রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের জন্য সরকার টেকসই ডিজিটাল ইকোসিস্টেমের ওপর জোর দিচ্ছে

প্রকাশিত: ১২:০০ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৩০, ২০২১

রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের জন্য সরকার টেকসই ডিজিটাল ইকোসিস্টেমের ওপর জোর দিচ্ছে

Manual6 Ad Code

| মলয় কুমার দত্ত | ঢাকা, ৩০ ডিসেম্বর ২০২১ : রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের জন্য একটি টেকসই ডিজিটাল ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে সরকার সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিচ্ছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দিকে অগ্রসরমান বিশ্বের সাথে তাল মেলাতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়, যা ২০১৮ সালের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার সাড়ে তিন বছরের শাসনকালে ডিজিটাল বাংলাদেশের বীজ বুনেছিলেন। আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের (আইটিইউ) সদস্যপদ অর্জন এবং ১৯৭৩ সালে টি অ্যান্ড টি বোর্ড গঠন এবং ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন বেতবুনিয়ায় উপগ্রহ কেন্দ্র নির্মাণ করে বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রথম স্তম্ভ স্থাপন করেন।
মন্ত্রী বলেন, দেশের জনগণ শেখ মুজিবের আঙুল দিয়েই তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের দিকে একটি মহাযাত্রা শুরু করেছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যার পর এই যাত্রা অঙ্কুরেই থেমে যায় এবং দুর্ভাগা জাতি স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির ষড়যন্ত্রের কারণে তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের ফল থেকে বঞ্চিত হয়।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সম্প্রতি ওয়েবিনারে আসন্ন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার তাগিদ দিয়ে বলেন, বাংলাদেশ প্রথম ৩টি শিল্প বিপ্লব থেকে বঞ্চিত হয়েছে এবং এখন দেশকে এর অংশ হতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা এটি মিস করতে পারি না।’
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক বলেন, সরকার সাম্প্রতিক বিষয়গুলোর ব্যাপারে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে তৎপর এবং এটির উপর নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করছে। এজন্যেই ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্পকে অগ্রাধিকার দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বটম আপ পন্থা নিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমরা ২০১০ সালে আমাদের ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারগুলোকে সংযুক্ত করেছি এবং ইতিমধ্যেই ৮ হাজারটিরও বেশি শেখ রাসেল ডিজিটাল কম্পিউটার ল্যাব এবং ৩৮ হাজার টিরও বেশি কম্পিউটার ভিত্তিক শিক্ষা মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করা হয়েছে।
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা ইন্টারনেটকে সাশ্রয়ী মূল্যের, সহজলভ্য এবং যাদের কাছে কোনও ডিভাইস নেই তাদের জন্য সহজপ্রাপ্য বা অ্যাক্সেসেবল করতে চেয়েছিলাম। যদি তাদের কাছে কোনও ডিভাইস নাও থাকে, তবে তারা সাধারণ অ্যাক্সেস পয়েন্টে এসে সরকারি পরিষেবা নিতে পারে।
তিনি বলেন, এ কারণেই সরকার ৮ হাজার ২ শ’ ৮০টি ডিজিটাল কেন্দ্র স্থাপন করেছে যেখানে ১৬ হাজারেরও বেশি তরুণ উদ্যোক্তা নাগরিকদের সেবা প্রদান করছে। এর মাধ্যমে প্রতি বছর ১ কোটি মানুষ সেবা পাচ্ছে।
একটি টেকসই ডিজিটাল ইকোসিস্টেম গড়ে তোলার চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের অবকাঠামো রয়েছে, আমাদের সংযোগের কেন্দ্র রয়েছে, কিন্তু আমাদের যা প্রয়োজন তা হলো বিশেষ ধরণের প্রযুক্তি, সহায়তা, জ্ঞান, সমর্থন এবং ব্যবসায়িক কাঠামো।
এ বিষয়ে মোস্তাফা জব্বার বলেন, আমরা এ পর্যন্ত স্থানীয় উদ্যোক্তা নির্মাতাদের ডিজিটাল ডিভাইসে উৎসাহিত করেছি, তা সে স্মার্টফোন হোক বা ফিচার ফোন হোক বা ল্যাপটপ বা চ্যাট। আমরা এখন স্থানীয় চাহিদার ৭০ শতাংশেরও বেশি পূরণ করছি। এজন্যই স্মার্টফোনের অনুপ্রবেশ খুব গুরুত্বপূর্ণ। যাই হোক এখনও পর্যন্ত আমরা স্মার্টফোনের মাধ্যমে মোবাইল ব্যবহারকারী জনসংখ্যার ৩০ শতাংশের বেশি অতিক্রম করিনি। সুতরাং এটি ২০০ শতাংশে পৌঁছাতে হবে এবং এটি খুব চ্যালেঞ্জিং।
জব্বার বলেছেন, আমি মনে করি আমাদের এমন কিছু পরিকল্পনা করতে হবে, যাতে ক্যাম্পাসে যে ডিজিটাল ডিভাইসগুলো দেয়ার পরিকল্পনা করছি, শিক্ষার্থীরা তা সহজে ও সুলভমূল্যে পেতে পারে। স্মার্টফোনগুলো সমান মাসিক কিস্তিতে বা অন্য কোনো ধরনের কিস্তিতে বা ব্যাংক অর্থায়ন বা কোনো ধরনের সুযোগ সৃষ্টি করা যেতে পারে। এতে তাদের কাছে ডিজিটাল ডিভাইসগুলো পৌঁছানো সম্ভব হবে। আমরা মনে করি, ডিজিটাল শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য প্রত্যেক শিক্ষার্থীর হাতে অবশ্যই একটি স্মার্ট ফোন থাকতে হবে।
ইন্টারনেটের সাশ্রয়ী মূল্যের কথা বলতে গিয়ে টেলিকম মন্ত্রী বলেন, “আমি শুধু দেখছি কিভাবে ইন্টারনেটের দাম কমতে পারে এবং হ্যাঁ আমি ব্যক্তিগতভাবে দেখতে পাচ্ছি আমরা অনলাইন সংযোগের জন্য মোবাইল সংযোগ ব্যবহার করি।”
তিনি বলেন, তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো যে মানুষ ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট অ্যাক্সেস করতে পারে, কারণ ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট না থাকলে তাদের পক্ষে ইন্টারনেটে সংযুক্ত থাকা খুব কঠিন হবে। সরকারের এই সময়ের সবচেয়ে বড় সাফল্য হিসেবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ এবং ৫জি নেটওয়ার্ক এর অগ্রগতি সম্পর্কে জব্বার আশা প্রকাশ করে বলেন, “আগামী ৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ হবে ৫ম এশীয় বাঘ।”
তিনি বলেন, সরকার বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণ, তৃতীয় সাবমেরিন কেবল স্থাপন এবং সারাদেশকে ওয়াইফাই সুবিধার সঙ্গে যুক্ত করার প্রকল্প বাস্তবায়নে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করছে।
সরকার এখন পর্যন্ত যেসব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে সে সম্পর্কে বলতে গিয়ে জুনায়েদ আহমেদ পলক বলেন, “২০১৪ সালে বাংলাদেশ সরকারি ইন্টারনেট কর্মসূচির অধীনে যখন ইন্টারনেটকে জেলা পর্যায়ে নেয়া হয়েছিল এবং যখন সরকারি অফিসের জন্য ফাইবার অপটিক্যাল সিঙ্গেল ইন্ট্রা নেটওয়ার্ক এর মধ্যে নেয়া হয়েছিল এবং আমরা ২০১৫ সালে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত ফাইবার অপটিক্যাল কেবল নিয়েছিলাম তখন ফাইবার অপটিক্যাল কেবলকে গ্রাম পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া আমাদের জন্য একটি অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং কাজ ছিল।
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী বলেন, কোনও বেসরকারি সংস্থা, কোনও বেসরকারি ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা সরকারের পাশে দাঁড়ায়নি এবং তারা এই ফাইবার অপটিক্যাল কেবলটিকে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব নিতে আগ্রহী ছিল না। শুধুমাত্র আমাদের সরকারি তহবিলের উপর নির্ভর করে আমরা আমাদের ফাইবার অপটিক্যাল ক্যাবলকে গ্রাম পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অত্যন্ত সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছি এবং এখন আমরা সফলভাবে ৪ হাজার ৫ শ’ ৭১টি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের সঙ্গে সংযুক্ত করেছি। ফাইবার অপটিক্যাল, উচ্চ গতির ইন্টারনেট সংযোগ সুবিধা নিয়ে এই বছরের মধ্যে আমরা আমাদের সবগুলো ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের সঙ্গে সংযুক্ত করতে যাচ্ছি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকারের পরবর্তী প্রকল্প হচ্ছে গ্রাম পর্যায়ে ১ লাখ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ১৩ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ভূমি অফিসগুলোকে সংযুক্ত করা। সুতরাং, প্রায় ২ লাখ পয়েন্ট একটি একক নেটওয়ার্কের অধীনে সংযুক্ত করা হবে।
পলক বলেন, আমরা আরেকটি প্রকল্প গ্রহণ করেছি যা বাংলাদেশকে সংযুক্ত করেছে। আমাদের সমস্ত দ্বীপ, নদী চর, পার্বত্য অঞ্চল, পৌঁছানো কঠিন এমন এলাকায় ফাইবার অপটিক্যাল কেবলের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে এবং বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ ব্যবহার করে আমরা ১০০ টিরও বেশি ইউনিয়নকে সংযুক্ত করতে যাচ্ছি যা দ্বীপ বা পার্বত্য অঞ্চলে রয়েছে।
মোস্তাফা জব্বার এবং জুনায়েদ আহমেদ পলক তাদের উচ্চাশা প্রকাশ করে বলেন, এই প্রকল্পগুলো সমাপ্ত হওয়ার পরে দেশের প্রতিটি কোণ উচ্চ গতির ব্রডব্যান্ড সংযোগের সঙ্গে যুক্ত হবে এবং প্রযুক্তিগুলো সহজলভ্য, সাশ্রয়ী মূল্যের এবং সেইসঙ্গে বাংলাদেশের সিংহভাগ মানুষের কাছে অ্যাক্সেস যোগ্য হবে, যা একটি টেকসই ডিজিটাল ইকোসিস্টেম গড়ে তোলার জন্য আবশ্যক।
শুধু তাই নয়, টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী এবং আইসিটি প্রতিমন্ত্রী রূপকল্প ২০২১ অর্জনের জন্য সরকারের সঙ্গে মেটা, গিগার মতো বিদেশী এবং স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের একত্রিত হয়ে বাংলাদেশকে ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের অংশ হতে অবদান রাখার আহ্বান জানান।

Manual1 Ad Code

 

Manual7 Ad Code

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code