সপরিবারে রাজ্য ত্যাগ করতে হয়েছিল গোপাল ভাঁড়কে

প্রকাশিত: ৪:৪৭ অপরাহ্ণ, জুলাই ৩, ২০২৩

সপরিবারে রাজ্য ত্যাগ করতে হয়েছিল গোপাল ভাঁড়কে

Manual3 Ad Code

অবন্তী |

নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা কেন গোপাল ভাঁড়কে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দিয়েছিলেন? ইতিহাস ভুলে যায় ইতিহাসকে, ইতিহাস হারিয়ে যায় ইতিহাসে।

Manual2 Ad Code

ইন্ডিয়া সাব কন্টিনেন্ট_-১
হাস্যরসিক গোপাল ভাঁড়ের নাম শুনেনি পৃথিবীতে এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। Sonny Aath কর্তৃক প্রচারিত কার্টুন অথবা বায়োবৃদ্ধদের মুখে শোনা গল্পগুজবের মাধ্যমে গোপাল ভাঁড়কে চেনা। আবার কেউবা তার অস্তিত্বের সঠিক ইতিহাস ঘেটে তার নামযশ ও ভাড়ামি সম্বন্ধে অবগত।
তিনি কৃষ্ণনগরের(পশ্চিমবঙ্গের অধিভুক্ত ঐতিহাসিক স্থান) রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সভাসদ ছিলেন। অত্যন্ত রসিক মানুষ ছিলেন বলে তৎকালীন সময়ে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সবার প্রিয় ব্যক্তি ছিলেন গোপাল। তিনি কবি ছিলেন। মিলানসাগর নামক তার কবিতা আছে। ভাঁড়ামি আর বুদ্ধির খেল দেখিয়ে তিনি রাজপ্রাসাদের সবার মন জয় করেছিলেন। মোটকথা, কৃষ্ণচন্দ্রের রাজসভা ও কৃষ্ণনগরের জনগনের যাবতীয় বিনোদনের আস্ত এক ভান্ডার ছিলেন বুদ্ধিমান গোপাল। কিন্তু এত প্রিয় মানুষ হয়েও এই বাংলাতে তার ঠাই হয়নি।
সালটা ছিল ১৭৫৭। তরুণ নবাব সিরাজ তখন বাংলা প্রেসিডেন্সি (বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ), বিহার ও উড়িষ্যার নবাবি করতেন। তখন মীর জাফর, ঘষেটি বেগম, জগৎ শেঠ, রায় দূর্লভ, উমিচাঁদরা নবাবকে সিংহাসনচ্যূত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত। তারা প্রত্যেকেই তাদের হীনস্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে শর্তসাপেক্ষে ইংরেজ বণিকদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়। ঠিক এই সময় কৃষ্ণনগরের রাজা কৃষ্ণচন্দ্র নবাব বিরোধী এই ভয়ঙ্কর বলয়ে যোগদান করেন। কৃষ্ণচন্দ্রের সকল সভাসদ তার যোগদানকে সমর্থন করলেও শুধু একজন ব্যক্তি সমর্থন করলেন না। আর সেই ব্যক্তিটি হল গোপাল ভাঁড়।
গোপাল কৃষ্ণচন্দ্রকে বোঝাতে লাগলেন। নিজ দেশের নবাবের বিরুদ্ধে গিয়ে ইংরেজদের সাহায্য করতে মানা করলেন। তিনি বললেন,”ইংরেজরা গায়ে সুচ হয়ে ঢুকে কুড়াল হয়ে বের হবে। তাদের স্বাঃর্থ-বিরোধী কাজ করলে আপনার সকল উপকারের কথা ভুলে আপনাকে শূলে চড়াতে পিছপা হবেনা।”
সর্বোপরি, গোপাল বাংলা মায়ের এমন সর্বনাশ না করতে কৃষ্ণচন্দ্রকে বার বার অনুরোধ করলেন।
কিন্তু কৃষ্ণচন্দ্র তার কথায় কর্ণপাত করলেন না বরং তার সভাসদদের নিয়ে গোপালকে বিদ্রুপ করতে লাগলেন। কৃষ্ণচন্দ্র গোপালকে শর্ত দিলেন,”গোপাল, যদি তুমি নবাবকে মুখ ভেংচি দিয়ে আসতে পারো তবে আমি এমন সিদ্ধান্ত থেকে বিরত থাকবো।”
গোপাল কৃষ্ণচন্দ্রের রাজদরবার থেকে বিদায় নিয়ে ছুটলেন মুর্শিদাবাদের দিকে। কিন্তু নবাবের হীরাঝিল প্রাসাদ (বর্তমানে নদীগর্ভে বিলীন) রক্ষিরা কিছুতেই ভিতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছিলেন না। উপায় খুঁজে না পেয়ে গোপাল এক রক্ষির হাতে কামড় বসিয়ে দিলেন। ফলশ্রুতিতে, প্রাসাদ-রক্ষি গোপালকে ধরে নিয়ে
নবাবের কাছে গেলেন।
সব শুনে নবাব বললেন,”কে তুমি?
কোথায় থেকে এসেছো? আমাকে কি প্রয়োজন?”।
গোপাল কোনো কথা না বলে নবাবকে মুখ ভেংচি দিলেন।
নবাব ভাবলেন, কি ব্যাপার?
গোপাল আবারও ভেংচি দিলেন।
নবাব গোপালকে আটক করলেন। বললেন, আগামীকাল তোমার বিচার হবে।
এরই মধ্যে গোপাল মীরজাফরকে বললেন, “আমি এসেছিলাম তোমাদের সকল ষড়যন্ত্র ফাঁস করে দিতে। কিন্তু আমি কিছু বলবোনা। কারণ এই ষড়যন্ত্রের কথা ফাঁস করে দিলে কৃষ্ণচন্দ্রও ফেঁসে যাবে। নবাব তাকে সরিয়ে অন্যজনকে ক্ষমতায় বসাবেন। আমি চাইনা কৃষ্ণচন্দ্র তার ক্ষমতা হারাক। কারণ তিনি যে আমার অন্নদাতা, পরমান্নদাতা”।
মীরজাফর তার এমন কথা শুনে রীতিমত ঘাবড়ে গেল। সে নবাবকে জানালো যে গোপাল তাকে শয়তান বলে গালি দিয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব তার ফাঁসির ব্যবস্থা করা হোক।
পরদিন সকালে গোপালের ফাঁসির ব্যবস্থা করা হল। কিন্তু গোপালের মাঝে কোনও পরিবর্তন দেখা গেল না। নবাব গোপালের মুখের দিকে তাকাতেই গোপাল আবার ভেংচি দিলো। এবার নবাব রীতিমত ভাবনায় পরে গেল। নবাব ভাবলেন,’ এত দেখছি বড্ড পাগল। পাগলকে ফাঁসি দেওয়া ঠিক হবেনা।’ নবাব কবিরাজকে ডেকে বললেন,”দেখুন তো, এ পাগল কিনা?”।
কবিরাজ রায় দিল, এ এক উন্মাদ।
নবাব গোপালকে মুক্ত করে দিলেন।
দেশপ্রেমিক গোপাল ফিরে এলেন কৃষ্ণ নগরে। যখন জানতে পারলেন কৃষ্ণচন্দ্র তার সিদ্ধান্তে অটল গোপাল ঠিক করলেন কৃষ্ণচন্দ্রের সভায় আর যাবেন না। গোপাল এও ঠিক করলেন যে তিনি এই কৃষ্ণনগরে আর থাকবেন না। অত্যন্ত ব্যথিত মন নিয়ে কাউকে কিছু না বলে রাতের অন্ধকারে সপরিবারে রাজ্য ত্যাগ করলেন গোপাল ভাঁড়।এরপর থেকে সদাহাস্যময় গোপাল ভাঁড়কে বাংলায় আর দেখা মেলেনি।
পরবর্তীতে দেশদ্রোহী ও অত্যাচারী রাজা কৃষ্ণচন্দ্র এবং বেঈমান মীরজাফররা ইংরেজদের পা চাটা গোলামে পরিণত হয়েছিল।

Manual7 Ad Code

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual8 Ad Code