মুক্তিযুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধে ভোলা জেলা

প্রকাশিত: ১২:৫৪ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ২, ২০২৫

মুক্তিযুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধে ভোলা জেলা

Manual5 Ad Code

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিবেদক | ভোলা, ০২ এপ্রিল ২০২৫ : ভোলা জেলায় ১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

বোরহানউদ্দিন উপজেলার দেউলা ইউনিয়নের তালুকদার বাড়ি এলাকায় রক্তক্ষয়ী সেই যুদ্ধে ২৩/২৪ জন পাকসেনা নিহত ও ২২ জন আহত হয়। মাত্র ১৬টি থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল দিয়ে সেদিন আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে ভোলার দামাল ছেলেরা।

দেউলা যুদ্ধ নামে পরিচিত সেই যুদ্ধে কোন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ বা আহত হয়নি। দেড় ঘন্টার যুদ্ধে হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে তাদের স্টেনগান ও বিভিন্ন অস্ত্র ছিনিয়ে নেয় মুক্তিবাহিনী। ল্যান্স নায়েক হাই কমান্ড ছিদ্দিকুর রহমান সেই যুদ্ধে নেতৃত্ব দান করেন। তৎকালীন দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার স্থানীয় প্রতিনিধি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা এম. হাবিবুর রহমান এ তথ্য জানান।

Manual5 Ad Code

তিনি জানান, বোরহান উদ্দিনের দেউলায় মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প রয়েছে এমন খবর পায় পাকসেনারা।

বোরহানউদ্দিনের শান্তি কমিটির সভাপতি মতি সিকদারসহ বেশ কজন রাজাকার ও মিলিটারি নিয়ে ৫০/৬০ জনের একটি দল ১৯ সেপ্টেম্বর সকালে রওনা হয়। খেয়াঘাট থেকে নৌকাযোগে দেউলা যায় তারা। তারা গ্রামে নেমে গান পাউডার দিয়ে মানুষের বাড়ি ঘর জ্বালিয়ে দেয়। একইসাথে গুলি ছুড়তে-ছুড়তে তারা ত্রাস সৃষ্টি করে। গ্রামের মানুষ মিলিটারি আসার খবরে দিক-বিদিক হয়ে ছুটে পালায়। মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে খবর আসে এই দিকে (মুক্তিবাহিনী’র ক্যাম্প) সেনারা আসছে। মুহূর্তের মধ্যে প্রস্তুতি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রায় ৫০ জনের একটি দল। যে পথ দিয়ে পাকসেনাদের যেতে হবে সেটি ছিলো সরু এবং দু’পাশে পানি। সেই পথের পাশের একটি দিঘীর পাড়ের ৩ দিকে অবস্থান নেয় আমাদের যোদ্ধারা। যখনই পাকাসেনারা পথে আসল প্রথম হাই কমান্ড ছিদ্দিক গুলি করে। একইসাথে অন্যরাও গুলি ছুড়তে থাকে। ঘটনার আকস্মিকতায় বেশ ক’জন পাকসেনা মারা পড়ল। অনেকেই পানিতে পড়ল। পরে তারা সূপারির গাছের আড়াল করে পাল্টা গুলি করে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র আক্রমণের ফলে পিছু হটতে বাধ্য হয় পাকসেনারা।

Manual6 Ad Code

সেদিনের সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাদেক বলেন, সেদিন আমরা পাকসেনাদের কাছ থেকে ৩০/৩৫ টি অস্ত্র পাই। তার মধ্যে স্টেনগান, চাইনিজ রাইফেল, থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল ও পিস্তল। সেদিন মুক্তিযোদ্ধদের মধ্যে সাবেক এমপি চুন্নু মিয়া, সাহাজাদা, দক্ষিণ দিঘলদীর মুছু ছিদ্দিক, সামছু মিয়া, লালমোহনের বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, বাংলাবাজারের আব্দুল কাদের, আব্দুল খালেক, তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা গোলাম মোস্তফা, আলম চৌকিদার, শানু, ডা. আব্দুর রহমান, কমিউনিস্ট পার্টির ইছাক জমাদ্দারসহ আরো অনেকে অংশ নেন। সেদিন অনেক পাকসেনা আমাদের হাতে জীবিত ধরা পড়ে।

তিনি বলেন, যুদ্ধ যখন শেষ হয়, তখন গ্রামবাসী ঢাল-সুরকী নিয়ে পানিতে পড়ে থাকা পাকসেনাদের চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে। পরে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে তারা আটক হয়। একপর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধারা গুলি করে তাদের হত্যা করে।

সেদিনের যুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, সেদিন পাকবাহিনী ব্যাপকহারে বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেয়ার পাশাপাশি নারীদের শ্লীলতাহানী করেছিল। আমরা অল্প ক’জন মুক্তিযোদ্ধা মিলে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করি। এই যুদ্ধটি ভোলার স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। এর পর থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল আরো বেড়ে যায়। যা স্থানীয়ভাবে চুড়ান্ত বিজয়ের দিকে আমাদের ধাবিত করে।

Manual3 Ad Code

মুক্তিযোদ্ধা এম. হাবিবুর রহমান জানান, সেদিন একজন পাকসেনা পথ ভুল করে গ্রামের এক বাড়িতে আশ্রয় গ্রহণ করে। যুদ্ধ শেষ হলে মানুষ জন যখন বাড়িতে আসে তখন তাকে দেখতে পেয়ে সবাই পিটিয়ে মারে। এছাড়া, পাকসেনাদের ঘাটে বাঁধা নৌকাটি স্থানীয়রা মিলে ডুবিয়ে দেয়। পরে অবশ্য অন্য নৌকায় করে গ্রাম ছেড়ে পালায় অবশিষ্ট হানাদার দল।

Manual3 Ad Code

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual4 Ad Code