শ্রীমঙ্গলে সিলিকা বালু উত্তোলনের প্রতিবাদে এলাকাবাসীর সংবাদ সম্মেলন

প্রকাশিত: ২:০০ অপরাহ্ণ, জুন ২২, ২০২৩

শ্রীমঙ্গলে সিলিকা বালু উত্তোলনের প্রতিবাদে এলাকাবাসীর সংবাদ সম্মেলন

বিশেষ প্রতিনিধি | শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার), ২২ জুন ২০২৩ : উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে নির্বিচারে সিলিকা বালু উত্তোলনের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে এলাকাবাসী।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার লামুয়া মৌজার সুমাইছড়া পাহাড়ি ছড়ার ৫ থেকে ৭টি পয়েন্ট থেকে বালু উত্তোলন করায় সরকারী ব্রীজ, কবরস্থান, শ্মশানঘাট, বসত বাড়ি ও বিস্তীর্ণ ফসলি জমি ক্ষতির মুখে পড়েছে। একইসাথে গ্রামীণ কাঁচা পাঁকা সড়কে ট্রাকযোগে বালু পরিবহনে গ্রামীন সড়ক ও অবকাঠামো মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। পরিবেশ আইনের তোয়াক্কা না করে নির্বিচারে মূল্যবান ও উত্তোলন নিষিদ্ধ-এই খনিজ সম্পদ উত্তোলনে দেশের আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি এলাকার পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে ও জীববৈচিত্রের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
এলাকাবাসীর পক্ষে মৃত আব্দুছ ছোবহানের ছেলে ফরমান মিয়া (৭২) অদ্য বৃহস্পতিবার (২২ জুন ২০২৩) শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে ফরমান মিয়া বলেন, কালাপুর এলাকার প্রভাবশালী হিসেবে চিহ্নিত আসকর মিয়ার পুত্র আবরু মিয়া দীর্ঘদিন যাবত সিলিকা বালু উত্তোলন করে আসছে। স্থানীয় ইজারাদার লামুয়া এলাকায় একটি বালু মহাল ইজারা বন্দোবস্ত নিয়ে তিনি নির্ধারিত মহাল ছাড়াও এই ছড়ার বিস্তীর্ণ ৫ থেকে ৭টি পয়েন্ট থেকে দিনেরাতে মূল্যবান সিলিকা বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছেন। বালু উত্তোলনের স্থানগুলোর মধ্যে সরকারী ব্রীজ, কবরস্থান, শ্মশ্বানঘাট, বসতবাড়ি ও ফসলি জমি রয়েছে। এনিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ ও চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
তিনি বলেন, বিভিন্ন সময় স্থানীয় মেম্বার চেয়ারম্যানকে মৌখিকভাবে ও জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু কোন কার্যকরি পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। প্রশাসনের এই নিরবতার সুযোগে আবরু মিয়া কোন কিছুর পরোয়া না করে পাহাড়ি এই ছড়ার বিস্তুীর্ণ এলাকাজুড়ে সিলিকা বালু উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে। এ পরিস্থিতিতে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে আমি ফরমান মিয়া বাদী হয়ে গত ১৩ ফেব্রুয়ারী মহামান্য হাইকোর্টে বালু উত্তোলন বন্ধ করার নিমিত্তে একটি রিট পিটিশন দায়ের করি। রিট পিটিশন নং ৫৯৩৫/২৩। এতে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ের সচিব, মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক, শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ ৮জনকে বিবাদী করা হয়।
রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট যৌথ ব্রেঞ্চ গত ৪ জুন এক আদেশে বালু উত্তোলনের উপর ৬০ দিনের স্থিতাবস্থা বজায় রেখে জবাব দাখিলের জন্য মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ প্রদান করেন। হাইকোর্টের রায় প্রকাশের পরও উক্ত আবরু মিয়া ও তার লোকজন উচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য করে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে। এনিয়ে এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এলাকায় বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও উচ্চ আদালতে রিটসহ সরকারী বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করায় বালু উত্তোলনকারী আবরু মিয়া ও তার লোকজন বিভিন্ন সময় আমাকে ও আমার লোকজনদের বিরুদ্ধে শ্রীমঙ্গল থানায় চাঁদাবজির অভিযোগ দায়ের করে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সন্ধিপ কুমার বলেন, ইতিপূর্বে এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কিছু ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল।
শিগগির সার্ভেয়ার পাঠিয়ে ইজারাদারের বালু উত্তোলনের স্থান চিহ্নিত করে দেয়া হবে বলে তিনি জানান।
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম সাংবাদিকদের জানান, এ সংক্রান্ত কাগজপত্র হাতে পেলে তা দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সাংবাদিক সম্মেলনে স্থানীয় মুরুব্বীগণ ও এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন।