সিলেট ১৫ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩০শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৮:৫১ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৫
নিজস্ব প্রতিবেদক | ঢাকা, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ : বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন আয়োজন শুধু নির্বাচন কমিশনের একার দায়িত্ব নয়, বরং পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র, রাজনৈতিক দল, গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজকে মিলিতভাবে কাজ করতে হবে—এমন মত উঠে এসেছে রাজধানীতে আয়োজিত এক সংলাপে। বক্তারা বলেন, সবার রাজনৈতিক অধিকার ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত না হলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পূর্ণতা পাবে না।
বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিতকরণে নাগরিক সমাজের প্রত্যাশা’ শীর্ষক সংলাপ। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় একশনএইড বাংলাদেশ ‘সুশীল’ প্রকল্পের অধীনে সেফটি অ্যান্ড রাইটস আয়োজিত এ সংলাপে অংশ নেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, গবেষক, শিক্ষক, সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীরা।
শান্তিপূর্ণ নির্বাচন ও নিরাপত্তার গুরুত্ব
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও শিক্ষার্থী নাজিফা জান্নাত বলেন, নির্বাচনের আগে থেকেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সহিংসতা ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি এড়াতে দলগুলোকে সুস্থ বিতর্কে অংশ নিতে হবে। তিনি বলেন, “নির্বাচনের সময় আর বেশি নেই, গুণগত রাজনৈতিক ক্যাম্পেইন করতে হবে। নারী অধিকার রক্ষায় দলগুলো এখনো রক্ষণশীল, যা কমিশনেরও ব্যর্থতা।”
নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্য হালিদা হানুম আখতার বলেন, অতীত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা না নিলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সেনা মোতায়েনের পরিবর্তে পুলিশের মনোবল বাড়ানোর ওপর জোর দেন তিনি।
অন্তর্ভুক্তি ও নারীর অধিকার
মানবাধিকারকর্মী ইলিরা দেওয়ান বলেন, নির্বাচনে অন্তর্ভুক্তিকে যেন কেবল টোকেন হিসেবে না দেখা হয়। সংখ্যালঘু ও প্রান্তিক মানুষের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সহযোগী সমন্বয়কারী নেসার আমিন বলেন, নির্বাচন মানে বিশ্বাসযোগ্য বিকল্প বেছে নেওয়া। তাই প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গণমাধ্যমসহ সবাইকে দায়িত্ব নিতে হবে। তিনি জানান, নারী প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি পাঁচবার উত্থাপিত হলেও রাজনৈতিক দলগুলো ছাড় দেয়নি।
আফরোজা সোমা, এআইইউবি–এর সহকারী অধ্যাপক, এবারের নির্বাচনে নারীদের জন্য অন্তত ৩৩% আসন সংরক্ষণের দাবি জানান। তাঁর মতে, পুরুষশাসিত সংস্কৃতি নারীদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে বঞ্চিত করছে।
তথ্যপ্রবাহ, গণমাধ্যম ও ভুল তথ্য
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শাওন তালুকদার বলেন, নির্বাচনে এখন টাকা ও পেশিশক্তির পাশাপাশি গণমাধ্যমও বড় প্রভাব ফেলছে। তাই ভুয়া তথ্য রোধে কার্যকর ফ্যাক্টচেক প্রয়োজন।
দ্য ডেইলি স্টার–এর সাংবাদিক তানজিম ফেরদৌস বলেন, নির্বাচনী সহিংসতা সঠিকভাবে রেকর্ড হচ্ছে কি না এবং সংবাদ কতটা বস্তুনিষ্ঠভাবে প্রকাশ পাচ্ছে, তা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, “কোন দল কতটা সহিংসতা করছে, প্রার্থীরা প্রকৃত ব্যয় কত করছে—এসব নজরদারির আওতায় আনা জরুরি।” পাশাপাশি ‘না ভোট’ চালুর পক্ষে মত দেন তিনি।
বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ভোটারদের অধিকার
বাংলাদেশ ডিজেবল ডেভেলপমেন্ট ট্রাস্টের ম্যানেজিং ট্রাস্টি মো. মনিরুজ্জামান খান বলেন, দৃষ্টিহীন ভোটারদের জন্য ব্যালটে ব্রেইল পদ্ধতি চালু করা উচিত। শারীরিক প্রতিবন্ধী ভোটারদের জন্যও উপযুক্ত সহায়তা নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি।
নাগরিক সমাজের প্রস্তাবনা
সংলাপে সূচনা বক্তব্য দেন একশনএইড বাংলাদেশের ‘সুশীল’ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মৌসুমী বিশ্বাস এবং সেফটি অ্যান্ড রাইটসের নির্বাহী পরিচালক সেকেন্দার আলী মিনা। ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন সিএসও হাব–এর প্রেসিডেন্ট আবদুল ওয়াহেদ এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ঢাকা জেলা সমন্বয়কারী নাসরিন মাহমুদ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক ফিরোজ চৌধুরী।
আলোচনায় উঠে আসা মূল দাবিগুলো
✅ শান্তিপূর্ণ ও সহিংসতামুক্ত নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি করা।
✅ নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানো এবং সংরক্ষিত আসন নিশ্চিত করা।
✅ বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ও প্রতিবন্ধী ভোটারদের জন্য সহায়ক ব্যবস্থা।
✅ সংগঠন ও সমাবেশের সাংবিধানিক অধিকার রক্ষা করা।
✅ রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য নিরাপদ ও সহনশীল পরিবেশ সৃষ্টি।
বক্তাদের মতে, নির্বাচন কমিশনের একক উদ্যোগে সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন সম্ভব নয়। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক দলগুলো মিলিতভাবে কাজ করলেই কেবল আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ।
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by ওয়েব নেষ্ট বিডি