সিলেট ১০ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১১:৫৫ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ৮, ২০২৫
বিশেষ প্রতিনিধি | ঢাকা, ০৮ জানুয়ারি ২০২৫ : রোড সেফটি ফাউন্ডেশন বার্ষিক প্রতিবেদনে বলেছে, ২০২৪ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মানব সম্পদের ক্ষতির আর্থিক মূল্য ২১ হাজার ৮ শত ৮৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা।
বিগত ২০২৪ সালে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৬৯২৭টি। নিহত ৭২৯৪ জন এবং আহত ১২,০১৯ জন। নিহতের মধ্যে নারী ৮৯৩ (১২.২৪%), শিশু ১১৫২ (১৫.৭৯%)। ২৭৬১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ২৬০৯ জন, যা মোট নিহতের ৩৫.৭৬ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৩৯.৮৫ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ১৫৩৫ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ২১.০৪ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৯৮৪ জন, অর্থাৎ ১৩.৪৯ শতাংশ।
এই সময়ে ১১৮টি নৌ-দুর্ঘটনায় ১৫২ জন নিহত, ১৬১ জন আহত এবং ৩৯ জন নিখোঁজ রয়েছেন। ৩৪৭টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ৩২৪ জন নিহত এবং ২৭৭ জন আহত হয়েছেন।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যম এবং সংস্থার নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।
দুর্ঘটনার যানবাহনভিত্তিক নিহতের চিত্র:
দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়- মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ২৬০৯ জন (৩৫.৭৬%), বাস যাত্রী ৩৬৯ জন (৫.০৫%), পণ্যবাহী যানবাহনের আরোহী ৪৯৯ জন (৬.৮৪%), প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস-অ্যাম্বুলেন্স-জীপ আরোহী ৩৬৩ জন (৪.৯৭%), থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান ইত্যাদি) ১৩৯২ জন (১৯.০৮%), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-করিমন-ভটভটি-আলমসাধু-মাহিন্দ্র-টমটম) ৩৩১ জন (৪.৫৩%) এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা আরোহী ১৯৬ জন (২.৬৮%) নিহত হয়েছেন।
দুর্ঘটনা সংঘটিত সড়কের ধরন:
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ২৩৫৭টি (৩৪%) জাতীয় মহাসড়কে, ২৭৩৬টি (৩৯.৪৯%) আঞ্চলিক সড়কে, ৯৭২টি (১৪%) গ্রামীণ সড়কে, ৭৮৪টি (১১.৩১%) শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে ৭৮টি (১.১২%) সংঘটিত হয়েছে।
দুর্ঘটনার ধরন:
দুর্ঘটনাসমূহের ১৫২৭টি (২২%) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ২৯০৮টি (৪২%) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ১৫৬২টি (২২.৫৪%) পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেয়া, ৭৮২টি (১১.২৮%) যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ১৪৮টি (২.১৩%) অন্যান্য কারণে ঘটেছে।
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহন:
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের মধ্যে পণ্যবাহী যানবাহন ২৬.৬৬%, যাত্রীবাহী বাস ১২.৩১%, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-অ্যাম্বুলেন্স, জীপ ৫.৪৪%, মোটরসাইকেল ২৫.২৪%, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান ইত্যাদি) ১৮.৫২%, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন (নসিমন-ভটভটি-আলমসাধু-মাহিন্দ্র-টমটম) ৬.৬২%, বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা ২.৪৯% এবং অজ্ঞাত যানবাহন ২.৬৮%।
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা:
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা ১১,৭৯৬টি। (বাস ১৪৫৩, পণ্যবাহী যানবাহন (ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-ট্রলি-লরি- ট্রাক্টর-ড্রাম ট্রাক-আর্মি ট্রাক-তেলবাহী ট্যাংকার-কার্গো ট্রাক-সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী ট্রাক) ৩১৪৫, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-অ্যাম্বুলেন্স-জীপ ৬৪২, মোটরসাইকেল ২৯৭৮, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-মিশুক ইত্যাদি) ২১৮৫, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন (নসিমন-ভটভটি-আলমসাধু-মাহিন্দ্র-টমটম ইত্যাদি) ৭৮২, বাইসাইকেল-রিকশা ২৯৪ এবং অজ্ঞাত গাড়ি ৩১৭টি।
দুর্ঘটনার সময় বিশ্লেষণ:
সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাসমূহ ঘটেছে ভোরে ৩৮৭টি (৫.৫৮%), সকালে ১৮৭৪টি (২৭%), দুপুরে ১৩২৯টি (১৯.১৮%), বিকালে ১১১৪টি (১৬.০৮%), সন্ধ্যায় ৬৭৫টি (৯.৭৪%) এবং রাতে ১৫৪৮টি (২২.৩৪%)।
দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান:
দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা ২২.৮৩%, প্রাণহানি ২৫.২২%, রাজশাহী বিভাগে দুর্ঘটনা ১৫%, প্রাণহানি ১৪.১৩%, চট্টগ্রাম বিভাগে দুর্ঘটনা ১৮.৭৩%, প্রাণহানি ১৯.৩৭%, খুলনা বিভাগে দুর্ঘটনা ১২.১৫%, প্রাণহানি ১১.৭৬%, বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনা ৬.৩৩%, প্রাণহানি ৬.২৬%, সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনা ৬.২৭%, প্রাণহানি ৬.০৭%, রংপুর বিভাগে দুর্ঘটনা ১০.৫০%, প্রাণহানি ৯.৮৫% এবং ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনা ৮.০৯%, প্রাণহানি ৭.৩০% ঘটেছে।
ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ১৫৮২টি দুর্ঘটনায় ১৮৪০ জন নিহত হয়েছেন। সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম ৪৩৫টি দুর্ঘটনায় ৪৪৩ জন নিহত হয়েছেন।
রাজধানীর সড়ক দুর্ঘটনা বিশ্লেষণ:
রাজধানীতে ৩৯৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৪৬ জন নিহত এবং ৪৮২ জন আহত হয়েছেন। পুরুষ ৭৬.৮২%, নারী ১৩.৪১% এবং শিশু ৯.৭৫%।
নিহতদের মধ্যে পথচারী ৫১.৬২%, মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ৩৯% এবং বাস, রিকশা, সিএনজি ইত্যাদি যানবাহনের চালক ও আরোহী ৯.৩৪%।
রাজধানীর দুর্ঘটনার সময় পর্যবেক্ষণে দেখা যায়- ভোরে ১০.৬৫%, সকালে ১৭.২৫%, দুপুরে ১৩.৭০%, বিকালে ১২.৪৩%, সন্ধ্যায় ৫.৩২% এবং রাতে ৪০.৬০% দুর্ঘটনা ঘটেছে।
রাজধানীতে দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের মধ্যে বাস ২৬.৮৭%, ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-ট্যাংকার-ময়লাবাহী ট্রাক ৩৩.১৪%, মোটরসাইকেল ২০.৫৩%, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-জীপ ৫.১২%, থ্রি-হুইলার (অটোরিকশা-সিএনজি-লেগুনা) ৯.৮২% এবং রিকশা ৪.৪৮%।
দুর্ঘটনাসমূহ রাতে এবং সকালে বেশি ঘটেছে। বাইপাস রোড না থাকার কারণে রাত ১০টা থেকে ভোর পর্যন্ত রাজধানীতে মালবাহী ভারী যানবাহন বেপরোয়া গতিতে চলাচল করে। ফলে রাস্তা পারাপারে পথচারীরা বেশি নিহত হচ্ছেন। এছাড়া দীর্ঘ সময় যানজটের কারণে যানবাহন চালকদের আচরণে অসহিষ্ণুতা ও ধৈর্য্যহানি ঘটছে, যা সড়ক দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে কাজ করছে।
রাজধানীতে যানবাহনের তুলনায় অপ্রতুল সড়ক, একই সড়কে যান্ত্রিক-অযান্ত্রিক, স্বল্প ও দ্রুত গতির যানবাহনের চলাচল, ফুটপাত হকারের দখলে থাকা, ফুটওভার ব্রিজ যথাস্থানে নির্মাণ না হওয়া ও ব্যবহার উপযোগী না থাকা এবং সড়ক ব্যবহারকারীদের মধ্যে অসচেতনতার কারণে অতিমাত্রায় দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটছে। রাজধানীর যাত্রাবাড়ি, ডেমরা, মোহাম্মদপুর, কুড়িল বিশ্বরোড এবং বিমানবন্দর সড়ক দুর্ঘটনার হটস্পট হয়ে উঠেছে।
মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বিশ্লেষণ:
২০২৪ সালে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে ২৭৬১টি, নিহত হয়েছেন ২৬০৯ জন এবং আহত ১৮৩২ জন। নিহতদের মধ্যে ১৯৬৩ জন (৭৫.২৩%) ১৪ থেকে ৪৫ বছর বয়সী।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, অন্য যানবাহনের সাথে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটেছে ৬৩৭টি (২৩%), মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে ১০৫৪টি (৩৮.১৭%), মোটরসাইকেলে ভারী যানবাহনের চাপা ও ধাক্কা দেয়ার ঘটনা ঘটেছে ১০২২টি (৩৭%) এবং অন্যান্য কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪৮টি (১.৭৩%)।
৩৬.৬৫% দুর্ঘটনার জন্য মোটরসাইকেল চালক এককভাবে দায়ী ছিল। বাস ও পণ্যবাহী ভারী যানবাহনের চালক দায়ী ৪৭.৬৬%, প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস চালক দায়ী ৩.২২%, থ্রি-হুইলার ৪.৪৫%, বাইসাইকেল, রিকশা চালক দায়ী ১.৫২% পথচারী দায়ী ৪.৭৪% এবং অন্যান্য কারণ দায়ী ১.৭৩%।
২৯.৬৬% মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে জাতীয় মহাসড়কে, ৩৯.৬৫% ঘটেছে আঞ্চলিক সড়কে, ১৭.৪২% ঘটেছে গ্রামীণ সড়কে এবং ১৩.২৫% দুর্ঘটনা ঘটেছে শহরের সড়কে।
২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বেড়েছে ৯.০৪% এবং প্রাণহানি বেড়েছে ৪.৯০%।
দেশে মোট মোটরযানের ৭১ শতাংশ মোটরসাইকেল। মোটরসাইকেল চালকদের বিরাট অংশ কিশোর ও যুবক। এদের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা এবং না মানার প্রবনতা প্রবল। এরা বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালিয়ে নিজেরা দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হচ্ছে এবং অন্যদেরকে আক্রান্ত করছে।
মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার একটি ব্যাপক অংশ ঘটছে বাস এবং পণ্যবাহী ভারী যানবাহনের ধাক্কা/চাপায়। এসব দ্রুত গতির যানবাহন চালকদের অধিকাংশই অসুস্থ ও অদক্ষ। এদের বেপরোয়াভাবে যানবাহন চালানোর কারণে দক্ষ মোটরসাইকেল চালকরাও দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন।
মোটরসাইকেল ৪ চাকার যানবাহনের তুলনায় ৩০ গুণ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু দেশে গণপরিবহন ব্যবস্থা উন্নত ও সহজলভ্য না হওয়া এবং যানজটের কারণে মানুষ মোটরসাইকেল ব্যবহারে উৎসাহিত হচ্ছে এবং দুর্ঘটনা বাড়ছে। মোটরসাইকেল চালকরা মানসম্পন্ন হেলমেট ব্যবহারের আগ্রহ কম। অথচ মানসম্পন্ন হেলমেট ৪৮% মৃত্যু ঝুঁকি কমায়।
পথচারী নিহতের দুর্ঘটনা বিশ্লেষণ:
২০২৪ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৫৩৫ জন পথচারী নিহত হয়েছেন। যানবাহনের বেপরোয়া গতির কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৮৩৯টি (৫৪.৬৫%) এবং পথচারীদের অসতর্কতার কারণে ঘটেছে ৬৯৬টি (৪৫.৩৪%) ।
পথচারী নিহতের ঘটনা মহাসড়কে ২৫%, আঞ্চলিক সড়কে ৩৪.০৭%, গ্রামীণ সড়কে ২৩.৫৮%, শহরের সড়কে ১৬.৭৪% এবং অন্যান্য স্থানে ঘটেছে ০.৫৮%।
দুর্ঘটনাসমূহ ভোরে ৪.১০%, সকালে ৩৩.২৮%, দুপুরে ১৬.৬৭%, বিকালে ২৩.০৬%, সন্ধ্যায় ১০.৬১% এবং রাতে ১২.২৪% ঘটেছে।
যানবাহনের অতিরিক্ত গতি, সড়কের সাইন-মার্কিং-জেব্রা ক্রসিং সম্পর্কে চালক এবং পথচারীদের অজ্ঞতা এবং না মানার প্রবণতা, যথাস্থানে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ না করা এবং ব্যবহার উপযোগী না থাকা, রাস্তায় হাঁটা ও পারাপারের সময় মোবাইল ফোনে কথা বলা, হেডফোনে গান শোনা, চ্যাটিং করা এবং সড়ক ঘেঁষে বসতবাড়ি নির্মাণ ও সড়কের উপরে হাট-বাজার গড়ে উঠা ইত্যাদি কারণে পথচারী নিহতের ঘটনা বাড়ছে।
সড়ক দুর্ঘটনায় শিশু নিহতের চিত্র বিশ্লেষণ:
২০২৪ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় ১১৫২ শিশু নিহত হয়েছে। শিশু মৃত্যুর ঘটনা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়-
বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রী ও চালক হিসেবে নিহত হয়েছে ৬৩৩ শিশু (৫৫%) এবং পথচারী হিসেবে যানবাহনের চাপায়/ধাক্কায় নিহত হয়েছে ৫১৯ শিশু (৪৫%)।
পথচারী হিসেবে চাপা-ধাক্কার যানবাহনভিত্তিক চিত্র:
১. বাস ও পণ্যবাহী যানবাহনের চাপায়/ধাক্কায় নিহত হয়েছে ২১৪ শিশু (৪১.২৩%)
২. প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও অ্যাম্বুলেন্সের চাপায়/ধাক্কায় নিহত হয়েছে ৩৮ শিশু (৭.৩২%)
৩. থ্রি-হুইলার ও নসিমন-ভটভটির চাপা/ধাক্কায় নিহত হয়েছে ১৮৯ শিশু (৩৬.৪১%)
৪. বেপরোয়া মোটরসাইকেলের ধাক্কাায় নিহত হয়েছে ৭৮ শিশু (১৫%)
শিশু নিহত হওয়া সড়কের ধরন:
শিশু নিহত হওয়া সড়কের ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, মহাসড়কে ৩১৯ শিশু (২৭.৬৯%), আঞ্চলিক সড়কে ৪১৭ শিশু (৩৬.১৯%), গ্রামীণ সড়কে ৩৩২ শিশু (২৮.৮১%) এবং শহরের সড়কে ৮৪ শিশু (৭.২৯%) নিহত হয়েছে।
দুর্ঘটনার সময় বিশ্লেষণ:
দুর্ঘটনাসমূহ ভোরে ২.৮৬%, সকালে ২৬.২১%, দুপুরে ২৫.৪৩%, বিকালে ২৭.০৮%, সন্ধ্যায় ১০.০৬% এবং রাতে ৮.৩৩% ঘটেছে।
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত শিশুদের বয়স ভিত্তিক বিশ্লেষণ:
১ মাস থেকে ৫ বছর বয়সী শিশু নিহত হয়েছে ১৯৯টি (১৭.২৭%), ৬ বছর থেকে ১২ বছর বয়সী শিশু নিহত হয়েছে ৪৩৭টি (৩৭.৯৩%) এবং ১৩ বছর থেকে ১৮ বছর বয়সী শিশু নিহত হয়েছে ৫১৬টি (৪৪.৭৯%)।
সড়ক দুর্ঘটনায় শিশু মৃত্যুর হার বৃদ্ধির কারণসমূহ:
১. দেশের সড়ক ও সড়ক পরিবহন শিশুবান্ধব না হওয়া
২. সড়ক ব্যবহার সম্পর্কে শিশুদের মধ্যে সচেতনতার অভাব
৩. পরিবার এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সড়ক ব্যবহার সম্পর্কে পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ না দেয়া
৪. অদক্ষ ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালক কর্তৃক যানবাহন চালানো
৫. দুর্ঘটনায় আহত শিশুদের উপযুক্ত চিকিৎসা ব্যবস্থার সংকট
৬. আহত শিশুদের চিকিৎসায় পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতা।
দুর্ঘটনায় শিশু নিহতের ঘটনা পর্যালোচনা:
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া-আসার সময়, বসত বাড়ির আশে-পাশের সড়কে খেলাধুলার সময় নিহতের ঘটনা বেশি ঘটেছে। আঞ্চলিক ও গ্রামীণ সড়কগুলো বসতবাড়ি ঘেষা। ঘরের দরজা খুললেই সড়ক- এমন অবস্থা! এসব সড়কে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি থাকে না। ফলে যানবাহনসমূহ বেপরোয়াভাবে চলাচল করে। আবার শিশুরাও সড়ক ব্যবহারের কোনো নিয়ম-নীতি জানে না। এই অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে নীরবে আমাদের শিশুরা নিহত হচ্ছে, পঙ্গু হচ্ছে। এটা জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। কারণ প্রতিটি শিশুই অমিত সম্ভাবনাময় এবং আজকের শিশুরাই আমাদের ভবিষ্যৎ।
২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে দুর্ঘটনা বেড়েছে ১৩.৪৩ শতাংশ, প্রাণহানি বেড়েছে ১৫.৭০ শতাংশ এবং আহত বেড়েছে ১.২০ শতাংশ। ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে দুর্ঘটনা বেড়েছে ২৭.১৪ শতাংশ, প্রাণহানি বেড়েছে ২২.৭৪ শতাংশ এবং আহত বেড়েছে ৬৮.৯২ শতাংশ। ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে দুর্ঘটনা বেড়েছে ১.২% শতাংশ, প্রাণহানি কমেছে ১৫.৪১ শতাংশ এবং আহত কমেছে ৯.৫৭% শতাংশ।
২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে দুর্ঘটনা বেড়েছে ০.২৩ শতাংশ, প্রাণহানি বেড়েছে ১১.৮০ শতাংশ এবং আহত বেড়েছে ৫.৩৬ শতাংশ।
২০২৪ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৮ থেকে ৬৫ বছর বয়সী কর্মক্ষম মানুষ নিহত হয়েছেন ৫৬১৩ জন, অর্থাৎ ৭৬.৯৫ শতাংশ।
সড়ক দুর্ঘটনায় মানব সম্পদের ক্ষতির আর্থিক মূল্য:
২০২৪ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় যে পরিমাণ মানব সম্পদের ক্ষতি হয়েছে তার আর্থিক মূল্য ২১ হাজার ৮ শত ৮৬ কোটি ৩২ লাখ ৬৪ হাজার টাকার মতো। যেহেতু সড়ক দুর্ঘটনার অনেক তথ্য অপ্রকাশিত থাকে, সেজন্য এই হিসাবের সাথে আরও ৩০% যোগ করতে হবে। iRAP (International Road Assessment Program) এর Method অনুযায়ী হিসাবটি করা হয়েছে। দুর্ঘটনায় যে পরিমাণ যানবাহন বা প্রপার্টি ড্যামেজ হয়েছে তার তথ্য না পাওয়ার কারণে প্রপার্টি ড্যামেজের আর্থিক পরিমাপ নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। উল্লেখ্য, গণমাধ্যমে যে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, প্রকৃত ঘটনা তার চেয়ে অনেক বেশি। এই বিবেচনায় এ বছর সড়ক দুর্ঘটনায় আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ আমাদের জিডিপি’র ১.৫ শতাংশের বেশি হতে পারে।
দুর্ঘটনা পর্যালোচনা:
দেশে জাতীয় ও আঞ্চলিক সড়কের দৈর্ঘ ২২ হাজার ৪৭৬.২৮ কিলোমিটার। গ্রামীণ সড়ক প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার কিলোমিটার। এসব সড়কে নানা প্রকার যানবাহন যেমন বেড়েছে, তেমনি যানবাহনের গতিও বেড়েছে। ৮৫% দুর্ঘটনার প্রধান কারণ যানবাহনের অতিরিক্ত গতি। কিন্তু গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য জনবল ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা নেই। যানবাহনের গতি ঘন্টায় ৬০ কিলোমিটারের উপরে প্রতি ৫ কিলোমিটার বৃদ্ধিতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি ২ থেকে ৪ গুণ বৃদ্ধি পায়। বেপরোয়া গতির কারণে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে অতি দুর্ঘটনাপ্রবণ হয়ে উঠেছে।
ইদানিং মহাসড়কে বিকল হওয়া পণ্যবাহী যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকছে। এই অবস্থায় বেপরোয়া গতির অপর যানবাহন দাঁড়ানো যানবাহনের পেছনে ধাক্কা দিয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে। গত বছর এধরনের ৮২টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। সড়কে অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে নির্মিত উঁচু স্পীড ব্রেকারের কারণে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বাড়ছে।
সারা দেশের গ্রামীণ জনপদে সড়ক নির্মিত হলেও আধুনিক নিরাপদ যানবাহন ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। তাই প্রয়োজনের তাগিদেই ইজিবাইক, অটোরিকশা, নসিমন, ভটভটি আলমসাধুর মতো অনিরাপদ যানবাহনের প্রচলন ঘটেছে। এসব যানবাহনের নিরাপত্তামূলক যান্ত্রিক উন্নতি ঘটিয়ে নিবন্ধনের আওতায় এনে চালকদের স্বল্পমেয়াদী প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সকল মহাসড়কে ডিভাইডার ও সার্ভিস রোড না থাকা এবং আঞ্চলিক ও গ্রামীণ সড়কগুলো সরাসরি মহাসড়কে যুক্ত করার কারণে ছোট যানবাহনগুলো স্বল্প দূরত্বে চলাচলের ক্ষেত্রেও মহাসড়ক ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে দ্রুতগতির যানবাহনের সাথে সংঘর্ষে ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটছে। এসব দুর্ঘটনায় একই পরিবারের একাধিক সদস্য এমনকি পুরো পরিবার নিহতের ঘটনা বাড়ছে। গত বছর ভারী যানবাহনের সঙ্গে ইজিবাইক-অটোরিকশার সংঘর্ষে কমপক্ষে ৪৯টি পরিবার পুরোপুরি নিহত হয়েছে। তাই ছোট ও স্বল্পগতির যানবাহনের জন্য নিরাপদ রোড ডিজাইন করতে হবে।
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিচিতি:
গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, নিহতদের মধ্যে পুলিশ সদস্য ৩৪ জন, সেনা সদস্য ৪ জন, বিজিবি সদস্য ৬ জন, আনসার সদস্য ১১ জন, গ্রাম পুলিশ ৪ জন, স্কুল-কলেজ-মাদরাসা ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ১২৫ জন, ২১ জন প্রকৌশলী, চিকিৎসক ১৩ জন, আইনজীবী ১৫ জন, সাংবাদিক ৩৪ জন, কৃষি কর্মকর্তা ৩ জন, ভূমি কর্মকর্তা ১ জন, গ্যাস ফিল্ড কর্মকর্তা ১ জন, শ্রম ও কর্মসংস্থান ব্যুরো’র উপ-পরিচালক ১ জন, ব্যাংক-বীমা কর্মকর্তা-কর্মচারী ৮৮ জন, এনজিও কর্মকর্তা-কর্মচারী ১৩৪ জন, ঔষধ ও বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী বিক্রয় প্রতিনিধি ১৭৭ জন, স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন ব্যবসায়ী ২৭৪ জন, উপজেলা চেয়ারম্যান ১ জন, ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্য ৫ জন, স্থানীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতা ১৫৭ জন, হাফেজ- ইমাম ২৩ জন, বাউল শিল্পী ২ জন, বিদ্যুৎ কর্মচারী ২জন, রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের শ্রমিক ৪ জন, পরিবহন শ্রমিক নেতা ৫ জন, পোশাক শ্রমিক ৬৩ জন, বন প্রহরী ৪ জন, নির্মাণ শ্রমিক ৭৬ জন, বালু শ্রমিক ১৩ জন, ধানকাটা শ্রমিক ৯ জন, চালকল শ্রমিক ৪ জন, ইটভাটা শ্রমিক ৬ জন, রাজমিস্ত্রি ১৭ জন, কাঠমিস্ত্রি ৯ জন, রঙ মিস্ত্রি ৪ জন, সিএনজি মিস্ত্রি ২ জন, হকার ৬ জন, নিরাপত্তা রক্ষী ১১ জন, সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী ৪ জন, মানসিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী ২৭ জন এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ জন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ জন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ জন, বুয়েটের ১ জনসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১০৭৩ জন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে।
সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণসমূহ:
১. ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন; ২. বেপরোয়া গতি; ৩. চালকদের অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা; ৪. চালকদের বেতন-কর্মঘন্টা নির্দিষ্ট না থাকা; ৫. মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল; ৬. তরুণ-যুবদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো; ৭. জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা; ৮. দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা; ৯. বিআরটিএ’র সক্ষমতার ঘাটতি; ১০. গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজি।
সুপারিশসমূহ:
১. দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি করতে হবে; ২. চালকদের বেতন-কর্মঘন্টা নির্দিষ্ট করতে হবে; ৩. বিআরটিএ’র সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে; ৪. পরিবহন মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে; ৫. মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন বন্ধ করে এগুলোর জন্য সার্ভিস রোড তৈরি করতে হবে; ৬. পর্যায়ক্রমে সকল মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করতে হবে; ৭. গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে; ৮. রেল ও নৌ-পথ সংস্কার করে সড়ক পথের উপর চাপ কমাতে হবে; ৯. টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন করতে হবে; ১০. “সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮” বাধাহীনভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
মন্তব্য:
রাজধানী ঢাকায় রুট ফ্রাঞ্চাইজ পদ্ধতিতে উন্নত বাস সার্ভিস চালু না করলে কোনো কৌশল এবং কাঠামোগত উদ্যোগেই যানজট কমবে না। মেট্রোরেল এবং নির্মাণাধীন সাবওয়ে যে পরিমাণ যাত্রী বহন করবে তার চেয়ে সাড়ে ৪ গুণ মানুষ যাতায়াত করবে বাস সার্ভিসে। তাই মেট্রোরেল ও সাবওয়ে নির্মাণের পাশাপাশি মাত্র ৭/৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ৪ হাজার আধুনিক নতুন বাস এসি, নন/এসি দুই ক্যাটাগরীতে পরিচালনা করলে প্রাইভেট গাড়ি ব্যবহারকারী বহু মানুষ বাসে চলাচল করবেন। এতে প্রাইভেট গাড়ি নিরুৎসাহিত হবে। ফলে যানজট কমবে এবং মোটরসাইকেলের ব্যবহার হ্রাস পাবে। রাজধানীর ভেতরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীদের জন্য নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থ বাধ্যতামূলক করতে হবে। রিকশা-অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি টেকসই পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। এসব সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করলে রাজধানীর অসহনীয় যানজট থাকবে না।
কর্তৃপক্ষের নানা প্রকার অনিয়ম ও দায়িত্ব অবহেলার কারণে সড়ক দুর্ঘটনায় অগণিত মানুষ হতাহত হচ্ছে। কিন্তু এসব দুর্ঘটনার দায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিচ্ছে না। প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহিতার অভাবে দায়ীদের শাস্তি হচ্ছে না। সংজ্ঞা অনুযায়ী- বাংলাদেশের অধিকাংশ সড়ক দুর্ঘটনা কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড। সড়ক, যানবাহন ও চালক সঠিক থাকার পরেও যদি দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে সেটা দুর্ঘটনা। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলাজনিত কারণে দুর্ঘটনার সহায়ক উপাদান বিদ্যমান থাকায় যখন দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটে তখন তা অবশ্যই কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড। এসব দুর্ঘটনায় আক্রান্তদের অধিকাংশই দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ এবং প্রায় ক্ষেত্রে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। ফলে অসংখ্য পরিবার আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে সামাজিক অর্থনীতির মূল স্রোত থেকে হারিয়ে বিপন্ন হয়ে পড়ছে। দেশে সৃষ্টি হচ্ছে আর্থ-সামাজিক সংকট।
দেশের সড়ক ও সড়ক পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার কাজে বিআরটিএ, ডিটিসিএ, বাংলাদেশ পুলিশ, বিআরটিসি, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান জড়িত। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব প্রকট। প্রাতিষ্ঠানিক অব্যবস্থাপনা এবং কাঠামোগত দুর্বলতা রয়েছে। জবাবদিহিতা নেই বললেই চলে। এসব কারণেই সড়ক পরিবহনে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না। দুর্ঘটনাও কমছে না। শুধু বৈঠক, কমিটি গঠন এবং সুপারিশমালা তৈরির মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ। এই পরিস্থিতিতে সড়ক পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করে দুর্ঘটনা রোধ করতে হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনা ও কাঠামোগত সংস্কার করতে হবে। কোনো বিকল্প নেই। এজন্য প্রয়োজন সরকারের আকাঙ্খা ও সদিচ্ছা।
প্রতিবেদকের প্রতিক্রিয়া ও সুপারিশ :
এ বিষয়ে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য, সাপ্তাহিক নতুন কথা’র বিশেষ প্রতিনিধি, আরপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট কমরেড সৈয়দ আমিরুজ্জামান বলেন, “দুর্ঘটনার এই চিত্র বাংলাদেশের সড়কে নিরাপত্তাহীনতা ও সীমাহীন অব্যবস্থার চিত্রই প্রকাশ পেয়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গাড়ি চালনার প্রাথমিক শিক্ষা কোর্স (ব্যবহারিক সহ) চালু করাসহ দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি করা, চালকের বেতন ও কর্মঘন্টা নির্দিষ্ট করা, বিআরটিএ’র সক্ষমতা বৃদ্ধি করা,পরিবহনের মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা পার্শ্ব রাস্তা (সার্ভিস রোড) তৈরি করা, সকল সড়ক-মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করা, যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তির ব্যবহার করা, গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করা, রেল ও নৌ-পথ সংস্কার ও সম্প্রসারণ করে সড়ক পথের উপর চাপ কমানো, গণপরিবহন উন্নত, সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী করে মোটরসাইকেল ব্যবহার নিরুৎসাহিত করা, সড়ক, নৌ ও রেলপথে কঠোর মনিটরিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করাসহ
সড়ক পরিবহন আইন ও বিধিমালা যথাযথ বাস্তবায়নে নতুন নতুন কৌশল ও ডিজিটালাইজড উদ্ভাবনকে কাজে লাগাতে হবে। সর্বোপরি ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাকে আধুনিক ও ডিজিটাইজড করতে হবে। এ বিষয়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে প্রায় দুই বছর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে উন্নয়ন প্রজেক্ট পাঠানো হয়েছে, তা বাস্তবায়ন জরুরি।
যাত্রী ও পথচারীদের ব্যক্তি নিরাপত্তা ও বিধি-বিধান প্রতিপালনে সচেতন হতে হবে। নাগরিকদের মধ্যে আইন ও শৃঙ্খলা মানার সংস্কৃতি সৃষ্টি করতে হবে। সাংবাদিক, সরকারি কর্মকর্তা, শ্রমিক নেতা, রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের যথাযথ আইন প্রয়োগে সহায়তা প্রদান করতে হবে।
প্রশাসন, পুলিশ, বিআরটিএ, সিটি করপোরেশন, সড়ক ও জনপথ, মালিক, চালক ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগে দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব। সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে জাতীয়ভাবে সেল তৈরি করে এবং প্রতি বিভাগ ও জেলায় একইভাবে সেল গঠন করে নিয়মিত মনিটরিং ও পরামর্শ প্রদানের ব্যবস্থা থাকতে হবে এবং এ সেলকে সর্বদাই সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। এভাবেই সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস করা সম্ভব।”
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by M-W-D