সিলেট ৩১শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৩:৩৭ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ২৬, ২০২০
॥ কামাল আতাতুর্ক মিসেল ॥ কুমিল্লা (দক্ষিণ), ২৬ আগস্ট, ২০২০ : বর্ষা মৌসুম আসলে হাজেরা বেগমের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। তখন সন্তানের প্রতিও নজর দেয়ার সময় মেলে না। ঘরের সামনে এক চিলতে উঠানে বসে দিনভর দারকি বাঁধেন নিবিষ্ট মনে। তাকে ঘিরে কাজে ব্যস্ত অন্যরাও। চৈত্র মাসে দারকির জন্য অগ্রীম এক হাজার টাকা নিয়েছেন হাজেরা। চুক্তি মোতাবেক দারকি বানিয়ে পাইকারকে দিতে হবে এক কুঁড়ি। এভাবে হাজেরা পাইকারের কাছ থেকে আগাম টাকা নিয়ে দারকি বানাচ্ছেন স্বামীর সংসারে আসার পর থেকেই।
সংসার চালাতে উপার্জনের অবলম্বন হিসাবে হাজেরা বেগমের মতো এ গ্রামের আমেনা, সোলেমান, সেলিনা, রমজান, আবুল কালাম, আলেয়া, হনুফা ও নাজমা নামে আরও বহু নারী পুরুষ দারকি বানিয়ে আজ স্বাবলম্বী হয়েছেন। জীবিকার পথ বেছে নিয়েছেন কুমিল্লার চান্দিনার উপজেলা কলাগাঁও গ্রামের প্রায় ২শ’ পরিবার।
বাঁশের শলার তৈরি বিশেষ ধরনের মাছ ধরার ফাঁদের নাম দারকি। অঞ্চলভেদে দারকির অন্য নামও আছে। কোথাও কোথাও দারকিকে বলে ঘুনি। আবার কোথাও বলে বাইর অথবা দিয়াইব, আনতা। বর্ষা মৌসুমে নদী-নালা,খাল-বিলে মাছ ধরতে কম পানিতে দারকি পাতা হয়। মাছ ধরার ফাঁদ হিসাবে দারকির ব্যবহার চলে আসছে আবহমান কাল ধরে। গ্রাম বাংলায সর্বত্র দারকি দিয়ে মাছ ধরার প্রচলন এখনও দেখা যায়।
খলিশা, টাকিম পুটি, শিং ও কৈসহ নানা প্রজাতির মাছ ধরা হয় দারকি দিয়ে। বাঁশের শলার তৈরি দারকির উভয় দিকে উপরে-নিচে ৩টি করে ৬টি দ্বার (পথ) থাকে মাছ ঢোকার। দ্বারগুলো এমন ফাঁদবিশিষ্ট যে মাছ একবার ঐ দ্বার দিয়ে ঢুকলে আর বের হয়ে আসতে পারে না। দারকির ভেতরকার ঘেরাটোপে মাছ আটকা পড়ে যায়। মাছ ধরার দারকি গ্রামে প্রায় সবার ঘরেই পাওয়া যায়। ব্যাপক হারে চান্দিনার ক্ষুদ্র কুটিরশিল্পে স্থান করে নিয়েছে।
কুমিল্লার জেলার চান্দিনা উপজেলার মাধাইয়া ইউনিয়নের হতদরিদ্রদের গ্রাম কলাগাঁও গ্রামের। এ গ্রামের দারকি বিশেষ এক কুটিরশিল্পে পরিণত হয়েছে। গ্রামের প্রায় পরিবার দারকির ওপর নির্ভরশীল। জীবিকার জন্য সবাই এটাকে প্রদান পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছেন।
ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের মাধাইয়া বাসষ্ট্রেন্ড থেকে প্রায় ৫শ’ গজ দক্ষিণ ও পূর্ব কোনাকোনী অবস্থিত কলাগাঁও গ্রাম। প্রায় ২শ’ পবিবার রয়েছে এই গ্রামে। কম বেশী সবাই দারকি বানিয়ে আসছেন বংশপরস্পরায়। আগের দিনে বাঁশের শলা বেত দিয়ে বুনিয়ে দারকি বানানো হতো। এখন বেত তেমন পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও দাম বেশির কারণে বেতের বদলে নাইলনের সুতা ব্যবহার করা হয়।
কলাগাঁও গ্রামের আবুল কালাম বাসসকে জানালেন, সবাই বংশপরম্পরায় জীবিকা নির্বাহ করতে দারকি বানিয়ে আসছেন। বছরের ৭ মাস দারকি বানান। মহিলারা বেকার সময় বসে না থেকে দারকির শলা কেটে জমিয়ে রাখেন। চৈত্র মাস থেকে দারকি বানানো শুরু হয় এবং কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাস পর্যন্ত চলে। চৈত্র মাসের দিকে পাইকার এসে দারকির জন্য আগাম টাকা দিয়ে যায়। প্রতি হাজার টাকার বদলে পাইকাররা নিয়ে যায় এক কুড়ি দারকি।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান অহিদ উল্লাহ বাসসকে বলেন, কলাগাঁও গ্রামের প্রায় সকলেই কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। ওই গ্রামের প্রায় সকল মানুষ দারকি বানিয়ে এখন স্বাবলম্বী বলে জানান তিনি।
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by M-W-D