সিলেট ১৪ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:৩৮ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ৮, ২০২৫
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে কি দৃষ্টিতে দেখে! /? কুগেলমেনের বক্তব্য ও কিছু না বলা কথা : বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও তার ভবিষ্যত কোন পথে?
যুক্তরাষ্ট্রের থিংকট্যাংক মাইকেল কুগেলমেন একটা মন্তব্য করেছেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আলোচনা নিয়ে। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র তার নিজের দেশের বাণিজ্য স্বার্থ নিয়েই বাংলাদেশকে দেখে। এটা অনেকটা সত্য। কিন্তু এই সত্যের আরও দিক আছে। সেই দিকগুলো স্পষ্ট হবে যদি যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো- প্যাসেফিক ও বার্মা অ্যাক্টকে মাথায় রেখে বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে দেখে বা দেখতে চায় তা বুঝার চেষ্টা করা হয়। সহজভাবে বললে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে ইন্দো- প্যাসিফিক সমঝোতা বা কোয়াডের সদস্য হিসেবে দেখতে চায়। তার জন্য সে বাংলাদেশের রাজনীতিতেও তৎপর।
যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশকে ঘিরে একক কোনো নীতিমালা নেই। তার পূর্ব নীতিমালার একজন সদস্য হিসেবে সে বাংলাদেশকে চায়। এই চাওয়াটকে যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের আবরণে প্রকাশ করে। যেমন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে বলল, কোয়াডের সদস্য হতে, বাংলাদেশ বলল সে সামরিক জোটে যাবে না। কোয়াডের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে থাকবে। আন্তর্জাতিক রাজনীতির খবরাখবর যারা রাখেন তারা জানেন, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের অগ্রসরকে ঠেকাতে চায়। এটা হলো চীনবিরোধী একটা ছদ্ম সামরিক জোট যারা চীনের বেল্ট এন্ড রোড প্রকল্পকে চ্যালেন্জ করবে। এখানে ভারতও একটা গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। অন্যদিকে বাংলাদেশের সমস্যা হলো সে কোনো যুদ্ধ জোটে যেতে পারে না। ভারতের সাথে তার রয়েছে দীর্ঘ সীমান্ত, চীনের সাথে রয়েছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক, জাপানের সাথে রয়েছে বিনিয়োগের সম্পর্ক এবং বিশ্বব্যাঙ্ক ও আইএমএফের মাধ্যমে ইউরোপ আমেরিকার সাথে সম্পর্ক। তাই বাংলাদেশকে বাগে আনতে সে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টা সামনে আনে এবং বিশ্ব একসময় তাদের পক্ষে চলে যায়। ভারত ও চীন বাংলাদেশের সরকারকে রক্ষা করতে পারলো না। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ডান- বাম এক হয়ে রেজিম চেইঞ্জ করলো। এটা রাজনীতির ভাষায় গণঅভ্যুত্থান বা বিপ্লব। এই রেজিম চেইঞ্জের সময় যুক্তরাষ্ট্রের সফলতা হলো তারা জামাত- বাম সবাইকে ফ্যাসিবাদ বিরোধী প্লাটফরমে ঐক্যবদ্ধ করতে সক্ষম হয়। যুক্তরাষ্ট্র তার এদেশীয় এনজিওগুলোকেও কাজে লাগায়। একটা সিভিল সোসাইটি অভূত্থানও হয়। এই অভূত্থানে গত সরকার অত্যধিক বল প্রয়োগ করায় জাতিসংঘের হিসেবে প্রায় দেড় হাজার মানুষ নিহত হয় এবং কয়েক হাজার মানুষ গুরুতর আহত হয়।
এখন রাজনীতি অন্তবর্তী সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে। প্রশ্ন হলো গণতন্ত্রের পথে কি? এখানেও যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা দেখা যাচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার যুক্তরাষ্ট্রের এজেন্ডাকে সামনে এনেছে। পরিবেশের প্রশ্নে সেন্টমার্টিন, করিডোরের প্রশ্নে টেকনাফ ও নানা বিষয়ে জাতিসংঘের সম্পৃক্ততা। এটা সরল মনে হলেও রাজনীতির সার এখানে।
তাহলে দেশের অভ্যন্তরে দেখা যাক। এখানে ঐকমত্য কমিশন গত কয়েক মাস ধরে যে রাজনৈতিক প্রশ্নকে সামনে এনেছে তারজন্য একটা নির্বাচিত সংসদ দরকার। বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলো এই বিষয়ে একমত যে, নির্বাচন মূল ইস্যু হওয়া দরকার। এছাড়াও, সংস্কারের প্রশ্নে কতটুকু এই কমিশনের এক্তিয়ার আছে তার আলোচনা চলতেই থাকবে। জুলাই সনদ বা জুলাই ঘোষণার পর তা হয়তো পরিস্কার হবে। আপাতত বলা যায় রাজনীতির মূল দাঁড় অন্তর্বতী সরকারের হাতে আছে। যাদের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি যোগাযোগ হয়। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরাসরি প্রধান উপদেষ্টার সাথে ফোনে কথা বলেন। সেখানে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের বিষয়ে জোর দেওয়া হয়। যাইহোক, বাংলাদেশের গণতন্ত্র যদি যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থকে সমুন্নত রাখে তবে তারা বাংলাদেশকে সহযোগিতা করবে নতুবা আবারও মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের কথা বলে চেইঞ্জ আনার চেষ্টা করবে। বিএনপি এখন তাই দেশের রাইট ট্রাকের জন্য নির্বাচনকেই প্রধান মাধ্যম মনে করছে। এটার পথ কতটুকু সুগম হয় তা দেখার অপেক্ষায় থাকতে হবে।
#
শরীফ শমশির
লেখক ও গবেষক।
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by ওয়েব নেষ্ট বিডি