সিলেট ১২ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৪:১০ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৪, ২০২০
|| উজ্জ্বল দত্ত || ২৪ জুলাই ২০২০ : বর্তমান করোনাকালীন পরিস্থিতিতে অধিকাংশ বেসরকারি কর্মজীবী মানুষেরা অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছেন। এই পরিস্থিতির উন্নতি কখন হবে এটা ঠিক করে বলার মতো কোনো পরিস্থিতি এখনো তৈরি হয়নি। আপদকালীন স্থিতিতে অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো শিক্ষাখাতের কার্যক্রমও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে যার ব্যাপ্তি মাস থেকে বছরে গিয়ে গড়াতে পারে।
ক্যাম্পাসভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম থমকে গিয়ে কিছু বিষয় নিয়ে ইতোমধ্যে নানা তর্ক-বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। গত ৩ মাস ধরে বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক ক্লাস নেওয়া যেহেতু সম্ভব নয়, অনলাইনভিত্তিক ক্লাসই এখন একমাত্র ভরসা। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অনলাইনভিত্তিক ক্লাসগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চলমান রয়েছে। যেসব বিশ্ববিদ্যালয় পিছিয়ে ছিল তারাও এখন অনলাইনে ক্লাস নিতে শুরু করেছে যা কিনা খুবই ভালো একটা দিক। অন্যদিকে বিদ্যালয়ের বিষয়গুলো সংসদ টিভিতে পড়ানো হয় যা সারা দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা সকল শিক্ষার্থীর জন্য কিছুটা হলেও স্বস্তিদায়ক।
অনলাইনভিত্তিক পড়াশোনার প্রয়োজনীয়তা আমাদেরকে কিছু বিষয় তুলে ধরতে সাহায্য করেছে। প্রাথমিক পর্যায় থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সকল স্তরে এই সেবা নেওয়া ও দেওয়ার মতো অবকাঠামো দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদের নেই। অনেকগুলো বিষয়ের মধ্যে ধীরগতির ইন্টারনেট, উচ্চ মূল্য, দুর্বল কাভারেজ ও স্মার্টফোন/কম্পিউটার/ট্যাব কেনার জন্য আর্থিক অসচ্ছলতা হচ্ছে প্রধান অন্তরায়। নিকট ভবিষ্যতে উপরোক্ত সীমাবদ্ধতার অধিকাংশই আমাদের পক্ষে পূরণ করা সম্ভব নয়।
এসব বিষয়ের সাথে নতুন করে কিছু বিষয় যোগ হয়েছে যা মূলত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেই বেশি প্রযোজ্য। প্রথমত শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতন/সেমিস্টার ফি। কিছু কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এরই মধ্যে শিক্ষার্থীদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করা নিয়ে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ শুরু হয়ে গিয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বেতন পরিশোধের চাপও কিছু কিছু ক্ষেত্রে অভিভাবকরা পাচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নিতে চাইছে অনেক প্রতিষ্ঠান। এই পরীক্ষা নেওয়ার একটা বিশেষ কারণ হচ্ছে ফি পরিশোধ করার তাগাদা দেওয়া। অনেক অভিভাবক ক্লাস না হওয়ায় এবং আর্থিক সংকটের কারণে বেতনে কিছুটা ছাড় দিতে আহবান করছেন। অবশ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকে আশাবাদী কোনো উত্তর এখনো পাননি কেউ।
দ্বিতীয়ত, শিক্ষার্থীদের বকেয়া বেতন পরিশোধ না করার অজুহাত দেখিয়ে শিক্ষক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা কর্তন কিংবা কোনো বেতন না দেওয়া অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখন স্বাভাবিক হয়ে গেছে। এমনকি বাৎসরিক কোটি কোটি টাকা লভ্যাংশ পাওয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও বেতন কেটে রাখা হচ্ছে বা কোনো বেতনই দেওয়া হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংরক্ষিত তহবিল কিংবা বাৎসরিক লভ্যাংশ কেন এই দুর্যোগকালীন সময়ে শিক্ষক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ফি মওকুফ করার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে না সেই প্রশ্নের সদুত্তর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আদৌ দেবেন কিনা জানা নেই।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে আর্থিক সংকটের কারণ দেখিয়ে যেখানে শিক্ষক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের বিনা বেতনে বা কর্তনকৃত বেতনে কাজ করতে হচ্ছে সেখানে শিক্ষার্থীদের বেতন কতটুকু কমানো হচ্ছে? বেতন না দিয়ে বা কমিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যয় সংকোচ করার সুফল শিক্ষার্থীরা কতটুকু পাচ্ছে বা অদূর ভবিষতে পাবে? আর শিক্ষার্থীরা যদি সেই আর্থিক সুবিধা না পায় তাহলে কর্তনকৃত অর্থ কি শিক্ষক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের মাঝে পুনরায় বন্টন করবেন? নাকি বরাবরের মতোই শুভঙ্করের ফাঁকি রয়ে যাবে আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অসহায় পরিস্থিতির সুযোগ কাজে লাগিয়ে মুনাফা পুরোটাই নিজেদের করে নেবেন? কে নেবে এই আয় ব্যয়ের হিসেব? কে খুঁজবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সেবামূলক নাকি মুনাফাভিত্তিক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান? প্রশ্নটা তোলা থাক দায়িত্ববান ব্যক্তিবর্গের কাছে।
#
উজ্জ্বল দত্ত
পেশাগত জীবনে একজন প্রকৌশলী, বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় পিএইচডি গবেষণারত।
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by M-W-D