সিলেট ২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:৫৩ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ১১, ২০২৪
নিজস্ব প্রতিবেদক | কুমিল্লা (দক্ষিণ), ১১ ডিসেম্বর ২০২৪ : লাকসাম হানাদার মুক্ত দিবস আজ।
১৯৭০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের সমন্বয় কমিটির একাংশের নেতৃত্বে পল্টনের বিশাল জনসভা থেকে ‘স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ব বাংলা’র কর্মসূচি প্রকাশ্যে উত্থাপন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ও ১৯৭১ সালের ৯ মার্চ ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) আয়োজিত এক বিশাল জনসভায় বাঙালির স্বাধীনতা আন্দলন ও বঙ্গবন্ধুর সিদ্ধান্তের প্রতি মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর একাত্মতা ঘোষণার পর জাতিগত নিপীড়ন-শোষণ-বৈষম্য-বঞ্চনার শিকার মুক্তিপাগল বাঙালি যুদ্ধের জন্য তৈরিই ছিলো বলা যায়।
১৯৭১ সালের ১ ও ২ জুন কলকাতার বেলেঘাটায় যুদ্ধরত কমিউনিস্ট ও বামপন্থী দল এবং গণসংগঠনসমূহ মিলিত হয়ে গঠন করেছিল বাংলাদেশ জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি। এ সম্মেলনে গৃহীত ঘোষণাপত্র তখন আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় প্রচারিত হয়েছিল। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকার করেই সমন্বয় কমিটি সরকারকে সহযোগিতাও যেমন করবে, তেমনি স্বতন্ত্রভাবেও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করবে। এ সমন্বয় কমিটির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ দল ছিল ন্যাপ (ভাসানী) ও ‘কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের পূর্ব বাংলা সমন্বয় কমিটি’ যার নেতৃত্বে সারাদেশে ১৪টি সশস্ত্র ঘাটি এলাকা ছিল।
১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বরেই প্রাণ দিয়ে লড়াই করে কুমিল্লা জেলার বৃহত্তর লাকসাম অঞ্চলকে হানাদার মুক্ত করেছিলেন ৭১ এর রণাঙ্গনের বীর সেনারা। আজ সেই ঐতিহাসিক দিন।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পাকহানাদার বাহিনীর নিষ্ঠুর নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞের স্মৃতি লাকসামের বেলতলী বধ্যভূমি। ৭১’র যুদ্ধকালীন সময়ে লাকসাম রেলওয়ে জংশনের দক্ষিণে বেলতলীতে কয়েক হাজার বাঙ্গালীকে নির্মমভাবে হত্যার পর লাশ মাটি চাপা দিয়েছিল পাকহানাদার বাহিনী। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকবাহিনী লাকসাম রেলওয়ে জংশন থ্রি-এ সিগারেট ফ্যাক্টরিতে ঘাঁটি করে। এ ঘাঁটিতে মুক্তিযোদ্ধাসহ সাধারণ মানুষকে ধরে এনে নির্বিচারে হত্যা করে এর ৫’শ গজ দূরে বেলতলী বধ্যভূমিতে মাটি চাপা দিতো পাকহানাদার বাহিনী।
মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচন্ড প্রতিরোধের মুখে এদিনে পাক হানাদার বাহিনী লাকসাম থেকে পালাতে বাধ্য হয়েছিলো। এদিকে দিবসটি পালন উপলক্ষে জেলা দক্ষিণাঞ্চলের ৫টি উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারী সংগঠন নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এতে যুদ্ধকালীন কমান্ডাররা স্মৃতিচারণ করবেন বলেও জানা যায়।
বতর্মানে কুমিল্লার লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, নাঙ্গলকোট ও লালমাই উপজেলা নিয়ে ছিলো বৃহত্তর লাকসামের ভৌগলিক অবস্থান। ১৯৭১ এর এই দিনে লাকসাম হাইস্কুল মাঠে বীর মুক্তিযোদ্ধা নজির আহমেদ ভূঁইয়া সর্ব প্রথম স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে এই অঞ্চলকে শত্রুমুক্ত ঘোষণা করেন।
লাকসাম উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা আবদুল বারী মজুমদার জানান, যুদ্ধের প্রথম সপ্তাহে পাকবাহিনীর সঙ্গে সন্মুখযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাসহ বহু লোক নিহত হয়। এদের মধ্যে মোস্তফা কামাল ও সোলায়মান নামে দুই ভাই, মিশ্রির আবদুল খালেক, কামড্ডা গ্রামের আবুল খায়েরের স্মৃতি এখনও ভুলতে পারছেনা তারা।
তিনি আরো জানান, পালানোর সময় মিত্রবাহিনী লাকসামের চুনাতী গ্রামে এবং মুক্তিবাহিনী শ্রীয়াং ও বাংলাইশ গ্রামে পাকহানাদার বাহিনীকে মুখোমুখি আক্রমণ করে। এ সকল আক্রমণে পাক হানাদার বাহিনীর অসংখ্য প্রাণহানীসহ অনেক হানাদার বন্দী হয়। অবশেষে ১১ ডিসেম্বর ভোরে যৌথবাহিনী বৃহত্তর লাকসামকে শত্রুমুক্ত বলে ঘোষণা করেন।
ওই ক্যাম্প থেকেই চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনীসহ অত্র অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গা নিয়ন্ত্রণ করতো তারা। ৮ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর বিভিন্ন কমান্ড লাকসামে অবস্থানরত পাক হানাদার বাহিনীর উপর আক্রমণ শুরু করে। পরবর্তীতে মিত্রবাহিনী লাকসাম জংশন ও সিগারেট ফ্যাক্টরিসহ বিভিন্ন অবস্থানের ওপর বিমান হামলা চালিয়ে পাকিস্তানী সেনাদের তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলে। দুইদিন ধরে প্রচন্ড যুদ্ধের পর পাকবাহিনী লাকসাম থেকে পশ্চিম দিকে মুদাফফরগঞ্জ হয়ে চাঁদপুরের দিকে পালিয়ে যায়। অবশেষে ১১ ডিসেম্বর ভোরে যৌথবাহিনী বৃহত্তর লাকসামকে শত্রুমুক্ত বলে ঘোষণা করেন।
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by M-W-D