সিলেট ১২ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ২:৪৭ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৩, ২০২০
বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা || ০৩ নভেম্বর ২০২০ : প্রতিমাসে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের সভা অনুষ্ঠিত করা, নির্মাণ শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি প্রতিরোধ করা, নারী নির্যাতন প্রতিরোধে আইনের কঠোর প্রয়োগসহ শোষণমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার দাবিতে ইনসাবের মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তায় ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন বাংলাদেশ (ইনসাব) এর উদ্যোগে সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি মো. মিজানুর রহমান বাবুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে উপরোক্ত দাবিতে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুর রাজ্জাক, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের দপ্তর সম্পাদক সাহিদা পারভীন শিখা, প্রচার সম্পাদক মোবারক হোসেন, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ, ইনসাবের সহ সভাপতি জয়নাল আবেদিন, সোহরাব হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক আলী হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সাইফুল ইসলাম খোকন। সভায় ঘোষণা পত্র পাঠ করেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. হারুন অর রশীদ। সভা সঞ্চালনা করেন সংগঠনের দফতর সম্পাদক মো. আজিজুর রহমান আজিজ।
সভায় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন করোনা মোকাবেলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত প্রণোদনা দুর্ভাগ্যজনকভাবে নির্মাণ শ্রমিকদের ভাগ্যে জোটেনি। আমরা সরকারের বিভিন্ন দফতরে দৌড়ঝাপ করে হয়রানির শিকার হয়েছি। অন্যদিকে দেশের শিল্প মালিকদের প্রণোদনা দিয়ে সরকার বাহবা নিলেও গার্মেন্টস শিল্পসহ সকল ক্ষেত্রে শ্রমিকরা আজ কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। নির্মাণ শিল্পে নিয়োজিত শ্রমিকদের জন্য শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের যে সহায়তা তাও বোর্ড সভার নামে বিলম্বিত করে আমাদের হয়রানি করা হচ্ছে। আমরা শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের সভা প্রতি মাসে করে দুঃস্থ শ্রমিকদের সহায়তার ক্ষেত্রে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার দাবি করছি।
ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের দফতর সম্পাদক সাহিদা পারভীন শিখা বলেন, নির্মাণ শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি-দাওয়া দ্রুত বাস্তবায়নের সাথে একটি মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সম্পর্ক রয়েছে। একই সাথে দেশব্যাপী নারী-শিশু নিপীড়নের বিরুদ্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগের দাবি জানাচ্ছি।
সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা। আজকে শিল্প মালিকেরা ব্যাংকের টাকা নিয়ে হরিলুটে মেতে উঠেছেন। দেশে-বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়ছেন। অন্যদিকে শ্রমিকদের ভাগ্যে জুটে লকডাউন, বঞ্চনা, আজকে করোনা মহামারীতে কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। অন্যদিকে দেশে দীর্ঘসময় থেকে ক্ষমতাসীনদের দুর্বলতার কারণে সাম্প্রদায়িক শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। মানুষ পুড়িয়ে হত্যার মতো ঘটনা আমাদের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করার অপচেষ্টা মাত্র। আমরা সকল অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি ও নির্মাণ শিল্পে নিয়োজিত শ্রমিকদের ন্যায্য দাবী বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছি।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে মিজানুর রহমান বাবুল বলেন, আমাদের নির্মাণ শ্রমিকরা সর্বক্ষেত্রে অবহেলিত। আমাদের পেনশন নেই, নিয়োগপত্র নেই, করোনা মহামারীতে আমরা কর্মহীন। আমাদের বাঁচার দাবি অবিলম্বে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত পেনশন স্কীম চালু করে পরিবার-পরিজন নিয়ে আমাদের বেঁচে থাকার দাবি বাস্তবায়ন করুন।
সভায় ঘোষণাপত্রে বলা হয় আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ করছি যে, মহামারী করোনার রাহুগ্রাসে পৃথিবীব্যাপী মানবকুলে এক মহাবিপর্যয় নেমে এসেছে। বিগত ০৮/১০ মাস থেকে বিশে^র দেশে দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে লক্ষ লক্ষ লোকের প্রাণহানি ঘটেছে। কিবশ^ব্যাপী করোনা মহামারী মোকাবেলায় দেশে দেশে নানান ধরনের কর্মসূচি পালিত হয়ে আসছে। আমাদের দেশও শুরু থেকে লকডাউনসহ বিবিধ কর্মসূচি পালিত হয়ে আসছে। ইতোমধ্যে সরকারের নানাবিধ পরিবর্তন ও মহামারী করোনা প্রতিরোধে নানাবিধ কর্মযজ্ঞ প্রশংসিত উদ্যোগ বলে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হচ্ছে।
করোনার রাহুগ্রাসে প্রথম থেকে আমাদের দেশের সকল ধরনের উন্নয়ন, উৎপাদন কর্মকাণ্ডের উপর বিধি-নিষেধ থাকার ফলশ্রুতিতে বিশেষ করে নির্মাণ শিল্পে নিয়োজিত ৩৫ লক্ষের অধিক শ্রমিক কর্মহীন হয়ে এখন পরিবার-পরিজন নিয়ে দিশেহারা ও মানবেতর জীবনযাপন করছে। নির্মাণ শিল্পে নিয়োজিত শ্রমিকরা মূলত দিন আনে দিন খায়। এই খাতে নিয়োজিত শ্রমিকদের কোন ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা, পেনশন স্কীম বা ভবিষ্যত নিরাপত্তা বিধানের কোন ব্যবস্থা নেই। এমতাবস্থায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন ঘোষিত দুঃস্থ শ্রমিকদের চিকিৎসা, কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন কল্যাণে কাজ করে আসছে। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের ত্রৈমাসিক সভায় দুঃস্থ শ্রমিকদের জন্য বরাদ্দকৃত দান-অনুদানের বিষয়টি নির্ধারিত হওয়ার কথা থাকলেও বিগত দেড় বছরে অর্থাৎ ৭ এপ্রিল ২০১৯ থেকে ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০ সময়কালে মাত্র ৩টি বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অবহেলিত নির্মাণ শ্রমিকদের বিলম্বিত বোর্ড মিটিং হওয়ার কারণে শেষ আশ্রয়স্থল শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের সেবা প্রাপ্তিতে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে অনিশ্চয়তায় দিনাতিপাত করতে হয় দুঃস্থ শ্রমিকদের। অন্যদিকে করোনার মহাদুর্যোগে কর্মহীন, বেকারত্বের নামে দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়া যুক্ত হওয়ার ফলশ্রুতিতে পরিবার-পরিজন নিয়ে দিনাতিপাত করা দায় হয়ে পড়েছে।
বেঁচে থাকার আকুতি থেকে নির্মাণ শ্রমিকদের প্রাণের দাবিÑ শ্রম মন্ত্রণালয়ের শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের বোর্ড সভা প্রতিমাসে একবার অনুষ্ঠিত করতে হবে। নির্মাণ শ্রমিকদের জন্য পেনশন স্কীম চালু করতে হবে। নির্মাণ শ্রমিকদের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে। কর্মস্থলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আলু- পেঁয়াজসহ দ্রব্যমূল্য নিত্য প্রয়োজনীয় কমাতে হবে, মাফিয়া সিণ্ডিকেট ভাঙতে হবে। কালোবাজারী, মজুতদার চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by M-W-D