এশিয়ায় চীনের সামরিক আক্রমণের প্রস্তুতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ: বাংলাদেশ কি তার কেন্দ্রে!

প্রকাশিত: ৪:২২ অপরাহ্ণ, জুন ১, ২০২৫

এশিয়ায় চীনের সামরিক আক্রমণের প্রস্তুতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ: বাংলাদেশ কি তার কেন্দ্রে!

Manual7 Ad Code

শরীফ শমশির |

এশিয়ায় চীন সামরিক আক্রমণের জন্য ছুরি শান দিচ্ছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ কি তার কেন্দ্রে!/?

Manual7 Ad Code

আজ এএফপির বরাতে একটি ইংরেজি দৈনিক খবরটি পরিবেশন করে জানাচ্ছে, সম্প্রতি সিঙ্গাপুরে একট সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পেট হেজথ সরাসরি অভিযোগ করে বলেন, চীন এশিয়ায় তার সামরিক শক্তি ব্যবহারের প্রস্তুতি নিচ্ছে। গত কয়েক দিন ধরে বাংলাদেশের মিডিয়া জানাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের গোপন প্রতিবেদনে প্রকাশ চীন বাংলাদেশে তার সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করতে চায়। এই সংবাদ যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে জানানো হচ্ছে যখন রাখাইন করিডোর নিয়ে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের সংবাদে রাজনীতি সরগরম হয়ে আছে। আমার মনে হয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য এবং বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পদস্থ নৌ ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের ভ্রমণ ও উপস্থিতির একটা সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও কয়েক জন সামরিক বিশেষজ্ঞের উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা এবং সরকারের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টার নানা মন্তব্য পরিস্থিতির কিছুটা ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

Manual3 Ad Code

এই অনুমানের জন্য একটু শিবের গীত গাইতে চাই। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক নীতি গত কয়েক দশকে এশিয়ামুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যেমন, ন্যাটোর এশিয়া প্যাসিফিকে সম্প্রসারণ, দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের উপস্থিতির প্রতিবাদ এবং বার্মা অ্যাক্ট তথা মিয়ানমারে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে কয়েকটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। ওবামা প্রশাসন এবং তাঁর পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন প্রথম দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের উপস্থিতিকে সমুদ্রের অবাধ চলাচলের জন্য হুমকি মনে করে সামরিক নীতি গ্রহণ করে। বাইডেন প্রশাসনে তার চূড়ান্ত পরিণতি দেখা যায়। ডেমোক্রেট নেতা ন্যান্সীর তাইওয়ান সফর চীন তাইওয়ান ও যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধকে প্রায় অনিবার্য করে তুলেছিল। তা প্রশমিত হলেও সামরিক ও কূটনৈতিক উত্তেজনা চলমান ছিল। সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসন চীনের সঙ্গে যে শুল্ক যুদ্ধ শুরু করেছে তারই ধারাবাহিকতা সিঙ্গাপুরে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর ভাষণ। আর এর মধ্যে বাংলাদেশ ঢুকে গেছে যেখানে ভারত ও চীনের প্রভাব কমে যুক্তরাষ্ট্রের মনোনীত সরকার কায়েম হয়েছে।

দক্ষিণ চীন সাগরে সরাসরি যুক্তরাষ্ট্র অংশ নয়। এখানে জলসীমা চীন, তাইওয়ান, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, ব্রুনাই ও কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনাম ইত্যাদি ইত্যাদির। দক্ষিণ চীন সাগরের সীমানা দ্বন্ধ অনেকটা শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে পরে। ফিলিপাইন ও অন্যান্য দেশের স্বাধীনতা ও সীমানা নির্ধারনের মাধ্যমে। রেডক্লিফ যেমন পেন্সিলের টানে ভারত ভাগ করে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে স্থানীয় সীমান্ত যুদ্ধের বীজ বুনে দিয়েছে অনেকটা তাই। এইসব বিরোধ যখন জাতিসংঘে যায় তখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ তাদের কর্তৃত্ব ফিরে পায় এবং বৈশ্বিক মোড়ল বা মীমাংসাকারী হিসেবে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে সক্রিয় হয়। দক্ষিণ চীন সাগরে বিরোধে স্ব স্ব দেশ নানা আপোষ চুক্তি করে বিভিন্ন দ্বীপের দখল ও মাছ মারার মীমাংসা করে আসলেও চীনের একটা কৃত্রিম দ্বীপ নির্মানের বিষয়কে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের আর্বিভাব ঘটে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রাথমিক অভিযোগ হলো চীন দক্ষিণ চীন সাগরে নিজেদের সামরিক আধিপত্য বিস্তার করে স্বাভাবিক নৌ বাণিজ্যিক জাহাজের চলাচলকে বিঘ্নিত করবে। তাদের পরোক্ষ দাবি হলো, দক্ষিণ চীন সাগরে বিভিন্ন খনিজ ও তেল সম্পদের আহরণের অধিকার সংক্রান্ত। এই সম্পদ আহরণের ভাগে ভারত গিয়ে সংযুক্ত হয়। জলসীমার পাশের দেশগুলোর সাথে চুক্তি করে বিভিন্ন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি এখনে মুনাফার লোভে হাজির হয়। তাই দেখা যায় চীনের বিরুদ্ধে দক্ষিণ চীন সাগরের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া এককাতারে এসে যায়। যুক্তরাষ্ট্র এখানে বাংলাদেশকেও তার মিত্র হিসেবে পেতে চেয়েছিল। বর্তমানে ইন্টেরিয়াম সরকার তাদের অনূকূলে থাকায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের মাটিতে তাদের সামরিক পা রাখার জায়গা পায়। এতে করে আবার চীনকে মায়ানমার থেকেও বিদায় করা যাবে এবং ভারতও টাইট থাকবে। বাংলাদেশের জল ও স্থল সীমানা ব্যবহার করে অনেক ঢিল ছুড়তে পারবে যুক্তরাষ্ট্র।
অন্যদিকে, চীন বারবার যুক্তরাষ্ট্রের এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। চীন বলছে, তারা বেল্ট এন্ড রোড প্রকল্প কাজে লাগাতে চায় এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে আন্তঃমহাদেশীয় যোগাযোগ তৈরি করার জন্য। সামরিক উদ্দেশ্যে নয়। কিন্তু তাদের বিনিয়োগ যেমন পাকিস্তান ও মায়ানমারে তাদের একটা সামরিক সংঘর্ষের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। পাকিস্তানে ইতিমধ্যে বহু চীনা নাগরিক গুপ্ত হত্যার শিকার হয়েছে, মিয়ানমারে বিদ্রোহীদের সাথে আপোষ করতে হচ্ছে। আর চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক শুল্ক যুদ্ধ অচিরেই সামরিক সংঘর্ষে জড়াবে না- তার গ্যারান্টি কোথায়?

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এশিয়ার দেশগুলোকে সামরিক প্রস্তুতি উন্নতি করতে বলেছেন চীনের বাস্তব সামরিক বিপদ থেকে বাঁচার জন্য।

Manual7 Ad Code

বাংলাদেশ এশিয়ার বাইরে নয়। বাংলাদেশের বর্তমান করিডোর সংক্রান্ত সংকট যদি সামরিক সংকটে পরিণত হয় তখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়োজনীয়তা আরও বেড়ে যাবে।

এশিয়ার দূর্ভাগ্য হলো, তারা যখন যুদ্ধে জড়ায় যেমন, চীন-ভারত, চীন- জাপান, চীন- তাইওয়ান, চীন- ফিলিপাইন বা চীন-ইন্দোনেশিয়া বা থাইল্যান্ড তার পেছনে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘ সক্রিয় থাকে।

Manual1 Ad Code

চীন হয়তো দক্ষিণ চীন সাগরে যুদ্ধ বা শুল্ক যুদ্ধ সামলাতে পারবে কিন্তু বাংলাদেশের মতো গরীব দেশের জন্য তা হবে বিপর্যয়কর।

ভূরাজনীতি, ভূঅর্থনীতি যেমন আর্শীবাদ তেমনি তা অভিশাপও। একমাত্র জাতীয় সংহতিই তা থেকে বাঁচার কিছুটা আশা থাকে কিন্তু দূর্ভাগ্য হলো, আমাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও কূটনীতি এখন নানাভাবে বিভক্ত। হয়তো বাস্তব বিপদ তাকে ঐক্যবদ্ধ করবে। বাংলাদেশে সবাই উন্নয়ন সহযোগী নয় কেউ কেউ তাদের নিজস্ব এজেন্ডা নিয়েও আসে।
#
শরীফ শমশির
লেখক ও গবেষক।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual2 Ad Code