১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ বয়ান নিয়ে রাজনীতি

প্রকাশিত: ১:৫০ অপরাহ্ণ, মে ৬, ২০২০


Manual5 Ad Code

খান অাসাদ, ০৬ মে ২০২০ : (১) মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আওয়ামীলীগের একটি দলীয় বয়ান বা ন্যারেটিভ আছে। মুক্তিযুদ্ধের “নেতৃত্ব” দিয়েছে আওয়ামীলীগ দলটি নিজে। এরা “মুক্তিযুদ্ধ” নামক একটি সংগ্রামের একমাত্র

গেরিলা যোদ্ধা

Manual5 Ad Code

দাবিদার। এই দাবীটির সাথে চর দখলের মত একটি প্রেক্ষিত আছে। “মুক্তিযুদ্ধ” ইতিহাস বেদখল করার চেষ্টা হয়েছে, জিয়ার সৈনিকদের দ্বারা। আওয়ামীলীগ নিজেদের দখলে “মুক্তিযুদ্ধ” রাখতে চায়।

(২) মুক্তিযুদ্ধের “ঘোষক” জেনারেল জিয়া। এইটা বিএনপির বয়ান, “মুক্তিযুদ্ধ” দখলের চেষ্টায়। মানুষ জন মাঠে ঘাটে ঘাস কাটতে ছিল। জেনারেল জিয়া চট্টগ্রাম থেকে ডাক দিল, আর বাঙ্গালীরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাপাইয়া পরছে। সুতরাং মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে জেনারেল জিয়ার ডাকে। এই ডাক না দিলে মুক্তিযুদ্ধ হইতনা।

(৩) মুক্তিযুদ্ধের দাবিদার জামাতিরাও। এই বয়ান এসেছে জামাতের এক জামাই যিনি প্রাক্তন বাম, নওমুসলিম, বামাতি, যে নামেই ডাকেন, তাঁর কাছ থেকে। এই বয়ানটি হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধ করেছে মুসলমানেরা, “ইনসাফের লড়াই”। এটি কোন সিলসিলা থেকে আহরিত? মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা ১০ এপ্রিল ১৯৭১ থেকে। “বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে।” এই যে “ন্যায়বিচার” এটিই ইনসাফ।

(৪) হিন্দু ছুপা নাস্তিক, হিন্দুতবাদী আরএসএস এর সমর্থক, এদের বয়ান হচ্ছে, ভারতের ইন্দিরা গাঁধি ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করে একটি স্বাধীনতা বাংলাদেশীদের হাতে দিয়েছে। এদের অনেকর দুঃখ, কেন যে ইন্দিরা গাঁধি স্বাধীনতাটা আরএসএস এর হাতে না দিয়ে তাঁদের বঞ্চিত করেছে।

Manual3 Ad Code

(৫) এক অতিক্ষুদ্র ঘরানার বাম, এরা সোভিয়েত ইউনিয়নকে সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ মনে করে, মুক্তিযুদ্ধ দেখেছে, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বনাম সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের লড়াই হিসবে। এই নিয়ে কম কথা বলাই ভালো, কারণ সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের পতন হয়ে গেছে।

Manual1 Ad Code

(৬) আমার নিজের একটি বয়ান আছে, আমার মা তাঁর বিয়ের আংটি দিয়েছিলেন, ভারতে প্রশিক্ষণ নিতে যাওয়ার কালে। আমার মা আমারে মুক্তিযুদ্ধে পাঠাইছে, অন্যকেউ পাঠায় নাই বা কারো ডাকে যাইনাই । আমরা চার ভাই যখন মুক্তিযুদ্ধে, এক প্রতিবেশীর মন্তব্য ছিল, বাবা তাঁর “চার ছেলেকেই কোরবানি দিয়ে দিল”?

(৭) মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বাংলাদেশের জনগণের ও ইতিহাসের নিজস্ব একটি বয়ান আছে। যার শুরু এই দেশের জনগণের মুক্তির লড়াইয়ে। ১৯৫২ সাল থেকে, ১৯৫৪ সালের ২১ দফা, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা, ১৯৬৯ সালের ১১ দফা, ১৯৭১ সালের ঘোষণা এবং ১৯৭২ সালের সংবিধান। এই সব পড়লেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কি তা জানা যায়।

“মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিক্রয়” নিয়ে রাজনীতিটা কি?

খুব সিম্পল, মুক্তিযুদ্ধ যে এই দেশের জনগণের সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় একটি মৌলিক অর্জন, এই অর্জনটিকে অস্বীকার করা, ধর্মনিরপেক্ষতার, সমাজতন্ত্রের, জাতীয়তাবাদের ধারনাগুলো নানা কৌশলে বাতিল করা। একটি কৌশল “ইনসাফ” যুক্ত করা ও ইসলামী হুকুমতের আওতায় নিয়ে আসা। আরেকটি কিছুটা সূক্ষ্ম চালের। মুক্তিযুদ্ধকে “বিক্রয় যোগ্য বস্তু” হিসেবে আলু পটলের মত নিরামিষ করে দেয়া। এই ট্র্যাপে পা দেয় অনেক ঘিলুকম বামপন্থীও। এরা আওয়ামীলীগের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মালিকানা দাবী ও মুক্তিযুদ্ধের মৌলিক চেতনার (যেমন ধর্মনিরপেক্ষতা) সাথে বিশ্বাসঘাতকতাকে বিরোধিতা করতে গিয়ে, “আমি রাজাকার” পোস্টারকেও বাহবা দেয়। খোঁজ নেয়না, এই পোস্টারের পেছনে কারা আছে।

শেষ কথা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কোন আলু পটল না যে বিক্রি করা যায়। কোন ভাবে মুক্তিযুদ্ধকে মানে এদেশের জনগণের সংগ্রামকে ছোট, হেয়, নিন্দিত করার কোন চেষ্টা, সেটা নির্বোধ অর্বাচীনতা হলেও সহ্য করবোনা। আমার ফেসবুকে তো নয়ই। এ ব্যাপারে আমার অবস্থান যাদের পছন্দ না, আপনারা বন্ধুতালিকা থেকে বিদায় নিতে পারেন।

Manual6 Ad Code

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ