সিলেট ৯ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৬:০২ পূর্বাহ্ণ, মে ৩১, ২০২০
নূর আহমদ বকুল, ৩১ মে ২০২০ : জাতীয় রাজনীতিতে যেহেতু ভাটার টান এবং বিভক্তি চলছে জেনারেল এরশাদ রাষ্ট্রধর্মবিল পাাশ করানোর সুযোগটি ছাড়লেন না।জিয়া এবং এরশাদ জমানায় ৫ম সংশোধনী থেকে ৮ম সংশোধনী রাজনীতির একটি সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক ডিসর্কোস ছিলো। উভয় জেনারেলই অত্যন্ত চতুরতার সংগে সমপন্ন করেন।মোটা দাগে বললে তা দাড়ায় পাকিস্তানি চেতনা করনএবং সেনাবাহিনী থেকে প্রশাসনের সর্বস্তর থেকে মুক্তি যোদ্ধাদের সরিয়ে দেওয়া। এই সময়কালে পাকিস্তান,সৌদি আরব,মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ সহ তথাকথিত ইসলামিক উম্মাহর দেশ গুলো ডলার পেট্রোডলার নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েছিলো।মুসলিম দেশগুলিতে ব্যাপক চাকুরি,শত শত ইসলামিক এনজিওর জন্ম,গ্রামে গ্রামে ইসলামী জলসার নামে জামায়াতের শক্তি অর্জন,জাতীয় অর্থনীতি ও জীবন সংস্কৃতিতে প্রভাব পড়তে থাকলো। আরবি নামে হোটেল ,সেলুন,টেইলরিং এর দোকান ব্যবসা,এনজিও প্রতিস্ঠানের নাম দেওয়া শুরু হলো। বোরখা হিজাব,সৌদিজোব্বা বাড়তেশুরু করলো। তালেবান বিপ্লবের রননীতি রণকৌশল নিয়ে বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং পাশ্বর্বতী অন্চলে ছাত্র শিবির, ছাত্রসেনা,ছাত্রমজলিস নামে বিভিন্ন ইসলামী জংগী সংগঠন গুলি ঘাটি গাড়তে থাকলো।সামরিক জান্তাদের রাজনৈতিক সহায়ক ইসলামীদল গুলি অর্থবিত্ত ক্ষমতার ভাগ নিয়ে দূদর্মনীয় হয়ে উঠতে থাকে ।মন্দির ভাংচুর,সাম্প্রদায়িক বিভেদ সৃষ্টি,আক্রমন,মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ছাত্রসংগঠন সমুহের উপর প্রতিনিয়তঐ জঙ্গী সংগঠন সমুহ আক্রমন পরিচালনা করতো। পাশাপাশি জেনরেল এরশাদ প্রতিসপ্তাহে জুম্মার নামাজ আদায়শুরু করলেন স্বপ্নে নির্দেশিত নতুন নতুন মসজিদে।সেখান থেকে ধর্মীয় বাণী রাষ্ট্রীয় বাণী প্রচার করতে থাকলেন।পীর বাড়ী.মাজার দর্শন বাড়িয়ে দিলেন।সামরিক শাসন ও জংগীবাদী ধর্মান্ধ শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিদিন ইন্চি ইন্চি লড়াই সাজাতে হতো আমাদের চেতনার বাতিঘর গুলো দখলে রাখতে হতো।১৯৮৮ সনের ১১মে তারিখে এরশাদের চামচা মন্ত্রী মওদুদ আহমদ রাষ্টধর্ম বিলটি তথাকথিত পার্লামেনটে উত্থাপন করার পরেই দেশব্যাপী ছাত্র দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।ছাত্র সংগঠন গুলো প্রতিবাদে এগিয়ে আসে বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু হয়।যার যার জায়গা থেকে আন্দোলন চলতে থাকে।
এরশাদ তার নিজের রাজনৈতিক লক্ষ্য হাসিলের জন্য সামরিক গোয়েন্দা রাজনৈতিক শাখাকে ব্যবহার করতেন।জেনারেল জিয়া এই পথের প্রদর্শক, তার ক্ষমতাকালে প্রায়শই এই হাতিয়ার টির অবৈধ ব্যবহার করতেন।যাই হোক এরশাদ রাষ্ট্রধর্মবিল পাশ করবেনই সেহেতু অতিসামনের বাধা ছাত্র আন্দোলনকে ঠেকাতে চাইলেনএবং তার গোয়েন্দা মেশিন ব্যবহার শুরু করলেন। সারাদেশে ছাত্রমৈত্রী কর্মসূচি চালিয়ে যেতে লাগলো। রাজশাহীতে জামিল আক্তার রতন তার কলেজে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে থাকলেন। ২৭ মে তারিখে একটি বড় মিছিল ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করেছিল। আমরাও নানান গল্পগুজব শুনতে লাগলাম।কয়েকদিনের মধ্যে অর্থাৎ ৩১মে তারিখে আমাদের সূর্য্যসারথী ডাক্তার জামিল আকতার রতনের ভয়াবহ হত্যা কান্ডের খবরটি পেলাম দুপুরে।আমাদের মৈত্রী অফিস তখন ৮/১নীলক্ষেত বাবুপুরায়।আশে পাশে সব প্রিন্টং প্রেস।ঐ প্রেস গুলির মালিকেরা আমাদের জরুরি যোগাযোগের জন্য সবসময় তাদের টেলিফোন ব্যবহারের সুযোগ দিতেন। ঐ মুহুর্তে তারকালোকের টেলিফোনটি খবরের ভরসা স্হল হলো।এ ক্ষেত্রে যা হ য় ,অথেনটিক খবর পাওয়া খুব দুস্কর হয়ে পড়ে।শেষ পর্যন্ত হৃদয় বির্দীণ করা চুড়ান্ত খবরটিই পেলাম আমাদের প্রিয় কমরেড জামিল আকতার রতনকে শিবিরের কসাইরা নির্মম ভাবে তরবারি দিয়ে জবাই করছে,হাত পায়ের রগ কেটেছে,যে টুকু জীবন প্রদীপ ছিলো তা নিঃশেষিত করতে পুনরায় তরবারি দিয়ে খুচিয়েছে।আমাদের সভাপতি জহিরুদ্দিন স্বপন,সহ সভাপতি সিরাজুম মুনীর সহ আরো নেত্রীবৃন্দ এক সংগে করণীয় নির্ধরণে বৈঠক করলাম।রাজসাহী কে যাবেন প্রেস রিলিজ কি হবে,পোষ্টার লিফলেট কে লিখবে ছাপাবে।প্রতিমহুর্তে বাদশা ভায়ের সংগে যোগাযোগ রাখা, জেলাগুলির সংগেখবর বিনময়করা এক যুদ্ধকালীন জরুরীত্বর মধ্যে পড়ে গেলাম।জামিল হত্য্যর খবর চাউর হবার সংগে সংগে সারাদেশে ছাত্রমৈত্রী প্রতিবাদ প্রতিরোধে নেমে পড়েছিল।পচিশটি জেলায় সক্রীয় প্রতিরোধ গড়েছিলো নেতাকর্মীরা।কোন নির্দেশ লাগেনি।ধর্মান্ধ নরপশু গুলি পালিয়ে জান বাচিয়েছিলো।এরশাদের প্রশাসন আশ্রয় দিয়েছিলো।নেতাকর্মীদের জানবাজি পান্জালড়ার সাহস যুগিয়েছিলো আদর্শবোধ আর কমরেড হারানোর বেদনা। ৩২বছর পরেও আমি যখন জীবন্ত ইস্পাত দৃঢ় স্বাপ্নিক মায়াবী জামিলকে দেখি মনের আয়নায় তখন মন হয় জামিল মরেনি।পাশাপাশি ছাত্রমৈত্রীর সেই রাগী তরুনেরা চোয়াল শক্ত করে তীব্র হুংকারে ভয়হীন চিত্তে প্রতিরোধে নেমেছিলো স্বজন হারনোর শোকে তাদের এখনো মনে রাখি দারুন ভালবাসায়। জামিলের হত্যকান্ডটি ছিল নিখুত পরিকল্পনার ছক। সামরিক শাসনের শুরুতেই বহিরগত নিয়ে এসে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় দখলের সামরিক পরিকলপনা আমরা প্রতিরোধ করে ধ্বংস করে দিয়েছিলাম। এর জন্য শিবিরের করা মিথ্যা হত্যা মামলায় আমাদের ১৪জন ছাত্রনেতাকে বগুড়া সামরিক আদালতে যাব্বজীবন সহ বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ডে দন্ডিত হতে হয়েছিলো। তখন থেকেই সামরিক সরকার তার এজেন্সি এবং শিবিরকে দিয়ে তাদের পরবর্তী পরিকল্পনা আকতে থাকে।বেছে নেয় ছাত্র মৈত্রীর আরেক শক্তিভূমি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ।হত্যার জন্য বেছে নেয় আপোষ হীন নেতা জামিলকে।এখনও আমার কাছে প্রশ্ন থেকে গেছে মেডিকেলে ছাত্র শিবির শক্তিশালী সংগঠন না হয়েও কেন আক্রমন করার সাহস পেলো?যা হোক সে এনালাইসিস পরে কোন লেখায় করবো। জামিলের রক্ত বিভক্ত ছাত্র আন্দোলনকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল। ১৯৮৮ সালের ৪ঠা জুন তারিখে জামিল হত্যার প্রতিবাদে ঢাকা জি পি ও এর সামনে ১৬ টি ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে হাজার হাজার ছাত্র জনতা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ছাত্র মৈত্রী ঐ সভায় সভাপতিত্ব করেছিল। এটিই ছিল নতুন ভাবে সামরিক জান্তা বিরোধী উচ্চতর লড়াই। আজ ৩১মে কমরেড জামিলের ৩২তম মৃত্যু বার্ষিকী।তার প্রিয় সংগঠন ছাত্রমৈত্রী ও প্রিয় পার্টি ওয়ার্কার্স পাটি তাকে শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করবে যে যেখানে আছে সেখান থেকেই।করোনাকালের এই পৃথিবীতে এই বাংলায় হাজার লক্ষ জামিলের জন্ম হোক।যে জামিলেরা ভোগবাদ,সুবিধাবাদ,ব্যাক্তিবাদ,ধান্ধাবাদকে না বলবে।ধর্মান্ধতা, প্রতিক্রীয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যোদ্ধা হবে। লুটেরাদের বিরুদ্ধে মানবিক সমাজের জন্য লড়বে। বাংলাদেশ ভালো নেই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মূল ভিত্তি চার নীতি পথ হারিয়েছে। পুনরায় ঘুরে দাঁড়াতে হবে। তার জন্য চায় ঐক্য। মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তি ছিল জনগণের ঐক্য। সংকীর্ণতা ভুলে জামিলের আদর্শের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। জামিল লাল সালাম। জয় হোক তোমার আদর্শের। জয় সমাজতন্ত্র।।
#
নুর আহমদ বকুল
পলিটব্যুরো সদস্য
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by M-W-D