প্রাচীন দেবতারা কোথায় হারিয়ে গেল?

প্রকাশিত: ৫:১৮ অপরাহ্ণ, জুলাই ২২, ২০২৩

প্রাচীন দেবতারা কোথায় হারিয়ে গেল?

Manual5 Ad Code

মুজীব রহমান |

প্রাচীন সভ্যতাগুলোর মধ্যে একটি মজার মিল লক্ষ্য করা যায়- সেখানে কোন না কোন ধর্মবিশ্বাস ছিল। তাদের প্রধান প্রধান দেবতা ছিল। প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতায় ছিল সূর্যদেব আতেন, বেবিলনীয় সভ্যতায় ছিল মারদুক, ভারতীয় সভ্যতায় ছিল ইন্দ্র, ইনকা সমাজে রাজা ছিলেন সূর্যদেবতা ইনটির প্রতিনিধি, মায়া সভ্যতায় সৃষ্টির দেবতা ইটজাম্না, গ্রীক সভ্যতায় ছিল জিউস, রোমানদের প্রধান দেবতা ছিল জুপিটার।

প্রাচীন সভ্যতার বিলুপ্তির সাথে সাথে হারিয়ে গেছে প্রতাপশালী সেই দেবতারাও। ইন্দ্র টিকে থাকলেও তিনি আর প্রধান দেবতা নন। হিন্দু ধর্মের আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ দেবতা ছিলেন- বলরাম, কুবের, বরুণ, ব্রহ্মা, যম, অগ্নি, ধন্বন্তরি, ধরিত্রী ইত্যাদি যারা আজ আর পূজিত হন না।

Manual2 Ad Code

প্রধান দেবতা ছাড়াও আরো অসংখ্য দেবতা ছিল। প্রেম-ভালবাসা থেকে শুরু করে জীবন, খাদ্য, বৃষ্টি সবকিছুরই দেবতা ছিল। দেবতাদের খুশি রাখতে সবখানেই থাকতো ক্ষমতাধর পুরোহিত শ্রেণি। তাদের ইচ্ছায় রক্ষা পেত ফসল, সন্তান, সাম্রাজ্য … ! শেষ পর্যন্ত কোন দেবতাই কোন সভ্যতা টিকিয়ে রাখতে পারেননি। বাহিরের কোন কারণেই সভ্যতাগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে একইসাথে হারিয়ে গেছে কাল্পনিক দেবতারাও।

Manual8 Ad Code

প্রাচীন রোমান সভ্যতায় ছিল প্যাগান ধর্ম অর্থাৎ দেবতাদের আরাধনা করা ধর্ম। কিছু নমুনা এখনো পাওয়া যায় যেমন তাদের দেবতা ছিল সানগড। সানগড থেকেই সানডে এসেছে আর তারা সানডেকেই বানিয়ে নিয়েছে উপাসনার দিন।

Manual2 Ad Code

প্যাগান ধর্মের উৎসব থেকেই এসেছে ভ্যালেনটাইন ডে যা ১৪ ফেব্রুয়ারি পালন করা হয়। যিশু খৃস্টের মৃত্যুর কয়েকশ বছর পর্যন্ত খৃস্ট ধর্মের প্রসার ছিল না। রোমানদের কাছে প্যাগান দেবতাদের ফাঁক গলে খৃস্ট ধর্ম পৌঁছাতে পারেনি।

বার বার দাস বিদ্রোহ রোমান রাজাদের ভিন্ন কিছু ভাবতে বাধ্য করে। শেষে তারা মনে করলো একেশ্বরবাদী খৃস্ট ধর্মে দাসদের আসক্ত করাতে পারলেই দাস বিদ্রোহ দমানো সম্ভব হবে। রাজা কনস্টান্টাইনের সেই প্রচেষ্টা সফল হওয়াতেই খুবই শক্তি নিয়ে আবির্ভূত হল খৃস্ট ধর্ম যা আজ পৃথিবীর এক তৃতীয়াংশ মানুষের ধর্ম।

Manual1 Ad Code

খৃস্টপূর্ব সাড়ে তিন হাজার বছর আগে মিশরে একজন ফারাও শাসক নিজেকে ঈশ্বর ঘোষণা দিয়ে সমস্ত দেবতাদের বাতিল করে দেন। তিনি মন্দির ও রাজ্যের সকল দেব দেবীদের মূর্তি ধ্বংস করে তাদের পূজা করা বন্ধ করে দেন। মানুষ গোপনে তখনও তাদের পুর্বের দেব দেবীদের কাছে প্রার্থনা করতে থাকেন। রাজার মৃত্যুর পর মানুষ তাদের পুরাতন দেব দেবীদের মূর্তি উপাসনা আবারো প্রকাশ্যে শুরু করে। মন্দির গুলিতে ফিরে আসে দেবতারা। তবু বলতে পারি একেশ্বরবাদের একটা ধারণা তৈরি হয়েছিল।

বর্তমান ইসলাম পূর্ব আরবের মক্কা নগরীতে প্যাগান ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে অনেক দেব দেবীদের মধ্যে একজন প্রধান দেবতা ছিল। প্যাগানদের প্রধান দেবতা থাকতো একজনই এবং সহ দেবতা থাকতো অনেক। মক্কার কাবা ঘরে সর্বোমোট ৩৬০টি মূর্তি ছিল। প্যাগান ধর্মাবলম্বীদের দেব দেবী ছাড়াও এখানে একত্রে বেশ কিছু ধর্মের মানুষ তাদের পূজা অর্চনা করতো। পরবর্তিতে ওই প্যাগান ধর্মাবলম্বীদের উচ্ছেদ করার মাধ্যমে একেশ্বরবাদী ধর্মের প্রচার শুরু হয় এবং আস্তে আস্তে আরবে ইসলাম বাদে সব ধর্মই প্রায় বিলীন হয়ে যায়। দেবী লাত, উজ্জাসহ সবাই হারিয়ে যায়।

খৃস্টানরা সারা পৃথিবী জুড়ে কলোনী গড়ে তুললে স্থানীয় লৌকিক ও প্যাগান ধর্মগুলো বিপাকে পড়ে। খৃস্টান মিশনারীরা ছলে বলে কৌশলে তাদের ধর্মান্তরিত করে ফেলেন। ফলে ইউরোপ থেকে, ল্যাটিন আমেরিকা, আফ্রিকা, অষ্ট্রেলিয়ায় ছড়িয়ে যায় খৃস্ট ধর্ম। সমস্যা হয় আরবে। এখানে খৃস্ট ধর্মের চেয়ে আধুনিক একই রকম আরেকটি ধর্ম জোরালোভাবেই বসে ছিল। ফলে খৃস্ট ধর্ম এখানে হানা দিতে পারে নি। ভারতে তখন ইসলাম গ্রাস করছিল স্থানীয় ধর্মকে। সেটা চলমান থাকাকালীণ সময়ে আসে খৃস্টান ধর্ম। ভারতে ইউরোপীয়ানরা আসে মূলত ব্যবসা করতে। প্রথম শত বছর পরে যখন বৃটিশ শাসনে ভারত আসে তখন ইউরোপে খৃস্ট ধর্মের বিরুদ্ধেই শুরু হয়ে যায় ব্যাপক প্রচারণা। মানুষ বিজ্ঞান মনস্ক হয়ে উঠছিল। সেই দ্বন্দ্ব সংঘাতে খৃস্ট ধর্ম প্রচারে আর জোর আসেনি। ব্যহত হয় ইসলামের প্রসারও। তাই টিকে যায় বৈদিক/সনাতন ধর্ম যা আজ হিন্দু ধর্ম নামেই পরিচিত। ভারত বর্ষে একেক রাজ্যের মানুষ একেক দেবতাকে প্রধান ধরে পূজা করলেও তারা সকলেই হিন্দু। আবার তাদের মাঝ থেকেও হারিয়ে গেছে শত শত দেবতা। কেন ও কোথায় হারিয়ে গেল এতো দেবতা?

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code