সিলেট ২রা জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১:২৫ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৯, ২০২৪
২০২৪ সালের বিদায়ঘন্টা বেজে গেছে ; ২০২৫ সমাগত। জানুয়ারী মাসেই ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিবেন। দেশে দেশে তা আলোচনার বিষয়; কারণ, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের মোড়ল। এছাড়া, ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতিমধ্যেই নিজ দেশ ও বিশ্ব রাজনীতি, অর্থনীতি নিয়ে নানা মন্তব্য করেছেন; যার উপর নির্ভর করে বিশ্লেষকগণ ভবিষ্যত অনুমান করছেন। এটা অনেকটা জোতিষশাস্ত্র চর্চার মতো। হতে পারে – এই টাইপ। তবুও তার গুরুত্ব কম নয়।
প্রথম প্রশ্ন – বাংলাদেশের তাতে কি আসে যায়? অনেকেই বলছেন, আসে যায়। কারণ, দেশটা গণতন্ত্রের সংকটে পড়েছে এবং এই সংকট বিশ্ব মিডিয়া তথা দি ইকোনমিস্ট- এর চোখেও পড়েছে। তারা বাংলাদেশের সালতামামি করে ভবিষ্যত গননা করার চেষ্টা করেছে।
বাংলাদেশের গণতন্ত্রের আলোচনা পত্রিকাটা করেছে বৃটিশ ঔপনিবেশিক চিন্তার মডেলে। অর্থাৎ, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনে গণতন্ত্রের পথ কি হবে তা বিবেচনা করে। তাদের মডেলে যুক্তরাষ্ট্র, বিশ্বব্যাঙ্ক, আইএমএফ ও সুশীল সমাজের মন্তব্য ও আকাঙ্খা প্রকাশ পায়। অন্যদিকে বৈশ্বিক গণতন্ত্র শেষ পর্যন্ত ট্রাম্পের একক সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করবে – এরকম একটা ধারণাও প্রকাশ পায়। এরমধ্যে চীন ও রাশিয়ার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক কি হবে? নেতানিয়াহু যুদ্ধ থামাবে কীনা, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কী হবে? কোরিয়া উপকূলে যুদ্ধ হবে কীনা ইত্যাদি ইত্যাদির উপর।
কালের বিচারে দ্বিতীয় প্রশ্ন হলো বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আশির্বাদ না অন্য কিছু। গত কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কমবেশি প্রায় সবদিনই বাংলাদেশের শাসক বদলের জন্য নানা মন্তব্য করেছে এবং তাতে সফলতাও এসেছে। বলা চলে, যুক্তরাষ্ট্রের পছন্দের লোকেরাই বর্তমানে শাসন করছেন। এতে করে একটা বিষয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে, বিশ্বব্যাংঙ্ক এবং আইএমএফ তাদের সুর নরম করেছে এবং তাদের চাপ হালকা করেছে। এমনকি জাতিসংঘের বিভিন্ন অঙ্গ ও আইএলওসহ অন্য ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সুর নরম হয়েছে। এতে অনেকেই আশা দেখছেন আবার অনেকেই আশঙ্কা দেখছেন। আশাতো ভালো কিন্তু আশঙ্কা কেনো? কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা অনেকটা মহাভারতের ঋষি নারদ মুনির মতো। নারদ সংগীতজ্ঞ ও জ্ঞানী সংবাদবাহক। দূর্ভাগ্য হলো, তিনি যে সংবাদ ও জ্ঞান বা পরামর্শ দেন তাতে যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে পড়ে। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে তার প্রমাণ আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাও নারদের চেয়ে বেশি বা কম নয়। বাংলাদেশের রোহিঙ্গা সমস্যা, সমুদ্রসীমায় খনিজ সম্পদ, সংখ্যালগুদের মানবাধিকার, শ্রমিকের মুক্ত ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার, বার্মানীতি, আঞ্চলিক স্থীতাবস্থা, সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ ও স্বার্থ রয়েছে। এইসব বাংলাদেশ মেটাতে পারলে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গণতন্ত্রের পরীক্ষায় পাশ করা যাবে, আর এগুলো পাশ করতে বাংলাদেশকে একটা যুদ্ধাবস্থায় যেতে হবে।
বাংলাদেশের গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি হলো, বৃটিশ উপনিবেশ মডেলের। ওয়েস্টমিনিস্টার ধাঁচের। এখানে গণতন্ত্র মানে নির্বাচন। কিন্তু নির্বাচন একাতো আর গণতন্ত্র নির্মাণ করতে পারে না।
সর্বোপরী, গণতন্ত্র একটা দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক কাঠামোর বিষয়। গণতন্ত্রের বিকাশ অন্য অনেক প্রতিষ্ঠানের শক্ত ভিত্তির ওপর নির্ভর করে, যা বাংলাদেশে বিকশিত নয়।
গণতন্ত্র নিজেই এখন বৈশ্বিক ঝুঁকিতে আছে বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পদক্ষেপের উপর নির্ভর করবে, সেখানে বাংলাদেশ একটি নিরাপদ গণতন্ত্রের আশা তেমন করতে পারবে কি? মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন।
বাংলাদেশে এখনো গণতন্ত্র নিয়ে যেসব আলোচনা শোনা যাচ্ছে তা অনেকটাই নতুন ঝুঁকি তৈরি করতে যাচ্ছে বলে মনে হয়।
পরিশেষে, পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্য যেখানে তিনি যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ভারতের সাথে ব্যালেন্সড সম্পর্কের কথা বলেছেন তার মর্ম হলো, বাংলাদেশের গণতন্ত্র অভ্যন্তরীণ ফ্যাক্টরের চেয়ে বহিঃউপাদানের উপর নির্ভর করছে বেশি। এই ব্যালেন্স অনেকটা প্যারালাল বারের উপর হাঁটা। রাজনীতি কিন্তু প্যারালাল বার নয়, এখানে ব্যালেন্স না থাকলে যুদ্ধের ঝুঁকি বেড়ে যায়। বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত যেন যুদ্ধে না গড়ায়, সেটাই হবে দেশের জন্য মঙ্গলময়।
আপাতত ট্রাম্প কার্ডের ভবিষ্যত ফলাফল কি হয় তা- দেখার অপেক্ষায় থাকা ছাড়া ভবিষ্যতবাণী করার চেষ্টা দূরুহ।
তবুও ২০২৫ বাংলাদেশের জন্য শুভ হোক।
#
শরীফ শমশির
লেখক ও গবেষক
ঢাকা
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by M-W-D