প্রথিতযশা বুদ্ধিজীবী শাহরিয়ার কবীরের চিকিৎসাটা জরুরি

প্রকাশিত: ১০:১৫ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ৭, ২০২৫

প্রথিতযশা বুদ্ধিজীবী শাহরিয়ার কবীরের চিকিৎসাটা জরুরি

মনজুরুল হক |

লেখক, সাংবাদিক ও প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা শাহরিয়ার কবীর গুরুতর অসুস্থ। ওই অবস্থাতেই তাকে একাধিকবার রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। কী তথ্য বের করতে? আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা?

▪️
মানবাধিকার, সাম্যবাদ, মৌলবাদ, ইতিহাস এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভিত্তিক ৭০টিরও বেশি বই লেখা শাহরিয়ার কবীর মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের কাছে ‘আওয়ামী দালাল’। তার নাম উচ্চারিত হলেই যে শিশু তার নাম জানে না, সেও জেনেছে তাকে ‘মুরগী কবীর’ বলা হয়। তিনি নাকি মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক বাহিনীকে মুরগী সাপ্লাই দিতেন! অথচ এটা কোনও দিন কাউকে প্রমাণ দিতে দেখা যায়নি (মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি কলকাতায় মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করছিলেন)।

▪️
আনু মুহাম্মদদের মত জনপ্রিয় বুদ্ধিজীবীরাও তাঁকে ‘আওয়ামী দোসর’ বলে সাইড লাইনে রেখেছেন। আজকের আইন উপদেষ্টা তাঁর এক সময়ের জুনিয়র সহকর্মী। এরাই যখন তাঁকে ‘শত্রু কাতারে’ ফেলেছেন, তখন মুক্তিযুদ্ধবিরোধীরা যে ‘মহাশত্রু’ মনে করেন তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তাদের অন্যতম ঘৃণা-তিনি ‘ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’র নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি এক সময় সশস্ত্র সংগ্রামের রাজনীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। পরে ওই রাজনীতি ত্যাগ করে “ওদের জানিয়ে দাও” নামে একটা বইও লিখেছিলেন। অর্থাৎ তথাকথিত ‘গণতান্ত্রিক ধারার রাজনীতি’তে ফিরেছিলেন। যে রাজনীতি প্রচার করেছেন সেটা আওয়ামীও না, বিএনপিও না।

▪️
তিনি এখন কারাবন্দী। তাঁর কোনও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না। হয়ত বিনা চিকিৎসায় তিনি জেলেই মা/রা যেতে পারেন। এই যে একজন বন্দীর প্রতি মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে অথচ তা নিয়ে আমাদের বুদ্ধিজীবী মহল মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেন। এদের অনেককে দেখা গেছে গত কয়েক বছর ধরে মানবাধিকারের সোল এজেন্ট হয়ে দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছেন।

▪️
সাধারণ বন্দীদের বেলায় তো নয়ই, রাজনৈতিক বন্দীদের সঙ্গেও এমন নিষ্ঠুর আচরণ আগের কোনও সরকার করেনি। ফাঁসির আসামীও চিকিৎসা সেবা পেয়েছেন।

▪️
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে তাঁকে জেলের ৬ জনের সঙ্গে একটা রুমে মেঝেতে শুধু একটা কম্বলে শুইয়ে রাখা হয়েছে। আগে থেকেই কার্ডিয়াক পেশেন্ট। কিছুদিন আগে জেলেই তাঁর হার্ট এ্যাটাক হয়েছে, অথচ তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়নি।

▪️
২০২০ সালে স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। ২০২৩ সালে কন্যা আত্মহত্যা করেছে। এখন এই নিঃসঙ্গ মানুষটি মৃত্যুপ্রহর গুনছেন….।

▪️
গত শতকের আশির দশকে তাঁর হাত ধরে ডজন ডজন সাংবাদিক গড়ে উঠেছেন, যারা এখন দেশের সব প্রথিতযশা আইকনিক সাংবাদিক-সম্পাদক, অথচ তার মুক্তি কিংবা ন্যূনতম চিকিৎসা নিয়ে তেমন কেউ মুখ খুলছেন না।

▪️
আমার মত নামগোত্রহীন এক সাধারণ মানুষও আশির দশকে মফস্বল থেকে ঢাকায় এসে এই মানুষটির কাছে সাংবাদিকতার ‘হাতে খড়ি’ পেয়েছিল।

▪️
আমার লেখায়-কথায় সরকারের-প্রশাসনের কর্তব্যজ্ঞান জাগ্রত হবে না জানি। তার পরও তাঁর মুক্তি ও চিকিৎসার দাবী জানাচ্ছি। আশা করব আমার বন্ধুরাও আওয়াজ তুলবেন।

………………………..
৭ এপ্রিল ২০২৫