চা শ্রমিকদের মধ্যে নারীরা বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে: ফিলিপ গাইন

প্রকাশিত: ৫:০০ অপরাহ্ণ, জুন ২৬, ২০২৪

চা শ্রমিকদের মধ্যে নারীরা বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে: ফিলিপ গাইন

বিশেষ প্রতিনিধি | শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার), ২৬ জুন ২০২৪ : “চা বাগানের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীসমূহ যে দেশের অন্যদের চেয়ে বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে সেকথা বলার অপেক্ষা রাখে না। চা শ্রমিকদের মধ্যে নারীরা বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন। কারণ পাতা তোলা শ্রমিকদের মধ্যে ৯৫ শতাংশের মতো কর্মী নারীরা। এদেরই করতে হয় চা শিল্পের সবচেয়ে কষ্টের কাজ। পাতা তোলার কাজে প্রতিদিন সেকশনে পৌঁছাতে ও বাড়ি ফিরতে তাদের ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত হাঁটতে হয়। পাতা তুলতে হয় সারাদিন দাঁড়িয়ে। একটা সময় পাতা তুলতে তুলতে তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়েন। কর্মস্থলে শৌচাগার ও প্রক্ষালন কক্ষের সংখ্যাও হাতেগোনা। দুপুরে খাবার খেতে হয় খোলা জায়গায়। আর তারা যে খাবার খান তাও পুষ্টিকর নয়।”

বুধবার (২৬ জুন ২০২৪) সকাল ১০টায় শ্রীমঙ্গলে ব্র্যাক লার্নিং সেন্টারে ‘প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার এবং আইনি অধিকার অর্জনে বাংলাদেশের চা শ্রমিকের জীবন দক্ষতা বৃদ্ধি’ শীর্ষক প্রকল্পের সমাপনী প্রতিবেদনে এসব কথা বলেন সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্ট এন্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্টের (সেড) পরিচালক ফিলিপ গাইন।

সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট (সেড) ও ভারতের জাতিসংঘ-ভিত্তিক আইনজীবী সংগঠন নাজদীক কর্তৃক আয়োজিত এ অনুষ্ঠানের মূল বিষয় প্রকল্পে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সনদপত্র প্রদান ও ‘চা বাগানে নারীর সুরক্ষায় প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার সচেতনতা সহায়িকা’ এবং ‘Tea Workers of Bangladesh: Realities and Challenges’ দুটি বইয়ের প্রকাশনা উপস্থাপন করা হয়।

১২ মাসব্যাপী এই প্রকল্পের সমাপনী এবং প্রকাশনা অনুষ্ঠানে শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জের ১০টি চা বাগানের ৩৯ জন প্রশিক্ষণার্থী অংশগ্রহণ করে। প্রশিক্ষণার্থীরা তাদের নিজেদের অবস্থা ও সমস্যার মানচিত্রায়ণ, তাদের জন্য প্রযোজ্য শ্রমমান, শ্রম আইন ও অধিকার সম্পর্কে জানা, যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান এবং গর্ভবতী নারীর সুরক্ষায় করণীয় এবং জরুরি স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার সুযোগ, নিজের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য করণীয়, কমিউনিটির সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সহায়ক এবং সর্বোপরি পুরো প্রশিক্ষণ থেকে পাওয়া শিক্ষা নিয়ে কিভাবে তা নিজেদের ভবিষ্যতে জন্য কাজে লাগানো যাবে সে সম্পর্কে প্রশিক্ষণার্থীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা সহ সূচনা ও সমাপনি বক্তব্য দেন সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্ট এন্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্টের (সেড) পরিচালক ফিলিপ গাইন।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. মোহাম্মদ আবদুল ওয়াজেদ, সাবেক মহা পরিচালক, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য, আরপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট কমরেড সৈয়দ আমিরুজ্জামান, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের (বিসিএসিউ) সহ-সভাপতি জেসমিন আক্তার, ভারতের জাতিসংঘ-ভিত্তিক আইনজীবী সংগঠন নাজদীক এর উপদেষ্টা কাত্যিয়ানী চান্দোলা, চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরি, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শাহেদা আক্তার, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মিতালী দত্ত, বিসিএসইউ এর ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল সহ চা শ্রমিক প্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং সাধারণ চা শ্রমিকরা।

এছাড়া উপস্থিত ছিলেন সেড-এর গবেষক ফাহমিদা আফরোজ নাদিয়া।

এ অনুষ্ঠানের প্রথম সেশনে সেড এর পরিচালক ফিলিপ গাইনের প্রতিবেদনের উপর মতামত পর্বে বেশকিছু সুনির্দিষ্ট সুপারিশ উত্থাপনসহ বক্তব্য দেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য, আরপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট কমরেড সৈয়দ আমিরুজ্জামান। তিনি বলেন, চা বাগানে নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা তারা কাজ বাদ দিয়ে বাইরে স্বাস্থ্যসেবা নিতে পারেন না। এক্ষেত্রে বাগানে বাগানে ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল চেক-আপসহ প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে।

বক্তারা বলেন, “যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া মৌলিক অধিকার এবং শারীরিক ও মানসিক মঙ্গলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নারীর এ অধিকার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদসহ বেশকিছু আন্তর্জাতিক সনদ এবং আইন দ্বারা সংরক্ষিত। চরম দারিদ্র্য, সরকারি স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে সচেতনতা ও জ্ঞানের অভাব, পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে অজ্ঞতা ও অবজ্ঞা, অস্বাস্থ্যকর স্যানিটেশন, অশোভন কর্মপরিবেশ, শ্রম আইন ও শ্রম বিধিমালার যেসব ধারা শ্রমিককে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেয় সেসবের লঙ্ঘন, অপর্যাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মী এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক চর্চাসহ আরও নানাবিধ কারণে বাগানের নারী ও বালিকারা যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং অধিকার থেকে বহুলাংশে বঞ্চিত থাকছে।”