কপ৩০-এ অচলাবস্থা: অর্থ–বিজ্ঞান–প্রযুক্তি ও জেন্ডার ইস্যুতে তীব্র টানাপোড়েন

প্রকাশিত: ১১:২০ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৬, ২০২৫

কপ৩০-এ অচলাবস্থা: অর্থ–বিজ্ঞান–প্রযুক্তি ও জেন্ডার ইস্যুতে তীব্র টানাপোড়েন

Manual8 Ad Code

বিশেষ প্রতিনিধি, বেলেম (ব্রাজিল) থেকে, ১৬ নভেম্বর ২০২৫ : ব্রাজিলের বেলেমে শুরু হওয়া জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন কপ৩০-এর দ্বিতীয় সপ্তাহে উত্তেজনা চরমে উঠেছে। প্রথম সপ্তাহজুড়ে টানাপোড়েন ও ধীরগতি আলোচনার পর এখনো বহু গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে অচলাবস্থা কাটেনি। জলবায়ু অর্থায়ন, বিজ্ঞানভিত্তিক সিদ্ধান্ত, অভিযোজন, প্রযুক্তি হস্তান্তর, জেন্ডার সমতা ও ‘জাস্ট ট্রানজিশন’—সব ক্ষেত্রেই উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য তীব্রতর হচ্ছে।

Manual8 Ad Code

ঝুঁকিপূর্ণ ও নিম্নআয়ের দেশগুলো বলছে, বিধ্বংসী জলবায়ু বিপর্যয় বাড়লেও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে জরুত্ব বোধ কমছে। আগামী সাত দিনেই ঠিক হবে—এই কপ জলবায়ু ইতিহাসে নতুন দিগন্ত খুলবে নাকি ব্যর্থতার আরেক অধ্যায় রচিত হবে।

অর্থায়নেই সবচেয়ে বড় থেমে থাকা চাকা

মন্ত্রীপর্যায়ের সংলাপে এলডিসি গ্রুপের পক্ষে বাংলাদেশের পার্টি হেড ও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, জলবায়ু অর্থায়ন কোনো দরকষাকষির বিষয় নয়—এটি টিকে থাকা, সুবিচার ও মানবমর্যাদার প্রশ্ন।
তিনি বলেন, “ধনী দেশগুলো বারবার প্যারিস চুক্তির অঙ্গীকার পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা ঋণ চাই না, অনুদান চাই।”

অভিযোজন তহবিল ও লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ডের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ না থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। যুক্তরাজ্যের এড মিলিব্যান্ড ও কেনিয়ার ডেবোরা ম্লঙ্গো বারাসা মধ্যস্থতার চেষ্টা করলেও বড় ধরনের অগ্রগতি এখনো নেই।

গ্লোবাল স্টকটেকে বড় প্রশ্ন—ফসিল জ্বালানির ভবিষ্যৎ কী?

গ্লোবাল স্টকটেক (জিএসটি) আলোচনায় নরওয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছে। কিন্তু জিএসটির কেন্দ্রবিন্দুতেই রয়ে গেছে সবচেয়ে সংবেদনশীল প্রশ্ন—বিশ্ব কি ধাপে ধাপে জীবাশ্ম জ্বালানি পরিত্যাগে সম্মত হবে?
গাম্বিয়া ও জার্মানি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবিকা রক্ষার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরলেও উন্নয়নশীল দেশগুলো বলছে, বাস্তব কাঠামো ছাড়া আর প্রতিশ্রুতির কোনো মূল্য নেই।

Manual8 Ad Code

জাস্ট ট্রানজিশনে মেক্সিকো- পোল্যান্ড দ্বন্দ্ব

Manual1 Ad Code

সবচেয়ে বিতর্কিত ইস্যুতে পরিণত হয়েছে ‘জাস্ট ট্রানজিশন’। মেক্সিকো শ্রমিক-কেন্দ্রিক রূপান্তরকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে, আর পোল্যান্ডসহ কয়েকটি দেশ আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তার ভিন্ন কাঠামো দাবি করছে। উন্নয়নশীল দেশগুলো বলছে, পরিষ্কার রোডম্যাপ ও পর্যাপ্ত অর্থায়ন ছাড়া জাস্ট ট্রানজিশন বাস্তবে কার্যকর হবে না।

প্রযুক্তি হস্তান্তরেও সমাধানহীনতা

অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের নেতৃত্বে প্রযুক্তি হস্তান্তর বিষয়ে আলোচনা এগোলেও দক্ষিণের দেশগুলোর অভিযোগ—উন্নত দেশগুলোর প্রতিশ্রুত প্রযুক্তি মাঠপর্যায়ে সুবিধা দিতে পারছে না। বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের ভাষ্য, প্রযুক্তি ছাড়া অভিযোজন সম্ভব নয়, আর প্রযুক্তিগত পিছিয়ে পড়া ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর টিকে থাকার সম্ভাবনাকেই সংকুচিত করছে।

জেন্ডার ইস্যু: ‘নীতির ফুটনোট’

জেন্ডার সমতা আলোচনায় চিলি এবং সুইডেন নেতৃত্ব দিলেও অগ্রগতি নেই। নারীবাদী প্রতিনিধি দলগুলো বলছে, “জেন্ডার এখনও নীতির ফুটনোট মাত্র।” জলবায়ু সংকটে নারীদের ভঙ্গুর অবস্থান সত্ত্বেও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটছে না বলে অভিযোগ তাদের।

বাংলাদেশের ক্ষোভ ও হতাশা

এলডিসি গ্রুপের অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বলেন,
“অর্থ, তথ্য ও সরঞ্জাম ছাড়া উচ্চাকাঙ্ক্ষা কাগুজে স্বপ্নই থাকবে।”

বাংলাদেশি যুব প্রতিনিধি ও ইয়ুথনেট গ্লোবালের নির্বাহী সমন্বয়কারী সোহানুর রহমানের বক্তব্য আরও স্পষ্ট—
“এই কপ থেকে শুধু রাজনৈতিক বার্তা নয়, মানুষ বাঁচানোর হাতিয়ার দরকার।”

শেষ সপ্তাহ: আশার আলো নাকি ব্যর্থতার ঘোষণা?

কপ৩০-এর দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রবেশ করেও বড় কোনো সমাধান সামনে না আসায় সবার চোখ এখন উচ্চপর্যায়ের বৈঠক ও নেতৃবৃন্দের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে। সম্মেলনের শেষ সপ্তাহই বলে দেবে—বিশ্ব জলবায়ু ন্যায্যতা ও সহযোগিতার পথে অগ্রসর হবে, নাকি বিতর্কের বোঝা নিয়েই আরেকটি বছর পেরোবে।

Manual5 Ad Code

 

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ