ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামী ও কিংবদন্তি মহানায়ক বিরসা মুন্ডা লাল সালাম

প্রকাশিত: ১২:৩৬ পূর্বাহ্ণ, জুন ৯, ২০২২

ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামী ও কিংবদন্তি মহানায়ক বিরসা মুন্ডা লাল সালাম

Manual6 Ad Code

সৈয়দ অামিরুজ্জামান |

“আমার অরণ্য মাকে কেউ যদি কেড়ে নিতে চায়, আমার সংস্কৃতিকে উপেক্ষা করে কেউ যদি অন্য সংস্কৃতি চাপিয়ে দেয়, আমার ধর্মকে কেউ যদি খারাপ বা অসভ্য ধর্ম বলে, আমাকে কেউ যদি শুধু শোষণ করে নিতে চায় তবে আমি বিদ্রোহ করবই।”
– বিরসা মুন্ডা
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামী, আদিবাসী আন্দোলনের অন্যতম কিংবদন্তি মহানায়ক কমরেড বিরসা মুণ্ডার ১২২তম শাহাদাৎ বার্ষিকী অাজ।

Manual3 Ad Code

ক্ষণজন্মা বিপ্লবী নেতা কমরেড বিরসা মুণ্ডার জন্ম ১৮৭৫ সালের ১৫ নভেম্বর। আদিবাসীদের নিজস্ব জীবনের জন্য যিনি লড়াই করে জীবন দিয়েছিলেন। আদিবাসীদের ন্যায্য অধিকারের জন্য যিনি বন্দুক-কামানের বিরুদ্ধে ছোট্ট তীর-ধনুক দিয়ে যুদ্ধ করেছিলের সেই কিংবদন্তি ও উলগুলানের (বিদ্রোহ) মহানায়ককে আদিবাসীরা ভগবান বিরসা বলেই মানে।
১৮৯৫-১৯০০ সালে সংঘটিত মুণ্ডা বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন তিনি।
ব্রিটিশ শাসন আমলে ভারতের ছোট নাগপুর এবং এর আশপাশ এলাকায় মুণ্ডা আদিবাসীদের ঘনবসতি ছিল। বন-জঙ্গল পরিষ্কার করে চাষাবাদের জন্য জমি তৈরি করেছিল সহজ-সরল মুণ্ডারা। কিন্তু তাদের ভূমিতে তাদেরই সবাই ঠকাতে শুরু করল। নেমে এলো অত্যাচার-নির্যাতন। ইংরেজ শাসক, জমিদার,মহাজন_ সবাই শোষণ শুরু করেছিল। খ্রিস্টান মিশনারিরাও প্রথমেই গরিব আদিবাসীদের টার্গেট করে। প্রথমে কয়েকজন ধর্মান্তরিত মুণ্ডা অত্যাচার, শোষণের বিরুদ্ধে খ্রিস্টান মিশনে অভিযোগ জানায়। কিন্তু ফল হয়নি। বয়সপ্রাপ্ত হয়ে বিরসা মুণ্ডাদের মুক্তির স্বপ্ন দেখাতে থাকেন। মুণ্ডাদের বলেন, ‘আমি তোমাদের নতুন ধর্ম শেখাব। আমি তোমাদের মরতে আর মারতে শেখাব।’ বিরসার নাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে লাগল এবং বিরসার মন্ত্রে দীক্ষিতরা পরিচিত হতে থাকল ‘বিরসাইত’ নামে। বিরসার কর্মকাণ্ডে ইংরেজ সরকার নড়েচড়ে বসে এবং তিনি গ্রেফতার হন। পরে মুক্তি পেয়ে ফের বিদ্রোহের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন।
ষড়যন্ত্রে ভীত ব্রিটিশরা ১৮৯৫ সালে বিরসাকে দুবছরের জন্য কারারুদ্ধ করে। কিন্তু বিরসা আরও বেশি বিপ্লবী চেতনা নিয়ে জেল থেকে বেরিয়ে আসেন। ১৮৯৮-৯৯ সালে গভীর জঙ্গলে একাধিক নৈশসভা অনুষ্ঠিত হয়। এসব সভায় বিরসা ঠিকাদার, জায়গিরদার, রাজা, হাকিম আর খ্রিস্টানদের হত্যা করার জন্য তাঁর অনুসারীদের প্রতি আহবান জানান।
বিপ্লবীরা থানা, গির্জা, সরকারি কর্মকর্তা ও মিশনারিদের আক্রমণ করে। ১৮৯৯ এর বড়দিনের প্রাক্কালে মুন্ডারা রাঁচি ও সিংভূম জেলার ছয়টি থানা এলাকার গির্জায় অগ্নি সংযোগের চেষ্টা করে। ১৯০০ সালের জানুয়ারি মাসে তারা থানাগুলি আক্রমণ করে। ইতোমধ্যে গুজব রটে যে, ৮ জানুয়ারি তারা রাঁচি আক্রমণ করবে। এতে সেখানে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়।

১৮৯৯ সালে বিরসাইতদের নিয়ে শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রথম আঘাত হিসেবে স্থানীয় খ্রিস্টান মিশনগুলোতে হামলা ও অগ্নি সংযোগ করেন। এ সময় বেশ কিছু ইংরেজ সাহেব, মিশনারি, পুলিশ, চৌকিদার হতাহত হয়। বিরসা জানতেন ইংরেজ ও খ্রিস্টান মিশনারি সাহেব আলাদা নয়। সাদারা কালোদের বন্ধু হতে পারে না। বলেছিলেন, ‘মিশনারি আর অফিসার সবাই এক জাত। সাহেব সাহেব এক ট্যোপি হ্যায়।’ ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী বিদ্রোহ দমনের জন্য সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় ১৯০০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি বিরসা মুণ্ডা ধরা পড়েন এবং রাঁচি জেলে ১৯০০ সালের ৯ জুন মৃত্যুবরণ করেন।

ব্রিটিশদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের পরে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় ১৯০০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি বিরসা মুন্ডাসহ তাঁর শতাধিক সঙ্গী গ্রেপ্তার হন। বিচারে তাঁর ফাঁসির হুকুম হয়। ফাঁসির আগের দিন অর্থাৎ ৯ই জুন ১৯০০ সালে বিষ্ময়করভাবে রাঁচি জেলের অভ্যন্তরে খাদ্যে বিষ প্রয়োগের ফলে তাঁর মৃত্যু ঘটে। ধৃত অন্যান্য দুজনের ফাঁসি, ১২ জনের দ্বীপান্তর এবং ৭৩ জনের দীর্ঘ কারাবাস হয়।

Manual6 Ad Code

বিরসার অভীষ্ট উদ্দেশ্য ছিল :
* ধর্মীয় ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা। * জমির প্রকৃত মালিক হিসেবে মুন্ডাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ছিল তাঁর মূল লক্ষ্য। * বিরসার মতে ইউরোপীয়দের প্রভাবমুক্ত পৃথিবীতেই শুধু এ অধিকার প্রতিষ্ঠিত হতে পারে এবং * তারই জন্য দরকার মুন্ডারাজ।

Manual1 Ad Code

ইংরেজ শাসকদের কামান-বন্দুকের কাছে বিরসার তীর-ধনুক পরাজিত হয়েছিল ঠিকই কিন্তু মুণ্ডা জাতিগোষ্ঠীর তথা আদিবাসীদের মুক্তির স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন বিরসা মুণ্ডা।

Manual6 Ad Code

সাহিত্যে

মহাশ্বেতা দেবীর জনপ্রিয় উপন্যাস ‘অরন্যের অধিকার’ শহীদ বীরসা মুন্ডার জীবন নির্ভর।
#
সৈয়দ আমিরুজ্জামান,
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট;
বিশেষ প্রতিনিধি, সাপ্তাহিক নতুনকথা;
সম্পাদক, আরপি নিউজ;
সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, মৌলভীবাজার জেলা;
‘৯০-এর মহান গণঅভ্যুত্থানের সংগঠক

সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রী।
E-mail : rpnewsbd@gmail.com
মুঠোফোন: ০১৭১৬৫৯৯৫৮৯

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual4 Ad Code