সিলেট ৩১শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৩:১৮ অপরাহ্ণ, জুলাই ৩১, ২০২৩
বাংলাদেশের নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলার অন্তর্গত বিলাসবাড়ি ইউনিয়নের হলুদ বিহার গ্রামে সোমপুর মহাবিহার (পাহাড়পুর) এর প্রায় সমসাময়িক হলুদ বিহার অবস্থিত। যে স্থানে হলুদ বিহারের ধ্বংসাবশেষ অবস্থিত সে জায়গার আরেকটি নাম দ্বীপগঞ্জ, যেটি একটি গ্রাম্য হাট। সাধারণত সমতল থেকে অপেক্ষাকৃত বেশি উঁচু জায়গাকে বরেন্দ্র অঞ্চলে দ্বীপ বা ধাপ হিসেবে নামকরণ করার চল রয়েছে।
হলুদ বিহারের অবস্থান সোমপুর মহাবিহার (পাহাড়পুর) থেকে ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পুণ্ড্রনগর (মহাস্থানগড়) থেকে ৫০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে। প্রতীয়মান হয় হলুদ বিহার সোমপুর মহাবিহার, ভাসু বিহার, জগদ্দল মহাবিহার ও মহাস্থানগড়ের সাথে সড়কপথে যুক্ত ছিলো। এখনো হলুদ বিহার থেকে পাহাড়পুর যাওয়ার পথের ধারে প্রাচীন রাস্তার নমুনা চোখে পড়ে। এই বিহার থেকে ৫/৬ কিলোমিটার পূর্ব ও পশ্চিম দিয়ে বয়ে চলেছে যথাক্রমে তুলসীগঙ্গা ও ছোট যমুনা নদী দুইটি।
সমস্ত হলুদ বিহার গ্রামটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে প্রাচীন স্থাপনার চিহ্নবিশেষ, ইটের টুকরো ও খোলামকুচি। স্থানীয় জনগণ হলুদ বিহারকে হলধর রাজা ও সোনাভানের লোককাহিনীর সাথে সম্পর্কিত বলে মনে করে।
হলুদ বিহার সম্পর্কে অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় মত প্রকাশ করেছেন:
“পাহাড়পুরের আড়াই ক্রোশ দক্ষিণে এইরূপ একটি বিহারের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হইয়াছে; তাহা এখনও “হলুদ-বিহার” নামে পরিচিত। পাহাড়পুরের আধুনিক নিরক্ষর অধিবাসিবর্গের বিশ্বাস, সত্যপীরের অভিশাপে পাহাড়পুরের উচ্চস্তূপের উন্নত মস্তকটি উড়িয়া গিয়া হলুদ-বিহারে পতিত হইয়াছিল। উভয় স্থানের মধ্যে এক সময়ে যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল, এই জনশ্রুতি তাহারই আভাস প্রদান করে। ইহার মধ্যে অনেক ঐতিহাসিক তথ্য নিহিত হইয়া রহিয়াছে। খনন-কাৰ্য্য সুসম্পন্ন না হইলে, তাহার পূর্ণ পরিচয় উদ্ভাসিত হইতে পারে না। তখন হয়ত পাহাড়পুরের অজ্ঞাত অখ্যাত অপরিচিত ধ্বংসাবশেষ একটি চৈত্য-সংযুক্ত সঙ্ঘারাম বলিয়াই প্রকাশিত হইয়া পড়িবে; এবং একালের বাঙ্গালীর নিকট সেকালের বাঙ্গালীর বিজয়-গৌরব বিঘোষিত করিতে পারিবে।
এই বহুবিস্ময়পূর্ণ ধ্বংসাবশেষের খনন-কাৰ্য্য পুরাতন বরেন্দ্র-মণ্ডলের প্রধান স্মৃতিচিহ্ন উদঘাটিত করিতে পারিলে, আত্মবিস্তৃত বাঙ্গালী বিস্মিত নেত্রে চাহিয়া দেখিবে–তাহা বৃহৎ এবং সুন্দর–সৌন্দৰ্য্যগাম্ভীর্য্যের অপূৰ্ব্ব সংমিশ্রণ–বাঙ্গালীর জীবন-বসন্তের সংশয়হীন সুকুমার স্মৃতি-নিদর্শন।”
(উত্তরবঙ্গের পুরাকীর্তি, মানসী ও মর্মবাণী, ফাল্গুন, ১৩২৩)
১৯৩০ – ৩১ সালে জি সি চন্দ্র, আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া, ইস্টার্ণ জোন হলুদ বিহার গ্রামটি পরিদর্শন করেন এবং স্থানটিতে হলুদ বিহার নামক বৌদ্ধবিহারের অবস্থান সনাক্ত করেন। তৎকালীন রিপোর্টে জি সি চন্দ্র এই স্থাপনাটিকে বিপন্ন হিসেবে অভিহিত করেন। স্থানীয় জনগণ বিপুল পরিমাণে ধ্বংসলীলা চালিয়েছে এই প্রত্নস্থানে। বিহারের অধিকাংশ জায়গা কেটে সমান করে তৈরী করা হয়েছে বসতবাটী, দ্বীপগঞ্জ হাট, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি উচ্চ বিদ্যালয়, ডাকঘর, একটি মসজিদ এবং স্থানীয় কৃষি অফিস। এছাড়া ইট শিকারী ও গুপ্তধনের লোভী লোকজন প্রতিনিয়ত অত্যাচার চালায় এখানে। ফলশ্রুতিতে বিহারের সমস্ত স্থাপনা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। শুধুমাত্র বিহারের কেন্দ্রীয় মন্দিরটির ধ্বংসাবশেষ ঢিবির আকারে কোনমতে টিকে আছে। দ্বীপগন্জ্ঞ হাটের চারপাশে এখনো প্রত্নচিহ্ন হিসেবে ইটের ভিত্তিগাত্র, ইটের টুকরো, মৃৎপাত্রের ভগ্নাংশ পড়ে আছে।
মুক্তিযুদ্ধের পরে ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এ স্থানে জরিপ চালিয়ে টিকে থাকা একমাত্র ঢিবিটিকে সংরক্ষণের আওতায় নেয়। ১৯৮৪ সালে প্রথমবারের মতো খননকাজ চালায় মাত্র দুই মাসের জন্য এবং দ্বিতীয় দফায় ১৯৯৩ সালে আরো দুই মাসের জন্য খননকাজ পরিচালনা করে। এই স্বল্প পরিসরের খননের ফলে আবিষ্কৃত হয় হলুদ বিহারের কেন্দ্রীয় মন্দিরের অবকাঠামো এবং পাওয়া যায় গুরুত্বপূর্ণ সব প্রত্ন নিদর্শন।
হলুদ বিহারে পরিচালিত ধ্বংসলীলার একটি বড় উদাহরণ পাওয়া যায় ১৯৭৬ সালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের জরিপ প্রতিবেদনে:
About half-a-mile to the north of the market-place, in the front yard of the house of a substantial local farmer, a modest-sized cruciform Buddhist shrine of solid character was accidentally discovered and hurriedly exposed and ruthlessly destroyed for its bricks. The boundary and Parda walls of the house are found built with these ancient bricks. The structure also yielded terracotta and stone plaques, exquisitely carved with geometric or floral patterns, some of which now decorate the front walls of the house, and there may be many more in the inner walls. They are square in shape and smaller in size than those of Paharpur or Mainamati. Plaques with representations of living things have been carefully discarded (probably disposed off for monetary consideration, but stated to be destroyed), to conform to the religious susceptibilities of the owner. Traces of other structural remains, specially visible on the bank of a water tank in the far corner of the house, the excavation of which seems to have destroyed another substantial ancient structure, indicate the existence of an interesting religious establishment hereabouts. [Ref: Bangladesh Archaeology 1979, Vol 1. No. 1]
আমার হলুদ বিহার সফরের প্রথম ও দ্বিতীয়বার আমি নিজেও বাড়িটি দেখেছিলাম। তৃতীয়বার যখন গেলাম ৫/৬ বছর পরে তখন বাড়িটির দেয়ালগুলো সিমেন্টের আবরণে ঢাকা, সেই সাথে হারিয়ে গেছে অনাবিষ্কৃত প্রত্নস্থাপনা।
টিকে থাকা ঢিবি খননের ফলে আবিষ্কৃত হয়েছে হলুদ বিহারের কেন্দ্রীয় মন্দিরটি। ঢিবিটির আকার পূর্ব-পশ্চিমে ৫৪ মিটার এবং উত্তর-দক্ষিণে ৪২ মিটার এবং ভূমি থেকে ৮ মিটার উঁচু। যদিও জি সি চন্দ্র ঢিবির আকার বলেছেন পূর্ব-পশ্চিমে ২১৫ ফুট ও উত্তর-দক্ষিণে ১৩৫ ফুট এবং ভূমি থেকে ৩৫ ফুট। স্পষ্টতই এই ঢিবিটিও ইট শিকারী ও আশেপাশের মানুষের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্থানীয় একজন বাসিন্দা ইট খুঁড়তে গিয়ে ২.৫ ইঞ্চি লম্বা ক্ষুদ্রাকৃতির ব্রোঞ্জ এর গণেশ মুর্তি খুঁজে পায়। গণেশ মহারাজালীলা ভঙ্গিতে আসীন ও চতুর্ভুজ। উপরের ডান ও বাম হাতে যথাক্রমে ত্রিশূল ও প্রস্ফুটিত পদ্ম এবং নিচের ডান ও বাম হাতে যথাক্রমে কল্পলতা ও মোদক। ইঁদুর বাহনটি পায়ের কাছে গণেশের দিকে তাকানো ভঙ্গিতে রয়েছে। মূর্তিটি খ্রীষ্টিয় ৮ম – ৯ম শতকের তৈরী।
খননের ফলে আবিষ্কৃত মন্দিরটিতে একটি স্তুপসদৃশ পূজার স্থান (৫.৮০ বর্গ মি:) পাওয়া গেছে। এছাড়া দুটি আয়তাকার কক্ষ ও প্রদক্ষিণ পথ পাওয়া গেছে। ছোট কক্ষটি (২.৬০ মি: × ১.৬০ মি:) স্তুপটির সামনেই অবস্থিত এবং সম্ভবত মূর্তি রাখার স্থান বা মন্ডপ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। বড় কক্ষটি (৫.৫৫ মি: × ৩.২০ মি:) জমায়েত হওয়ার কাজে ব্যবহৃত হতো বলে ধারণা করা যায়। প্রদক্ষিণ পথটি ১.১০ মি: প্রস্থ। মন্দিরের সিঁড়িটি পূর্ব দিকে ও প্রায় অক্ষত অবস্থায় রয়েছে। ১.০৫ মিটার প্রশস্ত ১৯টি সিঁড়ি দিয়ে বড় কক্ষ ও প্রদক্ষিণ পথে যাওয়া যেতো।
বড় আয়তাকার কক্ষের পূর্ব দিকে আরো একটি কক্ষ পাওয়া গেছে ৮.২০ মি: × ৬.০০ মি: আকারের। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, কক্ষটিতে দুটি সমান্তরাল পূর্ব-পশ্চিমমুখী দেওয়াল রয়েছে এবং দুটি আলাদা নির্মাণকালের সন্ধান পাওয়া গেছে। কক্ষটির ব্যবহার সম্পর্কে কোনো সম্যক ধারণা পাওয়া যায় নি।
হলুদ বিহারের নির্মাণকৌশল ভাসু বিহারের সাথে অনেকটা মিলে যায়। ভাসু বিহারে যেমন কেন্দ্রীয় মন্দির, অন্যান্য মন্দির ও স্তুপগুলো এবং ভিক্ষুদের কক্ষগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে নির্মিত, হলুদ বিহারেও ঠিক তেমনই নির্মাণকৌশল অনুসরণ করা হয়েছে। কেননা, একমাত্র টিকে থাকা কেন্দ্রীয় মন্দিরটির চারপাশে কোন ভিক্ষুদের কক্ষ ও অন্যান্য স্তুপ নেই; বরং আশেপাশে এগুলো অবস্থিত ছিল। এ সমস্ত স্তুপ ও কক্ষগুলো সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে গড়ে তোলা হয়েছে বাজার, পোষ্ট অফিস ও অন্যান্য স্থাপনা। উপরে উল্লিখিত প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের জরিপ রিপোর্টে যে বৌদ্ধ স্থাপনা একজন স্থানীয় কৃষক কর্তৃক বিনষ্ট করার কথা বলা হয়েছে, সেটি এই বিহারের কোন স্তুপ ছিল সে বিষয়ে সহজেই ধারণা করা যায়।
ঢিবিটির পাশেই একটি প্রাচীন পুকুর রয়েছে, যেটি কাল পরিক্রমায় বুজে গিয়েছে। পুকুরটি বিহারের জলের প্রয়োজন নিবারণের জন্য খনন করা হয়েছিল।
হলুদ বিহারে তিনটি আলাদা নির্মাণকাল পাওয়া গিয়েছে, একটির উপর আরেকটি নির্মাণ করা হয়েছে। বিভিন্ন নকশাকার ইটের ব্যবহার হয়েছে মন্দিরটি নির্মাণে। যদিও স্থাপনাটি যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ও এখনো হচ্ছে।
উৎখননের ফলে মাটির তৈরী বস্তুসামগ্রী, অলংকৃত ইট, লোহার পেরেক, লোহার বলয়, পাথরের ব্যবহার্য সামগ্রী, পাথরের ছাঁচ, পাথরের হামানদিস্তা ইত্যাদি পাওয়া গেছে। উল্লেখযোগ্য একটি পোড়ামাটির সিল পাওয়া গিয়েছে অক্ষত অবস্থায় যেখানে চার লাইনে কিছু অক্ষর খোদাই করা আছে। সিলটির পাঠোদ্ধার হলে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে অবশ্যই, হয়ত বিহারটির প্রকৃত নামও জানা যাবে। হলুদ বিহার নামটি প্রচলিত নাম, যেটি হলধর রাজার লোকগাথা থেকে উদ্ভুত। আরেকটি উল্লেখযোগ্য পোড়ামাটির উড়ন্ত মানুষের প্রতিকৃতি (সম্ভবত বিদ্যাধরী) পাওয়া গেছে। এছাড়াও কিছু মাটির প্রদীপ পাওয়া গেছে, যেগুলোতে সলতে পোড়ানোর ছাপ বিদ্যমান।
হলুদ বিহার গ্রামের পথে প্রান্তরে, চাষের জমিতে, গ্রাম্য হাটের মাটিতে মিশে আছে অজস্র ইটের টুকরো, খোলামকুচি আর নির্দয়ভাবে ধুলিস্যাৎ করে দেওয়া ইতিহাসের কথা। পাহাড়পুরের কাছাকাছি অবস্থান সত্ত্বেও হলুদ বিহারের ভাগ্য বড্ড খারাপ। স্থানীয় জনগণ, প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের সমন্বিত প্রচেষ্টায় আর সামান্যই অবশিষ্ট থাকতে পেরেছে বিহারটি। অথচ কত শতাব্দী আগে এ বিহার জ্বালিয়েছিল জ্ঞানের আলো, মুক্তির দিশা দেখিয়েছে কত পথিককে:
কূঁলে কূঁলে মা হোইরে মুঢ়া উজূবাট সংসারা।
বাল ভিণ একুবাকু ণ ভুলহ রাজপথ কন্ধারা।।
মায়া মোহ সমুদারে অন্ত ন বুঝসি থাহা।
আগে নাব ন ভেলা দীসই ভন্তি ন পুচ্ছসি নাহা।।
সুনাপান্তর উই ন দীসই ভান্তি ন বাসসি জান্তে।
এষা অটমহাসিদ্ধি সিঝই উজ বাট জায়ন্তে।।
– হে মূঢ়, কূলে কূলে ঘুরিয়া ফিরিও না, সংসারে সহজ পথ পড়িয়া আছে। সম্মুখে যে মায়া-মোহের সমুদ্র তার যদি না বোঝা যায় অন্ত, না পাওয়া যায় থই, সম্মুখে যদি দেখা যায় কোনো ভেলা বা নৌকো, তবে এ পথের যারা অভিজ্ঞ পথিক, তাঁহাদের কাছ থেকে সন্ধান জেনে নাও। শূণ্য প্রান্তরে যদি না পাও পথের দিশা, ভ্রান্ত হয়ে এগিয়ে যেও না; সহজ পথে চলো, তা হলেই মিলবে অষ্টমহাসিদ্ধি।
তথ্যঋণ:
১. A Preliminary Report on Excavations at Halud Vihara, Department of Archaeology, 2000
২. Bangladesh Archeology 1979, Vol 1, No. 1
৩. উত্তরবঙ্গের পুরাকীর্তি, অক্ষয়কুমার মৈত্র, মানসী ও মর্মবাণী, ফাল্গুন, ১৩২৩
৪. বাংলাদেশের বিহার ও প্রত্নসম্পদ, বিপ্রদাশ বড়ুয়া, অরিত্র প্রকাশনা
৫. প্রশ্নোত্তরে বাঙলাদেশের প্রত্নকীর্তি (১ম খণ্ড), আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া, ঝিনুক প্রকাশনী
৬. নিজস্ব ক্ষেত্রসমীক্ষা
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by M-W-D