ফারাজ এবং উদ্দীপনা জাগানো বীরেরা

প্রকাশিত: ৪:২৭ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১, ২০২০

ফারাজ এবং উদ্দীপনা জাগানো বীরেরা

Manual1 Ad Code

|| যারেফ আয়াত হোসেন || ০১ জুলাই ২০২০ : আজ ১ জুলাই। ফারাজ আইয়াজ হোসেন এবং ওই বীরদের আজ স্মরণ করার দিন, এখনো যাঁরা আমাদের উদ্দীপ্ত করে চলেছেন।

হোলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলার আজ চার বছর পূর্ণ হলো। এখন আমরা আরেকটি অন্ধকারাচ্ছন্ন সময় পার করছি। এক বৈশ্বিক মহামারি শুধু বাংলাদেশকে নয়, পুরো দুনিয়াকে অচল করে দিয়েছে।

Manual7 Ad Code

নজিরবিহীন অন্ধকারের এমন সময়গুলোতেই ওই বীরদের প্রয়োজন হয়, যাঁরা আমাদের আর সবার সামনে চলার পথ উজ্জ্বল করে তুলতে পারেন। এমন চ্যালেঞ্জকে যাঁরা মোকাবিলা করেছেন, তাঁদের কাছ থেকে পাওয়া আত্মবিশ্বাসে ভর করে আমরা সামনে এগিয়ে যাওয়ার উদ্দীপনা পাই।

আমরা, ফারাজের পরিবার, এক অসামান্য গর্বের অনুভূতির সঙ্গে তাঁর রেখে যাওয়া প্রভাবের কথা ভাবছি। ফারাজ নীতিবোধের এক দিকদর্শন, যাঁকে ঘিরে আছে সাহস, বন্ধুত্ব ও মানবতার চেতনা, যা অনুপ্রাণিত করে চলেছে আমাদের। ফারাজ খাঁটি মানবিক মূল্যবোধের এক উদাহরণ। এমনই এক উদাহরণ যা বিপদের সময় অন্যকে উঠে দাঁড়ানোর সাহস জোগায়, সে বিপদের ফল যত ভয়ানকই হোক না কেন। এমনকি নিঃস্বার্থভাবে সে সাহস দেখাতে গিয়ে যদি অকাতরে নিজের জীবন উৎসর্গ করতে হয় তবু।

কোভিড–১৯-এর বিরুদ্ধে এই যে আমরা মানুষেরা লড়াই করছি, তার পেছনেও আছে সেই মূল্যবোধ, যা ফারাজ আমাদের মনে প্রজ্বলিত করতে চেয়েছেন। আমাদের দেশের যেসব নির্ভীক যোদ্ধা জাতির জন্য কাজ করে চলেছেন, তাঁদের সালাম জানাই। তাঁরা নিঃস্বার্থভাবে ও সাহসিকতার সঙ্গে দেশের এবং অন্য সবার জন্য নিজেদের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। এই দুর্বিষহ সময়ে তাঁরা আমাদের টিকে থাকতে সাহায্য করছেন।

Manual5 Ad Code

আমাদের চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী ও পুলিশ সদস্য—যাঁরা বিভিন্ন সামাজিক উদ্যোগ গ্রহণ করে চলেছেন এবং যাঁরা এ লড়াইয়ে সামনের সারিতে রয়েছেন, তাঁরা বীর। তাঁরা আমাদের এই সংকটময় মুহূর্ত পাড়ি দিতে সহায়তা করছেন। যাঁদের সাহায্য দরকার, তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে এই বীরেরা নিজেদের দায়িত্ব পালন করছেন। অন্যের জীবন রক্ষায় ক্লান্তিহীন প্রচেষ্টা চালাতে গিয়ে এই মহামারিতে অনেক চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী নিজের জীবন হারাচ্ছেন। পুলিশ সদস্যরাও জনগণের সেবা দিচ্ছেন। ভীষণ অভাবে যাঁরা পর্যুদস্ত হয়ে পড়ছেন, তাঁদের ত্রাণসহায়তা দিচ্ছে বহু প্রতিষ্ঠান। এমনকি ঘরের পাশের বহু দোকানি পর্যন্ত সেবার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে এসেছেন। অভাবী মানুষকে সহায়তায় এসব উদ্যোগ আমাদের পদক্ষেপ জোরালো করেছে। দেশের জনগণকে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সেবা দেওয়ার সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার কারণে সাহসী মানুষ হিসেবে তাঁরা স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

Manual7 Ad Code

১ জুলাইয়ের দিনটিকে সন্ত্রাসীরা নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেছে। আমাদের ইতিহাসে সবচেয়ে বিভীষিকাময় রাতগুলোর একটি হিসেবে সে রাত স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কিন্তু ফারাজের বীরত্বপূর্ণ আত্মত্যাগ ওই রাতের ঘটনাটিকে এক সাহসী গল্পে রূপ দিয়েছে। বন্ধুদের ছেড়ে চলে না গিয়ে তাঁদের রক্ষায় ফারাজ সেটিই করে দেখিয়েছেন, চরম বিপদের সময় সত্যিকারের বীরেরা উঠে দাঁড়িয়ে যা করে থাকেন। বিপদের মুহূর্তেই কোনো মানুষের প্রকৃত পরিচয়। কোভিড–১৯ আমাদের সমাজের প্রতিটি অংশকে লড়াইয়ের কাতারে সম্মিলিত করেছে, যাতে এই দুর্যোগের সম্পূর্ণ সমাপ্তি টানা যায়।

Manual2 Ad Code

সন্দেহ নেই, কোভিড–১৯–এর মধ্যে আমরা আতঙ্কে উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়েছি। প্রায় সবাই এই অনিশ্চয়তার মধ্যে আছেন যে ভবিষ্যতে কী অনিবার্য পরিণতি আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। এ দুঃসময় আমরা কেটে যাওয়ার স্বপ্ন দেখি। আমরা গর্ব করে বলতে পারি, আমাদের বীরেরা সামনে চলার পথ দেখিয়েছেন। আমাদের আশা জুগিয়েছেন। বন্ধুদের রক্ষা করতে তাঁদের সঙ্গে ফারাজের সাহসিকতাপূর্ণভাবে থেকে যাওয়া ১ জুলাইয়ের ঘটনাপ্রবাহ বদলে দিয়েছে। বাংলাদেশের একটি তরুণ কী করতে পারেন, তা তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন। স্থাপন করেছেন দৃষ্টান্ত। আজ সবকিছু অচল করে দেওয়া মহামারির সময় আমাদের অন্য বীরেরা জাতির সেবায় আত্মনিয়োগ করেছেন। আগামী দিনের জন্য এটিই উজ্জ্বল আশার প্রতিশ্রুতি।

১ জুলাই ফারাজের আত্মত্যাগময় বীরত্বগাথা স্মরণ করার দিন হয়ে উঠেছে। একই চেতনায় আমাদের কাছে এটি উদ্দীপনা জুগিয়ে চলা বীরদের কথা স্মরণ করার দিবস হয়ে উঠুক।

যারেফ আয়াত হোসেন: ফারাজ হোসেনের ভাই

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual2 Ad Code