ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে উদ্যোক্তা ও প্রশিক্ষক তানিয়া

প্রকাশিত: ২:০৬ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২০, ২০২৫

ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে উদ্যোক্তা ও প্রশিক্ষক তানিয়া

Manual2 Ad Code

নিজস্ব প্রতিবেদক | চাঁদপুর, ২০ জানুয়ারি ২০২৫ : তানিয়া ইশতিয়াক খান (৩০), স্বপ্ন ছিলো উদ্যোক্তা হবেন। পড়াশুনা শেষ করার আগেই জুনিয়র অফিসার হিসেবে যোগ দেন একটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকে। সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিলো। কিন্তু এরই মধ্যে বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাস থাবা বসায়। ছেড়ে দেন ব্যাংকের চাকরি।

উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ শুরু করেন। ‘খানস্ ধাবা’ নামে অনলাইন ভিত্তিক খাবার পন্য বিক্রি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শুরু হয় ব্যবসা। বিগত ৫বছরে তিনি নিজেই শুধুমাত্র উদ্যোক্তা নয়, বহু নারী উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষিত করেছেন।

তারা এখন প্রত্যেকে উদ্যোক্তা।

Manual5 Ad Code

গল্পের উদ্যোক্তা তানিয়া হলেন চাঁদপুর শহরের নতুন বাজার এলাকার ব্যবসায়ী ইশতিয়াক খানের চার সন্তানের মধ্যে তৃতীয় সন্তান।

তানিয়া চাঁদপুর শহরেই বড় হয়েছেন। প্রাথমিক সম্পন্ন করেছেন স্থানীয় কদমতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক পড়েছেন লেডি দেহলভী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, উচ্চ মাধ্যমিক চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজ এবং ২০১৮ সালে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ও ২০২০ সালে স্নাতকোত্তার সম্পন্ন করেন চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে।
স্নাতকে অধ্যয়নরত অবস্থায় বিয়ে করেন শহরের পুরান বাজারের আরেক বেসরকারি চাকরিজীবী মো. আশিক খানকে। তানিয়া নাইরা খান ও আরিশফা খান নামে দুই কন্যা সন্তানের জননী। স্বামী-সন্তান নিয়ে বর্তমানে থাকেন শহরের পুরান বাজারের শ্বশুর বাড়ীতে। আর নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি বড় পরিসরে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে চালু আছে শহরের বড় স্টেশন যুমনা রোডের মাথায়।

তানিয়া বলেন, স্নাতক শেষ করে ২০১৯ সালে বেসরকারি ইউসিবিএল ব্যাংকে জুনিয়র অফিসার হিসেবে চাকরিতে যোগদেন। একবছর পরেই বিশ্বজুড়ে দেখা দেয় করোনা। সেই প্রভাব পড়তে শুরু করে বাংলাদেশেও। ব্যাংকে কর্মঘন্টা পরিবর্তন হয়। মহামারির কারণে এবং গর্ভবতী থাকায় চাকরিথেকে ছুটিতে যান। পরবর্তী সময়ে চাকরিও ছেড়েদেন। এর আগে কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় নারীদের দু:খ ও কষ্টের গল্প শুনে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন।

এরই মাঝে ২০২০ সালে ২৬ ফেব্রুয়ারি তানিয়ার জন্মদিনে ‘বিজয়ী’ নামে নারীদের উদ্যোক্তা তৈরীর জন্য একটি অনলাইন প্লাটফর্ম এর যাত্রা শুরু করি।

তিনি আরো বলেন, মহামারি শুরু হওয়ার আগ থেকেই উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন ছিলো। সে আলোকে ‘খানস্ ধাবা’ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের নাম নির্ধারণ করেন। করোনাকালীন অবসর সময়ে স্থির করেন ব্যবসা শুরু করবেন। ঘরে বসেই প্রথমে স্পন্সের মিষ্টি তৈরী করেন। এই মিষ্টি তৈরী করে বিক্রির জন্য পোস্ট করেন ‘খানস্ ধাবা’ নামক ফেসবুক পেজে। এরপর থেকেই শুরু হয় বিক্রি। প্রথম ৩ কেজি মিষ্টি বিক্রি করেন ২৫০টাকা দরে।

Manual7 Ad Code

এই উদ্যোক্তা বলেন, পেজে পোস্ট করার পর থেকে হাতে তৈরী এই মিষ্টির অর্ডার বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে এসে নিজ বাসার নীচ তলায় একটি কক্ষে দিয়ে ব্যবসার প্রসার ঘটান। সেখানে মিষ্টির সাথে হাতে তৈরী পুডিং, কেক, কাবাব, রোস্ট, ডিম-পোলাও সহ নানা সু-স্বাদু খাবার বিক্রি করতে শুরু করেন। এর মধ্যে পুডিং, কাবাব, রোস্ট ও ডিম-পোলাও প্যাকেজ হিসেবে ৯৯টাকা দরে বিক্রি করেন।এতে তিনি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা আয় করেন।

এই উদ্যোক্তার পেজের সু-স্বাদু খাবারের সুনাম ছড়িয়ে পড়লে আরো কর্মহীন নারী তার সাথে যোগাযোগ শুরু করেন। তাদের সাথে চলে তার অনলাইন ভিত্তিক যোগাযোগ। এরপর তিনি নিজে অন্য নারীদের উদ্যোক্তা তৈরীর জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং নারীদেরকে প্রশিক্ষিত করে তুলেন।

Manual8 Ad Code

তানিয়া জানান, এই উদ্যোক্তা সংগঠনের মাধ্যমে ইতোমধ্যে ২০২০ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৩ হাজার নারী বিভিন্ন ক্যাটাগরীতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং নিজ নিজ প্রশিক্ষণের ওপর কাজ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। এই বিজয়ী সংগঠনকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে রূপ দিতে ২০২২ সালে মহিলা অধিদপ্তর এবং ২০২৩ সালে জেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরে নিবন্ধিত করা হয়।

তানিয়া ইশতিয়াক খান শিক্ষিত ও কর্মহীন নারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি নিজে উদ্যোক্তা হিসেবে বিজয়ীর মাধ্যমে ২০২০ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিনা ফিতে একাধিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ৩ হাজার নারীকে প্রশিক্ষিত করেছি। এর মধ্যে অনেকেই উদ্যোক্তা হিসেবে নিজের কর্মদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। আশাকরি আমাদের এই কাজগুলো দেশের অন্য বেকার যুবক ও কর্মহীন নারীদের জন্য অনুকরণীয় হবে। এছাড়া উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য আমাদের বিজয়ীর পক্ষ থেকে সব ধরণের সহযোগিতায় সব সময় উন্মুক্ত থাকবে। দেশের যে কোন স্থান থেকে আমাদের সাথে যোগাযোগ করা যাবে।

Manual6 Ad Code

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code