সিলেট ১৫ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩০শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৫:৪৫ অপরাহ্ণ, মে ৩০, ২০২৪
বিশেষ প্রতিনিধি | ঢাকা, ৩০ মে ২০২৪ : ঢাকার পরিবেশ: পানি, বায়ু এবং শব্দ দূষণ বিষয়ে নীতি, আইনী কাঠামো ও জনআকাঙ্খা শীর্ষক একটি নাগরিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহষ্পতিবার (৩০ মে ২০২৪) সকাল সাড়ে ১১টায় মিনিটে ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ, কাউন্টারপার্ট ইন্টারন্যাশনাল (সিপিআই) এবং ইউএসএআইডি এর যৌথ আয়োজনে সিরডাপ মিলনায়তনে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের বেসরকারি উপদেষ্টা এমএস সিদ্দিকী’র সভাপতিত্বে এবং ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ এর সমন্বয়ক শরীফ জামিল এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত নাগরিক সংলাপে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম।
সংলাপে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ, ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিজনেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো: আজিজুর রহমান এবং রিভার বাংলার সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ।
সংলাপে ঢাকার বায়ু এবং শব্দদূষণ এবং পানি দূষণের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করেন স্ট্যামেফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার; পানি, বায়ু, ও শব্দদূষণের নীতি ও আইনীকাঠামো সম্পর্কে আলোচনা করেন লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ল’এর সহযোগী প্রভাষক গোলাম সারোয়ার।
সংলাপে প্রধান অতিথির আলোচনায় ড. শামসুল আলম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিরূপণে আমরা একশ’ বছরের পরিকল্পনা করেছি যা বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ নামে পরিচিত। বাংলাদেশ পৃথিবীর ৭ম দুর্যোগপ্রবণ দেশ। আমরা ব-দ্বীপ পরিকল্পনায় বলেছি, নদীগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। তাপমাত্রা কমাতে হলে জলাধার সৃষ্টি করতে হবে। পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ছে, ঢাকার তাপমাত্রাও বাড়ছে। সত্তরের দশক এবং গত দশকের তুলনা করলে আমরা দেখতে পাই ঢাকার তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেট বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের আইন, নীতি এবং কৌশলপত্র আছে, কিন্তু তার যথাযথ প্রয়োগ নেই। আইন এবং নীতি বাস্তবায়নে আমাদেরকে কাজ করতে হবে এবং নদীকে বাঁচাতে হলে নদী রক্ষা কমিশনকে অবশ্যই বিচারিক ক্ষমতা দেওয়া উচিত।
এমএস সিদ্দিকী বলেন, আমাদের যথেষ্ট আইন রয়েছে। কিন্তু আইনের ফাঁক-ফোকরও রয়েছে একই সাথে। আমাদের পরিবেশ-নদীকে বাঁচাতে হলে অবশ্যই আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
শরীফ জামিল বলেন, আমাদের নীতিনির্ধারকদের অবশ্যই তাদের মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন আনতে হবে। নদী দূষণের ফলে, বায়ু এবং শব্দ দূষণের ফলে জাতীয় অর্থনীতি এবং জনস্বাস্থ্যের উপর যে প্রভাব পড়ছে তা অবশ্যই আমাদের বিবেচনায় নিয়ে আসতে হবে। নৌযানগুলো অপরিশোধিত বর্জ্য নদীতে ফেলছে। হাজারিবাগ ট্যানারির বর্জ্য এখনো নদীতে গিয়ে পড়ছে আবার বুড়িগঙ্গাপাড়ের অপরিশোধিত শিল্পবর্জ্যও নদীতে গিয়ে পড়ছে সরাসরি। ধলেশ্বরীতে নতুন ট্যানারি শিল্পাঞ্চল দূষণ অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। বুড়িগঙ্গার পানিতে ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়ামের মতো ক্ষতিকর ধাতু পাওয়া গেছে যা অবশ্যই শ্যামপুর ডাইং কারখানাসমূহ থেকে আসে। ঢাকার পরিবেশ দূষণ ঠেকাতে সমন্বিত পরিকল্পনা স্বচ্ছতার সাথে প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন প্রয়োজন।
মোহাম্মদ এজাজ বলেন, আমাদের উন্নয়ন পরিকল্পনায় জনসম্পৃক্ততা নেই। জনসম্পৃক্ততার যে কথাগুলো বলা হয় তা কাগজে কলমে। ২০০৫ সাল থেকে শুরু করে ঢাকা ও ঢাকার আশেপাশে যে শিল্পায়ন হয়েছে তার অধিকাংশ হয়েছে জলাধারের পাশে অথবা জলাধার ভরাট করে। এসময় নীতি তৈরির মাধ্যমে পরিবেশ বিনষ্টের সুযোগ তৈরি করে দেওয়া হয়। শহরের রূপান্তর এবং উন্নয়নের সময় অবশ্যই গণতান্ত্রিক পদ্ধতি মেনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ঢাকা শহরে সবচেয়ে বেশি শব্দ দূষণ হয় জিরো পয়েন্ট এলাকায় যা সচিবালয়ের একশ’ মিটারের মধ্যে। ঘূর্ণিঝড় রেমাল এর পরে বায়ুদূষণের মাত্রা যতটা কমে এসেছিল সেই মাত্রায় আমরা কোভিডকালীন লকডাউনের সময়ও দূষণ কমাতে পারিনি। মের্ট্রোরেলের কাজের কারণেও বায়ু দূষণ বেড়েছে ঢাকায়। আর শীতকালে আমরা সাধারণ সময়ের ১০ গুন বেশি দূষিত বায়ু সেবন করছি।
তিনি আরো বলেন, নদীর পানিতে সাধারণত ৫ এমএল দ্রবীভূত অক্সিজেন থাকার কথা কিন্তু বুড়িগঙ্গার পানিতে বর্ষাকালেও এটা পাওয়া যায় না। আর শুষ্ক মৌসুমে এটা .০৫% এর কম এবং কোথাও কোথাও শূণ্য শতাংশে চলে যায় যার ফলে মাছ এবং জলজ প্রাণী বেঁচে থাকার কথা না।
গোলাম সারোয়ার বলেন, আমরা দূষণের যে ভয়াবহতা দেখতে পাচ্ছি এটাকে আসলে বলা হয় ইকোসাইড। সারা পৃথিবীতে যত ঘৃণিত অপরাধ রয়েছে তার মধ্যে ইকোসাইড অন্যতম। আইন তৈরি হয়েছে দূষণ বন্ধ করতে কিন্তু আদতে একে পরিবেশ ধ্বংসের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে সেই আইনকে ব্যবহার করেই। আমাদের সৃষ্টি করা এই দূষণ এবং পরিবেশ ধ্বংসের কাজগুলো গ্লোবাল ক্লাইমেট ক্রাইসিসকে ত্বরান্বিত করছে।
তিনি আরো বলেন, উন্নয়ন হতে হবে তবে উন্নয়ন এবং পরিবেশের যে দ্বন্দ্ব তাতে অবশ্যই পরিবেশকে প্রাধান্য দিতে হবে।
ফয়সাল আহমেদ বলেন, পরিবেশকে বাঁচাতে হলে রাজনৈতিক দল এবং তাদের নেতৃবৃন্দের অঙ্গীকার জরুরী। ১৯৭০ এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু নদী ও পরিবেশকে যে গুরুত্ব দিয়েছিলেন তা স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরে এসে আমরা আর দেখতে পাই না। ১৯৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে বলা হয়েছে, নদ-নদীগুলো বাংলাদেশের সম্পদ। একে ক্ষমাহীন অবহেলা দেখানো হয়েছে। এর থেকে মুক্তির জন্য নদী গবেষণা ইন্সিটিটিউট গঠন করা হবে।
ড. আজিজুর রহমান বলেন, অনেক আইন হয়েছে, অনেক পলিসি হয়েছে, কিন্তু বৈশ্বিক কার্বন নি:স্বরণ বেড়েই চলেছে। কার্বণ নি:স্বরণে যারা বেশী দায়ী দেশ তাদের পলিসিকে চ্যালেঞ্জ করতে হবে।
এছাড়াও সংলাপে ঢাকার নদী বুড়িগঙ্গা, তুরাগ এবং বালু নদীপাড়ের নাগরিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বুড়িগঙ্গা নদী মোর্চার সদস্য ক্যামেলিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ সেলিম, এসএম জাহাঙ্গীর আদেল, ইশরাত জাহান লতা, উম্মে সালমা, মানিক হোসেন; বালু নদী মোর্চার নেতা ইসরাফিল হাবিব সুমন, আমজাদ হোসাইন, জান্নাতি আক্তার রুমা; এবং তুরাগ নদী মোর্চার নেতা আমজাদ আলী লাল, এবং নিত্য রাজবংশী।
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by ওয়েব নেষ্ট বিডি