোনো বিবাহ সম্পন্ন হতো না—তিনি অস্বীকৃতি জানালে সেই সম্পর্ক ভেঙে যেত। ঈদ-উল-আজহার দিন, অর্থাৎ বকরির ঈদে, পুরো গ্রামের কোরবানির গরু ও খাসিগুলি গ্রামের উত্তরে মুন্সি সাহেবদের বাড়ির কিছুটা দূরের একটি খোলা জায়গায় জবেহ করা হতো। মুন্সি সাহেব নিজে একটি চৌকি নিয়ে সেখানে বসতেন। গ্রামের কে কে কোরবানি দিচ্ছেন না—সে খবর তিনি আগেই জেনে রাখতেন। প্রতিটি পশু জবাইয়ের পর সেখান থেকে খানিকটা মাংস মুন্সি সাহেবের সামনে হাজির করা হতো। বাকি মাংস তিনি নিজেই শরিকদের মধ্যে বণ্টন করে দেওয়ার দায়িত্ব নিতেন।’ এই বর্ণনা থেকে স্পষ্ট যে কোরবানি শুধু ধর্মীয় নয়, সমাজকাঠামোর এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবেও বিবেচিত ছিল। মুসলমান সমাজে কোরবানির এই সামাজিক মাহাত্ম্য ও সম্মিলনী চরিত্র আজও অনেকাংশে অটুট রয়েছে।

তখনকার সময়ে আজকের মতো ঘরে ঘরে রেডিও ছিল না। শুধু অভিজাত পরিবার কিংবা বিখ্যাত কিছু দোকানে রেডিও দেখা যেত। তখন ভারতবর্ষের সব রেডিও স্টেশনের পাক্ষিক অনুষ্ঠানসূচি ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত হতো The Indian Listener নামের একটি ম্যাগাজিনে। অল ইন্ডিয়া রেডিওর একটি কেন্দ্র ছিল ঢাকায়, যার অবস্থান ছিল নাজিমুদ্দিন রোডে—বর্তমানে যেখানে বোরহানউদ্দিন কলেজ অবস্থিত। সর্বভারতীয় এই রেডিও নেটওয়ার্কের পাক্ষিক অনুষ্ঠানসূচিতে ঢাকা ছাড়াও কলকাতা ও বোম্বে কেন্দ্রের ঈদুল আজহার অনুষ্ঠান স্থান পেয়েছে। ১৯৩৮ সালের The Indian Listener-এর ২২ জানুয়ারি সংখ্যায় দেখা যায়, আসন্ন ঈদুল আজহা (১৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৮) উপলক্ষে বিশেষ রেডিও অনুষ্ঠানের আয়োজন রাখা হয়েছিল, যেখানে কাসিদার পরিবেশনা ছিল অন্যতম আকর্ষণ। সে সময়কার সংগীতজগতে রাজত্ব ছিল আব্বাসউদ্দীন, কমলাবালা, রাধারানী, হরিমতী, ইন্দুবালা ও আঙ্গুরবালাদের মতো খ্যাতনামা শিল্পীদের। নজরুলের গজল গাইতেন রাধারানী ও হরিমতী আর কমলাবালার ভজন গান ছিল শ্রোতাদের পরম প্রিয়। ঈদ উপলক্ষে আয়োজিত কাসিদার আসর মাতানোর দায়িত্ব ছিল এই তিনজন—রাধারানী, হরিমতী ও কমলাবালার ওপর।

ভাষাসংগ্রামী মাহবুব উল আলম চৌধুরী ‘স্মৃতির সন্ধানে’ গ্রন্থে ঈদের স্মৃতিচারণা করেছেন মানবিক মমত্ববোধ দিয়ে—‘প্রতি বছর যখন আমাদের বাড়িতে কোরবানির জন্য গরু কেনা হয়, তখন খুব যত্ন করে তাকে খাওয়ানো হয়। নানি বলতেন, গরু নাকি আগের দিন স্বপ্ন দেখে যে পরের দিন তাকে কোরবানি দেওয়া হবে। আমি গরুর পাশে গিয়ে তার চোখের জল মুছে দিতাম।’ এ যেন এক শিশুমন থেকে উৎসারিত গভীর ভালোবাসা। শহীদ জননী জাহানারা ইমাম ‘অন্য জীবন’-এ কোরবানির সময়কার রুটির বর্ণনা দিয়েছেন এক প্রাঞ্জল গৃহস্থালি চিত্রে—ধবধবে পাতলা, রসুনের খোসার মতো সাদা রুটি, হালুয়া-সেমাই-ফিরনির সুবাসে ভরপুর ঈদের সকাল।

১৯৬১ সালে শিলচরের ভাষা আন্দোলনের শহিদদের স্মরণে ঈদুল আজহার সব আমোদ-প্রমোদ বর্জনের যে নজির পাওয়া যায়, তা ঈদের রাজনৈতিক ও সামাজিক দায়বদ্ধতার দিকটি উন্মোচন করে। ধর্মীয় আচার ও জাতীয় শোক একাকার হয়ে উঠেছিল তখনকার ঈদে। সমাজ ও সাহিত্যের পাশাপাশি কোরবানির চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে সমকালীন কবিতায়ও। নজরুল ইসলামের ঈদবিষয়ক কবিতা, গান ও গজলে ঈদের আত্মত্যাগ ও সাম্যের বাণী বারবার ধ্বনিত হয়েছে। তাঁর কাব্যিক আহ্বান—
‘ঈদজ্জোহার চাঁদ হাসে ঐ এলো আবার দুস্‌রা ঈদ।
কোরবানী দে কোরবানী দে শোন্ খোদার ফরমান্ তাকীদ্।’
—ঈদকে কেবল ধর্মীয় নয়, সমাজ সংস্কার ও আত্মোৎসর্গের আহ্বানে পরিণত করে।
ঈদুল আজহা উদ্‌যাপনে পুরান ঢাকার মানুষের রয়েছে নিজস্ব ঐতিহ্য, রীতিনীতি ও সংস্কৃতির এক গৌরবময় ধারা। ঢাকার একজন প্রথিতযশা শিল্পপতি ও আদি বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন তাঁর আত্মজীবনী ‘আমার সাত দশকে’ গ্রন্থে তুলে ধরেছেন সেই সময়ের ঈদ উদ্‌যাপনের চিত্র। তিনি লিখেছেন, ‘ঈদের তিন-চার দিন আগে থেকে দাবড়ে বেড়াতাম পুরো মহল্লায়, কে কত বড় আর কত সুন্দর গরু কিনল দেখার জন্য। ঈদের নামাজের পরই ছোটাছুটি শুরু হয়ে যেত আমাদের—কোন গরুকে কিভাবে ফেলা হলো, কোন গরুকে ফেলতে কত কষ্ট হলো, কোন গরুকে তিন-চারবার ফেলার পরও উঠে দাঁড়িয়ে গেল—এসব দেখার জন্য। বাবা যত দিন বেঁচে ছিলেন, তত দিন দুটি করে বড় গরু কোরবানি হতো আমাদের বাড়িতে প্রতিবছর। ঈদে আমরা কখনো খাসি বা বকরি কোরবানি করতাম না, ষাঁড় কোরবানি করতাম। বাবা মারা যাওয়ার পর প্রথমবার কোরবানি দিই ১৯৫৩-৫৪ সালে, ১৫-১৬ বছর বয়সে। ভাড়া করা গাড়িতে গিয়েছিলাম ফতুল্লার হাটে। যতটুকু মনে পড়ে, ৬০-৬৫ টাকা দিয়ে একটি ষাঁড় কিনেছিলাম। চারজন লোক ভাড়া করেছিলাম। ওরা ফতুল্লা থেকে ষাঁড়টা নিয়ে আসে আমলীগোলায়। মাংস হয়েছিল সাত থেকে আট মণ। কোরবানি দিতাম সাধারণত ঈদের পরদিন।’

ঈদের আনন্দময় স্মৃতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে কোরবানির চামড়া সংগ্রহের এক ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটও। ১৯৬৫ সালের ১২ এপ্রিল দৈনিক আজাদ পত্রিকায় লালবাগ শাহি মসজিদের পক্ষে চামড়া সংগ্রহের একটি বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়—যা তখনকার সমাজে এই অনুশীলনের শিকড়গাঁথা প্রমাণ করে। কোরবানির সময় চামড়া দান ছিল শুধু ধর্মীয় কর্তব্য নয়; বরং তা সামাজিক সহমর্মিতা, পারস্পরিক সহযোগিতা এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে সমর্থন করার একটি সম্মিলিত প্রয়াস হয়ে উঠত। একসময় এটি ছিল এক গভীর সামাজিক আবেগ ও সম্প্রীতির বহিঃপ্রকাশ। আজ হয়তো সেই দৃশ্য অতীতের মতো বর্ণিল ও জোরালো নয়, তবু কোরবানির চামড়া সংগ্রহ এখনো আমাদের সামাজিক পরিসরে এক চলমান ঐতিহ্য হিসেবে টিকে রয়েছে।

একালে ঈদকে ঘিরে শহরের রাস্তাঘাটে, খোলা মাঠে গরুর হাট বসে ব্যাপক আয়োজন নিয়ে—কিন্তু সেকালের ঢাকা ছিল অনেক শান্ত, সুশৃঙ্খল ও সীমিত পরিসরে ঘেরা। জনসংখ্যা যেমন কম ছিল, তেমনি কোরবানির পশুর সংখ্যাও ছিল সীমিত। নির্দিষ্ট কিছু জায়গায়—যেমন রহমতগঞ্জ, গাবতলী, সোয়ারীঘাট, জিঞ্জিরা ও বাবুপুরা (নীলক্ষেত) ময়দানে গরুর হাট বসত। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল ঢাকার নবাব আবদুল গণির নামে খ্যাত রহমতগঞ্জের হাট, যা লোকমুখে পরিচিত ছিল ‘গণি মিয়ার হাট’ নামে। এই হাটের প্রচারে ছিল এক আলাদা আকর্ষণ। ঢুলিয়ারা শহরজুড়ে ঢোল পিটিয়ে ডাক দিত—‘ধার করো, কর্জ করো, গণি মিয়ার হাট করো’। একধরনের উৎসবমুখর ছন্দেই জমে উঠত হাট। এই হাটে মুন্সীগঞ্জ জেলার বিখ্যাত মীরকাদিম বাজার থেকে আসত মোটাতাজা, সাদা ও স্বাস্থ্যবান গাই গরু—যার কদর ছিল সেই সময়ের ঢাকাবাসীর কাছে অপরিসীম। এখনো এসব গরুর প্রতি আগ্রহ একেবারে ফুরিয়ে যায়নি। বিত্তবান ও ব্যবসায়ীরা দেশের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসতেন এই উৎকৃষ্ট মানের গরু কিনতে। গরুগুলো পালন হতো বিশেষ যত্নে—নিয়মিত খাওয়ানো হতো উন্নত খাদ্য যেমন খৈল, ভুসি, খুদ আর কুঁড়া। এই সুনিবিড় পরিচর্যার ফলেই মীরকাদিমের গরুর মাংস হয়ে উঠত অতুলনীয়ভাবে সুস্বাদু ও কোমল।

ঈদের স্মৃতিচারণায় এক গভীর মানবিকতা ও পারিবারিক উষ্ণতা ফুটে ওঠে বিশিষ্ট নাট্যকার সাঈদ আহমদের আত্মজৈবনিক গ্রন্থ ‘জীবনের সাতরং’-এ। তিনি লিখেছেন—
‘কোরবানির পশু জবাই করার সময় আমরা সবাই গোল হয়ে হুজুর কর্তৃক জবাই করার দৃশ্য দেখতাম। এরপর কসাইয়ের দল ব্যস্ত হয়ে পড়তো কোরবানির পশু-চামড়া ছাড়াতে এবং মাংস কাটতে। আমরা এসব দৃশ্য খুবই উপভোগ করতাম। অতঃপর জবাইকৃত গরু-খাসির মাংসের কিছু অংশ আত্মীয় এবং গরিবদের মধ্যে বিতরণ করা হতো। আমাদের মধ্যে ঈদে বড়দের সালাম করার ধুম পড়ে যেত। এর বড় আকর্ষণ ছিল ঈদী পাওয়া। চার আনা, আট আনা আর এক টাকা হলে তো কথাই নেই! …ঈদের দিন পাড়া-প্রতিবেশী বিশেষ করে পাড়ার নিম্নবিত্ত মানুষদের বাবা সসম্মানে বাড়ি ডেকে নিয়ে আসতেন। এই খাওয়ার পর্ব চলত রাত নয়টা-দশটা পর্যন্ত। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব অনেকে আসত কোরবানির গরুর মাংস নিয়ে। আমরাও যেতাম আত্মীয়-স্বজনদের বাসায় কোরবানির মাংস নিয়ে।’

এই পারিবারিক আন্তরিকতা ও প্রতিবেশীসুলভ সম্প্রীতির সঙ্গে জড়িয়ে ছিল ধর্মীয় আচরণেরও এক সূক্ষ্ম পরম্পরা। বংশাল এলাকার বাসিন্দা হাসমত আরা বেগম স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে বলেন—
‘মুসলিম গার্লস স্কুল থেকে ১৯৫২ সালে আমি ম্যাট্রিক পাস করি। আমাদের পরিবারে কোরবানির ঈদের অনুষঙ্গ হিসেবে জিলহজ মাসের দুটি নফল রোজা রাখা এবং নিয়ম মেনে “আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ” দোয়া পড়ার প্রচলন রয়েছে। ঈদের খাবার আয়োজনে থাকে কাবাব, কোপ্তা, সুরুয়াসহ আরো বিবিধ।’

এসব স্মৃতিচারণায় ধরা পড়ে একসময়কার ঢাকার কোরবানি ঈদের অনাড়ম্বর অথচ গভীর আন্তরিকতায় ভরা রূপ। গরু কেনা, তাকে যত্নে রাখা, নামাজ শেষে আত্মত্যাগের স্মারক সেই পবিত্র জবাই আর এরপর আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী ও দরিদ্রদের সঙ্গে মাংস ভাগ করে নেওয়ার যে উষ্ণতা—সব মিলিয়ে ঈদ ছিল এক আবেগঘন সামাজিক সম্প্রীতির উৎসব। এই স্মৃতিগুলো শুধুই অতীত নয়, বরং তা এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে হস্তান্তরিত হওয়া ধর্মীয় অনুভূতি, পারিবারিক ঐক্য এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জীবন্ত দলিল। এই ঐতিহাসিক স্মরণ যেন কেবল স্মৃতিমেদুরতায় আবদ্ধ না থাকে, বরং আজকের জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনের মধ্যেও সেই আন্তরিকতা, সাম্যবোধ ও আত্মত্যাগের মূল শিক্ষা জাগ্রত রাখার প্রেরণা হয়ে ওঠে।
সাহিত্য ও স্মৃতিচারণা থেকে এবার চলি কবিতার ছন্দে, যেখানে কোরবানির ঈদ শুধু একটি ধর্মীয় অনুশাসন নয়, বরং হয়ে উঠেছে আত্মত্যাগ, সাম্য ও সামাজিক ন্যায়ের প্রতীক। কাজী নজরুল ইসলামের কবিতায় ঈদের এই ভাবনা যেমন এক নতুন মাত্রা পেয়েছিল, তেমনি তাঁর সাম্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গি অনুপ্রাণিত করেছিল বহু কবি-সাহিত্যিককে। ১৯৬৭ সালে কবি মোহাম্মদ আয়ূব খান তাঁর ‘খঞ্জর’ কাব্যে লিখেছিলেন—
‘খুসীতে জগত ভরিয়ে গিয়েছে
এসেছে বকর ঈদ্,
খঞ্জর হাতে দাঁড়িয়েছে খোদা
কোর্ব্বান দিতে হৃদ।’
এই পঙ্‌ক্তিতে ঈদুল আজহার গভীর ধর্মীয় তাৎপর্য যেমন ধরা পড়ে, তেমনি প্রকাশ পায় আত্মত্যাগের এক প্রতীকী রূপ। মূলত ১৯৪৭-এর পর, পাকিস্তান পর্বে ঈদুল আজহা এই অঞ্চলে ধীরে ধীরে জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদ্‌যাপিত হতে থাকে। তবে তখনো সাধারণ মানুষের সামর্থ্য সীমিত ছিল; কোরবানি ছিল অধিকাংশের নাগালের বাইরে। ঈদের মাংস মানেই ছিল বিতরণের মাধ্যমে পাওয়া এক টুকরা গো-মাংসের স্বাদ—সেই স্বাদ ছিল সাম্য ও সহানুভূতির। সময়ের স্রোতে পরিস্থিতি বদলেছে। আজ কোরবানি শুধু উচ্চবিত্ত কিংবা উচ্চমধ্যবিত্ত নয়, মধ্যবিত্ত পরিবারেও পৌঁছে গেছে। কিন্তু সেই সঙ্গে ঈদের অন্তর্নিহিত শিক্ষা ও আত্মিক তাৎপর্য কি আমরা ধরে রাখতে পেরেছি?

ঈদুল আজহা মানেই আজ আনন্দ, উৎসব, ত্যাগ ও ভাগাভাগির মেলবন্ধন। কিন্তু উনিশ শতকের বাস্তবতায় এই ঈদ ছিল অনেক বেশি প্রতিকূলতার ভেতরে বেড়ে ওঠা এক প্রার্থনা—সামাজিক বৈষম্য, রাজনৈতিক অবরোধ ও জমিদারি শোষণের মাঝে দাঁড়িয়ে এক আত্মিক জাগরণ। সাহিত্য, সংবাদপত্র, রাজনীতি এমনকি জমিদারি–কাঠামোর ভেতরেও ঈদুল আজহার অভিঘাত ছিল স্পষ্ট ও গাঢ়। ‘বকরি ঈদ’ কেবল একটি ধর্মীয় দিন নয়, বরং এটি হয়ে উঠেছে ঐতিহাসিক চেতনার ধারক, সামাজিক অধিকারবোধের রূপকার এবং সাংস্কৃতিক সংগ্রামের স্মারক। ঈদুল আজহার চিরন্তন শিক্ষা—আত্মত্যাগ, সহানুভূতি ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের স্বপ্ন—আজও ততটাই প্রাসঙ্গিক, যতটা ছিল শতাব্দী আগে। আজকের রঙিন ও আয়োজনময় ঈদের ভেতরেও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, এই উৎসব যেন কেবল ভোগে সীমাবদ্ধ না থাকে। ত্যাগের যে মহান আদর্শ, তা যেন না হারিয়ে যায় বাহ্যিক চাকচিক্যের আড়ালে। নজরুলের বিপ্লবী সুরে সুর মিলিয়ে আমাদের প্রত্যাশা—শোষণমুক্ত, বৈষম্যহীন, ন্যায়ের ভিত্তিতে গঠিত একটি মানবিক সমাজব্যবস্থা। কোরবানির ঈদ হোক সেই সমাজ গঠনের অনুপ্রেরণা, হোক হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া এক জীবন্ত আহ্বান।

#
হোসাইন মোহাম্মদ জাকি
লেখক ও গবেষক

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ