কুমিল্লার রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ইতিহাসে ৫৫০ বছরের নানুয়ার দীঘি     

প্রকাশিত: ৯:০১ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ৩০, ২০২১

কুমিল্লার রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ইতিহাসে ৫৫০ বছরের নানুয়ার দীঘি      

কুমিল্লা (দক্ষিণ), ৩০ ডিসেম্বর, ২০২১: বৃহত্তর কুমিল্লা জেলার রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ইতিহাসে জড়িয়ে আছে ৫৫০ বছরের নানুয়ার দীঘি।

শহরের মুরাদপুরে অবস্থিত এ বিশাল আকারের দীঘিটি। নানুয়ার দীঘিকে নগরীর ইতিহাস ঐতিহ্যের ধারক বলা হয়ে থাকে। এ দীঘি ধারণ করে চলেছে কুমিল্লাসহ দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে। নানুয়ার দীঘির পাড়ে একসময় বসবাস ছিল দেশের বিশিষ্টজনদের। কেউ দীঘিতে গোসল করে, সাঁতার কাটে, পাড়ে হাঁটে, বসে আড্ডা দেয়। দীঘির উত্তর পাড়ে দাঁড়ালে স্নিগ্ধ বাতাস দেহমনে দোল দিয়ে যায়। রাতে পাড়ের রঙিন আলোয় বর্ণিল পরিবেশের সৃষ্টি করে।
মুক্তিযুদ্ধ ও ইতিহাস-ঐতিহ্য বিষয়ক গবেষক, কলামিস্ট, সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ সৈয়দ আমিরুজ্জামান বলেন, কুমিল্লা ত্রিপুরা রাজ্যের অধীন ছিল। রাজা ধর্মমাণিক্য একই সময় তার স্ত্রী নানুয়া দেবীর নামে নানুয়ার দীঘি খনন করেন। নানুয়ার দীঘির আয়তন ১৬ একর। এ দীঘির পাড়ের বাসিন্দা জেলার প্রথম গ্রাজুয়েট মোহিনী মোহন দত্ত। তিনিই প্রথম বাংলা ভাষায় আদালতে শুনানির আবেদন জানান। নবীনগরের জমিদার অনঙ্গ নাহারের বাড়ি এখানেই। বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত ইকবাল আহমেদ বাচ্চু, প্রয়াত সমবায়ী জাহানারা বেগম, কুমিল্লা জেলা পরিষদের ৩০ বছরের চেয়ারম্যান খান বাহাদুর আবিদুর রেজা চৌধুরীর বাড়ি এখানে। দীঘির পাড়ে বাড়ি লেখক সুলতান মাহমুদ মজুদারের। তার সঙ্গে কবি নজরুলের সম্পর্ক ছিল। এ পরিবারের সন্তান সাবেক মুখ্য সচিব আলী ইমাম মজুমদার। এর পাড়ের বাসিন্দা প্রয়াত নৌ-পরিবহনমন্ত্রী কর্নেল আকবর হোসেন ও কুমিল্লা সিটির বর্তমান মেয়র মনিরুল হক সাক্কুসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। দীঘির পশ্চিম পাড়ের বাসিন্দা মুক্তিযুদ্ধের কিংবদন্তি নেতৃত্ব ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফরের পরিবারের সদস্য কাজী ফখরুল আলম। তিনি বলেন, এ দীঘির পাড়ে ১৯৫১ সাল থেকে তার পরিবারের বসবাস। এ দীঘির স্বচ্ছ জলে মিশে আছে তাদের আনন্দঘন শৈশব। সেসব দিন তিনি খুব মিস করেন। এ দীঘির পাড়ে শিক্ষিত ও সুশীল মানুষের বসবাস ছিল। এখানে বিভিন্ন ধর্মের মানুষের বসবাস রয়েছে, সবার মধ্যে রয়েছে সম্প্রীতিও।
দীঘির নিকটবর্তী দারোগাবাড়ির বাসিন্দা ও মানবাধিকার সংগঠক আলী আকবর মাসুম বলেন, আমাদের শৈশব এ দীঘিতে সাঁতার করে কেটেছে। যদিও এখনকার কিশোররা পুকুর-দীঘিতে গোসলে অভ্যস্ত নয়। সম্প্রতি দীঘির পাড়ের সৌন্দর্য বর্ধন করা হয়েছে। সকালে হাঁটার জন্য ওয়াকওয়ে করে দেওয়া হয়েছে।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বলেন, এ দীঘির পাড়েই আমরা বেড়ে উঠেছি। দীঘির পড়ের সৌন্দর্য বর্ধনে কাজ করছি। দীঘির পাড়ের মানুষ সব সময় শান্তিতে বসবাস করে আসছে।