ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি কার্যক্রম চালু রাখার দাবীতে মৌলভীবাজারে প্লেকার্ড প্রদর্শন ও মানববন্ধন

প্রকাশিত: ৬:১০ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৭, ২০২৪

ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি কার্যক্রম চালু রাখার দাবীতে মৌলভীবাজারে প্লেকার্ড প্রদর্শন ও মানববন্ধন

বিশেষ প্রতিনিধি | মৌলভীবাজার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ : সারাদেশে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র কর্তৃক পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি কার্যক্রম। আর এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির কার্যক্রম চালু রাখার দাবীতে মৌলভীবাজারের বিভিন্ন স্পটে পাঠক-সদস্যদের প্লেকার্ড প্রদর্শন ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর ২০২৪) বেলা আড়াইটা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব, পানি উন্নয়ন বোর্ড, এতিমখানা ও প্রতিবন্ধী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন স্পটে পাঠক-সদস্যদের এই প্লেকার্ড প্রদর্শন ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

এই প্লেকার্ড প্রদর্শন ও মানববন্ধনে মৌলভীবাজারের ভ্রাম্যমান লাইব্রেরি ইউনিটের সকল স্তরের সদস্য, পাঠক, অভিভাবক ও শুভানুধ্যায়ীরা এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। এ সময় তাদের হাতে নানান শ্লোগান লিখা প্লেকার্ড দেখা যায়।

এ সময় বক্তারা বলেন, বৈশ্বিক মহামারি করোনাসহ দেশে বিভিন্ন দুর্যোগেও সারাদেশে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি কার্যক্রম বন্ধ হয়নি। হাজার হাজার পাঠক সদস্য রয়েছে এর। এই লাইব্রেরির মাধ্যমে দেশে ছাত্র-ছাত্রীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের মাঝে বই পড়ার চর্চা অব্যাহত রয়েছে। ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার খবরে আমার আজ এই মানববন্ধনে মিলিত হয়েছি। যেকোনো অবস্থাতেই এই কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাক তা আমরা চাইনা। তাছাড়া সদস্যরা তো জামানত দিয়ে বই পড়েন। তারপরও কেন এমন সুন্দর একটি প্রচেষ্টা নষ্ট করে দেয়া হবে। ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি কার্যক্রম চালু রাখতে প্রয়োজনে সারাদেশে বৃহত্তম আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে।

“আলোকিত মানুষ চাই”- এই শ্লোগানকে প্রতিপাদ্য করে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি কার্যক্রম সহ বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র কর্তৃক পরিচালিত সকল কার্যক্রম ও কর্মসূচি পূর্বের ন্যায় বহাল রাখা এবং সম্প্রসারণ করার আহবান জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সংগঠক, সাপ্তাহিক নতুন কথা’র বিশেষ প্রতিনিধি, আরপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট কমরেড সৈয়দ আমিরুজ্জামান বলেন, “আলোকিত মানুষ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে স্বপ্নদ্রষ্টা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের হাত ধরেই সত্তর দশকের শেষের দিকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। হাটি হাটি পা পা করে ৪৫ বছর পূর্ণ হয়েছে তার। স্বাধীন, প্রজ্ঞাসম্পন্ন, চিন্তাশীল ও সৃজনশীল মূল্যবোধসম্পন্ন, শক্তিশালী মানুষ তৈরির লক্ষ্যেই বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ৪৫ বছর থেকে কাজ করছে। সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান, রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজবিদ্যাসহ বিশ্বজ্ঞানের শ্রেষ্ঠ বইগুলোর পঠন-পাঠন এই কাজের অন্তর্ভুক্ত।
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র কোনো গৎ-বাঁধা, ছক-কাটা, প্রাণহীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, বরং একটি সপ্রাণ সজীব পরিবেশ- জ্ঞান ও জীবন সংগ্রামের ভেতর দিয়ে পূর্ণতর মনুষ্যত্বে ও উন্নততর আনন্দে জেগে ওঠার এক অবারিত পৃথিবী। এক কথায়, যাঁরা সংস্কৃতিবান, কার্যকর, ঋদ্ধ মানুষ- যাঁরা অনুসন্ধিৎসু, সৌন্দর্যপ্রবণ, সত্যান্বেষী; যাঁরা জ্ঞানার্থ, সক্রিয়, সৃজনশীল ও মানবকল্যাণে সংশপ্তক ‘বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র; তাঁদের পদপাতে, মানসবাণিজ্যে, বন্ধুতায়, উষ্ণতায় সচকিত একটি অঙ্গন।
মানুষের মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা এবং বিভিন্নবিষয়ক জ্ঞান ও রুচিশীল সংস্কৃতিচর্চার মাধ্যমে প্রগতিশীল চিন্তাচেতনার বিকাশ ঘটানো এর উদ্দেশ্য। -এই লক্ষ্য-উদ্দেশ্যকে এগিয়ে নিতে সকল কার্যক্রম ও কর্মসূচি পূর্বের ন্যায় বহাল রাখা এবং সম্প্রসারণ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা যেতে পারে। সংস্কারের নামে প্রতিক্রিয়াশীল কোনো ধ্যান-ধারণা গ্রহণযোগ্য হবে না।”

উল্লেখ্য যে, ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি কার্যক্রম বন্ধের জন্য গত ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ইং তারিখে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি কার্যক্রম পরিচালক (বাস্তবায়ন) মো. কামাল হোসাইন স্বাক্ষরিত একটি চিঠি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সারাদেশের লাইব্রেরি কর্মকর্তদের কাছে পাঠানো হয়।

মৌলভীবাজার ইউনিটের লাইব্রেরি কর্মকর্তা মো. রবিউল আলম চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

চিঠিতে লিখা রয়েছে আগামী ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪ ইং তারিখে দিনের প্রথম ভাগে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি-গাড়ী ও অন্যান্য জিনিসপত্র বুঝিয়ে দিতে হবে। কারণ দেশব্যাপী ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি প্রকল্প (২য় সংশোধিত) ব্যবস্থাপনার সাথে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি সেবা প্রদান সংক্রান্ত মেয়াদ ৩১ ডিসেম্বরে সমাপ্ত হবে। একইসঙ্গে দেনা-পাওনা বুঝে নিতে বলা হয়েছে।