সিলেট ১৪ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৯:৫৯ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ১৩, ২০২৪
নিজস্ব প্রতিবেদক | দিনাজপুর, ১৩ মার্চ ২০২৪ : দিনাজপুর জেলার কাহারোল উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের নয়াবাদ মিস্ত্রিপাড়া গ্রামে অবস্থিত ঐতিহাসিক এ নয়াবাদ মসজিদ।
জনশ্রুতি রয়েছে, আজ থেকে প্রায় তিনশ’ বছর পূর্বে গত ১৭২২ সালে তৎকালীন দিনাজপুর মহারাজা প্রাণনাথ বর্তমান কাহারোল উপজেলার কান্তনগর গ্রামে একটি মন্দির নির্মাণের জন্য মধ্যপ্রাচ্য (খুব সম্ভবত মিসর) থেকে একদল কারিগর নিয়ে আনেন।
কারিগরদের সবাই মুসলমান ও ধর্মপ্রিয় ছিলেন। মন্দির নির্মাণ কাজে এসে ভুলে যায়নি নিজ ধর্ম পালন করতে।
নির্মাণকালীন সময় মন্দিরের পাশেই খোলা আকাশের নিচে নামাজ আদায় করতেন তারা। এরই মধ্যে কারিগরদের প্রধান (হেডমিস্ত্রি) নেয়াজ ওরফে কালুয়া মিস্ত্রি মহারাজার দরবারে গিয়ে সব মিস্ত্রিদের থাকা ও ধর্ম পালনের নিমিত্তে একটি মসজিদ নির্মাণের জায়গা চান।
এ সময় মহারাজা মন্দির থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরত্বে ঢেপা নদীর পশ্চিম কোল ঘেষে অবস্থিত নয়াবাদ গ্রামে ১ দশমিক ১৫ বিঘা জমি মসজিদ নির্মাণের জন্য জায়গা দেন। এ ছাড়া মসজিদের পাশে থাকার বাড়ি করার নির্দেশ দেন মহারাজা।
মহারাজার নির্দেশ মোতাবেক মিস্ত্রিরা মন্দিরের পাশাপাশি নয়াবাদ গ্রামে নিজেদের থাকার বাড়ি ও নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদ নির্মাণ কাজ চালিয়ে যায়। নয়াবাদ মসজিদ নির্মাণের পর তারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতেন সেখানে।
এক পর্যায়ে মহারাজা প্রাণনাথের মৃত্যুর পর তারই দত্তক ছেলে মহারাজা রামনাথের আমলে গত ১৭১৫ সালে মন্দিরের নির্মাণ কাজ শেষ হয়। এরই মধ্যে মন্দিরের পাশাপাশি মসজিদের কাজ শেষ করে মিস্ত্রিরা। মন্দির নির্মাণ কাজে কালুয়া মিস্ত্রির নেতৃত্বে আসা মিস্ত্রিরা মন্দির নির্মাণের কাজ শেষে ফিরে যায় নিজ দেশে। কিন্তু এদেশ ছেড়ে যেতে চায়না নেয়াজ ওরফে কালুয়া মিস্ত্রি ও তার ছোট ভাই নিয়ামুল হক।
আবার নেয়াজ মিস্ত্রি মহারাজার দরবারে হাজির হয়। এবার স্থায়ীভাবে বসবাস ও জীবিকা নির্বাহের জন্য মহারাজার কাছে কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহের জন্য কিছু জমির আবদার করেন। তাৎক্ষণিক মহারাজা কিছু জমি তাদের দুই ভাইকে দান করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মিসরীয় এ দুই ভাই মহারাজার দানকৃত জমিতে ফসল আবাদ করে দিনাতিপাত করেন।
নয়াবাদ মসজিদের ভেতরের দৃশ্য এখনো ওই মিশরীয় দুই ভাইয়ের স্মৃতি কালে সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
গতকাল ১২ মার্চ মঙ্গলবার পবিত্র রমজান মাসের প্রথম রোজা ওই মসজিদে ইফতার কালে গ্রামের মুসল্লিরা এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। তাদের জন্য বর্তমান প্রজন্মের থাকা আত্মীয়-স্বজনেরা মহান আল্লাহ পাকের নিকট দোয়া প্রার্থনা করেন। তাদের আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে একজন হাফেজ মাওলানা মোঃ রায়হানুল ইসলাম গতকাল মঙ্গলবার তারাবির নামাজের পর রাতে মোবাইল ফোনে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, তাদের পূর্ব পুরুষ ওই দুজনের মৃত্যুর পর নেয়াজ ওরফে কালুয়া মিস্ত্রি ও তার ছোট ভাই নিয়ামুল হককে নয়াবাদ মসজিদ সংলগ্ন দাফন করা হয়। এ মিস্ত্রিদের নামনুসারে অত্র এলাকার নাম হয় নয়াবাদ মিস্ত্রিপাড়া। বর্তমানে মন্দির ও মসজিদ নির্মাণের হেড মিস্ত্রি ও তার ছোট ভাইয়ের বংশধররা নয়াবাদ মিস্ত্রিপাড়ায় বসবাস করছে।
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by ওয়েব নেষ্ট বিডি