মানবাধিকারের মূল ভিত্তি বাস্তবায়নে আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার পরিবর্তন দরকার: সৈয়দ আমিরুজ্জামান 

প্রকাশিত: ৯:১৬ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১০, ২০২৪

মানবাধিকারের মূল ভিত্তি বাস্তবায়নে আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার পরিবর্তন দরকার: সৈয়দ আমিরুজ্জামান 
বিশেষ প্রতিনিধি | শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার), ১০ ডিসেম্বর ২০২৪ : “মানুষের অধিকার সংরক্ষণের ক্ষেত্রে যে মানবাধিকারের কথা বলা হচ্ছে বাস্তবিক অর্থে তা অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যমণ্ডিত।মানবাধিকার সনদ প্রদান করার পর তার প্রতি অনেকের আশা-আকাংখা ছিল। কিন্তু এত কিছু করার পর বর্তমান ফিলিস্তিন, ইরাক, আফগানিস্তান, মায়ানমার, সিরিয়ার পরিস্থিতি মানবাধিকার বিকাশের পথে অন্তরায় হয়ে দাড়িয়েছে। যদিও এর কিছু সাফল্য রয়েছে। পারতপক্ষে জনগণের সমতা-ন্যায্যতা ও মানবাধিকারের সর্বোচ্চ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় ১৭৬ বছর পূর্বে রচিত ‘কমিউনিস্ট পার্টির ইশতেহার’ শীর্ষক ছোট্ট পুস্তিকাটি ঘোষিত হয়েছিল, তা দুনিয়াকে বদলে দেওয়ার এক ঐতিহাসিক দলিল এবং শ্রমিক শ্রেণির মতাদর্শের এক অপ্রতিরোধ্য রাজনৈতিক হাতিয়ার। যে মানবাধিকার ঘোষণা করা হয়েছিল তা সকলের জন্য অনুসরণীয় এবং তাকে আমরা মানবাধিকারের মূল ভিত্তি হিসেবে গণ্য করে সামনের দিকে আগাতে থাকলে একটি সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলতে সক্ষম হব।

আমাদের দেশে মানবাধিকারের মূল ভিত্তি মুক্তিযুদ্ধের সমতার চেতনা বাস্তবায়ন করতে হলে বিদ্যমান শোষণমূলক আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার মৌলিক পরিবর্তন দরকার। দরকার জনগণের মৌলিক মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় সুশাসন নিশ্চিত করা। আর সেটি করতে হলে আমাদের বৈষম্যহীন ব্যবস্থা চালু করতে হবে। সমতা-ন্যায্যতাসহ অন্ন-বস্ত্র-শিক্ষা- চিকিৎসা ও বাসস্থান তথা সমগ্র জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার নিমিত্তে গণতন্ত্র সমাজতন্ত্র, ধর্ম নিরপেক্ষতা এবং জাতীয়তাবাদ- এই চার নীতিতে পরিকল্পিত অর্থনীতির পথ-নকশা, এর আলোকে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ঘোষণা করা এবং এর ভিত্তিতে বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। তাহলেই শিল্পায়ন-কৃষির গণতান্ত্রিক সংস্কার, কর্মসংস্থান, সামগ্রিক পরিমাণগত ও গুণগত পরিবর্তনসহ জনআকাঙ্খা পূরণ করা সম্ভব হবে।”
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উদযাপন উপলক্ষে শ্রীমঙ্গলে আয়োজিত আলোচনা সভার প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য, সাপ্তাহিক নতুন কথার বিশেষ প্রতিনিধি, আরপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট কমরেড সৈয়দ আমিরুজ্জামান এসব কথা বলেন।
মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর ২০২৪) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সাকসেস হিউম্যান সোসাইটির শ্রীমঙ্গল উপজেলা শাখার উদ্যোগে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
শ্রীমঙ্গল শহরের সাইফুর রহমান মার্কেটের ২য় তলায় সংগঠনের কার্যালয়ে সাকসেস হিউম্যান সোসাইটির উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও মর্নিং পোস্টের প্রতিনিধি স্মরণ সিংহের সঞ্চালনায় এবং সংগঠনের সভাপতি আশিকুর রহমান সুজনের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন আইন ও সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের সিনিয়র সহসভাপতি মো. নাসির মিয়া, সাকসেস হিউম্যান সোসাইটির উপজেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সিলেট নিউজের প্রতিনিধি বাপ্পী দেব, দৈনিক বাংলাদেশ সমাচার পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি ও সংগঠনের কার্যকরী সিনিয়র সদস্য জয়নাল আবেদীন বাদশা এবং সাকসেস হিউম্যান সোসাইটির কার্যকরী সদস্য তৌফিক মিয়া প্রমূখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কমরেড সৈয়দ আমিরুজ্জামান আরও বলেন, “মানব সভ্যতার ইতিহাস শ্রেণি সংগ্রামের ইতিহাস, যা সমাজ অভ্যন্তরের সংঘাতের প্রতিফলন। অভ্যন্তরে বিপরীতের এই সংঘাতের মীমাংসার মধ্য দিয়েই সমাজ এগিয়ে চলে, পুরনো সমাজ ভেঙে গিয়ে একটি নতুন আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এই প্রক্রিয়া চলতেই থাকে। কার্ল মার্কস প্রথম দিকের বুর্জোয়া অর্থনীতিবিদদের অসঙ্গতিকে একপাশে রেখে, অর্থনীতি ও এর বৈশিষ্ট্যগুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বিশ্লেষণ করে ও নিরন্তর অনুসন্ধান চালিয়ে বৈজ্ঞানিকভাবে দেখালেন যে, আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার অভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্য হিসেবে যে দ্বন্দ্ব বিদ্যমান তা অমীমাংসেয়। যে কারণে সমতা-ন্যায্যতা ও মানবাধিকারের সর্বোচ্চ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় মার্কস ও এঙ্গেলস-এর মতে, সর্বহারা শ্রেণি অর্থাৎ শ্রমিক শ্রেণি ক্রমশ সংগঠিত হয়ে সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে বুর্জোয়া শ্রেণির কাছ থেকে ক্ষমতা দখল করবে এবং প্রতিষ্ঠিত হবে। সর্বহারার একনায়কত্বে সমাজতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়। এইসবের ফলশ্রুতি হিসেবে শ্রেণিভেদ, শ্রেণিদ্বন্দ্ব ও শ্রেণিশােষণের অবসান ঘটে। এইভাবে সাম্যবাদী সমাজের সৃষ্টি হয়। সমাজতান্ত্রিক সমাজে, উৎপাদনের উপকরণের উপর ব্যক্তিগত মালিকানা লুপ্ত হয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় সামাজিক মালিকানা। এইভাবে শ্রেণিসংগ্রামের অবসান ঘটবে এবং মানুষের দ্বারা মানুষের শােষণের পরিসমাপ্তি ঘটবে। পরিশেষে, বিপ্লবের মাধ্যমে এসব দ্বন্দ্বের মীমাংসা করা গেলে জনগণের সমতা-ন্যায্যতা ও মানবাধিকারের সর্বোচ্চ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ