সিলেট ১০ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৮:২৭ পূর্বাহ্ণ, জুন ২৬, ২০২০
|| সমর অাধ্য || অাগরতলা (ভারত), ২৬ জুন ২০২০ : কমিউনিস্ট দের ‘দেশদ্রোহী’ বলে অনেক সময়ই চিহ্নিত করেছে নানান শক্তি, কিন্তু ভারতের মাটিতে কমিউনিস্টদের কি ভূমিকা ছিল তা বলতে গিয়ে কমিউনিস্ট নেতাদের নাম ধরে লেখা কিছু তথ্য।
কমিউনিস্টঃ
১) কমরেড মুজফ্ফর আহমেদ – মীরাট ষড়যন্ত্র মামলায় ব্রিটিশ সরকার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়,যার মধ্যে ৩ বছর সেলুলার জেল এ কাটে।স্বাধীনতার পর কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য।
২) গণেশ ঘোষ-চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনের অন্যতম নায়ক। সূর্য সেনের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জালালাবাদ পাহাড় এ লড়াই করেন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে। ১৬ বছর সেলুলার জেলে সশ্রম কারাদণ্ড । পরবর্তীকালে সিপিআই MLA, ৩ বারের জন্য ও সিপিএমের M.P.
৩) কল্পনা দত্ত- প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার-এর সহযোগিনী এবং চট্টগ্রাম বিদ্রোহের অন্যতম মুখ।৬ বছর এর দ্বীপান্তর। ফিরে এসে কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন ও ভোটে দাঁড়ান।
৪) সুবোধ রায় – চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠন, জালালাবাদ পাহাড়ের যুদ্ধে কনিষ্ঠতম সৈনিক।
১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড হয়, যার মধ্যে ৬ বছর সেলুলার জেল। সিপিএম রাজ্য কমিটি সদস্য আজীবন।
৫) অম্বিকা চক্রবর্তী- চট্টগ্রাম বিদ্রোহের জন্য ১৬ বছর সেলুলার জেলে সশ্রম কারাবাস। স্বাধীনতার পর কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান ও নির্বাচিত MLA.
৬) অনন্ত সিং – চট্টগ্রাম বিদ্রোহের জন্য ২০ বছর (১৬ বছর সেলুলার জেলে) সশ্রম কারাবাস। স্বাধীনতার পর কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান।
৭) শিব ভার্মা – ভগৎ সিংএর সহযোগী। লাহোর ষড়যন্ত্র মামলায় একসাথে গ্রেপ্তার হন। ভগৎ সিং এর ফাঁসি হয় ও এনার যাবজ্জীবন দ্বীপান্তর আন্দামানে। ১৭ বছর পর ফিরে যোগ দেন কমিউনিস্ট পার্টিতে। পরে সিপিআইএম উত্তর প্রদেশ রাজ্য কমিটির সেক্রেটারি।
৮) হরেকৃষ্ণ কোনার- ব্রিটিশ বিরোধী কার্যকলাপ এর জন্য ৬ বছর আন্দামানে এ দ্বীপান্তর। আন্দামানে বিপ্লবীদের নিয়ে কমিউনিস্ট কনসোলিডেশন গঠন ও পরে কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম প্রধান মুখ।
৯) লক্ষী সায়গল – আজাদ হিন্দ বাহিনীর রানী ঝাঁসি রেজিমেন্ট এর ক্যাপ্টেন। আজাদ হিন্দ বাহিনীর হয়ে ইমফল ও কোহিমা ফ্রন্টে লড়াই করেন। স্বাধীনতার পর কমিউনিস্ট পার্টিতে আসেন। আমৃত্যু সদস্য ছিলেন।
১০, ১১, ১২ ) জয়দেব কাপুর , অজয় ঘোষ ও কিশোরীলাল- ভগৎ সিংএর সহযোগী লাহোর ষড়যন্ত্র মামলায় একসাথে গ্রেপ্তার হন এবং যাবজ্জীবন দ্বীপান্তর হয় আন্দামান সেলুলার জেলে। স্বাধীনতার পর মুক্তি পেয়ে কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন।
১৩) সতীশ পাকড়াশী – মেছুয়াবাজার বোমা মামলায় ১০ বছর এর জন্য সেলুলার জেল। ফিরে এসে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ও সিপিএম বিধায়ক।
১৪) পি সি জোশি- মীরাট ষড়যন্ত্র মামলায় যাবজ্জীবন, যদিও মেয়াদের আগে মুক্তি পান। ৩ বছর কাটান সেলুলার জেলে, কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম জেনারেল সেক্রেটারি।
১৫) অরুণা আসাফ আলী – ১৯৪৬ এর নৌ বিদ্রোহের সংগঠক কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে ৬৬ টা যুদ্ধ জাহাজ ও ১০০০০ নৌ সেনা নিয়ে গড়ে ওঠা ব্রিটিশ বিরোধী যে বিদ্রোহ কংগ্রেস, মুসলিম লীগ ও হিন্দু মহাসভার পিছন থেকে ছুরি মারায় অঙ্কুরে বিনাশ পায়। এই বিদ্রোহী দের মধ্যে আরো অনেক কমিউনিস্ট ছিলেন যারা ব্রিটিশ এর গুলিতে মারা যান, উৎপল দত্তের ‘কল্লোল ‘ নাটকে এর বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়।
১৬) বি টি রণদিভে – ১৯২৫ থেকে ১৯৪২ , ১৭ বছর ধরে ব্রিটিশ সরকার এর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে কৃষক শ্রমিককে সংগঠিত করেছেন। সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে নৌ বিদ্রোহের সমর্থনে সারা ভারত ব্যাপী হরতাল সংগঠিত করেন ও ব্রিটিশ সরকার উৎখাতের পরিকল্পনা করেন। স্বাধীনতার পর সিপিআই এ, পরে সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটি তে।
১৭) ই এম এস নাম্বুদিরিপাদ – ১৯৩৪ – ১৯৪২ ব্রিটিশ সরকারের ‘ ওয়ান্টেড লিস্ট’ এ প্রায় গোটা যৌবন তাই আত্মগোপন করে কাটিয়ে দিয়েছেন। পরে কেরালার প্রথম কমিউনিস্ট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী।
১৮, ১৯ ) বীরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত ও সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর– ছাত্রাবস্থায় পালিয়ে যান জার্মানিতে ইন্ডিয়ান ইনডিপেনডেন্স লীগ এর বার্লিন কমিটি এর সদস্য হয়ে ভারত বর্ষের বিপ্লবীদের অস্ত্র যোগান দেওয়ার দায়িত্ব নেন।
হিটলারের নাত্সি বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার ও দীর্ঘ কারাবাস জার্মানিতেই।কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।
২০ ) শওকত উসমানী- মীরাট ষড়যন্ত্র মামলার প্রধান অভিযুক্ত।কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে আরএসএস এর ভূমিকা, যা ইতিহাসের পাতা থেকে মোছা গেল না।
আর.এস.এস এর ভুমিকাঃ
১) মাধব সদাশিব গোলওয়ালকর(আরএসএসের দ্বিতীয় স্বরসঙ্ঘচালক) : “হিন্দুরা ব্রিটিশদের সাথে লড়াই করে তোমাদের শক্তি খরচ না করে,আসল শত্রু মুসলমান,খ্রিস্টান আর কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে লড়াই করো।”
২) বিনায়ক দামোদর সাভারকর (‘হিন্দুরাষ্ট্র’ বই-এর লেখক এবং হিন্দুত্ব আইডিওলজির জনক) : ইংরেজ সরকারের কাছে মুচলেকা দিয়ে লেখেন যে তিনি আর কোনও দিনও ব্রিটিশ বিরোধী ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নেবেন না।
৩) নাথুরাম বিনায়ক গডসে (আরএসএসের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা) : জীবনে কোনওদিন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশ না নিলেও গান্ধীজীকে খুন করেন।
৪) অটল বিহারী বাজপেয়ী(আরএসএস নেতা,পরবর্তীকালে বিজেপির টিকিটে জিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী) : ১৯৪২সালে ভারতছাড়ো আন্দোলনের সময় উত্তর প্রদেশের বটেশ্বর গ্রামে ব্রিটিশ সরকারের রাজসাক্ষী হয়ে অসংখ্য বিপ্লবীকে ইংরেজ সরকারের কাছে ধরিয়ে দেন।
৫) শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় (আরএসএস নেতা তথা বিজেপির প্রাণপুরুষ) : ১৯৪৭ সালের ২রা মে ভাইসরয় মাউন্ট ব্যাটেনকে চিঠি লিখে অনুরোধ করেন ভারত ভাগ পরে করা হলেও ক্ষতি নেই কিন্তু বাংলাকে যেন অবিলম্বে ভাগ করা হয়[যে বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতা করে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ থেকে নজরুল রাস্তায় নেমে এসেছিলেন]।
৬) কে বি হেডগেওয়ার (আরএসএসের প্রতিষ্ঠাতা) : ১৯৩০সালে সত্যাগ্রহ আন্দোলনের সময় দেশবাসীকে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের তেরঙ্গা পতাকা বর্জনের আহ্বান জানিয়ে সত্যাগ্রহ সহ ব্রিটিশ বিরোধী সমস্ত আন্দোলন থেকে দূরে থাকতে আহ্বান জানান।
কৃতজ্ঞতা : ‘গর্জে ওঠো, কণ্ঠ ছাড়ো’ পেজ
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by M-W-D