আজীবন বিপ্লবী কমরেড অধ্যাপক লুতফর রহমান ছিলেন ত্যাগী ও গণমানুষের নেতা

প্রকাশিত: ৫:০১ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ২২, ২০২০

আজীবন বিপ্লবী কমরেড অধ্যাপক লুতফর রহমান ছিলেন ত্যাগী ও গণমানুষের নেতা

হাফিজ সরকার || কুষ্টিয়া, ২২ জুলাই ২০২০ : নির্লোভ – আপোষহীন- ত্যাগী, গণমানুষের নেতা, আজীবন বিপ্লবী ছিলেন কমরেড অধ্যাপক লুতফর রহমান।

মঙ্গলবার সকাল ১১টায় পিয়ারপুর দৌলতপুরে সমাধিতে পুস্পমাল্য অর্পন, সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে জেলা পার্টির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক লুতফর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়।
তাঁর রাজনৈতিক জীবনের উপর আলোচনা করেন জেলা সভাপতি ফজলুল হক বুলবুল, কেন্দ্রীয় নেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা কমরেড মজিবুর রহমান। সভা পরিচালনা করেন জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সদস্য ও কৃষক সমিতি সাধারন সম্পাদক অধ্যাপক লুতফুল হক পাপ্পানা।

আলোচনা সভায় কমরেড ফজলুল হক বুলবুল বলেন “নয়া-উদারতাবাদ, সাম্প্রদায়ীকতা-মৌলবাদ এবং সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রামে বামপন্থী বিপ্লবী আন্দোলন আরও জরুরী হয়ে পড়েছে। শ্রমিক শ্রেনী মেহনতি মানুষের জন্য প্রগতির ভাবাদর্শের একটি আদর্শিক লড়াকু পার্টির প্রয়োজন। দির্ঘকাল ধরেই এই অঞ্চলের মানুষ বিপ্লবী সংগ্রামে লিপ্ত থেকে তাদের মুক্তির পথ খুজছেন, কমরেড লুতফর রহমান সেই আদর্শেরই একজন যোদ্ধা ছিলেন। বৃহত্তর কুষ্টিয়া অঞ্চলে বাম আন্দোলনের বিভ্রান্ত পরিস্থিতিতে পার্টির পতাকাকে সঠিক ধারায় উর্ধে তুলে ধরেছিলেন। একজন নিষ্ঠাবান আদর্শিক নেতা হিসাবে পার্টি কমরেডদের কাছে তিনি আদর্শের বাতিঘর হয়ে থাকবেন।”

সংক্ষিপ্ত পরিচিতিঃ
কমরেড লুতফর রহমান জন্মেছিলেন কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর থানার পিয়ারপুর ইউনিয়নের কামালপুর গ্রামের স্বনামধন্য জোতদার পরিবারে। কামালপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শিক্ষা জীবন শুরু হয়। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে ভালো রেজাল্ট করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেমিষ্ট্রিতে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন স্বফলতার সংগে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন কালে পুর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নে যোগ দেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নে সৃংখলা ফিরিয়ে এনে নেতৃত্বের ভুমিকায় অবতির্ন হন। হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নেতৃত্ব দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া কালেই পাকিস্তান সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত ‘পুর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি’র সাথে সম্পর্ক গড়ে উঠে। ১৯৬৮ সালে কমিউনিস্ট পার্টির সভ্যপদ লাভ করেন।

শোষনহীন সমাজতান্ত্রিক সমাজ গড়ার দীক্ষায় দিক্ষিত হয়ে নিজেকে একজন সাচ্ছা কমিউনিস্টে পরিনত করার প্রক্রিয়ায় নিজেকে সর্বতোভাবে নিয়োজিত করেন। সেকারনে ভালো রেজাল্ট থাকা সত্তেও সরকারী কোন চাকুরীতে যোগদান না করে শিক্ষকতা পেশা বেছে নেন। সেই সময় চিনা বিপ্লব ও নকশালবাড়ী আন্দোলনে প্রভাবিত হন। কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ থাকায় ভাষানী ন্যাপের অভ্যন্তরে থেকে কৃষকদেরকে সমাজ পরিবর্তনে লক্ষ্যে সসস্ত্র বিপ্লবের উদ্দেশ্যে তৈরীতে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে মওলানা ভাষানী ও অমল সেনের নেতৃত্বে গঠিত ‘ জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি’র নেতৃত্বে দেশের অভ্যন্তর থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করে পাকিস্তানি বাহিনী ও ভারতীয় সম্প্রসারনবাদের বিরুদ্ধে সসস্ত্র মুক্তাঞ্চল ও ঘাঁটি গড়ে তুলে মুক্তি যুদ্ধে অবতির্ন হন। পরবর্তীতে গোপন রাজনীতি পরিহার করে ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনীতির সাথে নিজেকে নিয়োজিত করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কুষ্টিয়া জেলার সম্পাদক ও কৃষক সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্যের দায়ীত্ব পালন করেন।
এছাড়াও বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির জেলা ও কেন্দ্রীয় দায়ীত্ব পালন করেন।

এই দির্ঘ সংগ্রামী জীবনে বহুবার তাকে কারাবরন করতে হয়। তিনি একজন আপোষহীন, নীতিতে অটল, স্বাচ্ছা কমিউনিস্ট হিসাবে নিজেকে তৈরী করেন যা আজকে বড়ই অভাব।
জিয়া সরকারের প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমান সাহেব কমরেড লুতফর রহমানকে তার দলে যোগদান করে অস্ট্রেলিয়ার রাস্ট্রদুত বানানোর প্রস্তাব দেন। তিনি এই প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন। শাহ আজিজ সাহেব বলেন, ” দেশে লুতফর রহমানের মতো বিষজন লোক থাকলে দেশের অনেক উন্নতি হত।” পরবর্তীতে এরশাদ সরকার ভেড়ামারা কলেজের প্রিন্সিপাল সহ অনেক বড় প্রস্তাব দিলেও তা প্রত্যাখ্যান করে সমাজ বিপ্লবের রাজনীতিতে নিজেকে অবিচল রেখেছিলেন।

ভেড়ামারা কলেজে জনৈক নেতা পরবর্তীতে বিএনপি-জামাত জোটের এমপি জাল সার্টিফিকেট দিয়ে শিক্ষকতায় যোগদান করে। এই নিয়োগ বিরোধী আন্দোলনে প্রধান নেতৃত্বে ছিলেন কমরেড লুতফর রহমান। আন্দোলনে ঐ নেতার সার্টিফিকেট ভুঁয়া প্রমানিত হয় এবং চাকুরীচ্যুত হয়। পরবর্তীতে চারদলীয় জোট সরকারের সময় ভুয়া অধ্যাপক এমপি হয়ে কলেজের সভাপতি নিযুক্ত হয়ে অধ্যাপক লুতফর রহমানের রিটায়ারমেন্টের টাকা আটকিয়ে রাখেন এবং তাঁকে ভিটে ছাড়া করার নানান চক্রান্তে লিপ্ত হন। তাতেও তিনি সামান্য বিচলিত হননি, মাথা নত করেননি। অবসরের টাকা বিহীন তিনি পরলোকগত হন।

আজ কোনো রাজনীতিতেই স্বাচ্ছা রাজনীতিবীদ নেই। রাজনীতি ভরে গেছে লুটপাট আর দুর্বৃত্যায়নে। কর্পোরেট পুঁজির প্রভাবে তৈরী হচ্ছে হাইব্রিড কর্পোরেট নেতা। বামপন্থীরাও কর্পোরেট পুঁজির প্রভাবে হচ্ছে কর্পোরেট বামপন্থী। এই নিদারুন সময়ে কমরেড লুতফর রহমানদের বড়ই প্রয়োজন।
তাই আসুন
কমরেড লুতফর রহমানদের পথে হাতে হাত ধরে হাঁটি একসাথে।
লং লিভ কমরেড
লং লিভ
রেড সেলুট টু ইউ।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ