আমাদের শ্রীমঙ্গলের বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্রী বীরাজ সেন তরুন

প্রকাশিত: ১১:৪৪ পূর্বাহ্ণ, মে ২০, ২০২০

আমাদের শ্রীমঙ্গলের বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্রী বীরাজ সেন তরুন

ইশরাত নাহের ইরিনা, ২০ মে ২০২০ : গতকাল সন্ধায় উনি আব্বুর ফোনে কল দিয়েছিলেন।

আব্বুর ফোন আমাদের কাছেই থাকে।
হসপিটাল থেকে কেবিনে ফিরে,
আমি কল ব্যাক করলাম।
নাম save করা ছিলো, চিনেই কল দিয়েছিলাম।
উনাকে দূর থেকে বিভিন্ন প্রোগ্রামে দেখেছি, উনাকে নিয়ে অনেক লেখা পরেছি, উনার অনেক ইন্টারভিউতে উনি আমার দাদার কথা বলেছেন, আমার দাদা মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদ হয়েছিলেন।
ফোন রিসিভ করে উনি পরিচয় দেয়া শুরু করার আগেই আমি বললাম “আমি তো আপনাকে চিনি,পরিচয় দিতে হবে না”।

খুব উচ্ছ্বসিত কন্ঠে উনি বললেন ” তুমি আমাকে কিভাবে চিনো”?

আমি বললাম “চিনি কারণ মুক্তিযুদ্ধের কথা আসলেই সবাই আপনার কথা বলে৷ আপানাকে নিয়ে অনেক লিখা পরেছি এবং আপনি অনেক ইন্টারভিউ তে আমার দাদাকে নিয়ে কথা বলেছেন”।

উনি খুব অভিমান নিয়ে বললেন ” এক্টা মাস ধরে তোমার বাবা অসুস্থ অথচ আমাকে কেউ জানায় নি”।

আমি মনে মনে বললাম “আপনি মনে হয় সোশ্যাল মিডিয়া ব্যাবহার করেন না, তাই সবার মতো জানেনা “। কিন্তু বলার সাহস হয়নি, আমরা সবাই ফেসবুক কেন্দ্রিক হয়ে গেছি।

যাই হোক,
তারপর উনি বললেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় তোমার দাদাকে যখন পাকিস্তানি আর্মিরা মেরে ফেলে রেখে যায়, তার ঠিক ত্রিশ-চল্লিশ মিনিট পর আমরা গেলাম, ধরে দেখলাম উনার শরীর গরম হয়ে আছে, বুঝলাম যে আর বেচে নেই “।

আমি চুপ করে খুব মনোযোগ দিয়ে শুনলাম।

উনি তারপর বললেন ” এই গল্প আরেকদিন হবে, এবার তোমার বাবার কথা বলো “।
আবার এটাও মনে করিয়ে দিলেন,উনি আমেরিকাতে যখন ছিলেন,বড় চাচ্চুর সাথে খুব ভালো সম্পর্ক ছিলো।

উনি তারপর ফোন রেখে দিলেন।
আমি ফোনে খুব এক্টা কথা বলিনা কারো সাথে দরকার ছাড়া, বিরক্ত লাগে।

কিন্তু এই প্রথম ” ফোন রাখতে ইচ্ছে করলনা”। আরেক্টু মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনতে ইচ্ছে করছিলো।
ভাবতে থাকলাম, দাদা যদি মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদ না হতেন, তাহলে তো উনিও আজ এরকম কেয়ার করে কথা বলতেন, গল্প শোনাতেন।

আমি দাদা কে দেখিই নি,
বার বার ভাবছিলাম, আব্বু, চাচ্চু, ফুফু, দাদি, উনারা কিভাবে এতো অল্প বয়সে কাছের মানুষকে হারানোর ব্যাথা সহ্য করেছিলেন?

আব্বু আমাকে সবসময় এক্টা কথা বলতেন “আমরা যেভাবে কস্ট পেয়েছি, তোমাদের ভাই বোন দের চেস্টা করেছি সেসব থেকে দূরে রাখতে।

১৩/১৪ বয়সী একটা মানুষ বাবা হারানোর পর,
স্বাধীন বাংলাদেশে,
তার কাছে সেই পৃথীবি কেমন ছিলো?

অনেক নিষ্ঠুর?
উত্তর জানি, কিন্তু বলতে গেলে অনেক কথায় বলতে হয়।
সব কিছু শব্দচয়নে বা ভাষায় বোঝানো যায় না।