সিলেট ১লা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ২:২৮ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৩
নিজস্ব প্রতিবেদক | ঢাকা, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ : বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস) দেশের চা খাতে নিয়োজিত নারী শ্রমিকদের অধিকার ও শোভন কাজের বিদ্যমান পরিস্থিতি বিষয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
এই উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভা অনুিষ্ঠত হয়।
বিলসের উপ-পরিচালক মনিরুল ইসলাম ‘চা খাতে নিয়োজিত নারী শ্রমিকদের অধিকার ও শোভন কাজের বিদ্যমান পরিস্থিত’ সম্পর্কে গবেষণা রিপোর্ট উপস্থাপন করেন।
চা শ্রমিক গোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন, চা বাগানে শোভন মজুরি বাস্তবায়ন এবং চা শ্রমিকদের দক্ষতাবৃদ্ধির লক্ষ্যে অক্সফ্যামের সহায়তায় বিলস পরিচালিত ‘বাংলাদেশে চা শিল্পে নারী শ্রমিকদের ক্ষমতায়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় সম্প্রতি এই গবেষণা সম্পন্ন হয়।
চা শ্রমিকদের অধিকার পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে মনিরুল ইসলাম বলেন, সামগ্রিকভাবে চা শ্রমিকদের জন্য বিদ্যমান আইনি মানদন্ডের তুলনায় প্রকৃত শ্রমিক অধিকার পরিস্থিতি অসন্তোষজনক, চা বাগানে কর্মসংস্থানের সুযোগ খুবই সীমিত এবং চাকরির নিরাপত্তা সুরক্ষিত নয়। চা শ্রমিকদের ৯৫ ভাগ স্থায়ী এবং পাঁচ ভাগ অস্থায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজ করে। শতকরা ৯৭ ভাগ নারী শ্রমিকের কোন নিয়োগপত্র নেই। শতকরা ৮৭ ভাগ শ্রমিকের কোন পরিচয় পত্র নেই। শতকরা ১০ ভাগ নারী শ্রমিক পরিচয় পত্র কি তা জানেন না। শতকরা ১০০ ভাগ শ্রমিক বলেছেন, চা বাগানে তাদের কোন সার্ভিস বুক নেই। শতকরা ৪৯ ভাগ শ্রমিক বলেছেন, অতিরিক্ত আয়ের জন্য তারা ১ থেকে ২ ঘন্টা ওভারটাইম করেন।
তিনি গবেষণার উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে বলেন, বাংলাদেশের নারী চা শ্রমিকদের সামগ্রিক অধিকার পরিস্থিতি চিহ্নিত করা, চা বাগানে নারী শ্রমিকদের শোভন কাজের পরিস্থিতি ও আর্থসামাজিক অবস্থা বিশ্লেষণ, ভ্যালি এবং পঞ্চায়েত কমিটির ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দের জ্ঞান ও দক্ষতা মূল্যায়ন এবং চা বাগানের নারী শ্রমিকদের অবস্থা সম্পর্কে জাতীয় পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের পরামর্শ গ্রহণ করাই ছিল এই গবেষণার লক্ষ্য।
বিলস ভাইস চেয়ারম্যান মো. মজিবুর রহমান ভূঞাঁর সভাপতিত্বে এবং বিলস উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য নইমুল আহসান জুয়েলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ট্রেড ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি ও বিলস উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য কমরেড কামরুল আহসান, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব বুলবুল এবং বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের অর্থ সম্পাদক পরেশ কালিন্দী।
সূচনা বক্তব্য রাখেন বিলস পরিচালক কোহিনূর মাহমুদ ও স্বাগত বক্তব্য রাখেন অক্সফাম ইন বাংলাদেশের শ্রম স্পেশালিষ্ট শাহজাদী বেগম।
বক্তারা বলেন, চা বাগানে কর্মরত নারী শ্রমিকদের জন্য যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি নেই। চা বাগানের শ্রমিকদের জন্য ভূমি অধিকারের বিষয়টিও পরিষ্কার নয়। চা শ্রমিকদের সন্তানদের স্কুলে পাঠানোর যথাযথ উদ্যোগও লক্ষ্য করা যায় না।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের অর্থ সম্পাদক পরেশ কালিন্দী বলেন, এখানে চাকরির কোনো নিরাপত্তা নেই, বাগান কর্তৃপক্ষ যেকোনো সময় মৌখিক নির্দেশে তাদের ছাঁটাই করে থাকেন। খুবই স্বল্প বেতনে শ্রমিকরা কাজ করেন এমনকি তাদের মজুরি ঠকানো হয়। নারী শ্রমিকদের ওপর নিঃশব্দে চলে নির্যাতন। কর্মক্ষেত্রে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহ এবং রক্ষণাবেক্ষণ, মাতৃত্বকালীন সুরক্ষা ও নারী শ্রমিকদের প্রজনন স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায় না।
তিনি বলেন, নারী চা শ্রমিকরা নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন নয়। সরকারের পক্ষ থেকে নারী শ্রমিকের অধিকার লঙ্ঘনের তদারকি ব্যবস্থাপনাও খুব দুর্বল। কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকের কোনো নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র, সার্ভিস বুক, উপস্থিতি রেজিস্টার দেখতে পাওয়া যায় না। ঝড়-বৃষ্টি বা কোনো আকস্মিক সংকটে বাগানে শ্রমিকের নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা নেই।
অনুষ্ঠানে বলা হয়, অধিকাংশ নারী শ্রমিক পুষ্টিহীনতার শিকার। পাতা উত্তোলনের ক্ষেত্রে গর্ভবর্তী নারী শ্রমিকদের জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থাও নেই। চা বাগানে নারী শ্রমিকদের জন্য কোনো টয়লেট সুবিধা কিংবা তৃষ্ণা নিবারণের জন্য কোনো সুপেয় পানির ব্যবস্থা নেই। পরিবার, কর্মক্ষেত্র, সমাজে চা খাতে নিয়োজিত নারী শ্রমিকদের অবস্থা এবং অবস্থানের ইতিবাচক পরিবর্তন নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজন চা খাতে নিয়োজিত নারী শ্রমিকের ক্ষমতায়ন।
নারী চা শ্রমিকদের সুরক্ষায় বিলসের দাবিগুলো হলো-
১. শ্রমিক অধিকার ও শোভন কাজ বিষয়ে নারী শ্রমিকদের সঠিকভাবে জানানো।
২, ইউনিয়ন এবং বাগান পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারী শ্রমিকের অংশগ্রহণ ও মতামত মূল্যায়ন করা।
৩. বিরোধ নিষ্পত্তি, দরকষাকষি এবং নেতৃত্বের উন্নয়ন বিষয়ে নারী নেতৃত্বকে প্রশিক্ষণ দেওয়া।
৪. কর্মক্ষেত্র ও কমিউনিটিতে নারীবান্ধব অভিযোগ গ্রহণ, কার্যকর নিষ্পত্তি নিশ্চিত করা ও নারী শ্রমিকরা বিষয়টি জানে তা নিশ্চিত করা।
৫. কর্মক্ষেত্রে নারী শ্রমিকদের প্রতি সব ধরনের নির্যাতন বন্ধের জন্য কার্যকর ভূমিকা পালন করা।
৬. কর্মক্ষেত্রে নারী শ্রমিকদের সমস্যা দেখাশোনা করার জন্য একটি নির্দিষ্ট কাঠামো ও প্রক্রিয়া তৈরি করা।
৭. নারী শ্রমিকদের তাদের অধিকার ও সুরক্ষায় সচেতন করা।
৮. নারী সুরক্ষা নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সোচ্চার হওয়া।
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by M-W-D