গণতন্ত্র শুধু শাসনব্যবস্থা নয়, একটি সংস্কৃতি: সৈয়দ জে আর মোদাচ্ছের হোসেন

প্রকাশিত: ৮:২৩ অপরাহ্ণ, জুন ৪, ২০২৫

গণতন্ত্র শুধু শাসনব্যবস্থা নয়, একটি সংস্কৃতি: সৈয়দ জে আর মোদাচ্ছের হোসেন

Manual1 Ad Code

নিজস্ব প্রতিবেদক | ঢাকা, ০৪ জুন ২০২৫ : সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ জে আর মোদাচ্ছের হোসেন বলেছেন, গণতন্ত্র আমাদের শেকড়। এটি শুধু শাসনব্যবস্থা নয়, একটি সংস্কৃতি। সবার জন্য সমান সুযোগ, নিরাপত্তা এবং সম্মানের পরিবেশ নিশ্চিত করাই সুশাসনের মূল উদ্দেশ্য।

আজ বুধবার (৪ জুন ২০২৫) জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ইউনিভার্সেল নিউজ এজেন্সি (ইউএনএ) আয়োজিত ‘গণতন্ত্রের পূর্ণাঙ্গ যাত্রা: জরুরি সংস্কার, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও সুশাসন’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

Manual1 Ad Code

বিচারপতি সৈয়দ জে আর মোদাচ্ছের হোসেন বলেন, আমরা এমন একটি নির্বাচন ব্যবস্থা চাই যেখানে প্রত্যেক নাগরিক স্বাধীনভাবে গর্বের সাথে ভোট দিতে পারবে। রাষ্ট্র পরিচালনা যতদিন না দক্ষ ও ন্যায়নিষ্ঠ হয় ততদিন গণতন্ত্র পূর্ণতা পায়না। আমাদের প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা ও শিক্ষানীতি যেন সময়োপযোগী ও ন্যায্যভাবে হয়। সংস্কার মানে কেবল আইন পরিবর্তন নয়। এটা মানুষের মানসিক পরিবর্তন, পরিবর্তন পদ্ধতির উন্নয়ন।

Manual3 Ad Code

সভায় প্রধান আলোচক মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর বলেন, ‘সংস্কারের অজুহাতে শুধু নির্বাচনের কালক্ষেপণ হচ্ছে। মাঠে যদি আর্মি ঠিক থাকে, নির্বাচন কমিশন ঠিক থাকে তবে আমলাতন্ত্রও ঠিক থাকবে। আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা আজ বিরাট হুমকির মুখে। এটা হয়েছে কেবল রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক বিশ্বাসের ঘাটতির কারণে। বিএনপি, জামায়াত আর এনসিপি যদি ঐক্যবদ্ধ থাকে তবেই কেবল বাংলাদেশ পুনর্গঠন সম্ভব।’

Manual6 Ad Code

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা ড. মাহদী আমিন বলেন, সংস্কার ও সুশাসন নিশ্চিত করতে হলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রথম বাহন হলো নির্বাচন। গণঅভ্যুত্থানের মৌলিক কারণ হলো- গত ১৬ বছর এমন একটি সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতায় আঁকড়ে ছিল যার ক্ষমতার উৎস জনগণ ছিল না। যার ক্ষমতার উৎস ছিল রাষ্ট্রযন্ত্রের একাংশ।

তিনি আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করা হয়েছিল। সে প্রতিষ্ঠানগুলো জনগণের অধিকার এবং স্বাধীনতা প্রতিনিয়ত লঙ্ঘন করেছিল। যার কারণে সে রাষ্ট্রব্যবস্থায় দুর্নীতি, দুঃশাসন মাথা ছাড়া দিয়ে উঠেছে। ফ্যাসিবাদের মূল কারণ ছিল ২০১৪ সালের বিনা ভোটে নির্বাচন, ২০১৮ সালে নিশিরাতের নির্বাচন এবং ২০২৪ সালে ডামি নির্বাচন।

মাহদী বলেন, বর্তমান বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সংস্কার হলো রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করা। ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে থেকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা আমরা চাই। এটাই সবচেয়ে জন-আকাঙ্খিত সংস্কার।

Manual1 Ad Code

তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রের মূল অনুষঙ্গগুলোর পরিবর্তন করতে হলে জনগণের ম্যান্ডেটের প্রয়োজন হবে। আজকে যারা সংস্কারের কথা বলছেন ৫ আগস্টের আগে তারা কখনো সংস্কারের কথা বলেনি। সংস্কারের কথা সর্বপ্রথম জনগণের কাছে বিএনপি তুলে ধরেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে বলেন, জাতি যেভাবে জুলাই অভ্যুত্থানে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে আমাদের সে ঐক্য ধরে রাখতে হবে। জনগণের কল্যাণে, নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়িত করতে নির্বাচনের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের দিকে আমাদের যাত্রা করতে হবে। যে জাতি যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে, ৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে, ২৪ এ জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান করেছে সে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবেনা তা আমি বিশ্বাস করিনা।

তিনি আরও বলেন, আমি আনন্দিত এই জন্য যে, আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে অন্তর্বর্তী সরকারের যে বিরোধ তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা চলছে । নির্বাচন ও সংস্কারে কোনো বিরোধ নেই। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। আজকে যে সংস্কার হবে তা হয়তো আগামী ৫০ কিংবা ১০০ বছর পরেও তার পুনরায় সংস্কারের প্রয়োজন হবে। এভাবেই সমাজ, রাষ্ট্র কাঠামোর পরিবর্তন হয়। সমাজ ও রাষ্ট্র এগিয়ে যায়। তাই আমি মনে করি, যেসব সংস্কার অনিবার্য সেগুলো এখনি করে ফেলা যায়।
তিনি আরও বলেন, যারা জুলাই অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করেছে সবার মধ্যেই দেশপ্রেম আছে। অন্তর্বর্তী সরকার যেন নিরপেক্ষতা না হারায়। তবেই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ইউএনএ-এর প্রধান সম্পাদক ড. মাহবুব হাসান। এতে সাবেক আইজিপি আশরাফুল হুদা, সাবেক সচিব ইসমাঈল জবিউল্লাহ, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামরুল আহসান, নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সাংবাদিক আবু রুশদ, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক এম আব্দুল্লাহ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি শহিদুল ইসলাম, জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব আলাউদ্দিন এবং মানবাধিকার কর্মী সাইয়েদ আবদুল্লাহও বক্তব্য দেন।

 

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual4 Ad Code