পাটকলগুলো রাষ্ট্রের হাত থেকে সরিয়ে ব্যক্তি স্বার্থে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে বড় বিপর্যয় ডেকে আনবে: ওয়ার্কার্স পার্টি

প্রকাশিত: ২:১৯ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৮, ২০২০

পাটকলগুলো রাষ্ট্রের হাত থেকে সরিয়ে ব্যক্তি স্বার্থে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে বড় বিপর্যয় ডেকে আনবে: ওয়ার্কার্স পার্টি

Manual2 Ad Code

ঢাকা, ১৮ জুলাই, ২০২০ : “আধুনিকায়নের নামে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শিল্প ধ্বংসের পায়তারা চলছে। পাটকলগুলো রাষ্ট্রের হাত থেকে সরিয়ে ব্যক্তি স্বার্থে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যা ভবিষ্যতে বড় বিপর্যয় ডেকে আনবে।” বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি আয়োজিত শনিবার সকালে ‘পাটখাত সুরক্ষায় ভাবনা ও করণীয়’ বিষয়ক এক ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেছেন।

বক্তারা বলেন, পাটশিল্প বন্ধ করার মধ্য দিয়ে সমস্ত পাট খাতই ধ্বংস হবে। শুধু শ্রমিকই নয়, পাটচাষী, কৃষক এবং দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পাটকল বন্ধ করে আধুনিকায়নের নামে যে সময় নেয়া হবে, তাতে বাংলাদেশ বিশ্বে পাট পণ্যের বাজার হারাবে অন্যরা সে বাজার দখল করে নেবে সেটা আর ফিরে পাওয়া যাবে না।

ওয়েবিনারে সভাপতিত্ব করেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি। তিনি পাটকল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, কেবল কতিপয় আমলা- ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ করে নয়, পাটের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল অংশিদারদের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তিনি এই বিষয়ে সংলাপের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান।

ওয়েবিনারে মুলপত্র উপস্থাপন করেন ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি। তিনি বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত পরিপুর্ন রাজনৈতিক, ব্যবসায়িক নয়। বাদশা বলেন, পাকিস্তান আমল থেকে শুরু করে পাটই ছিল আমাদের রাজনৈতিক দাবীর কেন্দ্র বিন্দু। তিনি আরও বলেন, সংবিধানে মালিকানার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রায়াত্ব খাতের যে প্রাধান্য রয়েছে এই সিদ্ধান্তের মধ্যে দিয়ে তাও নাকচ হয়ে গেল।

Manual3 Ad Code

ওয়েবিনারে প্যানেল আলোচক ছিলেন জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু। তিনি বলেন, পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক, আত্মঘাতি এবং অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকারক। বিশ্ব যখন পরিবেশবান্ধব অর্থনীতি গ্রহনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেখানে পাটখাতের সম্ভাবনা রয়েছে এবং আন্তর্জাতিক বাজারেও চাহিদা বাড়বে। তিনি ‘পিপিপি’র পরিক্ষা বাদ দিয়ে রাষ্ট্রের নিজস্ব উদ্যেগে বিদ্যমান পাটকলগুলোর উন্নয়ন সাধনের আহ্বান জানান। তিনি সরকারকে পাটকল বন্ধ করার আত্মঘাতি পথ থেকে সরে আসার আহ্বান জানান।

ঐক্য ন্যাপ সভাপতি পঙ্কজ ভট্টচার্য্য বলেন, লোকশানের কথা বলা বজ্রপাত তুল্য। সত্যটা হলো দুর্নীতি, যার কারণ লোকশান। পাটকল ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত কর্মকর্তাদের দুর্নীতি ও অযোগ্যতা পর্যালোচনা হওয়া উচিৎ। তিনি সরকারের সাথে এই বিষয়ে আলোচনার উদ্যোগের আহ্বান জানান।

ড. মইনুল ইসলাম বলেন, আমাদের পশ্চিম বঙ্গের অভিজ্ঞতা নেয়া উচিৎ। তিনি বলেন, এটা পিপিপি নয় এটা প্রাইভাইটাইজেশন। সরকারের এই সিদ্ধন্তে পাটের বাজারে ধ্বস নামবে, পাটচাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

পাট কমিশনের সাবেক সদস্য খালেদ রব বলেন, পাটকল বন্ধকরার সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক। যদিও সরকার তার জোট সঙ্গিদের সাথে এ নিয়ে কোন আলোচনা করেছে বলে মনে হয় না। তবে পাটের বাজার টিকিয়ে রাখতে হলে কারখানা চালু রাখতে হবে। বাজার একবার হারালে আর ফিরে পাওয়া যাবে না।

অধ্যাপক এমএম আকাশ বলেন, পাট কোন ‘অস্তগামী’ শিল্প নয়। বিশ্বব্যাংককে সন্তুষ্ট করার জন্য এই সিদ্ধান্ত। তিনি পাবলিক পাবলিক পার্টনারশীপে পাট খাত পরিচালনার বিষয় তুলে ধরেন।

পাটকল শ্রমিক নেতা শহিদুল্লাহ চৌধুরী বলেন, পাটশিল্প আধুনিকিকরণে ১০০০ কোটি টাকা বরাদ্দের একটি লিখিত প্রস্তাব আমরা সরকার প্রধানের নিকট দিয়েছিলাম, তা নিয়ে আমাদের সাথে কোন আলোচনাই তারা করলেন না। তিনি বলেন, আমাদের প্রদত্ত সুত্রে বর্তমান উৎপাদনের চাইতে তিনগুন বেশী উৎপাদন এবং শ্রমিক ছাটাইয়ের পরিবর্তে নতুন কর্মস্থানের কথা বলেছিলাম।

Manual3 Ad Code

জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি কামরূল আহসান বলেন, পাটকল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত আমাদের স্বাধীনতার অঙ্গিকারের সাথেই বিশ্বাসঘাতকা। এই সিদ্ধান্ত একেবারেই আমলাতান্ত্রিক পরামশে একক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। পাটখাত রক্ষায় জোরদার রাজনৈতিক আন্দোলন চাই।

শ্রমিক কর্মচারি ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা রাজেকুজ্জামান রতন, জনগনের সম্পদ লুন্ঠনের প্রক্রিয়া আমরা প্রত্যক্ষ করলাম। এটা লুটপাটের অর্থনীতির ফল। এক প্রজ্ঞাপনে প্রায় ৫২ হাজার শ্রমিককে বেকার করে দেয়া হলো।

Manual4 Ad Code

গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলনের নেতা জনাব আমানুর রহমান বলেন, পাটখাত দিয়েই এদেশে অর্থনীতির বিকাশ হয়েছিল। পাটখাতে অব্যশ্যই ‘সাবসিডি’ দিতে হবে।

মোস্তফা মনোয়ার বলেন, যারা ব্যালেন্সসিট দেখে অর্থনীতির ব্যাখ্যা করেন তারা অর্থনীতিবিদ নন, তারা একাউন্টেসির লোক। আমাদের কৃষি ও কৃষক বাচাতে হবে।

আলেচনায় আরও অংশ নেন যশোর জুটমিলের সিবিএর সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন রশিদ মল্লিক, হাফিজ জুট মিলের সিবিএ’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম, খুলনার প্লাটিনাম জুটমিলের সিবিএ’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান।

ওয়েবিনারে উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটবুরো সদস্য আনিসুর রহমান মল্লিক, কমরেড সুশান্ত দাস, মাহমুদুল হাসান মানিক, নুর আহমেদ বকুল, কামরূল আহসান, আমিনুল ইসলাম গোলাপ, হাজি বশিরুল আলম, এনামুল হক এমরান, নজরুল ইসলাম হাক্কানী প্রমুখ।

Manual7 Ad Code

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code